মানুষ এখন প্রযুক্তির যুগে। পৃথিবীর সব রহস্যময় দুয়ার খুলে দিতে উদগ্রীব বিজ্ঞানীরা। তবু প্রযুক্তি স্বর্ণ শিখরে বিরাজ করেও মানুষ যে বিষয়টি অর্জন করতে পারেনি তা হল ভবিষ্যৎকে হাতের মুঠোয় নিয়ে আসা। জ্যোত্যির্বিজ্ঞানে ভবিষ্যৎ বলার কিছু বিজ্ঞান চর্চা
থাকলেও তেমন ব্যাপক নয়। তাই ভবিষ্যদ্বাণী মিলে গেলে মানুষের কাছে তা রহস্যময় বলেই মনে হয়। মিলে যাওয়া তেমনই ঘটনা নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন।
* ওকলাহামা শহরের বিস্ফোরণ যুক্তরাষ্ট্রের একজন আধ্যাত্মিক মিডিয়াম ট্যানা জয়। এ অ্যাধ্যাত্মিক গুরু প্রথম থেকেই নিজেকে অশরীরী আত্মার সঙ্গে মানুষের যোগসূত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করছেন। তার দাবি, তিনি বিদেহী আত্মাদের দেখতে পান এবং এ আত্মাদের সঙ্গে তার কথোপকথন হয়। আর এদের কাছেই তিনি অদূর ভবিষ্যতের ঘটনাগুলো জানতে পারেন। এভাবে তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করে থাকেন। তার এই প্রচার সবার কাছেই বিশ্বাসযোগ্য ছিল না। ১৯৯৫ সালের ঘটনা। আধ্যাত্মিক মিডিয়াম ট্যানা জয় এক রেডিও অনুষ্ঠানে সরাসরি আলাপচারিতায় জানান, কোনো এক জঙ্গি গোষ্ঠী ওকলাহামা শহরের এক বাড়িতে বিধ্বংসী বোমা বিস্ফোরণ ঘটাবে। সেসময় রেডিও জকি কথাটি উড়িয়ে দিলেও ঠিক ৯০ মিনিট পর প্রচণ্ড বিস্ফোরণে ওকলাহামার অ্যালফ্রেড পি মুরাহ ফেডেরাল বিল্ডিংটি উড়ে যায়। ঘটনার হোতা টিমথি ম্যাকভেই ও তার সঙ্গীরা পরে গ্রেপ্তার হয়। কিন্তু এ ঘটনার সঙ্গে ট্যানা জয়ের কোনো যোগসূত্র না পাওয়ায় ওকলাহামাবাসী বিস্মিত হন, যা আজও রহস্যময় একটা ঘটনা।
* অগ্নুৎপাত, সুনামি ও হারিকেন ক্যাটরিনা : পামার একজন ভবিষ্যদ্বক্তা। শুরুতে নস্ত্রাদামুর মতো পামারের কোনো জনপ্রিয়তা ছিল না। কিন্তু প্রাকৃতিক বিপর্যয় নিয়ে তার ভবিষ্যদ্বাণী পুরোপুরি ফলে যায়। ভারত মহাসাগরে আগ্নেয়গিরির উদ্গীরণ এবং সুমাত্রা ও ইন্দোনেশিয়া উপকূলে আছড়ে পড়া ভয়ঙ্কর জলোচ্ছ্বাসের কথা জানিয়েছিলেন পামার। ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর সুমাত্রা, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের ১৪টি দেশে সুনামির তাণ্ডবে প্রাণ হারান প্রায় ২,৩০,০০০ মানুষ। তিনি ২০০৫ সালের হারিকেন ক্যাটরিনা সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করে আরও জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। পামারের এসব ভবিষ্যদ্বাণীর আগে বড় আকারের ওই প্রাকৃতিক বিপর্যয়গুলোর কোনো আলামত আবহাওয়া ও ভূ-তত্ববিদদের কাছেও ছিল না।
* নিরাপত্তা ক্যামেরা : নিরাপত্তা ক্যামেরা প্রযুক্তি- যাকে আমরা সিসিটিভি বলি। নগরায়নে বর্তমানে সিসিটিভি সিস্টেম অপরিহার্য একটি অংশ। কিন্তু যখন এই নিরাপত্তা ক্যামেরা প্রতিস্থাপনে পর্যবেক্ষণ ও সংরক্ষণের কথা কেউ জানতই না, বিজ্ঞানী জর্জ অরওয়েল এ বিষয়ে তত্ত্ব লিখেন। ১৯৪৯ সালে তার উপন্যাস ‘১৯৮৪’-তে ইন্টারকানেক্টেড নিরাপত্তা ক্যামেরা জালের তত্ত্ব সম্পর্কে লিখলে তা বহু পাঠক লেখকের কল্পনা হিসেবে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। একুশ শতকে সেই প্রকল্পই কিন্তু বাস্তবায়িত হয়েছে। মজার কথা, অরওয়েলের বাড়ির মাত্র ২০০ গজের মধ্যে ৩২টি সিসিটিভির সাহায্যে প্রথম এমন পরিকল্পনা রূপ পায়।
* অঙ্গ প্রতিস্থাপন, গড় আয়ু বৃদ্ধি, ড্রাগস : রবার্ট বয়েল যার আবিষ্কৃত তত্ত্ব ‘বয়েলস ল’ পদার্থবিদ্যার একটি অতি প্রয়োজনীয় অধ্যায়। দূরদর্শী এ বিজ্ঞানী ১৬৬০ সালে পূর্বাভাস দিয়েছিলেন- ভবিষ্যতে মানুষের দেহের বিভিন্ন অঙ্গ প্রতিস্থাপনই হবে চিকিৎসার অন্যতম প্রধান উপায়। যে সময় জাদুবিদ্যা ও ঝাড়ফুঁকই ছিল চিকিৎসা সেবার বড় হাতিয়ার সে সময় এমন কথা শুনে অনেকেই তাকে পাগল ছাড়া আর কিছুই ভাবেননি। অথচ বর্তমানে বয়েলের এ ভবিষ্যৎ চিন্তাই আধুনিক চিকিৎসাশাস্ত্রের অন্যতম একটি বিজ্ঞান ও কার্যক্রম। বয়েলের এটাই একমাত্র ভবিষ্যদ্বাণী নয়। তিনি মারা যাওয়ার পরে তার বাড়িতে পাওয়া নিজ হাতে লেখা কিছু ভবিষ্যৎ ভাবনা মানব জাতিকে চমকিত করেছে। ভাবনাগুলো হল, মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি, উড়ান প্রযুক্তি ও চিরস্থানী আলো, ঘুমের ট্যাবলেট, কৃত্রিম উত্তেজক, অবসাদ দূর করার ওষুধ এবং কল্পনাশক্তি বৃদ্ধির ওষুধের আবিষ্কার।
* নিজের মৃত্যুর দিনক্ষণ আগেই জানতেন মার্ক টোয়েন : মার্ক টোয়েন একজন আমেরিকান সাহিত্যিক। বিখ্যাত কিছু বইয়ের জনক। টয়েন নিজে যেমন বিখ্যাত তেমনই তার মৃত্যু রহস্যটিও সবার মুখে মুখে। টয়েন নিজের মৃত্যুর দিন ও সময় সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যা হুবহু মিলে যেতে দেখে হতবাক হয়েছিলেন সবাই। আজও এ ব্যাপারটি অমীমাংসিত রহস্য। টোয়েন লিখেছিলেন, ১৮৩৫ সালে তার জন্মের সময় আকাশে হ্যালির ধূমকেতু দেখা গিয়েছিল। তিনি জানিয়েছিলেন, ধূমকেতুর পুনরাবির্ভাবের সময় তার মৃত্যু হবে। ১৯১০ সালে মার্ক টোয়েনের জীবনাবসানের সঙ্গে সঙ্গে রাতের আকাশে ফের দেখা দেয় দ্য হ্যালিস কমেট। মৃত্যু নিয়ে মার্ক টোয়েনের এ ভবিষ্যদ্বাণী কাকতালীয় বলে উড়িয়ে দেয়ার সাহস করেননি কেউ।
সাঈদ আল হাসান শিমুল
থাকলেও তেমন ব্যাপক নয়। তাই ভবিষ্যদ্বাণী মিলে গেলে মানুষের কাছে তা রহস্যময় বলেই মনে হয়। মিলে যাওয়া তেমনই ঘটনা নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন।
* ওকলাহামা শহরের বিস্ফোরণ যুক্তরাষ্ট্রের একজন আধ্যাত্মিক মিডিয়াম ট্যানা জয়। এ অ্যাধ্যাত্মিক গুরু প্রথম থেকেই নিজেকে অশরীরী আত্মার সঙ্গে মানুষের যোগসূত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করছেন। তার দাবি, তিনি বিদেহী আত্মাদের দেখতে পান এবং এ আত্মাদের সঙ্গে তার কথোপকথন হয়। আর এদের কাছেই তিনি অদূর ভবিষ্যতের ঘটনাগুলো জানতে পারেন। এভাবে তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করে থাকেন। তার এই প্রচার সবার কাছেই বিশ্বাসযোগ্য ছিল না। ১৯৯৫ সালের ঘটনা। আধ্যাত্মিক মিডিয়াম ট্যানা জয় এক রেডিও অনুষ্ঠানে সরাসরি আলাপচারিতায় জানান, কোনো এক জঙ্গি গোষ্ঠী ওকলাহামা শহরের এক বাড়িতে বিধ্বংসী বোমা বিস্ফোরণ ঘটাবে। সেসময় রেডিও জকি কথাটি উড়িয়ে দিলেও ঠিক ৯০ মিনিট পর প্রচণ্ড বিস্ফোরণে ওকলাহামার অ্যালফ্রেড পি মুরাহ ফেডেরাল বিল্ডিংটি উড়ে যায়। ঘটনার হোতা টিমথি ম্যাকভেই ও তার সঙ্গীরা পরে গ্রেপ্তার হয়। কিন্তু এ ঘটনার সঙ্গে ট্যানা জয়ের কোনো যোগসূত্র না পাওয়ায় ওকলাহামাবাসী বিস্মিত হন, যা আজও রহস্যময় একটা ঘটনা।
* অগ্নুৎপাত, সুনামি ও হারিকেন ক্যাটরিনা : পামার একজন ভবিষ্যদ্বক্তা। শুরুতে নস্ত্রাদামুর মতো পামারের কোনো জনপ্রিয়তা ছিল না। কিন্তু প্রাকৃতিক বিপর্যয় নিয়ে তার ভবিষ্যদ্বাণী পুরোপুরি ফলে যায়। ভারত মহাসাগরে আগ্নেয়গিরির উদ্গীরণ এবং সুমাত্রা ও ইন্দোনেশিয়া উপকূলে আছড়ে পড়া ভয়ঙ্কর জলোচ্ছ্বাসের কথা জানিয়েছিলেন পামার। ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর সুমাত্রা, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের ১৪টি দেশে সুনামির তাণ্ডবে প্রাণ হারান প্রায় ২,৩০,০০০ মানুষ। তিনি ২০০৫ সালের হারিকেন ক্যাটরিনা সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করে আরও জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। পামারের এসব ভবিষ্যদ্বাণীর আগে বড় আকারের ওই প্রাকৃতিক বিপর্যয়গুলোর কোনো আলামত আবহাওয়া ও ভূ-তত্ববিদদের কাছেও ছিল না।
* নিরাপত্তা ক্যামেরা : নিরাপত্তা ক্যামেরা প্রযুক্তি- যাকে আমরা সিসিটিভি বলি। নগরায়নে বর্তমানে সিসিটিভি সিস্টেম অপরিহার্য একটি অংশ। কিন্তু যখন এই নিরাপত্তা ক্যামেরা প্রতিস্থাপনে পর্যবেক্ষণ ও সংরক্ষণের কথা কেউ জানতই না, বিজ্ঞানী জর্জ অরওয়েল এ বিষয়ে তত্ত্ব লিখেন। ১৯৪৯ সালে তার উপন্যাস ‘১৯৮৪’-তে ইন্টারকানেক্টেড নিরাপত্তা ক্যামেরা জালের তত্ত্ব সম্পর্কে লিখলে তা বহু পাঠক লেখকের কল্পনা হিসেবে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। একুশ শতকে সেই প্রকল্পই কিন্তু বাস্তবায়িত হয়েছে। মজার কথা, অরওয়েলের বাড়ির মাত্র ২০০ গজের মধ্যে ৩২টি সিসিটিভির সাহায্যে প্রথম এমন পরিকল্পনা রূপ পায়।
* অঙ্গ প্রতিস্থাপন, গড় আয়ু বৃদ্ধি, ড্রাগস : রবার্ট বয়েল যার আবিষ্কৃত তত্ত্ব ‘বয়েলস ল’ পদার্থবিদ্যার একটি অতি প্রয়োজনীয় অধ্যায়। দূরদর্শী এ বিজ্ঞানী ১৬৬০ সালে পূর্বাভাস দিয়েছিলেন- ভবিষ্যতে মানুষের দেহের বিভিন্ন অঙ্গ প্রতিস্থাপনই হবে চিকিৎসার অন্যতম প্রধান উপায়। যে সময় জাদুবিদ্যা ও ঝাড়ফুঁকই ছিল চিকিৎসা সেবার বড় হাতিয়ার সে সময় এমন কথা শুনে অনেকেই তাকে পাগল ছাড়া আর কিছুই ভাবেননি। অথচ বর্তমানে বয়েলের এ ভবিষ্যৎ চিন্তাই আধুনিক চিকিৎসাশাস্ত্রের অন্যতম একটি বিজ্ঞান ও কার্যক্রম। বয়েলের এটাই একমাত্র ভবিষ্যদ্বাণী নয়। তিনি মারা যাওয়ার পরে তার বাড়িতে পাওয়া নিজ হাতে লেখা কিছু ভবিষ্যৎ ভাবনা মানব জাতিকে চমকিত করেছে। ভাবনাগুলো হল, মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি, উড়ান প্রযুক্তি ও চিরস্থানী আলো, ঘুমের ট্যাবলেট, কৃত্রিম উত্তেজক, অবসাদ দূর করার ওষুধ এবং কল্পনাশক্তি বৃদ্ধির ওষুধের আবিষ্কার।
* নিজের মৃত্যুর দিনক্ষণ আগেই জানতেন মার্ক টোয়েন : মার্ক টোয়েন একজন আমেরিকান সাহিত্যিক। বিখ্যাত কিছু বইয়ের জনক। টয়েন নিজে যেমন বিখ্যাত তেমনই তার মৃত্যু রহস্যটিও সবার মুখে মুখে। টয়েন নিজের মৃত্যুর দিন ও সময় সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যা হুবহু মিলে যেতে দেখে হতবাক হয়েছিলেন সবাই। আজও এ ব্যাপারটি অমীমাংসিত রহস্য। টোয়েন লিখেছিলেন, ১৮৩৫ সালে তার জন্মের সময় আকাশে হ্যালির ধূমকেতু দেখা গিয়েছিল। তিনি জানিয়েছিলেন, ধূমকেতুর পুনরাবির্ভাবের সময় তার মৃত্যু হবে। ১৯১০ সালে মার্ক টোয়েনের জীবনাবসানের সঙ্গে সঙ্গে রাতের আকাশে ফের দেখা দেয় দ্য হ্যালিস কমেট। মৃত্যু নিয়ে মার্ক টোয়েনের এ ভবিষ্যদ্বাণী কাকতালীয় বলে উড়িয়ে দেয়ার সাহস করেননি কেউ।
সাঈদ আল হাসান শিমুল