মঙ্গলবার, ৮ মার্চ, ২০১৬

আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ইতিহাস

যখন ইউরোপ-আমেরিকাজুড়ে শিল্প বিপ্লব ঘটে তখন নতুন নতুন আবিষ্কারে বিশ্বজুড়ে এক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ওই সময় চোখে পড়ে শিল্প-কারখানায় নারী ও পুরুষের মধ্যে মতভেদ। নারীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সামাজিক, পারিবারিক ও অর্থনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। অধিকার আদায়ের নানা উল্লেখযোগ্য ঘটনায় আজকের ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। 

১৯০৯ সাল : আমেরিকান সোসিয়ালিস্ট পার্টি এ বছর ২৮ ফেব্র“য়ারিকে নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। সারা আমেরিকায় ২৮ ফেব্র“য়ারি নারী দিবস পালিত হয়। ১৯১৩ সাল পর্যন্ত ফেব্র“য়ারির শেষ রোববার নারী দিবস হিসেবে পালন করে আমেরিকানরা।
১৯১০ সাল : ১৯১০ সালে একটি সমাজতান্ত্রিক আন্তর্জাতিক সম্মেলন হয় কোপেনহেগেনে। এই সম্মেলনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করার প্রস্তাবটি প্রথম গৃহীত হয়। প্রস্তাবটি বিপুল জনসমর্থন পায়। ১৭টি দেশের ১০০ জন নারী সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, যাদের মধ্যে ফিনল্যান্ডের তিনজন নির্বাচিত নারী প্রতিনিধির কথা উল্লেখ্য। যদিও কোন নির্দিষ্ট তারিখ চিহ্নিত করা হয়নি এই সম্মেলনে।
১৯১১ সাল : ১৯১১ সালে ১৯ মার্চ নারী দিবস হিসেবে পালিত হয় ডেনমার্ক, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া এবং জার্মানিতে। দেশগুলোতে সব মিলিয়ে দশ লাখ নারী-পুরুষ মিছিল করে দাবি জানায়, নারী ও পুরুষের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন রকমের মতভেদ দূর করার। তার কিছুদিন পরেই ইতিহাস প্রত্যক্ষ করে এক ভয়াবহ দৃশ্যপট। ট্রাইএঙ্গেল ফায়ার নামে খ্যাত এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিউইয়র্কে মৃত্যুবরণ করে ১৪০ জন নারী শ্রমিক। এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নারী দিবস তথা আন্তর্জাতিক শ্রমিক আইনের মোড় নতুন দিকে ঘুরিয়ে দেয়।
১৯১৩-১৯১৪ : এই সময়ের মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসে নারীদের অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে। তখন প্রথম মহাবিশ্ব যুদ্ধের সূচনা। এই যুদ্ধের বিপক্ষে এবং সর্বজনীন শান্তি কামনায় রাশিয়ার নারীরা ১৯১৩ সালের ফেব্র“য়ারি মাসের শেষ রোববার আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করেন। ইউরোপের বিভিন্ন জায়গায় ৮ মার্চ এবং তার আগের ও পরের দিনগুলোতে নানা রকম র‌্যালির আয়োজন করে নারীরা। এর উদ্দেশ্য ছিল যুদ্ধের বিরোধিতা করা অথবা যুদ্ধে লিপ্ত দেশগুলোর নারীদের সঙ্গে নিজেদের সমর্থন ও সমবেদনা প্রকাশ করা।
১৯১৭ : প্রথম বিশ্বযুদ্ধে রাশিয়া ২০ লাখ লোক হারায়। এমনি অবস্থায় নারীরা আবারো ১৯১৭ সালের ফেব্র“য়ারি মাসের শেষ রোববার অবরোধ করার ঘোষণা দেন। যেটা ‘Strike for Bread and Peace’ নামে খ্যাত। রাজনৈতিক নেতারা এই অবরোধের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। কিন্তু নারীরা অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যায়। তারপরে মাত্র চার দিন পর জার বাধ্য হোন নারীদের ভোটাধিকার দিতে। রাশিয়ান গভর্মেন্ট এই অধিকার গ্রাহ্য করে। এই ঐতিহাসিক অবরোধের দিনটি জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ছিল ২৩ ফেব্র“য়ারি। জুলিয়ান ক্যালেন্ডার রাশিয়ানরা মেনে চলত। কিন্তু সারা বিশ্বে গ্রেগোরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী দিবসটি ছিল ৮ মার্চ। সেই থেকে এই দিবসটি আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। ১৯৪৫ সালে জাতিসংঘ সনদ স্বাক্ষরিত হয়। সেটাই ছিল প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক চুক্তি যেটা জেন্ডার ইনিকুয়ালিটির বিরুদ্ধে করা হয়। জাতিসংঘ সংস্থা সেই থেকে আজ অবধি নানা কাজ করে আসছে নারীদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, পারিবারিক নানা অধিকার রক্ষা করার জন্য।