নারী তুমি কি বা কে? তুমি কি কোনো ব্যক্তি না কোনো বস্তু? নাকি শুধুই একটি শব্দ। তোমার কি কোনো আত্ন-পরিচয় আছে। নাকি তুমি কখনো কারো মেয়ে,কারো বোন, কারো বউ, কারো মা ,কারো দাদিমা আরো কতকি? তোমার কি কোনো স্বকিয়তা নেই? তুমি কি তোমার পরিচয়ে পরিচিত হতে পারো না নাকি দিতে পারো না, নাকি মনে করো এইগুলোই তোমাকে সবার সামনে উপস্থিত করার
একমাত্র উপায়।নাকি ভয় পায়? নাকি পিছন থেকে কেউ তোমাকে আকঁড়ে ধরে রাখে। বেগম রোকেয়া অর্ধাঙ্গী প্রবন্ধে লিখেছে যে, নারী বেশি দূর ভাবতে পারে না। একজন পুরুষ যখন চন্দ্র, সূর্য, জয় করার স্বপ্ন দেখে, একজন নারী তখন ঘরের কোণে বসে বালিশের ওয়াড়ের দৈর্ঘ্য -প্রস্থ মাপনি দেয়। এই যদি হয় নারী তোমার অবস্থা তাহলে কেমন হবে? তুমি কিভাবে তোমার চিন্তা-শক্তির বিকাশ ঘটাবে, পুরুষের সম-পরিমাণ ভাবতে পারবে, তাদের সমানে সমান হতে পারবে। নাকি তুমি সব সময় নিকৃষ্টতর থেকে যাবে উৎকৃষ্ট মহান পুরুষ সমাজে। নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার হাত ধরে নারীরা অনেক সুযোগ-সুবিধাই তো পেল। প্রথমে পড়া-লেখার সুযোগ, তারপর ঘর থেকে বের হওয়ার সুযোগ, চাকুরি করার এবং তার সাথে সাথে চাপিয়ে দেয়া কুসংস্কার থেকেও নাকি বের হতে লাগল। এবং এতো সুযোগ পেতে পেতে নারী পেয়ে বসল আলাদিনের চেরাক; এক বিশাল তৃপ্তির দুটো শব্দের সাথে পরিচিত হল যাকে নাকি বলে অবাধ স্বাধীনতা। এই অবাধ স্বাধীনতাই নাকি বর্তমানে নারীর চরম বিপর্যয় ও দুর্দশার অন্যতম প্রধান কারণ (যা অনেকে মনে করে)। কিন্ত আমি এই অবাধ স্বাধীনতার অর্থবাচকতাও বুঝি না, অর্থদ্যোতকতাও বুঝি না। এই অবাধ স্বাধীনতা বলতে কি বুঝানো হয়? নিজের পছন্দমত জামা পড়া? নিজের মত করে চলাফেরা করা? যখন খুশি তখন বের হওয়া ইত্যাদি। হয়তবা সমাজের গুটি কয়েক নারীরাই এই কাজটা করে। কিন্ত এই চলাফেরা, পছন্দের পিছনে কাজ করে এক বিশাল ইচ্ছা-শক্তি,যা আমরা কখনো দেখিওনা, বুঝিওনা।
নারী অনেক স্বাধীনতা পেলেও এখনো ঔ মানসিক দাসত্বের মধ্যেই পড়ে আছে। সে হয়তো টাকা উপার্জন করছে কিন্ত উপার্জিত টাকা অনেক ক্ষেত্রেই তার ইচ্ছা অনুযায়ী খরচ হয় না। এমনকি বিবাহের পর পরিবর্তীত পরিস্থিতিতে খাপ খাওয়ানোর জন্য তাকে তার নিজস্ব, চেনাজানা বৈশিষ্ট্যগুলো পরিবর্তন করতে হয়। যা মোটেও একটি মেয়ের জন্য মনঃপুত নয়। কই একজন পুরুষকে তো এসব করতে হয় না? একজন পুরুষের স্বভাব ও তো একটা মেয়ের ভালো লাগতে নাও পারে। তাতে কি! এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যাবস্থা ঐসবের ধার ধারে না।
কিছুদিন আগে একটা movie দেখলাম। “মহানগর” সত্যজিৎ রায় এর পরিচালনায়। ছবির এক জায়গায় দেখা যায় এক ভাই তার বোনকে বলে, “আর কি হবে এত পড়ে?” বোন জিজ্ঞাসা করে, “কেন?” ভাই উত্তর দেয়, “কতদিন পর সেই তো হাড়ি ঠেলতে হবে, ঐটাই তোদের কাজ।” এবং বোন কিন্তু এই কথা শুনে চুপ থাকে নি। সে প্রত্যুত্তর দেয়, “আমাদের তো শেখানো হয় ঐ হাড়ি ঠেলা (domestic science)।” যা কিনা অনেক ক্ষেত্রে চাপিয়ে দেওয়ার শামিল।আমার তো তাই মনে হয়, এই সমাজ তার নিজের প্রয়োজনে অনেক কিছু করতে পারে।হাড়ি ঠেলার মত অনেক কাজই আছে যা মনে করা হয় শুধু মহিলাদের কাজ।আমার মনে তখন প্রশ্ন জাগে আসলে কি তাই?কে ঠিক করে দিল ঐ বিধান? কে বলে দিল অন্তর মহলের কাজগুলো শুধু তাকেই করতে হবে।আমার কোনো সমস্যা নেই এতে কারণ অনেক মেয়েরাই এতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ বোধ করে ,আমি নিজেও করি। কিন্তু ঝামেলা তখনই হয়, তখনই বিরক্ত আসে যখন একজন পুরুষ মনে করে ঐ কাজগুলোর সংস্পর্শে গেলে বড় ধরণের পাপ হয়ে যাবে, তার পুরুষত্ব কমে যাবে (যদিও সবাই এক না)।
ভুল আমাদেরও আছে। আমরা নারীরা ঐ বাণী গুলো মন্ত্র হিসেবে গলাধঃকরণ করি। কোন সময় তা সয়ে যায়, আবার মাঝে মধ্যে তা বমি হয়ে যায় একটু স্বাধীনতার ছোঁয়ায়। এবং এই স্বাধীনতা শব্দটি থেকে বঞ্চিত হতে হতে সে বোঝেনা এটাকে কোন দিকে ব্যবহার করবে? কিভাবে করবে? যেন তারা এক আলো-বাতাস সম্পন্ন অন্ধকার গুহা থেকে বের হয়ে এক রক্ত মাংসে গড়া আলোক -সমপন্ন রূপ-কথার দেশে পা দিলো। তাদের এই দ্বিধান্বিত অবস্থা মাঝে মাঝে জন্ম দেয় উগ্রতা, যেটা মোটেও কাম্য নয়। একজন পুরুষের মুখ থেকে প্রায়ই শোন যায়, নারী তুমিতো কিছুই বোঝো না, কিছুই জানো না, তোমাকে দিয়ে কিছুই হবে না, চুপ থাকো। এই চুপ থাকা তাকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অসাড় করে দেয়। সে জেনেও কিছু বলতে পারে না, পরিবেশের প্রতিকূলতা কে অনূকুলে আনতে পারে না। তাহলে কি একজন নারী বলতে পারে না, তুমিতো (পুরুষ) জানোই আমি কিছু জানি না, কিছু বুঝি না, কিছু পাড়ি না, আমার জন্য নাকী তোমার ঐ সাজানো সমাজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তাহলে তুমি চুপ করে বসে কেন? এর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছো না কেনো? তোমার ঐ বুদ্ধি, তেজ্যোদীপ্ত, আকাশ-পাতাল জয় করার শক্তি দিয়ে ঐ বিকল, ঝড়ে পড়া অর্ধেক অংশকে এই অখিলের সামনে কেন তুলে ধরছো না?
ভয় কিসের তাদের? ভয় একটাই অধিকার পেয়ে বসলে হয়তবা তারা তাদের (পুরুষ) জায়গাতে নড়বড় হয়ে যাবে। আসলে তারা (পুরুষ) জানেই না এই অপারগতার পিছনে শত-সহস্র বছর ধরে একটা বিষয় কাজ করছে তা হল মানসিক পরিবর্তনের অভাব।
লেখক: শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, marzana.abedin@gmail.com
একমাত্র উপায়।নাকি ভয় পায়? নাকি পিছন থেকে কেউ তোমাকে আকঁড়ে ধরে রাখে। বেগম রোকেয়া অর্ধাঙ্গী প্রবন্ধে লিখেছে যে, নারী বেশি দূর ভাবতে পারে না। একজন পুরুষ যখন চন্দ্র, সূর্য, জয় করার স্বপ্ন দেখে, একজন নারী তখন ঘরের কোণে বসে বালিশের ওয়াড়ের দৈর্ঘ্য -প্রস্থ মাপনি দেয়। এই যদি হয় নারী তোমার অবস্থা তাহলে কেমন হবে? তুমি কিভাবে তোমার চিন্তা-শক্তির বিকাশ ঘটাবে, পুরুষের সম-পরিমাণ ভাবতে পারবে, তাদের সমানে সমান হতে পারবে। নাকি তুমি সব সময় নিকৃষ্টতর থেকে যাবে উৎকৃষ্ট মহান পুরুষ সমাজে। নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার হাত ধরে নারীরা অনেক সুযোগ-সুবিধাই তো পেল। প্রথমে পড়া-লেখার সুযোগ, তারপর ঘর থেকে বের হওয়ার সুযোগ, চাকুরি করার এবং তার সাথে সাথে চাপিয়ে দেয়া কুসংস্কার থেকেও নাকি বের হতে লাগল। এবং এতো সুযোগ পেতে পেতে নারী পেয়ে বসল আলাদিনের চেরাক; এক বিশাল তৃপ্তির দুটো শব্দের সাথে পরিচিত হল যাকে নাকি বলে অবাধ স্বাধীনতা। এই অবাধ স্বাধীনতাই নাকি বর্তমানে নারীর চরম বিপর্যয় ও দুর্দশার অন্যতম প্রধান কারণ (যা অনেকে মনে করে)। কিন্ত আমি এই অবাধ স্বাধীনতার অর্থবাচকতাও বুঝি না, অর্থদ্যোতকতাও বুঝি না। এই অবাধ স্বাধীনতা বলতে কি বুঝানো হয়? নিজের পছন্দমত জামা পড়া? নিজের মত করে চলাফেরা করা? যখন খুশি তখন বের হওয়া ইত্যাদি। হয়তবা সমাজের গুটি কয়েক নারীরাই এই কাজটা করে। কিন্ত এই চলাফেরা, পছন্দের পিছনে কাজ করে এক বিশাল ইচ্ছা-শক্তি,যা আমরা কখনো দেখিওনা, বুঝিওনা।
নারী অনেক স্বাধীনতা পেলেও এখনো ঔ মানসিক দাসত্বের মধ্যেই পড়ে আছে। সে হয়তো টাকা উপার্জন করছে কিন্ত উপার্জিত টাকা অনেক ক্ষেত্রেই তার ইচ্ছা অনুযায়ী খরচ হয় না। এমনকি বিবাহের পর পরিবর্তীত পরিস্থিতিতে খাপ খাওয়ানোর জন্য তাকে তার নিজস্ব, চেনাজানা বৈশিষ্ট্যগুলো পরিবর্তন করতে হয়। যা মোটেও একটি মেয়ের জন্য মনঃপুত নয়। কই একজন পুরুষকে তো এসব করতে হয় না? একজন পুরুষের স্বভাব ও তো একটা মেয়ের ভালো লাগতে নাও পারে। তাতে কি! এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যাবস্থা ঐসবের ধার ধারে না।
কিছুদিন আগে একটা movie দেখলাম। “মহানগর” সত্যজিৎ রায় এর পরিচালনায়। ছবির এক জায়গায় দেখা যায় এক ভাই তার বোনকে বলে, “আর কি হবে এত পড়ে?” বোন জিজ্ঞাসা করে, “কেন?” ভাই উত্তর দেয়, “কতদিন পর সেই তো হাড়ি ঠেলতে হবে, ঐটাই তোদের কাজ।” এবং বোন কিন্তু এই কথা শুনে চুপ থাকে নি। সে প্রত্যুত্তর দেয়, “আমাদের তো শেখানো হয় ঐ হাড়ি ঠেলা (domestic science)।” যা কিনা অনেক ক্ষেত্রে চাপিয়ে দেওয়ার শামিল।আমার তো তাই মনে হয়, এই সমাজ তার নিজের প্রয়োজনে অনেক কিছু করতে পারে।হাড়ি ঠেলার মত অনেক কাজই আছে যা মনে করা হয় শুধু মহিলাদের কাজ।আমার মনে তখন প্রশ্ন জাগে আসলে কি তাই?কে ঠিক করে দিল ঐ বিধান? কে বলে দিল অন্তর মহলের কাজগুলো শুধু তাকেই করতে হবে।আমার কোনো সমস্যা নেই এতে কারণ অনেক মেয়েরাই এতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ বোধ করে ,আমি নিজেও করি। কিন্তু ঝামেলা তখনই হয়, তখনই বিরক্ত আসে যখন একজন পুরুষ মনে করে ঐ কাজগুলোর সংস্পর্শে গেলে বড় ধরণের পাপ হয়ে যাবে, তার পুরুষত্ব কমে যাবে (যদিও সবাই এক না)।
ভুল আমাদেরও আছে। আমরা নারীরা ঐ বাণী গুলো মন্ত্র হিসেবে গলাধঃকরণ করি। কোন সময় তা সয়ে যায়, আবার মাঝে মধ্যে তা বমি হয়ে যায় একটু স্বাধীনতার ছোঁয়ায়। এবং এই স্বাধীনতা শব্দটি থেকে বঞ্চিত হতে হতে সে বোঝেনা এটাকে কোন দিকে ব্যবহার করবে? কিভাবে করবে? যেন তারা এক আলো-বাতাস সম্পন্ন অন্ধকার গুহা থেকে বের হয়ে এক রক্ত মাংসে গড়া আলোক -সমপন্ন রূপ-কথার দেশে পা দিলো। তাদের এই দ্বিধান্বিত অবস্থা মাঝে মাঝে জন্ম দেয় উগ্রতা, যেটা মোটেও কাম্য নয়। একজন পুরুষের মুখ থেকে প্রায়ই শোন যায়, নারী তুমিতো কিছুই বোঝো না, কিছুই জানো না, তোমাকে দিয়ে কিছুই হবে না, চুপ থাকো। এই চুপ থাকা তাকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অসাড় করে দেয়। সে জেনেও কিছু বলতে পারে না, পরিবেশের প্রতিকূলতা কে অনূকুলে আনতে পারে না। তাহলে কি একজন নারী বলতে পারে না, তুমিতো (পুরুষ) জানোই আমি কিছু জানি না, কিছু বুঝি না, কিছু পাড়ি না, আমার জন্য নাকী তোমার ঐ সাজানো সমাজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তাহলে তুমি চুপ করে বসে কেন? এর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছো না কেনো? তোমার ঐ বুদ্ধি, তেজ্যোদীপ্ত, আকাশ-পাতাল জয় করার শক্তি দিয়ে ঐ বিকল, ঝড়ে পড়া অর্ধেক অংশকে এই অখিলের সামনে কেন তুলে ধরছো না?
ভয় কিসের তাদের? ভয় একটাই অধিকার পেয়ে বসলে হয়তবা তারা তাদের (পুরুষ) জায়গাতে নড়বড় হয়ে যাবে। আসলে তারা (পুরুষ) জানেই না এই অপারগতার পিছনে শত-সহস্র বছর ধরে একটা বিষয় কাজ করছে তা হল মানসিক পরিবর্তনের অভাব।
লেখক: শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, marzana.abedin@gmail.com