তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ মঞ্চে নানা রঙ্গ-তামাশা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের লড়াইও এর বাইরে নয়। এখানে অবশ্য কসরত শুরু হয় একটু আগেভাগে দলীয় মনোনয়ন জেতার দৌড় থেকে। চলমান নির্বাচনী হাওয়ায় তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। বরং
ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান উভয় দলের প্রার্থীই চিন্তাশীল ভোটারদের মন মাতিয়ে রেখেছেন নানাভাবে। এই যেমন ইসরাইল ইস্যুতে ক’দিন আগে বেরিয়ে পড়ল উভয় প্রার্থীর নোংরা অন্তর্বাস। জনসমক্ষে তা প্রদর্শনপূর্বক এদের প্রত্যেকে ভোটারদের সামনে দেখানোর চেষ্টা করলেন তাদের কত দরদ ইসরাইলের জন্য! ইসরাইলের স্বার্থ রক্ষায় কতটা বিশ্বস্ত তারা!
অন্যান্য বিষয়ের মতোই ইসরাইল ইস্যুতেও একেকবার একেক ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সর্বশেষ ক্লিভল্যান্ডে রিপাবলিকান পার্টির জাতীয় কনভেনশনে এক্ষেত্রে নতুন গভীরতা যুক্ত করেছেন তিনি। ট্রাম্পের এত পরিশ্রমের প্রয়োজন ছিল না। দশকের পর দশক ধরে স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ফিলিস্তিনি স্বপ্নের আশার গুড়ে সফলভাবে বালি দিয়ে এসেছে তার দলের নির্বাচনী ইশতেহার। সেখানে ট্রাম্প যুক্ত করেছেন আগের চেয়ে জোরালো প্রতিশ্রুতি। এ নিলামে তার হাঁকা দর দেখে শংকা হচ্ছে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে নিয়ে; যদিও হিলারি অনেকদিন ধরে বলছেন, তার মতো বন্ধু ইসরাইলের নেই। ওদিকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় না হলেও এ প্রশ্নে ইসরাইলের অবস্থান কিছুটা অসংহত। সেজন্যই বোধকরি মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইসরাইলের বিশেষ সম্পর্ক এবং হোয়াইট হাউসের সম্ভাব্য উত্তরসূরি নিয়ে উদ্বিগ্ন দেখা গেছে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে।
অথচ ক্লিভল্যান্ড জাতীয় কনভেনশনের আগে ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতি ছিল ইসরাইল ইস্যুতে আমেরিকার নিরপেক্ষ থাকার। সামরিক সহায়তার নামে বছর বছর তেল আবিবে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার তুলে দেয়ার বিরোধিতাকারী ছিলেন তিনি। তার আস্থা ছিল ইসরাইল-ফিলিস্তিন দুই রাষ্ট্র তত্ত্বে। উপরন্তু তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী স্বীকৃতি জানাতে। এ অবস্থান তার কনভেনশন-পরবর্তী অঙ্গীকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বৈকি। অন্যদিকে ডেমোক্রেট শিবিরে হিলারির চ্যালেঞ্জার ছিলেন বহিরাগত বার্নি স্যান্ডার্স। ইসরাইল ইস্যুতে স্যান্ডার্সের মতে অনেকটা ট্রাম্পের পূর্ববর্তী মতের মতো ইসরাইল ও ফিলিস্তিন উভয়ের সঙ্গে সমান ব্যবহার করা উচিত যুক্তরাষ্ট্রের। তারও আপত্তি ছিল ইসরাইলকে প্রদত্ত লাগামহীন আর্থিক সহায়তা নিয়ে। মূলত তিনিই (তথা তার বিপুল জনসমর্থন) চাপ দেন নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির দলীয় কমিটিতে ফিলিস্তিনের অধিকার আদায়ে সোচ্চার কয়েকজন ডেমোক্রেটকে যুক্ত করতে।
এখন জাতীয় কনভেনশন-পরবর্তী ঘটনাবলি ইঙ্গিত দিচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে সহসা পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ। সপ্তাহখানেক আগে ফাঁস হয় রিপাবলিকান পার্টির নির্বাচনী ইশতেহার। সেটি অত্যন্ত ইসরাইলপন্থী। দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ট্রাম্প উল্টো গর্বভরে সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, ‘তিনিই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ইসরাইলপ্রেমী।’ তার লেখায় দুই রাষ্ট্রের উল্লেখ বেমালুম চেপে গিয়ে মত দিয়েছেন, ‘প্রকৃত আমেরিকান’ ইসরাইলকে সমর্থন করে এবং ইসরাইলের প্রতি মিথ্যাভাবে আরোপিত ‘হানাদার’ আখ্যা প্রত্যাখ্যান করে। ইসরাইলের স্বার্থের পক্ষে ট্রাম্পের এ আত্মসমর্পণ এতটাই নাটকীয় ছিল যে অ্যান্টি ডিফেমেশন লিগ (এডিএল; নিউইয়র্কভিত্তিক ইসরাইলের প্রতি সহানুভূতিপরায়ণ গ্রুপ) প্রোপাগান্ডাটিকে বলেছে হতাশাজনক; তাদের আহ্বান, ইস্যুটির পুনর্মূল্যায়ন করুন রিপাবলিকান কনভেনশনে। অথচ বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু পর্যন্ত একাধিকবার বলেছেন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের কথা (কাজে যা-ই হোক)। জানা থাকা ভালো, ফিলিস্তিনে ইসরাইলি বসতি স্থাপনের কট্টর সমর্থক ডেভিড ফ্রিডম্যান ও জেসন গ্রিনবাট এখন ট্রাম্পের এ বিষয়ক পরামর্শদাতা! তার রানিং মেট ইন্ডিয়ানার গভর্নর মাইক পেনসও ইসরাইলের স্বার্থের পক্ষে উচ্চকিত।
এবার প্রশ্ন, কিসের প্রভাবে এমন নাটকীয় পরিবর্তন ট্রাম্পের অবস্থানে? দুর্ভাগ্যবশত, এটি হচ্ছে তামার বিষ (পয়সাকড়ি) এবং শুধু ট্রাম্পের বেলায় নয়, হিলারির কিছু নীতিও পাল্টে দিচ্ছে নির্বাচনী অর্থ; যা সহজে বোধগম্য। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ব্যয় তো আর কম নয়। অথচ কিছুদিন আগেও ট্রাম্পকে মনোনয়ন প্রচারণার সব পয়সা জোগাড় করতে হয়েছে নিজের ট্যাঁক (ব্যক্তিগত সম্পদ) থেকে। তার পরিমাণ আনুমানিক ৭০ মিলিয়ন ডলার। অথচ মূল নির্বাচন এখনও আসেইনি এবং সেজন্য আরও বিপুল অর্থ দরকার। দেখার বিষয়, বর্তমানে রিপাবলিকান পার্টির সর্ববৃহৎ একক চাঁদাদাতা হচ্ছেন ক্যাসিনো ব্যবসায়ী শেলডন অ্যাডেলসন। তদুপরি ভদ্রলোক বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বন্ধু। নিন্দুকরা বলে, তিনি নাকি ট্রাম্পকে ইঙ্গিত দিয়েছেন তার কিছু কথা শুনলে ট্রাম্পের প্রচারণা তহবিলে অতিরিক্ত অর্থ দেবেন তিনি। লক্ষণীয়, ২০১২ সালের নির্বাচনে মিট রমনিকেও সহায়তা জোগানো হয় এভাবে।
নির্বাচনী ব্যয়ের মতো কিছু বাড়তি পয়সা দরকার ডেমোক্রেট শিবিরেও। স্যান্ডার্সের সুবিধা ছিল, তার তহবিল জোগানদাতারা ছোট ও একাধিক। ফলে নিজ বিবেচনা ভোটারদের সামনে উপস্থান করতে পারতেন তিনি। কিন্তু হিলারির নির্ভরতা হচ্ছে মেগা ডোনাররা; তাদের মাঝে কেউ কেউ আবার ইসরাইলের স্বার্থের প্রতি অতি সংবেদনশীল। মূলত সেজন্যই স্যান্ডার্স চাপ দেয়া সত্ত্বেও নির্বাচনী ইশতেহারে ইসরাইল প্রশ্নে পূর্বাবস্থান থেকে একচুল সরেনি ডেমোক্রেটিক পার্টি। সেখানে ইসরাইলের আগ্রাসন বা বসতি স্থাপন নিয়ে কোনো বক্তব্য নেই। রয়েছে হিলারির নতুন প্রতিশ্রুতি, ইসরাইলকে বয়কটের যে কোনো আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা সর্বশক্তি দিয়ে রুখবেন তিনি।
সহজেই অনুমেয়, ইসরাইল ইস্যুতে উভয় প্রার্থীর ডিগবাজি বিরূপ প্রভাব ফেলছে ভোটারদের, বিশেষত তরুণ উদারপন্থী ডেমোক্রেটদের মনে। সাম্প্রতিক এক পিউ জরিপ বলছে, তাদের মধ্যে প্রায় ৫৭ শতাংশ ফিলিস্তিনের প্রতি বেশি সহানুভূতিশীল। অন্যদিকে কট্টর ইহুদিবাদী মনোভাব হ্রাস পেয়েছে মার্কিন ইহুদিদের। তাদের ৬১ শতাংশ বিশ্বাস করেন, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পাশে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করা সম্ভব।
এখন ইসরাইল ইস্যু থেকে ধর্মীয়-রাজনৈতিক উপাদান সরিয়ে রাখলে নিঃসন্দেহে স্পষ্ট হয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অর্থের কুপ্রভাব, যা ছড়িয়ে পড়েছে অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্রনীতির নানা স্তরে। আরও পরিষ্কার, এক্ষেত্রে দলীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে ভোটারদের। এটি দীর্ঘায়িত হলে একটা পর্যায়ে গিয়ে আবার নিশ্চুপ থাকা কঠিন। কারণ কসরত দেখিয়ে পয়সা কামাতে গিয়ে ইসরাইল ইস্যুকে যত বেশি ভুলভাবে নাড়াচাড়া করা হবে, ডজিং ড্রিবলিং করার সুযোগ ততই কমবে মধ্যপ্রাচ্যের এ অগ্নিগোলক নিয়ে।
জোনাথান কুক
কাউন্টার পাঞ্চ থেকে ভাষান্তর : জায়েদ ইবনে আবুল ফজল
জোনাথান কুক : মার্থা-গেলহর্ন পুরস্কারজয়ী ব্রিটিশ সাংবাদিক
ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান উভয় দলের প্রার্থীই চিন্তাশীল ভোটারদের মন মাতিয়ে রেখেছেন নানাভাবে। এই যেমন ইসরাইল ইস্যুতে ক’দিন আগে বেরিয়ে পড়ল উভয় প্রার্থীর নোংরা অন্তর্বাস। জনসমক্ষে তা প্রদর্শনপূর্বক এদের প্রত্যেকে ভোটারদের সামনে দেখানোর চেষ্টা করলেন তাদের কত দরদ ইসরাইলের জন্য! ইসরাইলের স্বার্থ রক্ষায় কতটা বিশ্বস্ত তারা!
অন্যান্য বিষয়ের মতোই ইসরাইল ইস্যুতেও একেকবার একেক ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সর্বশেষ ক্লিভল্যান্ডে রিপাবলিকান পার্টির জাতীয় কনভেনশনে এক্ষেত্রে নতুন গভীরতা যুক্ত করেছেন তিনি। ট্রাম্পের এত পরিশ্রমের প্রয়োজন ছিল না। দশকের পর দশক ধরে স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ফিলিস্তিনি স্বপ্নের আশার গুড়ে সফলভাবে বালি দিয়ে এসেছে তার দলের নির্বাচনী ইশতেহার। সেখানে ট্রাম্প যুক্ত করেছেন আগের চেয়ে জোরালো প্রতিশ্রুতি। এ নিলামে তার হাঁকা দর দেখে শংকা হচ্ছে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে নিয়ে; যদিও হিলারি অনেকদিন ধরে বলছেন, তার মতো বন্ধু ইসরাইলের নেই। ওদিকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় না হলেও এ প্রশ্নে ইসরাইলের অবস্থান কিছুটা অসংহত। সেজন্যই বোধকরি মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইসরাইলের বিশেষ সম্পর্ক এবং হোয়াইট হাউসের সম্ভাব্য উত্তরসূরি নিয়ে উদ্বিগ্ন দেখা গেছে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে।
অথচ ক্লিভল্যান্ড জাতীয় কনভেনশনের আগে ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতি ছিল ইসরাইল ইস্যুতে আমেরিকার নিরপেক্ষ থাকার। সামরিক সহায়তার নামে বছর বছর তেল আবিবে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার তুলে দেয়ার বিরোধিতাকারী ছিলেন তিনি। তার আস্থা ছিল ইসরাইল-ফিলিস্তিন দুই রাষ্ট্র তত্ত্বে। উপরন্তু তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী স্বীকৃতি জানাতে। এ অবস্থান তার কনভেনশন-পরবর্তী অঙ্গীকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বৈকি। অন্যদিকে ডেমোক্রেট শিবিরে হিলারির চ্যালেঞ্জার ছিলেন বহিরাগত বার্নি স্যান্ডার্স। ইসরাইল ইস্যুতে স্যান্ডার্সের মতে অনেকটা ট্রাম্পের পূর্ববর্তী মতের মতো ইসরাইল ও ফিলিস্তিন উভয়ের সঙ্গে সমান ব্যবহার করা উচিত যুক্তরাষ্ট্রের। তারও আপত্তি ছিল ইসরাইলকে প্রদত্ত লাগামহীন আর্থিক সহায়তা নিয়ে। মূলত তিনিই (তথা তার বিপুল জনসমর্থন) চাপ দেন নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির দলীয় কমিটিতে ফিলিস্তিনের অধিকার আদায়ে সোচ্চার কয়েকজন ডেমোক্রেটকে যুক্ত করতে।
এখন জাতীয় কনভেনশন-পরবর্তী ঘটনাবলি ইঙ্গিত দিচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে সহসা পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ। সপ্তাহখানেক আগে ফাঁস হয় রিপাবলিকান পার্টির নির্বাচনী ইশতেহার। সেটি অত্যন্ত ইসরাইলপন্থী। দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ট্রাম্প উল্টো গর্বভরে সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, ‘তিনিই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ইসরাইলপ্রেমী।’ তার লেখায় দুই রাষ্ট্রের উল্লেখ বেমালুম চেপে গিয়ে মত দিয়েছেন, ‘প্রকৃত আমেরিকান’ ইসরাইলকে সমর্থন করে এবং ইসরাইলের প্রতি মিথ্যাভাবে আরোপিত ‘হানাদার’ আখ্যা প্রত্যাখ্যান করে। ইসরাইলের স্বার্থের পক্ষে ট্রাম্পের এ আত্মসমর্পণ এতটাই নাটকীয় ছিল যে অ্যান্টি ডিফেমেশন লিগ (এডিএল; নিউইয়র্কভিত্তিক ইসরাইলের প্রতি সহানুভূতিপরায়ণ গ্রুপ) প্রোপাগান্ডাটিকে বলেছে হতাশাজনক; তাদের আহ্বান, ইস্যুটির পুনর্মূল্যায়ন করুন রিপাবলিকান কনভেনশনে। অথচ বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু পর্যন্ত একাধিকবার বলেছেন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের কথা (কাজে যা-ই হোক)। জানা থাকা ভালো, ফিলিস্তিনে ইসরাইলি বসতি স্থাপনের কট্টর সমর্থক ডেভিড ফ্রিডম্যান ও জেসন গ্রিনবাট এখন ট্রাম্পের এ বিষয়ক পরামর্শদাতা! তার রানিং মেট ইন্ডিয়ানার গভর্নর মাইক পেনসও ইসরাইলের স্বার্থের পক্ষে উচ্চকিত।
এবার প্রশ্ন, কিসের প্রভাবে এমন নাটকীয় পরিবর্তন ট্রাম্পের অবস্থানে? দুর্ভাগ্যবশত, এটি হচ্ছে তামার বিষ (পয়সাকড়ি) এবং শুধু ট্রাম্পের বেলায় নয়, হিলারির কিছু নীতিও পাল্টে দিচ্ছে নির্বাচনী অর্থ; যা সহজে বোধগম্য। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ব্যয় তো আর কম নয়। অথচ কিছুদিন আগেও ট্রাম্পকে মনোনয়ন প্রচারণার সব পয়সা জোগাড় করতে হয়েছে নিজের ট্যাঁক (ব্যক্তিগত সম্পদ) থেকে। তার পরিমাণ আনুমানিক ৭০ মিলিয়ন ডলার। অথচ মূল নির্বাচন এখনও আসেইনি এবং সেজন্য আরও বিপুল অর্থ দরকার। দেখার বিষয়, বর্তমানে রিপাবলিকান পার্টির সর্ববৃহৎ একক চাঁদাদাতা হচ্ছেন ক্যাসিনো ব্যবসায়ী শেলডন অ্যাডেলসন। তদুপরি ভদ্রলোক বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বন্ধু। নিন্দুকরা বলে, তিনি নাকি ট্রাম্পকে ইঙ্গিত দিয়েছেন তার কিছু কথা শুনলে ট্রাম্পের প্রচারণা তহবিলে অতিরিক্ত অর্থ দেবেন তিনি। লক্ষণীয়, ২০১২ সালের নির্বাচনে মিট রমনিকেও সহায়তা জোগানো হয় এভাবে।
নির্বাচনী ব্যয়ের মতো কিছু বাড়তি পয়সা দরকার ডেমোক্রেট শিবিরেও। স্যান্ডার্সের সুবিধা ছিল, তার তহবিল জোগানদাতারা ছোট ও একাধিক। ফলে নিজ বিবেচনা ভোটারদের সামনে উপস্থান করতে পারতেন তিনি। কিন্তু হিলারির নির্ভরতা হচ্ছে মেগা ডোনাররা; তাদের মাঝে কেউ কেউ আবার ইসরাইলের স্বার্থের প্রতি অতি সংবেদনশীল। মূলত সেজন্যই স্যান্ডার্স চাপ দেয়া সত্ত্বেও নির্বাচনী ইশতেহারে ইসরাইল প্রশ্নে পূর্বাবস্থান থেকে একচুল সরেনি ডেমোক্রেটিক পার্টি। সেখানে ইসরাইলের আগ্রাসন বা বসতি স্থাপন নিয়ে কোনো বক্তব্য নেই। রয়েছে হিলারির নতুন প্রতিশ্রুতি, ইসরাইলকে বয়কটের যে কোনো আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা সর্বশক্তি দিয়ে রুখবেন তিনি।
সহজেই অনুমেয়, ইসরাইল ইস্যুতে উভয় প্রার্থীর ডিগবাজি বিরূপ প্রভাব ফেলছে ভোটারদের, বিশেষত তরুণ উদারপন্থী ডেমোক্রেটদের মনে। সাম্প্রতিক এক পিউ জরিপ বলছে, তাদের মধ্যে প্রায় ৫৭ শতাংশ ফিলিস্তিনের প্রতি বেশি সহানুভূতিশীল। অন্যদিকে কট্টর ইহুদিবাদী মনোভাব হ্রাস পেয়েছে মার্কিন ইহুদিদের। তাদের ৬১ শতাংশ বিশ্বাস করেন, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পাশে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করা সম্ভব।
এখন ইসরাইল ইস্যু থেকে ধর্মীয়-রাজনৈতিক উপাদান সরিয়ে রাখলে নিঃসন্দেহে স্পষ্ট হয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অর্থের কুপ্রভাব, যা ছড়িয়ে পড়েছে অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্রনীতির নানা স্তরে। আরও পরিষ্কার, এক্ষেত্রে দলীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে ভোটারদের। এটি দীর্ঘায়িত হলে একটা পর্যায়ে গিয়ে আবার নিশ্চুপ থাকা কঠিন। কারণ কসরত দেখিয়ে পয়সা কামাতে গিয়ে ইসরাইল ইস্যুকে যত বেশি ভুলভাবে নাড়াচাড়া করা হবে, ডজিং ড্রিবলিং করার সুযোগ ততই কমবে মধ্যপ্রাচ্যের এ অগ্নিগোলক নিয়ে।
জোনাথান কুক
কাউন্টার পাঞ্চ থেকে ভাষান্তর : জায়েদ ইবনে আবুল ফজল
জোনাথান কুক : মার্থা-গেলহর্ন পুরস্কারজয়ী ব্রিটিশ সাংবাদিক