বৃহস্পতিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

অংক করে বের করুন বয়স ও জন্মতারিখ

গণিতের মারপ্যাঁচে ফেলে আমি আপনার বয়স বলে দিতে পারি। দেখুন কীভাবে।
আপনাকে বললাম, আপনার বয়স যা-ই হোক, সেটা আমার জানার দরকার নেই। শুধু আপনি আপনার বয়সের প্রথম অঙ্কটিকে (ডিজিট), অর্থাৎ দশকের ঘরের অঙ্কটিকে ৫ দিয়ে গুণ করুন। এই গুণফলের সঙ্গে ৩ যোগ করুন। সংখ্যাটি যদি বড় হয়ে যায়, ক্যালকুলেটর ব্যবহার করুন। এবার পুরো সংখ্যাটিকে ২ দিয়ে গুণ
করুন। এর সঙ্গে যোগ করুন আপনার বয়সের দ্বিতীয় অঙ্কটি, অর্থাৎ এককের ঘরের অঙ্কটি। মোট সংখ্যাটি থেকে বিয়োগ করুন ৬। ব্যস, আপনি আপনার বয়স বের করে ফেললেন!

কী, মিলেছে কি না?
দেখুন, পাটিগণিতের যোগ-বিয়োগ-গুণ-ভাগ দিয়ে কী সুন্দর আপনার বয়স বের করে দিলাম।
একটা উদাহরণ দিয়ে হিসাবটা আবার মিলাই। ধরা যাক, আপনার বয়স ২৭। তাহলে প্রথম অঙ্ক, ২-কে ৫ দিয়ে গুণ করলে হবে, ২ × ৫ = ১০। এর সঙ্গে ৩ যোগ করুন। যোগফল হলো, ১০ + ৩ = ১৩।
পরবর্তী ধাপে যোগফলকে দ্বিগুণ করুন। এখন সংখ্যাটি দাঁড়াল ১৩ × ২ = ২৬। মনে আছে নিশ্চয়ই যে আপনার বয়সের দ্বিতীয় অঙ্কটি হলো ৭। এই অঙ্কটি এবার যোগ করুন ২৬-এর সঙ্গে। হলো ২৬ + ৭
= ৩৩। এখন বিয়োগ করুন ৬। উত্তর ৩৩ - ৬ = ২৭, আপনার বয়স!
যদি আপনার বয়স ১০-এর কম হয়, অর্থাৎ এক অঙ্কের হয়, তাহলে বয়সের প্রথম অঙ্কটি ধরতে হবে ০। যেমন বয়স ৭ হলে সেটা ধরে নেব ০৭। প্রথম অঙ্কটি ০ ও দ্বিতীয় অঙ্কটি ৭। বয়স যদি ১০০ বা তার চেয়েও বেশি হয়, তাহলে প্রথম দুটি অঙ্কের সংখ্যাটিকে ধরতে হবে প্রথম অঙ্ক ও শেষ অঙ্কটি হবে দ্বিতীয় অঙ্ক। যেমন বয়স ১০৩ হলে প্রথম অঙ্ক ধরতে হবে ১০ ও দ্বিতীয় অঙ্ক ৩। অন্য হিসাব আগের মতোই হবে।

কেন এটা হয়?
হিসাবটা এমনভাবে করা হয় যে সব সময় আপনার বয়সটাই পাওয়া যাবে। ধরা যাক, আপনার বয়স কখ, যেখানে ক হলো দশকের ঘরের অঙ্ক এবং খ এককের ঘরের অঙ্ক। হিসাব অনুযায়ী প্রথমে ক-কে ৫ দিয়ে গুণ করলে হবে ৫ক, এর সঙ্গে যোগ করি ৩, হবে (৫ক + ৩)। এর দ্বিগুণ করলে হবে (৫ক + ৩) × ২ = ১০ক + ৬। এর সঙ্গে দ্বিতীয় অঙ্ক, খ যোগ করে ৬ বিয়োগ করি। তাহলে সংখ্যাটি দাঁড়াল (১০ক + ৬ + খ - ৬) = ১০ক + খ। এই রাশিটিই কখ-এর মান। এখানে লক্ষণীয়, তৃতীয় ধাপে দ্বিগুণ করার সময় যে বাড়তি অঙ্ক ৬ পেয়েছিলাম, সেটা শেষ ধাপে বিয়োগ করার পর বাদ হয়ে গেল। থাকল শুধু বয়সের মান।
কিন্তু আপনার জন্ম তারিখ কত?
শুধু বয়স না, গণিতের হিসাব দিয়ে আপনার জন্ম তারিখটাও বের করা যায়।
দেখা যাক কীভাবে।
প্রথমে আপনার জন্ম তারিখটা মাস-তারিখ-সাল (দুই অঙ্কে), এই কাঠামোতে লিখুন।
প্রথমে আপনার জন্ম মাসের সঙ্গে ১৮ যোগ করে ২৫ দিয়ে গুণ করুন। বলে রাখি, এই হিসাবটা বেশ জটিল। তাই ক্যালকুলেটর নিয়ে কাজ করুন।
এবার ৩৩৩ বিয়োগ করে ৮ দিয়ে গুণ করুন।
গুণফল থেকে বিয়োগ করুন ৫৫৪। এবার প্রাপ্ত সংখ্যাকে ২ দিয়ে ভাগ করুন।
প্রথম ধাপের হিসাব এ পর্যন্ত। এবার আসুন দ্বিতীয় ধাপে।
প্রাপ্ত ভাগফলের সঙ্গে আপনার জন্ম তারিখ যোগ করে ৫ দিয়ে গুণ করুন।
গুণফলের সঙ্গে ৬৯২ যোগ করে ২০ দিয়ে গুণ করুন। দ্বিতীয় ধাপের হিসাবও শেষ হলো। এবার শেষ ধাপের হিসাব।
প্রাপ্ত গুণফলের সঙ্গে আপনার জন্ম সালের শেষ দুটি অঙ্কের সমন্বয়ে গঠিত সংখ্যাটি যোগ করুন। সর্বশেষে বিয়োগ করুন ৩২ হাজার ৯৪০।
আপনি পাবেন ছয় অঙ্কের একটি সংখ্যা। এটাই আপনার জন্ম তারিখ। এর প্রথম অঙ্ক দুটি নির্দেশ করছে মাস। পরের অঙ্ক দুটি তারিখ ও শেষ অঙ্ক দুটি সাল।
আসুন পরীক্ষা করে দেখি।
ধরা যাক, আপনার জন্ম তারিখ ১৯৮২ সালের ১২ জানুয়ারি। তাহলে আপনার জন্ম তারিখটি হলো ০১-১২-৮২। নির্দেশনা অনুযায়ী হিসাবটি দাঁড়াবে, প্রথমে (০১ + ১৮) × ২৫ - ৩৩৩ = ১৪২। এরপর ১৪২ × ৮ - ৫৫৪ = ৫৮২। এই সংখ্যাকে ২ দিয়ে ভাগ করলে হবে, ৫৮২ / ২ = ২৯১।
এবার মোট ফলের সঙ্গে তারিখ যোগ করে ৫ দিয়ে গুণ করুন এবং যোগ করুন ৬৯২। হিসাটা দাঁড়াল (২৯১ + ১২) × ৫ + ৬৯২ = ২২০৭। এই সংখ্যাকে ২০ দিয়ে গুণ করুন। তাহলে পাবেন ২২০৭ × ২০ = ৪৪১৪০।
এবার শেষ ধাপে প্রাপ্ত সংখ্যার সঙ্গে জন্ম সালের শেষ দুটি অঙ্কে গঠিত সংখ্যা যোগ করে যোগফল থেকে বিয়োগ করুন ৩২৯৪০। মোট ফল (৪৪১৪০ + ৮২) - ৩২৯৪০ = ১১২৮২। এটি পাঁচ অঙ্কের একটি সংখ্যা। একে ছয় অঙ্কে প্রকাশ করলে হবে ০১১২৮২। এবার সংখ্যাটিকে জন্ম তারিখ প্রকাশের নির্ধারিত কাঠামো, অর্থাৎ মাস-তারিখ-সাল (দুই অঙ্কে) কাঠামোয় লিখলে দাঁড়াবে ০১-১২-৮২। এটাই আপনার জন্ম তারিখ। জানুয়ারি ১২, ১৯৮২!

আব্দুল কাইয়ুম

quayum@gmail.com