শুক্রবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৭

সবার জন্যে বিনামূল্যে বই কতটা যৌক্তিক | নাদিয়া বিনতে কবির

১ জানুয়ারি বাংলাদেশে পালন করা হয় জাতীয় পাঠ্যপুস্তক উত্সব। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য মতে, চলতি বছরে দেশে চার কোটি ২৬ লাখ ৩৫ হাজার ৯২৯ শিক্ষার্থীর হাতে পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়া এবার প্রথম পাঁচটি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার (চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো, সারাদি) প্রাক-প্রাথমিক স্তরের শিশুদের
মাতৃভাষায় রচিত পাঠ্যবই দেওয়া হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, ইবতেদায়ি, দাখিল ও কারিগরি স্তরের সব পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণের ব্যবস্থা করেছেন। সরকারের উদ্যোগটি প্রশংসনীয়। কিন্তু সমাজতান্ত্রিক দেশের মত সরকারকে সর্বস্তরে বিনামূল্যে বই বিতরণ করার বিষয়ে আরেকবার ভাবা প্রয়োজন। কারণ  প্রতিবছর ৩৩-৩৪ কোটি বই শিক্ষার্থীদের হাতে সময়মত পৌঁছানো বেশ কঠিন, এটি করতে গিয়ে মাঠ পর্যায় থেকে উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত সারা বছর একটি জটিলতা দেখা যায়। কারণ লেখক, কাগজ বিক্রেতা কোম্পানি, প্রেস পরিবহন সব পার্টির সঙ্গে সমন্বয় করতে হয়। এনসিটিবিকে ঠিকাদারদের সঙ্গে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে প্রিন্টিং ও দরকষাকষির মত কাজ নিয়ে। ফলে ব্যতিক্রমধর্মী, সৃজনশীল কিছু করার অবকাশ মিলছে না সংশ্লিষ্টদের। এছাড়া সময়মত বই পৌঁছানোর জন্যে দ্রুততার সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে হচ্ছে অসংখ্য ভুল। পূর্বে এ দেশের ছাপাখানা ও বাইন্ডিং প্রতিষ্ঠানসমূহ টেন্ডারের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লটে ভাগ হয়ে মানসম্মত পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করতো। ফলে সরকারের উপর বর্তমান সময়ের মত এত চাপ থাকতো না।

বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হচ্ছে। অর্থাত্ দেশে সচ্ছল জনসংখ্যার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ঠিক এ মুহূর্তে আমাদের সকল শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে বই বিতরণের প্রয়োজন মনে করছে না অনেকে। রেশনিং পদ্ধতিতে বই বিতরণের ফলে সচ্ছল, অসচ্ছল পরিবার পাচ্ছে বিনামূল্যে বই। এটি না করে আমাদের উচিত অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই বিতরণ করা। এনসিটিবির একটি বইয়ের সর্বোচ্চ মূল্য ১৯.৮৫ টাকা। সে হিসেবে প্রাথমিকের একজন শিক্ষার্থীর ৮০-৯০ টাকা এবং মাধ্যমিকে ১৫০-২০০ টাকার মধ্যে বই কেনা শেষ হবে। আর বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়া এলাকা ব্যতিত এ ব্যয়ভার বহন বেশিরভাগ পরিবারের পক্ষে বর্তমানে সম্ভব। তাই চাহিদার ভিত্তিতে বিনামূল্যে স্বল্প পরিসরে কিছু বই বিতরণ করে এক্ষেত্রে বাকি অর্থ দিয়ে শিক্ষাক্ষেত্রে অন্যান্য যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার সময় এসেছে। সরকারের এ মুহূর্তে সর্বস্তরে বই বিতরণের বিষয়টি আরেকবার ভেবে দেখা দরকার।

লেখক :শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ।





Find Nobin Kontho on Facebook