নতুন সংগ্রামের জন্য তাদের শপথ নেয়ার দিন।
মে দিবসের ইতিহাস হল একটি সংগ্রামের ইতিহাস। তা প্রথমত এ কারণে যে, সংগ্রামের মধ্য দিয়েই এই দিবসটির উদ্ভব ঘটেছিল। দ্বিতীয় কারণটি হল, শুরু থেকে আজ অবধি মে দিবস আয়োজনের ব্যাপারটি একটি সংগ্রামের বিষয় হয়ে থেকেছে। গত সোয়াশ’ বছরের বেশি সময়ের ইতিহাসে মে দিবস উদযাপনের জন্য শ্রমিক শ্রেণীকে দেশে দেশে সংগ্রাম করতে হয়েছে। সইতে হয়েছে নানা মাত্রার পুলিশি নির্যাতন, জেল-জুলুম, হুলিয়াসহ দমন-পীড়ন। তৃতীয় অরেকটি কারণ হল, শ্রমিক শ্রেণীর শত্র“দের দ্বারা নানা বিভ্রান্তি ছড়ানোর মাধ্যমে মে দিবসের মর্মবাণীকে অন্তঃসারশূন্য আনুষ্ঠানিকতা, দিকনির্দেশনাহীন করে তোলার নানা অপপ্রয়াস নিরন্তর মোকাবেলা করতে হয়েছে। এখনও মে দিবস পালন করাকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাপী কমবেশি একই পরিস্থিতি বিদ্যমান। আমাদের দেশেও দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে মে দিবস উদযাপনের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হয়েছে।
মে দিবসের ইতিহাসের দিকে নজর দিলেই এর মৌলিক সংগ্রামী চরিত্রটি স্পষ্ট হয়ে উঠবে। ১৮৮৬ সালের মে মাসে আমেরিকার শিকাগো শহরের শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘটের মূল দাবি ছিল ৮ ঘণ্টা কাজের অধিকার প্রতিষ্ঠা। ওই কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১ মে শিকাগো শহরের ৩ লাখ শ্রমিক ধর্মঘট করে রাস্তায় নেমে আসে। পরদিন রোববার থাকায় ৩ মে আরও বড় সমাবেশের ডাক দেয়া হয়। সেদিন মালিকদের গুণ্ডাবাহিনীর আক্রমণে ৬ জন শ্রমিক নিহত হয়। ক্ষোভ আরও তীব্র হয়ে ওঠে। ৪ মে শিকাগোর হে মার্কেটে সমাবেশ ডাকা হয়। সমাবেশটি শান্তিপূর্ণভাবে শেষ পর্যায়ে আসার পর, পুলিশের চর বলে সন্দেহ হওয়া এক ব্যক্তি, সমাবেশের পাশে বোমা ছুড়ে মারে। কয়েকজন পুলিশ তাতে নিহত হয়। সমাবেশকে ঘিরে থাকা বিশাল পুলিশ বাহিনী এই উস্কানির জন্যই যেন তৈরি হয়ে ছিল। সমবেত শ্রমিকদের ওপর তারা তৎক্ষণাৎ নির্বিচারে গুলিবর্ষণ শুরু করে। ৪ জন শ্রমিক নিহত হয় ও শত শত আহত হয়। শ্রমিকের রক্তে লাল হয়ে ওঠে সেই মার্কেট চত্বর। ৮ জন শ্রমিক নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের মধ্যে ৫ জনকে ফাঁসি দেয়া হয়। আমেরিকার শ্রমিকদের এই আন্দোলনের সমর্থনে বিশ্বের অন্যান্য দেশে সংহতি আন্দোলন গড়ে ওঠে। ৮ ঘণ্টা কাজের দাবি অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে। ফলে বিভিন্ন স্থানে মালিকরা বাধ্য হয়ে ৮ ঘণ্টা কর্মদিবসের দাবি মেনে নিতে শুরু করে।
এর ৩ বছর পর, ১৮৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবের শতবার্ষিকী উপলক্ষে ফ্রেডরিক অ্যাঙ্গেলসের নেতৃত্বে প্যারিসে দ্বিতীয় কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল প্রতিষ্ঠিত হয়। স্যোসালিস্ট লেবার ইন্টারন্যাশনালের সম্মেলনে জার্মান কমিউনিস্ট নেত্রী ক্লারা জেটকিনের ঘোষণা অনুযায়ী ১৮৯০ সাল থেকে প্রতিবছর ১ মে ‘মে দিবস’ পালনের সিদ্ধান্ত হয়। এভাবেই আন্তর্জাতিকভাবে মে দিবস পালনের সূচনা হয়। অর্থাৎ মে দিবসের সামগ্রিক ইতিহাসই শ্রমিক শ্রেণীর অধিকার প্রতিষ্ঠা, মুক্তি অর্জন ও আন্তর্জাতিক সংহতির লক্ষ্যে ধারাবাহিক সংগ্রামের ইতিহাস। ফলে মে দিবসের বিপ্লবী সংগ্রামের ইতিহাস ও তাৎপর্যকে ভুলে গিয়ে তাকে নিছক আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে বন্দি করার অর্থই হল শ্রমিক শ্রেণীকে তার মুক্তির লক্ষ্যে পরিচালিত সংগ্রাম থেকে বিচ্যুত করা। শ্রমিক শ্রেণীর কাছে মে দিবস হল সংগ্রামের ঐতিহ্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে নতুন সংগ্রামের জন্য উজ্জীবিত হওয়ার শপথের দিন। কারণ, এটিই হল ইতিহাসের শিক্ষা যে, সংগ্রাম ছাড়া আর কোনো পথে শ্রমিকের পক্ষে তার ন্যায্য দাবি আদায় করা সম্ভব নয়।
মে দিবস উদযাপনকে কেন্দ্র করে আমার নিজের অভিজ্ঞতার কথা একটু বলি। বেশ মনে আছে, ১৯৬৫ সালে সর্বপ্রথম আমি মে দিবসের আনুষ্ঠানিক আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত হই। সেবার তৎকালীন গোপন কমিউনিস্ট পার্টির উদ্যোগে ঢাকার উপকণ্ঠে অবস্থিত কল্যাণপুরের একটি বাসায় মে দিবস উপলক্ষে গোপন সভার আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে আমরা অর্ধশতাধিক তরুণ কমিউনিস্ট উপস্থিত ছিলাম [সে সময় কল্যাণপুর এলাকাটি ছিল একটি গ্রাম। সেখানকার বাসা-বাড়িতে যেতে হলে ঢাকা থেকে পাকা রাস্তায় বাসে করে যেয়ে, কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ডে নেমে ধানক্ষেত পার হয়ে হেঁটে যেতে হতো]। আত্মগোপনে থাকা পার্টি নেতাদের মধ্যে কমরেড আজাদ (মণি সিংহ), কমরেড আমিন (অনিল মুখার্জি), কমরেড করিম (জ্ঞান চক্রবর্তী), কমরেড কবির (মোহাম্মদ ফরহাদ) প্রমুখ সেই সভায় উপস্থিত ছিলেন। কিংবদন্তি এসব নেতাকে স্বচক্ষে দেখতে পেয়ে আমরা সেদিন অভিভূত হয়েছিলাম। তার চেয়ে বেশি অভিভূত হয়েছিলাম তাদের বক্তৃতা শুনে।
পাকিস্তান আমলে এভাবেই আমাদের গোপনে মে দিবস উদযাপন করতে হতো। নিষিদ্ধ ঘোষিত কমিউনিস্ট পার্টির উদ্যোগে সীমিত পরিসরে গোপনে আলোচনা সভার আয়োজন করতে হতো। অনেক ক্ষেত্রে তৃণমূলের কোনো পার্টি শাখার উদ্যোগে ঘরের ভেতর দরজা-জানালা বন্ধ করে হারিকেন জ্বালিয়ে, পেছনে লাল পতাকা টানিয়ে মে দিবসের অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হতো। পার্টি শাখার এ ধরনের অনুষ্ঠানে হয়তো উপস্থিতির সংখ্যা থাকত হাতেগোনা ১০-১২ জন। এরূপ প্রবল প্রতিবন্ধকতার মধ্যে এভাবেই কমিউনিস্ট কর্মীরা সে সময় মে দিবস পালনের মধ্য দিয়ে শ্রমিক শ্রেণীর মুক্তির সংগ্রাম অব্যাহত রাখার শপথ নিত।
অবশ্য সে সময় আইনসিদ্ধভাবে কর্মরত ট্রেড ইউনিয়নগুলোর উদ্যোগে মে দিবসের প্রকাশ্য অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হতো। এসব ট্রেড ইউনিয়নের অনেকগুলোই ছিল সরকারের দালাল বা সংস্কারবাদী ধারার। এসব অনুষ্ঠানে অনেক সাধারণ শ্রমিক উপস্থিত হতেন। অবশ্য ঢাকা শহরে এখনকার মতো মে দিবসে বড় কোনো সংগঠিত কেন্দ্রীয় মিছিল, র্যালি ইত্যাদি সে সময় তেমন হতো না। ট্রেড ইউনিয়নগুলো মূলত শিল্পাঞ্চলেই স্থানীয়ভাবে মে দিবসের সভার আয়োজন করত। আদমজীর বালুর মাঠ, ডেমরার পুকুরপাড়ের খেলার মাঠ, পোস্তগোলা, ঢাকেশ্বরী কটন মিল-লক্ষ্মী নারায়ণ কটন মিল সংলগ্ন গোদনাইল এলাকা ইত্যাদি স্থানে বড় শ্রমিক সমাবেশ হতো। সেসব অনুষ্ঠানে আমরা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তরুণ কমিউনিস্ট ও ছাত্র ইউনিয়ন কর্মীরা প্রবল আগ্রহ ও উদ্দীপনা নিয়ে দল বেঁধে শ্রমিক নেতাদের বক্তৃতা শুনতে এবং শ্রমিকদের সঙ্গে গল্প করতে যেতাম। ১৯৬৯-৭০ সালের দিকে এ পরিস্থিতির কিছুটা পরিবর্তন হয়েছিল। মে দিবসের অনুষ্ঠান প্রকাশ্যে অনুষ্ঠিত হওয়া শুরু হয়েছিল। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রণাঙ্গনেই আমরা মে দিবসের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলাম।
স্বাধীনতার পর মে দিবসের অনুষ্ঠান করার সুযোগ খুলে গিয়েছিল। এটি ছিল অবধারিত। এর অন্যতম কারণ হল, কারখানার শ্রমিকরা বিপুল সংখ্যায় মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। তারা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছিল। তারাই জীবন দিয়েছিল বেশি সংখ্যায়। বিজয়ীর বেশে ফিরে এসে জীবিত শ্রমিক-মুক্তিযোদ্ধারা আবার কাজে যোগ দিয়েছিল। তাদের উৎসবের দিন মে দিবস পালন ঠেকানোর সাধ্য তখন কারও ছিল না। স্বাধীন বাংলাদেশে মে দিবস রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি লাভ করেছিল। এ দিনটিকে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। মে দিবস উদযাপনের ক্ষেত্রে অনেকটাই মুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ এভাবে মে দিবস পালনের পথটিকেও মুক্ত করে দিয়েছিল। এসব বাহ্যিক আনুষ্ঠানিকতার সুযোগ আজও বহুলাংশে অব্যাহত আছে।
মে দিবস এখন শ্রমিকদের উৎসবের দিনে পরিণত হয়েছে। প্রতিবছর এই দিনে বিভিন্ন সেক্টরের ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠন জাঁকজমকপূর্ণভাবে মে দিবসের কর্মসূচি পালন করে। শ্রমিকরা দলে দলে ঢাক-ঢোল বাজিয়ে, রঙ ছিটিয়ে এসব অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। পুরুষের পাশাপাশি এখন নারী শ্রমিকরাও মে দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সব মিলিয়ে মে দিবসে ঢাকা শহর আজকাল শ্রমিকের উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়।
মে দিবস পালনের ক্ষেত্রে বাধা দূর হয়ে এ দিনটি রাষ্ট্রীয় মর্যাদা পেয়েছে ঠিকই। মে দিবস খুব জাঁকজমকের সঙ্গে উদযাপন হয় ঠিকই। এগুলো সবই সন্তুষ্টির বিষয়। কিন্তু এক্ষেত্রে বড় রকম একটি পরাজয়ের ঘটনাও ঘটে গেছে। শ্রমিক শ্রেণী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে মৌলিক অর্জন সাধন করেছিল, তার প্রায় সবটাও তাদের কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হয়েছে। অপ্রিয় সত্য হল- মে দিবসে আজকাল হৈ-চৈ আর আড়ম্বর এবং ঢাক-ঢোল ও প্রদর্শনবাদী নানা আয়োজন থাকলেও ম্লান হয়ে গেছে মে দিবসের সংগ্রামী মেজাজ ও তার আন্তর্জাতিক সংহতিবোধ। মে দিবস পালনে আপেক্ষিক মুক্ত পরিবেশ তৈরি হলেও লাখো শহীদের জীবনের বিনিময়ে অর্জিত জাতীয় মুক্তি ও স্বাধীনতার মতোই এ দেশে ‘মে দিবসের মুক্তি’ও আজ প্রচণ্ডভাবে হোঁচট খেয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছে। পেছনে পড়ে গেছে মেহনতি মানুষের মুক্তির প্রশ্নটি। শোষণ-বঞ্চনা ও নিপীড়ন থেকে মুক্ত হয়ে প্রত্যেক মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে দেশ স্বাধীন হলেও আজ পর্যন্ত সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। বরঞ্চ দেশ এখন চলছে একেবারে উল্টো পথে। অবাধ লুটপাট ও শোষণ-বৈষম্যের পথে। ‘বাজার অর্থনীতি’ দখল করে নিয়েছে সমাজতন্ত্র লক্ষ্যাভিমুখী যাত্রাপথ।
পাকিস্তান আমলে আনুষ্ঠানিকতার সুযোগ ছিল রুদ্ধ। কিন্তু মে দিবসের সংগ্রামী আহ্বান ও আন্তর্জাতিক সংহতির বোধ ছিল সমুজ্জ্বল। আর এখন? আনুষ্ঠানিকতায় মে দিবসকে সমুজ্জ্বল করা হয়েছে। কিন্তু তার সংগ্রামী আহ্বান ও আন্তর্জাতিক সংহতিবোধকে পরিকল্পিতভাবে ম্লান করে ফেলা হয়েছে।
এ যুগে সভ্যতার প্রধান নির্মাতা ও প্রগতির মূল বাহক হল শ্রমজীবী মানুষ। যে কোনো শ্রমিকের জন্য এর চেয়ে বড় ও গৌরবের কথা আর কী হতে পারে। এই উপলব্ধি থেকে বিশিষ্টজনরা শ্রমিকদের জয়গান করেছেন। তাই বলা যায়, মেহনতি মানুষের উত্থান রুখবে, এমন কোনো শক্তি পৃথিবীতে নেই। প্রশ্ন কেবল সময়ের।
রবিঠাকুরের কথায় বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষরাই হল-
‘সবচেয়ে কম খেয়ে, কম পরে, কম শিখে বাকি সকলের পরিচর্যা করে। সকলের চেয়ে বেশি তাদের অসম্মান। কথায় কথায় তারা রোগে মরে, উপোসে মরে, উপরওয়ালাদের লাথি-ঝাঁটা খেয়ে মরে। তারা সভ্যতার পিলসুজ, মাথায় প্রদীপ নিয়ে খাড়া দাঁড়িয়ে থাকে- উপরের সবাই আলো পায়, তাদের গা দিয়ে তেল গড়িয়ে পড়ে।’
মেহনতি মানুষ সম্পর্কে বিদ্রোহী কবি নজরুল লিখেছেন-
‘হাতুড়ি শাবল গাঁইতি চালায়ে ভাঙলো যারা পাহাড়
পাহাড় কাটা সে পথের দু’পাশে পড়িয়া তাদের হাড়
তোমারে সেবিতে হইলো যাহারা মজুর মুটে ও কুলি
তোমারে বহিতে যারা পবিত্র অঙ্গে লাগালো ধুলি
তারাই মানুষ, তারাই দেবতা, গাহি তাহাদেরই গান
তাদের ব্যথিত বক্ষে পা ফেলে আসে নব উত্থান।’
কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় লিখেছেন-
‘চিমনির মুখে শোন সাইরেন শঙ্খ
গান গায় হাতুড়ি ও কাস্তে
তিল-তিল মরণেও জীবন অসংখ্য
জীবনকে চায় ভালবাসতে।’
মে দিবস হল শ্রমিকের নিজস্ব দিবস। বছরের এই একটি মাত্র দিন হল শুধুই শ্রমিকের জন্য নিবেদিত দিন। এ দিন হল মেহনতি মানুষের জয়ধ্বনি করার দিন। কিন্তু এ একটি দিনের ওপরেও লোভী মালিকরা ভাগ বসাতে ছাড়েনি। দালাল নেতাদের হাত করে তারা এদিনটিতে- ‘শ্রমিক-মালিক ভাই ভাই’ এই স্লোগানকে ‘সরকারি স্লোগানে’ পরিণত করেছে।
শ্রমিক স্বার্থের অনুকূল প্রগতিশীল চিন্তা-চেতনা নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হলেও গত ৪৫ বছরে বাংলাদেশ সেখান থেকে পিছিয়ে এসেছে। মে দিবস উদযাপনের ক্ষেত্রেও এই পশ্চাদপসরণের প্রভাব পড়েছে। মে দিবসের আনুষ্ঠানিকতা এখন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রদর্শনবাদ, রাজনৈতিক শোডাউন, চাটুকারিতা, নেতা-নেত্রীভজন ইত্যাদির মধ্যে বন্দি হয়ে গেছে। এক কথায়, মে দিবস পরিণত হয়েছে অনেকটাই স্থূল আনুষ্ঠানিকতায়। এই দিনটি যে শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ধারাবাহিকতার অংশ- সে বিষয়টি ক্রমশ ভুলিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
মে দিবসের মর্মবাণী ভুলিয়ে দিয়ে তাকে বিকৃত করার পরিকল্পিত প্রয়াসকে রুখতে হবে। বুলন্দ আওয়াজ তুলতে হবে- ‘দুনিয়ার মজদুর এক হও’। ‘শ্রমিক রাজ, কৃষক রাজ কায়েম কর’। এই লক্ষ্য নিয়ে সংগ্রাম জোরদার করতে হবে।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম : সভাপতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি
selimcpb@yahoo.com