জ্যোতিষিরা গণনা করে ভবিষ্যৎ বলতে থাকলে অনেকেই আড়চোখে তাকিয়ে ভর্ৎসনা করেন। তবু ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। ভবিষ্যতের কোনো ঘটনা ভবিষ্যদ্বক্তার মুখে শুনলে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়াই অবিশ্বাসীদের প্রথম কাজ। তবে
ভবিষ্যদ্বাণী যদি সময় পেরিয়ে এসে মিলে যায় তাহলেই ব্যাপারটি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। বিখ্যাত কিছু ব্যক্তি তাদের চিন্তা-চেতনা বা দূরদর্শিতার মাধ্যমে কিছু ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন এবং ভবিষ্যতের আবিষ্কার নিয়ে কথা বলে গেছেন যা পরবর্তী সময়ে হুবহু মিলে গেছে। তেমনই কিছু রহস্যময় ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে আজকের আয়োজন।
* হিটলারের আগমন সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী : হিটলার শুধুই ইতিহাস নয়, এক বিভিষীকার নাম। পৃথিবীর ইতিহাসে তো বটেই খোদ নিজ দেশ জার্মানিতেও সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যক্তি। পৃথিবীর সভ্যতায় যার কামড়ের দাগ পড়েছিল ১৯৩৪ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত । এর প্রভাব আজও পৃথিবী বয়ে চলেছে। রহস্যের বিষয় হচ্ছে পৃথিবীর ইতিহাসে নৃশংসতম একনায়ক অ্যাডলফ হিটলারের উত্থানের ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল ১৫৫৫ সালে। এটি করেছিলেন ইতিহাসখ্যাত ফরাসি ভবিষ্যদ্বক্তা নস্ত্রাদামু। নাৎসি শাসকের জন্মবৃত্তান্ত ও নিষ্ঠুরতার কথা তিনি ‘লেস প্রফেতিস’ নামের বইটিতে লিখেছিলেন। বইটি ১৫৫৫ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। সেখানে তিনি লিখেছিলেন, ‘পশ্চিম ইউরোপের এক শিশু, যে দরিদ্র ঘরে জন্ম নেবে এবং তার কথার মোহে আবিষ্ট হবে বহু মানুষ।’ শিশুটির নামও লেখা আছে নস্ত্রাদামুর ভবিষ্যদ্বাণীর বইয়ে। তবে হিটলারের পরিবর্তে তিনি উল্লেখ করেছিলেন ‘হিসটার’। নস্ত্রাদামুর এ ভবিষ্যদ্বাণী আজও মানুষের মনে কৌতূহল জাগায়।
* হিরোশিমা-নাগাসাকির বিস্ফোরণ : মানুষের সামাজিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক, জীবনযাপনের প্রেক্ষাপটেই রচিত হয় উপন্যাস। ঔপন্যাসিকের লেখায় ফুটে ওঠে কোনো সময়ের সামাজিক, রাজনৈতিক ঘটনা ও জীবন প্রবাহ। সাহিত্যিক এইচ জি ওয়েলস ১৯১৪ সালে এমন একটি উপন্যাস লিখেছিলেন যার নাম ‘দ্য ওয়ার্ল্ড সেট ফ্রি’। এ উপন্যাসে তিনি মানব ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্করতম সর্বনাশের কথা লিখে গেছেন। তিনি বইটিতে লিখেছেন, মানুষে মানুষে মহাযুদ্ধ বাঁধবে। এক শক্তি আরেক শক্তিকে দমাতে আশ্রয় নেবে পারমাণবিক শক্তি প্রয়োগের মতো নৃশংস কিছুর। ধ্বংস হয়ে যাবে দুটি জনপদ। যে জনপদের সব মানুষ পিপীলিকার মতো উড়ে যাবে। আর এ গণহত্যার পরে সে অঞ্চলগুলো বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাবে। উপন্যাস প্রকাশের ঠিক ৩০ বছর পর দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্র জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে অ্যাটোম বোমা নিক্ষেপ করে। এতে সব মিলিয়ে হিরোশিমায় তিন লাখ ৭৭ হাজার ও নাগাসাকিতে দুই লাখ ৩৫ হাজার লোক মারা যায়। আজও সেই বোমার তেজষ্ক্রিয়তা বহন করে চলেছে শহর দুটি। উৎসুক পাঠকরা আজও উপন্যাসের সেই পাতাগুলোয় চোখ বোলান কিন্তু এ রহস্যের কোনো কূলকিনারা করতে পারেন না।
* টাইটানিক জাহাজের ডুবে যাওয়ার কাহিনী : এবার বলা যাক আরেকটি পিলে চমকানো ভবিষ্যদ্বাণীর কথা। বিখ্যাত সেই টাইটানিক জাহাজের কথা মোটামুটি আমরা সবাই জানি। ১৯১২ সালের ১৪-১৫ এপ্রিল উত্তর আটলান্টিকে বরফের পাহাড়ের আঘাতে দু’টুকরো হয়ে বিশাল এ জাহাজটি অতলান্তিকের অতলে হারিয়ে যায়। জাহাজডুবির ইতিহাসে এটি সবচেয়ে বেশি বিয়োগান্তক ঘটনা। এ ঘটনাকে নিয়ে নির্মিত হয়েছে সিনেমা, উপন্যাস নাটক, গান। কিন্তু স্বাভাবিকভাবে এসব সিনেমা, গল্প, বা উপন্যাসের বই হয়েছে টাইটানিক ডুবে যাওয়ার পরে। কিন্তু উনিশ শতকের সাহিত্যিক মর্গ্যান রবার্টসন তার একটি উপন্যাসে এ সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করে যান টাইটানিক ডোবার অনেক আগেই। ছোট গল্পের রচয়িতা মর্গ্যানের বেশির ভাগ লেখাই মাঝারি ও ছোট। তার একমাত্র ব্যতিক্রম উপন্যাস ‘ফিউটিলিটি, অর দ্য রেক অফ দ্য টাইটান’। ১৮৯৮ সালে প্রকাশিত এ বইয়ে একটি কাহিনী লেখা হয়েছে, যেখানে তিনি লিখেছেন বিশ্বের সর্ববৃহৎ ট্রিপল-স্ক্রু প্রপেলার বিশিষ্ট একটি জাহাজ উত্তর আটলান্টিকের মহাসাগরে হিমশৈলতে ধাক্কা লেগে ২৫০০ যাত্রীসহ ডুবে যায়। আশ্চর্যের বিষয়, উপন্যাস প্রকাশের ১৪ বছর পর আটলান্টিক মহাসাগরের উত্তরে একইভাবে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ডুবে যায় বিশাল যাত্রীবাহী জাহাজ আরএমএস টাইটানিক। না বললেই নয় যে টাইটানিক ছিল ট্রিপল স্ক্রু প্রপেলর জাহাজ এবং ক্রু ও যাত্রীসহ জাহাজে মানুষ ছিল মোট ২২০০, যা মর্গ্যান রবার্টসনের বইটির সংখ্যার প্রায় কাছাকছি।
সাঈদ আল হাসান শিমুল
ভবিষ্যদ্বাণী যদি সময় পেরিয়ে এসে মিলে যায় তাহলেই ব্যাপারটি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। বিখ্যাত কিছু ব্যক্তি তাদের চিন্তা-চেতনা বা দূরদর্শিতার মাধ্যমে কিছু ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন এবং ভবিষ্যতের আবিষ্কার নিয়ে কথা বলে গেছেন যা পরবর্তী সময়ে হুবহু মিলে গেছে। তেমনই কিছু রহস্যময় ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে আজকের আয়োজন।
* হিটলারের আগমন সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী : হিটলার শুধুই ইতিহাস নয়, এক বিভিষীকার নাম। পৃথিবীর ইতিহাসে তো বটেই খোদ নিজ দেশ জার্মানিতেও সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যক্তি। পৃথিবীর সভ্যতায় যার কামড়ের দাগ পড়েছিল ১৯৩৪ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত । এর প্রভাব আজও পৃথিবী বয়ে চলেছে। রহস্যের বিষয় হচ্ছে পৃথিবীর ইতিহাসে নৃশংসতম একনায়ক অ্যাডলফ হিটলারের উত্থানের ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল ১৫৫৫ সালে। এটি করেছিলেন ইতিহাসখ্যাত ফরাসি ভবিষ্যদ্বক্তা নস্ত্রাদামু। নাৎসি শাসকের জন্মবৃত্তান্ত ও নিষ্ঠুরতার কথা তিনি ‘লেস প্রফেতিস’ নামের বইটিতে লিখেছিলেন। বইটি ১৫৫৫ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। সেখানে তিনি লিখেছিলেন, ‘পশ্চিম ইউরোপের এক শিশু, যে দরিদ্র ঘরে জন্ম নেবে এবং তার কথার মোহে আবিষ্ট হবে বহু মানুষ।’ শিশুটির নামও লেখা আছে নস্ত্রাদামুর ভবিষ্যদ্বাণীর বইয়ে। তবে হিটলারের পরিবর্তে তিনি উল্লেখ করেছিলেন ‘হিসটার’। নস্ত্রাদামুর এ ভবিষ্যদ্বাণী আজও মানুষের মনে কৌতূহল জাগায়।
* হিরোশিমা-নাগাসাকির বিস্ফোরণ : মানুষের সামাজিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক, জীবনযাপনের প্রেক্ষাপটেই রচিত হয় উপন্যাস। ঔপন্যাসিকের লেখায় ফুটে ওঠে কোনো সময়ের সামাজিক, রাজনৈতিক ঘটনা ও জীবন প্রবাহ। সাহিত্যিক এইচ জি ওয়েলস ১৯১৪ সালে এমন একটি উপন্যাস লিখেছিলেন যার নাম ‘দ্য ওয়ার্ল্ড সেট ফ্রি’। এ উপন্যাসে তিনি মানব ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্করতম সর্বনাশের কথা লিখে গেছেন। তিনি বইটিতে লিখেছেন, মানুষে মানুষে মহাযুদ্ধ বাঁধবে। এক শক্তি আরেক শক্তিকে দমাতে আশ্রয় নেবে পারমাণবিক শক্তি প্রয়োগের মতো নৃশংস কিছুর। ধ্বংস হয়ে যাবে দুটি জনপদ। যে জনপদের সব মানুষ পিপীলিকার মতো উড়ে যাবে। আর এ গণহত্যার পরে সে অঞ্চলগুলো বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাবে। উপন্যাস প্রকাশের ঠিক ৩০ বছর পর দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্র জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে অ্যাটোম বোমা নিক্ষেপ করে। এতে সব মিলিয়ে হিরোশিমায় তিন লাখ ৭৭ হাজার ও নাগাসাকিতে দুই লাখ ৩৫ হাজার লোক মারা যায়। আজও সেই বোমার তেজষ্ক্রিয়তা বহন করে চলেছে শহর দুটি। উৎসুক পাঠকরা আজও উপন্যাসের সেই পাতাগুলোয় চোখ বোলান কিন্তু এ রহস্যের কোনো কূলকিনারা করতে পারেন না।
* টাইটানিক জাহাজের ডুবে যাওয়ার কাহিনী : এবার বলা যাক আরেকটি পিলে চমকানো ভবিষ্যদ্বাণীর কথা। বিখ্যাত সেই টাইটানিক জাহাজের কথা মোটামুটি আমরা সবাই জানি। ১৯১২ সালের ১৪-১৫ এপ্রিল উত্তর আটলান্টিকে বরফের পাহাড়ের আঘাতে দু’টুকরো হয়ে বিশাল এ জাহাজটি অতলান্তিকের অতলে হারিয়ে যায়। জাহাজডুবির ইতিহাসে এটি সবচেয়ে বেশি বিয়োগান্তক ঘটনা। এ ঘটনাকে নিয়ে নির্মিত হয়েছে সিনেমা, উপন্যাস নাটক, গান। কিন্তু স্বাভাবিকভাবে এসব সিনেমা, গল্প, বা উপন্যাসের বই হয়েছে টাইটানিক ডুবে যাওয়ার পরে। কিন্তু উনিশ শতকের সাহিত্যিক মর্গ্যান রবার্টসন তার একটি উপন্যাসে এ সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করে যান টাইটানিক ডোবার অনেক আগেই। ছোট গল্পের রচয়িতা মর্গ্যানের বেশির ভাগ লেখাই মাঝারি ও ছোট। তার একমাত্র ব্যতিক্রম উপন্যাস ‘ফিউটিলিটি, অর দ্য রেক অফ দ্য টাইটান’। ১৮৯৮ সালে প্রকাশিত এ বইয়ে একটি কাহিনী লেখা হয়েছে, যেখানে তিনি লিখেছেন বিশ্বের সর্ববৃহৎ ট্রিপল-স্ক্রু প্রপেলার বিশিষ্ট একটি জাহাজ উত্তর আটলান্টিকের মহাসাগরে হিমশৈলতে ধাক্কা লেগে ২৫০০ যাত্রীসহ ডুবে যায়। আশ্চর্যের বিষয়, উপন্যাস প্রকাশের ১৪ বছর পর আটলান্টিক মহাসাগরের উত্তরে একইভাবে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ডুবে যায় বিশাল যাত্রীবাহী জাহাজ আরএমএস টাইটানিক। না বললেই নয় যে টাইটানিক ছিল ট্রিপল স্ক্রু প্রপেলর জাহাজ এবং ক্রু ও যাত্রীসহ জাহাজে মানুষ ছিল মোট ২২০০, যা মর্গ্যান রবার্টসনের বইটির সংখ্যার প্রায় কাছাকছি।
সাঈদ আল হাসান শিমুল