বৃহস্পতিবার, ২৫ মে, ২০১৭

বাঁশের বাঁশরী আর রণতূর্য - নজরুলের দ্বৈতসত্তার আলোচনা

১৩৪৭ বঙ্গাব্দে (১৯৪০ সাল) কলকাতার বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য-সমিতির ঈদ সম্মেলনে প্রদত্ত সভাপতির ‘স্বাধীনচিত্ততার জাগরণ’ শীর্ষক অভিভাষণে নজরুল জীবনের বৈপরীত্যের কথা ফুটিয়ে তুলেছেন শেক্সপিয়ারের ম্যাকবেথ নাটকের শুরুর দুটি পঙিক্ত সংক্ষিপ্ত করে। বললেন, ‘আমি একদিন একজন লোককে বাজার থেকে ফিরে আসবার সময় লক্ষ্য করলাম তার হাতে এক মুরগি ও আর এক হাতে রজনীগন্ধা ফুল। আমি তাকে আদর জানিয়ে
বললাম, এমন Fair and foul এর সমাবেশ একত্রে কোথাও দেখিনি।’ (নজরুল, পৃ. ৫৬২)

শুভ (প্রতীকী অর্থে রজনীগন্ধা ফুল) এবং অশুভের (প্রতীকী অর্থে মুরগি জবাই) এই সমাবেশের কথা রচনাটির পরের অংশে তিনি বয়ান করছেন তাঁর নিজের জীবনের চরম একটি অভিজ্ঞতার উল্লেখ করে। বলছেন, ‘আমার আজ বেশ মনে পড়ছে— একদিন আমার জীবনে এই মহানুভূতির কথা। আমার ছেলে মরেছে, আমার মন তীব্র পুত্রশোকে যখন ভেঙে পড়ছে, ঠিক সেদিন সে সময়ে আমার বাড়িতে হাস্নাহেনা ফুটেছে। আমি প্রাণ ভরে সেই হাস্নাহেনার গন্ধ উপভোগ করেছিলাম। এভাবেই জীবনকে উপভোগ করতে হবে— এই-ই হল পূর্ণ জীবন।’ (নজরুল, পৃ. ৫৬২)

বৈপরীত্যকে ধারণ করে কবি নজরুল জীবনের যে পূর্ণতার সংজ্ঞা দিয়েছেন, বহু আগে, ১৯২১-এর ডিসেম্বরে লেখা এবং ১৯২২-এর জানুয়ারিতে প্রকাশিত তাঁর বিখ্যাত ‘বিদ্রোহী’ কবিতায়, সেটির ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ‘মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী, আর হাতে রণতূর্য’ পঙিক্তটিতে। যদিও এই পঙিক্তটির মাধ্যমে নজরুলের প্রেম ও দ্রোহ দ্বৈত সত্তার সহাবস্থানের প্রকাশ পেয়েছে, কিন্তু ঠিক বৈপরীত্যের সম্মিলন এখানে ঘটেনি, যেটি ঘটেছে উপরে উদ্ধৃত তাঁর গদ্যাংশে, যেটি তিনি লিখেছিলেন নির্বাক হয়ে যাবার বছর দুয়েক আগে। যে খোঁজটি করার জন্য বর্তমান প্রবন্ধটি লিখছি, সেটি হচ্ছে নজরুলের চেতনায় বৈপরীত্যের সমাবেশকরণের চিন্তা আকস্মিকভাবে উদয় হয়েছে তা নয়, বরং মনে হচ্ছে তাঁর মাত্র তেইশ বছরের সক্রিয় সাহিত্যিক ও সাংগীতিক জীবনে তিনি সর্বক্ষণ বৈপরীত্যের শুধু সহাবস্থান নয়, তাকে উত্তরণ করে মেলবন্ধনের চর্চায় মগ্ন ছিলেন, যেটি শেক্সপিয়ারের আঙ্গিকে আসবে এভাবে যে শুভর মধ্যে অশুভ লুকিয়ে আছে, আর অশুভের মধ্যে শুভ। কিন্তু ‘বিদ্রোহী’ পর্বে যেমন বিপরীত সত্তা দুটি একসাথে থাকলেও একসাথে থাকেনি, মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠের মতো একসাথে হলেও থেকেছে আলাদা, যার স্পষ্ট চিত্রকল্প হল দুটি আলাদা হাত, যার একটিতে ধৃত প্রেমের বাঁশি, অন্যটিতে রণশিঙ্গা। অতঃপর নজরুল যত পরিণতির দিকে গেছেন তত দেখা যাচ্ছে, এই দ্বৈতসত্তা একটি আরেকটির সঙ্গে তুল্যমূল্য হয়ে যাচ্ছে। দুটো সহাবস্থানরত পরস্পরবিরোধী সত্তা ক্রমশ কী করে একটি সত্তায় পরিণত হয়ে যাচ্ছে, কী করে দুটো নদীর পরস্পর বিচ্ছিন্ন স্রোতধারা একটি তরঙ্গিণীতে মিলিত হচ্ছে, তার একটি তাত্ত্বিক ভিত্তি ফুটিয়ে তোলাই বর্তমান প্রবন্ধের উদ্দেশ্য। অবশ্য আমরা এও স্বীকার করে নিচ্ছি যে জীবনের বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে প্রেম এবং দ্রোহ পরস্পরবিরোধী সত্তা নয়, কেননা পৃথিবীর ইতিহাসে সৈনিক-প্রেমিক কিংবা প্রেমিক-সৈনিকের দেখা নিত্য পাই, কিন্তু নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতা থেকে উদ্ধৃত পঙিক্তটির অর্থ হলো নজরুল প্রেমিক সত্তা এবং সৈনিক সত্তাকে পরস্পরবিরোধী সত্তা হিসেবে মনে করতেন। ‘বিদ্রোহী’ কবিতা প্রকাশের বছরেই, অর্থাত্ ১৯২২ সালে প্রকাশিত তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘ব্যথার দান’ শীর্ষক গ্রন্থে ‘ব্যথার দান’ গল্পে দারার অনুযোগ তাঁর মৃতা মায়ের প্রতি, কেন তিনি বেদৌরাকে তাঁর স্ত্রী হিসেবে ঘাড়ে চাপিয়ে গেলেন। এখানে অনুধাবনযোগ্য : “লোহার শিকল ছিন্ন ক’রবার ক্ষমতা আমার আছে, কিন্তু ফুলের শিকল দ’লে যাবার মতো নির্মম শক্তি তো আমার নেই।” (নজরুল, পৃ. ৩০২)

লোহার শিকলের অবরুদ্ধতা ভাঙার বিদ্রোহী তেজ নজরুলের ছিল : ‘কারার ঐ লোহ-কবাট / ভেঙে ফেল্্, কর্্ রে লোপাট’ (নজরুল, ‘ভাঙার গান’, পৃ. ৩৯), কিন্তু ফুলের শিকলের কোমলতা দলে যাবার শক্তি নজরুলের ছিল না। কিন্তু এই শেষের কথাটি একটু ঘুরিয়ে বলতে হবে; কারণ নজরুলের ফুলের শিকলের কোমলতা দলন করার শক্তি ছিল না ঠিকই, কিন্তু তাঁর প্রেমবিষয়ক কবিতা ও গানের একটিই যেন থিম, সেটি হলো প্রিয়া বা প্রেয়সী তাঁর হূদয়কে বরাবরই দলে গেছেন, সে জন্য তাঁর মন ভরে গেছে বিরহজনিত অভিমানে : ‘যারে হাত দিয়ে মালা দিতে পার নাই / কেন মনে রাখ তারে। / ভুলে যাও তারে ভুলে যাও একেবারে।’ (নজরুল, পৃ. ২৮৪)

তাই নজরুলের চেতনায় দ্বৈতসত্তার সহাবস্থান ঠিক প্রচলিত অর্থে সরলীকৃত বৈপরীত্যের মধ্যে যে পরস্পরবিরোধিতা, সেটি যেন নয়, বরং বিপরীত হলেও তারা যেন একে অপরকে পুষ্টি জোগান দিচ্ছে, কিন্তু দ্বৈতসত্তার পরস্পরবিরোধিতা ক্রমান্বয়ে পরস্পর পুষ্টিবিধানের প্রক্রিয়ায় পরিণত হওয়ার আদলটি নজরুলের চেতনার প্রেক্ষাপটে একটি জটিল ছকের মতো হয়েছে। এই জটিলতা বিশ্লেষণ করাই বর্তমান প্রবন্ধের উদ্দেশ্য।

তাই লেখাটিতে প্রথম দিকে থাকবে পারস্য দার্শনিক মানির দ্বৈতসত্তার তাত্ত্বিক আলোকে নজরুলের সামাজিক ও রাষ্ট্রিক জীবনে দ্বিত্ব পরিব্রাজন সম্পর্কে আলোচনা, যেখানে একদিকে থাকবে নজরুলের রাজনৈতিক বিদ্রোহের স্বরূপের ব্যাখ্যা এবং অন্যদিকে তাঁর প্রেমজনিত বিরহের প্রকৃতি নির্ধারণ। কিন্তু এই দ্বৈতসত্তার কথা বলতে বলতে আমরা পৌঁছাব সে জায়গাটিতে যেখানে আমরা বলব যে নজরুলের রাজনৈতিক চেতনা যেহেতু কোনো দলীয় রাজনৈতিক আদর্শের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না, বরং যেটি ছিল দলীয় আদর্শিক বৃত্তের বাইরে সমগ্র মানবতার আলোকে ধৌত একটি পরম মঙ্গলের দিকে ধাবিত কোনো এক অনির্বচনীয় চেতনা, সেজন্য নজরুলের দ্বৈতসত্তার পরস্পরের মধ্যে সীমারেখা যেন আর ঠিক বজায় থাকে না, বজায় থাকে না তাঁর দ্রোহ ও প্রেমের মধ্যে দ্বন্দ্ব, বরং দলাদলির বাইরে, সামাজিক, রাষ্ট্রিক ও আইনি পরিকাঠামোয় স্থিত দৃশ্যমান ভালো-মন্দ আচরণের বাইরে, প্রত্যক্ষ সংক্ষুব্ধতার বলয় ছাড়িয়ে, সেটি এক আধ্যাত্মিক নিশ্চিতির মধ্যে সমর্পিত হয়, যার ফলে মানি কথিত ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, পাপ-পুণ্যের দ্বান্দ্বিক সমীকরণের বাইরে নজরুলের নৈতিকতাবোধ, শুচিতাবোধ ও সত্যপ্রিয়তা একটি এককতা লাভ করে। এবং একেবারে শেষে গিয়ে আমরা বলব যে নজরুল যখন দ্রোহসঞ্জাত রাজনীতির মধ্যে তাঁর আদর্শের পরিপ্রেক্ষিত খুঁজে পান না, পান না সামাজিক অর্থে অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক আচরণের মধ্যেও, তখন তাঁর আত্মার শুচিতাবোধ প্রবলভাবে একটি উদ্দেশ্যের দিকে ধাবিত হয়, যার একটিই নাম হতে পারে শুধু, আত্মত্যাগ : বিদ্রোহের বেলায় সেটি প্রত্যক্ষ রাজনীতির ক্ষেত্র ছেড়ে দিয়ে নিমজ্জিত হয় এক অপরিসীম অধ্যাত্মবাদী নিশ্চয়তায়, আর প্রেমের ক্ষেত্রে বিরহের অনুপম সাধনায়। নজরুলের বিদ্রোহী সত্তার মধ্যে আত্মত্যাগের মহিমা আর তাঁর প্রেমিক সত্তার মধ্যে আত্মত্যাগের প্রেরণা একই সূত্রে গাঁথা, এবং এই জায়গায় এসে আমরা বলব যে মানির বৈপরীত্যতত্ত্বকে উত্তীর্ণ হয়ে নজরুল উপরে উদ্ধৃত ‘পূর্ণ-জীবন’-এ পৌঁছেছেন কেবল আত্মত্যাগ বা নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে।




পারস্যবাসী ধর্মীয় গুরু মানি (২১৬-২৭৬ খ্রিস্টাব্দ) এ বিশ্বাস প্রচার করেছিলেন যে মানুষের আত্মা হচ্ছে আলো এবং আঁধারের, ভালো এবং মন্দের যুদ্ধক্ষেত্র। পরবর্তী সময়ে মানিকিজম বা মানিতত্ত্ববাদের দ্বারা মানুষের চিন্তার এবং কর্মের সকল রকম বৈপরীত্যকে বোঝানো হতে থাকে। নজরুলের ‘ম্যাকবেথ’ নাটক থেকে উল্লেখের কথা আগে বলেছি। প্রথম দৃশ্যে ডাইনিরা বলছে, “Fair is foul, and foul is fair / Hover through the fog and filthy air” (১.১.১১-১২)। ম্যাকবেথ একাধারে রাজ্যের একজন গুণান্বিত বীর সেনাপতি হলেও রাজা ডানকানকে হত্যা করে তিনি নৃপতিবধের পাপে অপরাধী হন, অর্থাত্ তাঁর চরিত্রে শুভ (ফেয়ার) এবং অশুভের (ফাউল) সম্মিলন ঘটে। ইউরোপের রেনেসাঁ যুগে মানবতাবাদী চিন্তাধারার উন্মেষকালে খ্রিস্টান ধর্মের বিশ্বাসে মানির চিন্তার প্রতিফলন ঘটতে দেখা যায়। যেমন শেক্সপিয়ারের সামান্য অগ্রবর্তী নাট্যকার ক্রিস্টোফার মার্লোর বিখ্যাত নাটকে নাম চরিত্র ড. ফাউস্টাসের আত্মাকে যুদ্ধক্ষেত্র কল্পনা করে গুড অ্যাঞ্জেল এবং ব্যাড অ্যাঞ্জেলের মধ্যে বিতর্ক জুড়ে দেওয়া হয়। অন্যদিকে, ১৯৮৫ সালে আব্দুল আর. জান মোহাম্মদ নামক কেনিয়ায় জন্মগ্রহণকারী ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্কলি ক্যাম্পাসের ইংরেজির অধ্যাপক উত্তর-ঔপনিবেশিক সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করার সময় তাঁর ‘দ্য ইকোনোমি অব মানিকিয়ান অ্যালিগরি’ শীর্ষক প্রবন্ধে বললেন, ই. এম. ফর্স্টারের জনপ্রিয় উপন্যাস ‘আ প্যাসেজ টু ইন্ডিয়া মানিকিয়ান’ দ্বৈরথের উপর ভিত্তি করে রচিত। কারণ ঐ উপন্যাসের সহ-নায়িকা ইংরেজ ললনা এডেলা কোয়েস্টেডের ধারণায় ভারতে আসার আগেই এই চিন্তা তাঁর মনে প্রবিষ্ট থাকে যে ভারতীয় মুসলমান পুরুষ মাত্রই চারটি বিয়ে করে থাকে। এডেলা কোয়েস্টেড যখন ভারতীয়-ইংরেজ প্রশাসক রনি হিসলপের বাগদত্তা হয়ে ভারত সফরে আসেন তখন এই পূর্বে-প্রবিষ্ট ধারণা থেকেই তিনি মাড়াবার গুহায় তাঁর বনভোজনের সঙ্গী ডাক্তার আজিজকে জিজ্ঞেস করেন, তাঁর স্ত্রীর সংখ্যা চারজন কি না। আজিজ অপমানিত বোধ করেন, কিন্তু মানিকিয়ান দর্শনের আওতায় জান মোহাম্মদ ব্যাখ্যা করেন যে, এডেলা কোয়েস্টেডের ঔপনিবেশিক মানসিকতায় এই জ্ঞান যেহেতু প্রোথিত আছে যে ভারতীয় মুসলমান পুরুষ মাত্রই চার স্ত্রীর স্বামী, সেহেতু আজিজ যে একজন শিক্ষিত মানুষ, তাঁর রুচিবোধের কারণে তিনি যে এক স্ত্রীকেই ভালোবাসতে পারেন, এবং সাধারণ অশিক্ষিত মুসলমান ভারতীয়দের সঙ্গে তাঁকে যে এক করে দেখা যাবে না, এই সচেতনতা তাঁর (এডেলা কোয়েস্টেডের) মনে কাজ করে না। অর্থাত্, মানিকিয়ান তত্ত্বানুযায়ী এডেলা কোয়েস্টেডের কাছে সকল ভারতীয় মুসলমান পুরষের একই চরিত্র। এবং একাধিক স্ত্রী থাকা ঔপনিবেশিক বিচারে, মানিকিয়ান আলো-আঁধার, ভালো-মন্দ, সাদা-কালো সরলীকৃত বৈপরীত্যের ছকে, সকল ভারতীয় মুসলমান পুরুষ যদি একাধিক বিবাহ করার কারণে কালো বা মন্দ হয়, তাহলে বিপরীত দিক থেকে ইংরেজ পুরুষেরা হচ্ছে শ্রেয়। বলাবাহুল্য, মানিকিয়ান বৈপরীত্যতত্ত্বের আলোকে ঔপনিবেশিকতাবাদের তাত্ত্বিক আলোচনায় যিনি অগ্রগণ্য তাত্ত্বিক সেই ফিলিস্তিন-বংশোদ্ভূত আমেরিকান অধ্যাপক এডওয়ার্ড সাইদ ১৯৭৮ সালে প্রকাশিত তাঁর জগদ্বিখ্যাত গ্রন্থ ওরিয়েন্টালিজম-এ পাশ্চাত্য সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো কী কৌশলে প্রাচ্যের উপনিবেশিত দেশগুলোকে বশ এবং পরাভূত করেছিল সে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন, পশ্চিমা অধ্যাপক-তাত্ত্বিকেরা এবং রাষ্ট্রনায়কেরা প্রাচ্যবাদ নামক একটি মনগড়া জগত্ তৈরি করেন যার সঙ্গে প্রকৃত প্রাচ্যের দেশগুলোর রাজনৈতিক এবং সামাজিক কোনো মিল ছিল না। কিন্তু এই মনগড়া জগিটই পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর অমিত সামরিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক শক্তির কারণে বাস্তবের প্রাচ্যকে প্রায় নস্যাত্ করে দেয়। কাজেই প্রাচ্যবাদ বলতে পশ্চিমাদের কল্পনাপ্রসূত প্রাচ্যবাদকে বোঝায়, প্রাচ্যবাদের প্রকৃত প্রাচ্যবাদ নয়— এটিই ‘ওরিয়েন্টালিজম’ গ্রন্থটির মূল প্রতিপাদ্য। একটু উদ্ধৃত করার সুযোগ নিই : সাইদ বলছেন, “Indeed, my real argument is that Orientalism is—and does not simply represent—a considerable dimension of mode political-intellectual culture, and as such has less to do with the Orient than it does with ‘our’ world.” (p. 12)

’আওয়ার ওয়ার্ল্ড’ বলতে পশ্চিমাদের মনগড়া প্রাচ্য জগিটকে বোঝাচ্ছে, যে জগতের বাসিন্দা হয়ে এডেলা কোয়েস্টেড এই জ্ঞান আহরণ করেছেন যে ভারতীয় মুসলমান পুরুষ মাত্রই চার বিয়ে করে থাকেন।


মানির বৈপরীত্যতত্ত্বের উপর ভিত্তি করে এডওয়ার্ড সাইদ ঘুরে জান মোহাম্মদ যখন ঔপনিবেশিক সাহিত্যের স্বরূপ উদ্ঘাটন করলেন, তখন আমার মনে হয়েছে, আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রচলিত অর্থে দ্রোহ ও প্রেমের সহাবস্থান নিয়ে যে দ্বৈতসত্তার কথা আমরা বলে থাকি, তার প্ররিপ্রেক্ষিত মানিকিয়ান সরলীকৃত বৈপরীত্যের মধ্যে রেখেও আলোচনা করা যেতে পারে এই জন্য যে ফর্স্টারের ক্ষেত্রে ঔপনিবেশিকতা ছিল শাসকপক্ষের দিক থেকে অনুসন্ধান করবার একটি বিষয় যে ভারতীয়রা আসলে কেমন, অন্যদিকে নজরুলের পরিপ্রেক্ষিত ছিল শাসিতপক্ষের দিক থেকে যে ইংরেজ শাসকেরা আসলে কেমন। প্রকৃতপক্ষে ইংরেজ শাসকেরা আসলে কেমন এ ব্যাপারে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চিরদিন সংশয়ের দোলায় আন্দোলিত হলেও নজরুলের মধ্যে কোনোরূপ সংশয় কখনো কাজ করেনি: ‘স্বরাজ-টরাজ বুঝি না, ...ভারতবর্ষের এক পরমাণু অংশও বিদেশীর অধীন থাকবে না।’ (নজরুল, ‘ধূমকেতুর পথ’, পৃ. ৪৬৪)

ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী প্রশাসনের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ক কেন সংশয়পূর্ণ ছিল, কিংবা ভালোবাসা ও ঘৃণা মিশ্রিত ছিল তার একটু ব্যাখ্যা না দিলে নজরুলের সবল স্বনিষ্ঠ বিরোধিতার প্রকৃতি বোঝা যাবে না। আশি বছর পার হবার সাথে সাথে রবীন্দ্রনাথ রচনা করলেন তাঁর বিখ্যাত প্রবন্ধ ‘সভ্যতার সংকট’ (রবীন্দ্র, পৃ. ৭৪১-৪৫), যেটার অন্য নাম হতে পারে ‘মোহমুক্তি’। এই ছোট কিন্তু স্বীকারোক্তিমূলক প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ বলছেন, কিভাবে তাঁর পারিবারিক সংস্কৃতি ইংরেজি এবং ইংরেজ-বান্ধব হওয়াতে শৈশব থেকেই তিনি বড় হয়েছিলেন এই দর্শনে যে ইংরেজ এবং ইংরেজি সংস্কৃতি হচ্ছে সভ্যতার আধার : ‘এই সদাচারের [সদাচার বলতে রবীন্দ্রনাথ সনাতন আচারকে বোঝাচ্ছেন] স্থলে সভ্যতার আদর্শকে আমরা ইংরেজ জাতির চরিত্রের সঙ্গে মিলিত করে গ্রহণ করেছিলেম। আমাদের পরিবারে এই পরিবর্তন, কী ধর্মমতে কী লোকব্যবহারে, ন্যায়বুদ্ধির অনুশাসনে পূর্ণভাবে গৃহীত হয়েছিল। আমি সেই ভাবের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেছিলুম এবং সেই সঙ্গে আমাদের স্বাভাবিক সাহিত্যানুরাগ ইংরেজকে উচ্চাসনে বসিয়েছিল।’ (রবীন্দ্র, পৃ. ৭৪২)

রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর অনেক পরে, সম্ভবত, সাইদের উদ্বোধনে ঔপনিবেশিকতাবাদ একটি তত্ত্ব হিসেবে দাঁড়ায়, এবং উপরে প্রাচ্যবাদ বলতে সাইদ যে আফিমের ব্যাখ্যা করেছেন সে আফিম রবীন্দ্র-পরিবার তাঁদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে অবাধে চর্চা করেছিলেন, কিন্তু সাইদ বলার বহু আগেই রবীন্দ্রনাথের যে এই আফিমের বিষয়ে বোধোদয় হয়েছিল, সেটিও রবীন্দ্রনাথ এই একই প্রবন্ধে মর্মভেদি ভাষায় বলে গেছেন :

‘নিভৃতে সাহিত্যের রসসম্ভোগের উপকরণের বেষ্টন হতে একদিন আমাকে বেরিয়ে আসতে হয়েছিল। সেদিন ভারতবর্ষের জনসাধারণের যে নিদারুণ দারিদ্র্য আমার সম্মুখে উদ্ঘাটিত হল তা হূদয়বিদারক। অন্ন বস্ত্র পানীয় শিক্ষা আরোগ্য প্রভৃতি মানুষের শরীরমনের পক্ষে যা-কিছু অত্যাবশ্যক তার এমন নিরতিশয় অভাব বোধ হয় পৃথিবীর আধুনিক শাসনচালিত কোনো দেশেই ঘটে নি। অথচ এই দেশ ইংরেজকে দীর্ঘকাল ধরে তার ঐশ্বর্য জুগিয়ে এসেছে। যখন সভ্যজগতের মহিমাধ্যানে একান্তমনে নিবিষ্ট ছিলেম তখন কোনোদিন সভ্যনামধারী মানব আদর্শের এতবড়ো নিষ্ঠুর বিকৃত রূপ কল্পনা করতেই পারি নি; অবশেষে দেখছি, একদিন এই বিকারের ভিতর দিয়ে বহুকোটি জনসাধারণের প্রতি সভ্যজাতির অপরিসীম অবজ্ঞাপূর্ণ ঔদাসীন্য।’ (পৃ. ৭৪২)

ইংরেজদের প্রতি রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টিভঙ্গি সংশয়াচ্ছন্ন হওয়ার কারণটি ছিল এ রকম : ভারতবর্ষে ইংরেজ বা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের আগমন ঘটে মুঘল সাম্রাজ্যবাদের পতন ঘটিয়ে। ‘শত্রুর শত্রু মিত্র’ এই প্রবচন অনুযায়ী বলতে হয়, ভারতবর্ষের হিন্দু জনগোষ্ঠীর সঙ্গে বিশেষত প্রাগ্রসর হিন্দু সমাজের সঙ্গে প্রথম থেকেই ইংরেজদের রাজনৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও ব্যবসায়িক লেনদেন হতে থাকে, এবং অন্যদিকে মুসলমানেরা পরাজিতবোধ থেকে ইংরেজদের সঙ্গে সমস্ত রকম সংশ্রব এড়িয়ে চলে। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ দশক থেকে প্রথম ইউরোপীয় যুদ্ধ (বিশ্বযুদ্ধ) পর্যন্ত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের তুঙ্গস্পর্শী বিস্তার হয়, এবং লর্ড কর্নওয়ালিসের ১৭৯৩ সালের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত থেকে হিন্দু জমিদার শ্রেণি ও ঊনবিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশক থেকে, অর্থাত্ ম্যাকলের ১৮৩৫ সালের শিক্ষানীতি ঘোষণার পর থেকে, মধ্যবিত্ত শিক্ষিত হিন্দু সমাজ তৈরি হতে থাকে যারা ইংরেজি সংস্কৃতির সংস্পর্শে এসে জীবনচিন্তায় আধুনিকতার পথে অগ্রসর হয়। এবং এই লেনদেনের প্রাথমিক পর্বে অগ্রবর্তী হিন্দু পরিবারগুলোর মধ্যে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবার রবীন্দ্রনাথের পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের নেতৃত্বে সবচেয়ে অগ্রবর্তী ছিল বলে ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়। রবীন্দ্রনাথের আকাশচুম্বী প্রতিভাকে একটুও খাটো করে নয়, কিন্তু সাইদের অনুসরণে বলতে হয়, ঔপনিবেশিকতার মোহজালের যে কথা রবীন্দ্রনাথ নিজেই স্বীকার করেছেন, যেটিকে সাইদের পরবর্তী পণ্ডিত নব্য ইতিহাসবাদের প্রবক্তা অধ্যাপক স্টিফেন গ্রিনব্ল্যাট অন্য একটি প্রসঙ্গে বশীকরণ নীতি হিসেবে উপস্থাপন করেছেন, সে ঔপনিবেশিক রাজনৈতিক সন্তুষ্টিকরণ নীতির পরিকাঠামোয় বলা যায়, ঠাকুর পরিবারের একজন সন্তান যে নোবেল পুরস্কার পেতে পারেন তাও সম্ভাবনার বাইরে ছিল না।

অন্যদিকে নজরুলের উত্থানপর্বের সময় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ আর নিরঙ্কুশ শক্তিধর থাকেনি। নজরুল মুসলিম পরিবারের সন্তান ছিলেন বিধায় ছোটবেলা থেকে তাঁকে মক্তবে, মাদ্রাসায় পড়তে হয়েছে আরবি ও ফার্সি, এবং আবদুল মান্নান সৈয়দ আমাদের জানাচ্ছেন যে, নজরুল নিজেই বলেছেন, “আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সাধ ছিল পবিত্র ‘কোরআন’ শরীফের বাংলা পদ্যানুবাদ করা।” (নজরুল, পৃ. ৬৫৪)।

নজরুল কিছুটা তা করেছিলেনও, কাব্য ‘আমপারা’ গ্রন্থে ৩৮টি সুরা শানে নজুল সহকারে অনুবাদ করেছিলেন। এ রকম একটি প্রেক্ষাপটে বলতে হয়, রবীন্দ্রনাথের পক্ষে ইংরেজি ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে যে লেনদেন স্বাভাবিক ও যৌক্তিক ছিল, নজরুলের ক্ষেত্রে সেটি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাই নজরুলের পক্ষে ইংরেজবিরোধিতা বা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী প্রশাসনের বিরোধিতা করার ব্যাপারে এ রকম সার্বভৌম হওয়া সম্ভব ছিল। 

১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল অমৃতসরে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে রবীন্দ্রনাথ তাঁকে প্রদত্ত ‘স্যার’ উপাধি প্রত্যাখ্যান করেন ঐ বছরেরই ৩১ মে, আর নজরুল লেখেন বাংলা সাহিত্যে সম্ভবত সবচেয়ে উত্কর্ষ বক্রকথন সমৃদ্ধ রচনাটি, ‘ডায়ারের স্মৃতিস্তম্ভ’ শীর্ষক। নজরুল বলছেন, ডায়ার যদি উন্মাদের মতো এই আসুরিক হত্যাকাণ্ডটি না ঘটাত তাহলে ভারতবাসী বুঝতে পারত না ঔপনিবেশিক শক্তির মদমত্ততা কাকে বলে, এবং সে মার খেয়ে তাদের আত্মমর্যাদাবোধ জেগে উঠেছে। কাজেই ভারতীয়দের ঘা মেরে জাগানোর জন্য ডায়ারকে শুধু শ্রদ্ধা জানানো নয়, তাঁর সম্মানে একটি স্মৃতিস্তম্ভও তৈরি করা দরকার বলে বক্রোক্তি করলেন নজরুল। এই রচনায় নজরুলের গদ্য প্রতিবাদী সাহিত্যের অনুপম দৃষ্টান্ত, বিশদ উদ্ধৃতি না করলে তাঁর ঠাট্টা বোঝা যাবে না :

“এই ডায়ারের মতো দুর্দান্ত কসাই সেনানী যদি সেদিন আমাদিগকে এমন কুকুরের মতো করিয়া না মারিত, তাহা হইলে কি আজিকার মতো আমাদের এই হিম-নিরেট প্রাণ অভিমান-ক্ষোভে গুমরিয়া উঠিতে পারিত— না, আহত আত্মসম্মান আমাদের এমন দলিত সর্পের মতো গর্জিয়া উঠিতে পারিত? কখনই না। আজ আমাদের সত্যিকার শোচনীয় অবস্থা সাদা চোখে দেখিতে পারিয়াছি এই ডায়ারের জন্য। ডায়ারের প্রচণ্ড পদাঘাত, পৈশাচিক খুনখারাবি আমাদিগকে স্পষ্ট করিয়া আমাদের ঘৃণ্য হীন অবস্থা সম্বন্ধে সচেতন করিয়া দিয়াছে। আরো জানাইয়া দিয়াছে যে, —যে নিষ্ঠিবন মাথায় করিয়া, প্রভুর দেওয়া যে চাপ্্রাস পরিয়া, যে ছিন জুতার মালা গলায় দুলাইয়া আমরা আহামকের মতো দুনিয়ার স্বাধীন জাতিদের সামনে দাঁড়াইয়া গোলামির ঝুটা গৌরব দেখাইতে গিয়া শুধু হাস্যাস্পদ হইয়াছিলাম, তাহাতে কেহ আমাদের প্রশংসাতো করেই নাই, উল্টো আরো, ‘হট্্ যাও গোলাম কা জাত’ বলিয়া অবলীলাক্রমে লাঠির গুঁতো, বুটের টক্কর লাগাইয়াছে। তাহারা স্বাধীন— আজাদ; তাহারা আমাদের এ-হীন নীচতা, এত হেয় ভীরুতা, এমন ঘৃণ্য কাপুরুষতাকে পা দিয়া মাড়াইয়া যাইবে না তো কি মাথায় তুলিয়া লইবে?” (পৃ. ৪৪৪)

নজরুলের ঠাট্টার প্রচ্ছন্নে এই তৃপ্তিবোধও সম্ভবত আছে যে, যে ডায়ারের কীর্তি না হলে ভারতবাসীর অভিমান জেগে উঠত না, সে অভিমানের বলয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘স্যার’ উপাধি প্রত্যাখ্যানের ব্যাপারটিও সংযোজিত হতে পারে। নজরুল ইসলাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৩৮ বছরের ছোট ছিলেন, এবং ইদানীংকালের গবেষণায় প্রমাণিত হচ্ছে যে কবিগুরু নজরুলকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন, এবং জহুরি যেমন জহুর চেনে সেভাবে নজরুলের প্রতিভা সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ সর্বত্র উচ্চকিত ছিলেন। তাই নজরুল যখন অর্ধ-সাপ্তাহিক পত্রিকা ধূমকেতু সম্পাদনা ও প্রকাশ করেন ১৯২২ সালে তখন রবীন্দ্রনাথ ‘আয় চলে আয় রে ধূমকেতু / আঁধারে বাঁধ অগ্নিসেতু’ বলে একটি আশীর্বাণী পাঠালেন। কিন্তু এই ধূমকেতুর নভেম্বর মাসের একটি সংখ্যায় প্রকাশিত তাঁর কবিতা ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ ও অন্যজনের একটি কবিতার জন্য রাজরোষে পড়েন নজরুল। ফলে তিনি ১৯২২ সালের ডিসেম্বরে কুমিল্লায় গ্রেপ্তার হন, এবং ১৯২৩ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি এক বছরের জন্য কারান্তরীণ হন। কিন্তু বিচারকের আদালতে তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনের একটি দীর্ঘ আবেদন দাখিল করেন, যেটি ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’ নামে জনপ্রিয় হয়।



৪.

নজরুলের ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’ আমাদেরকে ধন্ধে ফেলার মতো একটি রচনা। বস্তুত, আমরা শুরুতে প্রস্তাবনায় যে বলেছিলাম, নজরুলের বিদ্রোহী চেতনা যতটা না রাজনৈতিক তার চেয়ে বেশি নৈয়ায়িক, সেজন্য, যে অর্থে সক্রিয় রাজনৈতিক কবি বলতে কাউকে বোঝায় সে অর্থে নজরুলের রচনা পাঠ করে তাঁর যে চিন্তা পাই তাতে তাঁকে রাজনৈতিকভাবে বিদ্রোহী বলার চাইতে ভাববাদী অর্থে বিদ্রোহী বলা যায়। যে কারণে এ কথাটা বলছি সেটি হলো ‘বিদ্রোহী’ কবিতার কবির মধ্যে কারাভাগ্য বরণ করে নেওয়ার বেলায় যে যুক্তিটি আত্মপক্ষ সমর্থনের ক্ষেত্রে বড় করে বলা হচ্ছে সেটি কোনো রাজনৈতিক বা সামাজিক প্রতিরোধের কথা নয়, বরং অ্যারিস্টটলের ধারণানুযায়ী সকল কিছুর যেন একটি নৈয়ায়িক বা নৈতিক সমাধান হবে সে রকম একটি ধারণা, যেন কবি নজরুলকে অন্যায়ভাবে দণ্ডাদেশ দেওয়ার জন্য ইংরেজ শাসকবর্গ কোনো একটি ঐশ্বরিক শাস্তি পাবে। অ্যারিস্টটলের সময় প্রতিষ্ঠিত ধর্মীয় নির্দেশ অনুযায়ী ন্যায়-নীতির একজন প্রত্যক্ষ রক্ষক বা ঈশ্বর বা সৃষ্টিকর্তা ছিলেন না, কিন্তু পাপ-পুণ্য, অপরাধ ও শাস্তির বিধান করার জন্য দেবতাকুল সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা ছিল। অ্যারিস্টটলের নৈয়ায়িক ধারণা ও প্রচলিত ধর্মীয় চিন্তার আওতায় ক্রিয়াশীল নজরুলের বিদ্রোহভাবনায় এই আস্থা বারবার প্রকাশিত হয়েছে যে কবির আত্মার মধ্যে যে ভগবান বিরাজ করেন, যিনি সত্যের বিধান করেন, যিনি সত্যের বীণা কবির হাতে সঁপে দিয়েছেন, তিনিই সকল অবিচারের বিচার করবেন। রচনাটির যেকোনো জায়গা থেকে উদ্ধৃতি দিলে উপরের কথার সমর্থন মিলবে।

‘কেন না আমি যে ভগবানের প্রিয়, সত্যের হাতের বীণা; আমি যে কবি, আমার আত্মা যে সত্যদ্রষ্টা ঋষির আত্মা। ...আমি অন্ধ-বিশ্বাসে, লাভের লোভে, রাজভয় বা লোকভয়ে মিথ্যাকে স্বীকার করতে পারি না। অত্যাচারকে মেনে নিতে পারি না। তা হলে যে আমার দেবতা আমায় ত্যাগ করে যাবে।

‘...আমার ভয় নাই, দুঃখ নাই; কেন না ভগবান আমার সাথে আছেন। আমার অসমাপ্ত কর্তব্য অন্যের দ্বারা সমাপ্ত হবে। সত্যের প্রকাশ-পীড়া নিরুদ্ধ হবে না। আমার হাতের ধূমকেতু এবার ভগবানের হাতের অগ্নি-মশাল হয়ে অন্যায়-অত্যাচারকে দগ্ধ করবে। আমার বহ্নি-এরোপ্লেনের সারথি হবেন এবার স্বয়ং রুদ্র ভগবান। অতএব, মাভৈঃ, ভয় নাই।’ (পৃ. ৪৫৩ ও ৪৫৪)

উপরোক্ত উদ্ধৃতিগুলো থেকে বোঝা যায়, মানিকিয়ানতত্ত্বের সরলীকৃত বৈপরীত্যের পরিপ্রেক্ষিতে নজরুলের দ্রোহের বিচার খানিকটা জটিল। কেননা লালন সাঁইয়ের মতো তাঁর মানবতাবোধ সকল জাত-পাতের ঊর্ধ্বে, সকল সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, এবং সৃষ্টিকর্তার কাছে সমর্পিত হবার বাসনায় উন্মুখ। তারপরও সাম্যবাদীর কবিতাগুলোর পর্বে নজরুল প্রতক্ষ্যভাবে রাজনৈতিক : ‘গাহি সাম্যের গান--/ যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান, / যেখানে মিশেছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলিম-ক্রীশ্চান।’ (‘সাম্যবাদী’, পৃ. ৫৬)

আবার নজরুলের সমাজ-স্বপ্ন শ্রেণিনির্বিশেষ্য, ধনী-গরিব ভেদাভেদবিহীন, এবং সে শ্রেণিভেদ্য সমাজের প্রতি তাঁর গর্জন : “তুমি শুয়ে র’বে তেতালার ’পরে, আমরা রহিব নিচে, / অথচ তোমারে দেবতা বলিব, সে-ভরসা আজ মিছে!” (‘কুলি-মজুর’, পৃ. ৬২) এই পর্যন্ত নজরুল রাজনৈতিক, এই পর্যন্ত তিনি ‘ধূমকেতু’, ‘লাঙ্গল’ বা ‘নবযুগ’ পত্রিকার সম্পাদক, কিন্তু রাজনৈতিক-সচেতনতা উদ্ভূত মানসিক উজ্জীবনের বাইরেও নজরুলের অন্তরস্থ যে সত্তার খবর আমরা পাই সেটি একান্তভাবে মানিকিয়ান এই অর্থে যে বৈপরীত্য বা দ্বান্দ্বিকতার একটি দিক হলো ফেয়ার বা শুভ, এবং সেখানে নজরুল মানিকিয়ান তত্ত্বের একটি প্রত্যয়ে প্রোজ্বল, আর সেটি হলো তাঁর সত্যবোধ বা শুভবোধ বা ন্যায়বোধ বা সততা, বা কিছুটা রাজনৈতিক পরিভাষায় যা কি না তাঁর স্বাবলম্বিতা। রবীন্দ্রনাথ যেমন মৃত্যুর মাস দুই আগে, ১৩ মে ১৯৪১-এ ‘রূপ-নারানের কূলে’ শীর্ষক কবিতায় লিখলেন ‘সত্য যে কঠিন, / কঠিনেরে ভালোবাসিলাম— / সে কখনো করে না বঞ্চনা’, সে রকম নজরুল ‘আমার পথ’ শীর্ষক নিবন্ধে বলছেন, ‘আমার কর্ণধার আমি। আমায় পথ দেখাবে আমার সত্য।’ (নজরুল, পৃ. ৪৫৯)

নজরুল যদিও একান্তভাবে রাজনীতি সচেতন ছিলেন, ছিলেন কিছুটা বামপন্থী রাজনৈতিক আদর্শের কর্মীও, কিন্তু তিনি ধারাবাহিক রাজনৈতিক কর্মসূচির কখনো অনুসারী ছিলেন না, ছিলেন না বলেই তাঁর রাজনৈতিক আদর্শের প্রতি একনিষ্ঠ রাজনৈতিক কর্মীদের যেমন একাধারে বীতরাগ ও স্বনিষ্ঠ কৌতূহল ছিল, যেমন মুজফ্্ফর আহ্্মদের ছিল, তেমনি তিনিও তাঁর কবিতা ও গদ্যে ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে, পরাধীনতার বিরুদ্ধে, দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে এবং ধর্মীয় কূপমণ্ডুকতার বিরুদ্ধে প্রচণ্ড বিদ্রোহ ঘোষণা করলেও, সমস্যা সমাধানের একটি যে রাজনৈতিক কৌশল বাতলে দিয়েছেন তা নয়। যেমন, ‘সাম্যবাদী’, ‘মানুষ’, ‘নারী’সহ নজরুলের বিদ্রোহী কবিতাগুলো পড়লে এটি প্রতীয়মান হয় যে তাঁর দ্রোহীচেতনার সঙ্গে সমানভাবে এগোয়নি তাঁর কৌশলচেতনা ও সমাধানচেতনা। ‘মানুষ’ কবিতার এক জায়গায় কবি বলছেন, ভিক্ষুককে মেরে দোরগোড়া থেকে ফিরিয়ে দিলে, দেবী সেটি ক্ষমা করেছেন কি না তা অনিশ্চিত : ‘সে মার রহিল জমা— / কে জানে তোমায় লাঞ্ছিতা দেবী করিয়াছে কিনা ক্ষমা!’ বা ‘নারী’ কবিতায় পাপ-পুণ্যবোধের ছবিটা আরো পরিষ্কার : ‘যুগের ধর্ম এই— / পীড়ন করিলে সে-পীড়ন এসে পীড়া দেবে তোমাকেই!’

এখানে অবশ্য এ কথাও উল্লেখযোগ্য যে অধ্যাপক প্রীতি কুমার মিত্র তাঁর ‘ডিসেন্ট অব নজরুল ইসলাম’ শীর্ষক গ্রন্থে এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে ১৯৩০ সালে তাঁর দ্বিতীয় পুত্র বুলবুলের মৃত্যুর পর কবি অধ্যাত্মবাদী হয়ে ওঠেন। নজরুলের পুত্রশোকের পরবর্তী তাঁর সকল গানে ও কবিতায় যেন ছড়িয়ে পড়ে : “...he was struck down, as if by fate, all of a sudden—a blow that would radically transmute his mind and life. This was the death of his beloved son Bulbul in early May 1930” (p. 86).

রাজনৈতিক চেতনায় যে প্রত্যক্ষতা থাকে, থাকে যে প্রতিপক্ষ শক্তিগুলোর মধ্যে আদর্শ নিয়ে দ্বন্দ্ব, বা কার্যকারণ, বা কর্মকৌশলের পরম্পরা, নজরুলে সে জায়গায় দেখি আছে তেমন একটি অধ্যাত্মবাদ, যা আগেই বলেছি, অ্যারিস্টটলের টেলিওলজিক্যাল বা নৈতিকতাপুষ্ট দর্শন অনুযায়ী গঠিত, যে দর্শনে বিধাতা কর্তৃক পাপের শাস্তি বিধান নিশ্চিত, কিন্তু সে দর্শনে রাজনৈতিক বাস্তবতা অনুপস্থিত। অনেকটা গান্ধী যে কারণে রবীন্দ্রনাথের উপর হতাশ ছিলেন, সে কারণে নজরুলের উপর রাজনৈতিক দার্শনিকেরা হতাশ হবেন সেটি নিশ্চিত।

এদিক থেকে আমি বলতে চেয়েছি যে মানিকিয়ান সরলীকৃত বৈপরীত্যের প্রেক্ষাপটে নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতার সে বিখ্যাত পঙিক্ত ‘মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী, আর হাতে রণতূর্য’ (নজরুল, পৃ. ৬) প্রচলিত অর্থে প্রেম ও দ্রোহের মধ্যে যে দ্বান্দ্বিকতার ইঙ্গিত দেয় তার চরিত্রটা এ রকম যে আপাত মনে হতে পারে, নজরুল বুঝি রণতূর্য বাজিয়ে ঔপনিবেশিকতা, পরাধীনতা, সাম্প্রদায়িকতা বা অমানবিকতার বিরুদ্ধে একটি রাষ্ট্রিক এবং সামাজিক আন্দোলনে নেমেছেন, কিন্তু আসলে প্রমাণিত হয় যে তিনি বেদ-বেদান্ত পঠিত, কোরান-শিক্ষিত একটি ধর্মীয় আচার-কাঠামোর ভিতর দিয়ে আত্মার শুদ্ধি কামনা করেছেন, যা রবীন্দ্রনাথের সত্য ধ্যানের মতোই নির্মল ও নিশ্চিত। ঠিক এ কারণেই, যেহেতু তাঁর রণস্পৃহার উত্স যতটা না সামাজিক তার চেয়ে বেশি আত্মিক ও আধ্যাত্মিক, সে জন্য এর প্রতিপক্ষ হিসেবে যখন বাঁশের বাঁশরীর কোমল এবং প্রেম-সংবেদনশীল চিত্রকল্প আসে, তখন দেখা যায় মানিকিয়ান বৈপরীত্যও এখানে প্রতিপক্ষতা তৈরি না করে একটি সহজিয়া গন্তব্যে পৌঁছেছে, যার অবলম্বন একটানা, রাত্রিদিনবিহীন, বিচ্ছেদ বা বিরহ, অর্থাত্ তাঁর বাঁশের বাঁশরী অনুযোগবিহীন, অভিমানে ভরা বিষের বাঁশিতে পরিণত হয়। নজরুলের রণস্পৃহা যদি শেষ পর্যন্ত সমর্পিত হয় গভীর এক নৈতিকতাসমৃদ্ধ আত্মিক ঋদ্ধতার মধ্যে, যেখানে একদিন দেবতা বা সৃষ্টিকর্তা পাপের শাস্তির বিধান করবেন, তাঁর বাঁশরীজাত প্রেমও সে রকম এক বিরহানল জ্বালিয়ে প্রিয়া থেকে দূরে গিয়ে অপস্রিয়মাণ হতে ভালোবাসে, এবং তা প্রচণ্ড অভিমান ভরে: ‘আমি চিরতরে দূরে চলে যাব, তবু আমারে দেব না ভুলিতে’, কিংবা ‘যারে হাত দিয়ে মালা দিতে পার নাই / কেন মনে রাখ তারে। / ভুলে যাও তারে ভুলে যাও একেবারে।’ বড় অভিমান ভরে কবি তাঁর জীবনের শেষ অভিভাষণ, ‘যদি আর বাঁশি না বাজে’ (১৯৪১, ৫ ও ৬ এপ্রিল কলকাতা মুসলিম ইনস্টিটিউট হলে বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির রজত-জুবিলি উত্সবে সভাপতির ভাষণ) শিরোনামে বললেন, ‘যদি আর বাঁশি না বাজে— আমি কবি বলে বলছিনে— আমি আপনাদের ভালবাসা পেয়েছিলাম সেই অধিকারে বলছি— আমায় ক্ষমা করবেন— আমায় ভুলে যাবেন। বিশ্বাস করুন আমি কবি হতে আসিনি, আমি নেতা হতে আসিনি— আমি প্রেম দিতে এসেছিলাম— সে প্রেম পেলেম না বলে আমি এই প্রেমহীন নীরস পৃথিবী থেকে নীরব অভিমানে চিরদিনের জন্য বিদায় নিলাম।’ (পৃ. ৫৬৫)

উপসংহার

তাহলে তাঁর যোদ্ধা মন যদি শেষ পর্যন্ত ভগবানের কাছে বিচার মানে, বলতে হয়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের যেমন ‘অন্তরে জাগিছ অন্তর্যামী’ একজন ছিলেন, নজরুলেরও তাই। প্রায় এ কথা এখন নিঃসন্দেহে বলা যাবে যে রবীন্দ্রনাথ এবং নজরুল দুজনই জীবনদর্শনে প্রকৃতপক্ষে একই ঘরানার কবি, সৃষ্টিকর্তার কাছে সমর্পিত জীবন, যদিও আপাতদৃষ্টিতে প্রভেদ অনেক বেশি মনে হয়। তবে শত বৈচিত্র্যের মধ্যেও রবীন্দ্রনাথের সকল রচনার মধ্যে একটি ঐক্য একটানা সুরের মতো কাজ করে গেছে, ‘আমার সকল রসের ধারা, / তোমাতে আজ হোক-না হারা’, অন্যদিকে নজরুলের ক্ষেত্রে দুরন্তভাবে প্রভেদগুলো চোখে পড়ে বেশি, যদিও এটি বুঝতে পারি যে অন্তর্যামীর প্রতি একই ভক্তি থেকে নজরুল ইসলামি সংস্কৃতির যেমন অনুসারী ছিলেন, তেমনি ছিলেন বৈদিক সভ্যতার পূজারী। বাহ্যিক স্তরে নজরুলের জীবনে পরস্পরবিরোধী বৈপরীত্যগুলোর মধ্যে ঠোকাঠুকি হয়েছে প্রবল, কিন্তু রবীন্দ্রনাথ যেমন বলেছেন একটি গানে, ‘আমি আমার ভুবন শূন্য করেছি তোমার পুরাতে আশ’, কিংবা আরেকটি গানে, ‘আমার সকল নিয়ে বসে আছি সর্বনাশের আশায়’, তেমনি ‘আমার কৈফিয়ত’ শীর্ষক কবিতায় নজরুল তাঁর বৈপরীত্য নিয়ে অন্যদের সমালোচনার একটি ফিরিস্তি সরস ভাষায় দিলেও শেষ পর্যন্ত তিনি আস্থা রাখতে বলছেন তাঁর একক সত্তার ওপর, যেটি তাঁর কবিসত্তা, কিংবা যেটি সকল বৈপরীত্যের যুযুধান অবস্থানকে প্রশমিত করে দিয়ে প্রকাশ করছে চিরদিনের দীন নজরুলকে।

“বন্ধু গো আর বলিতে পারি না, বড় বিষ-জ্বালা এই বুকে!/ দেখিয়া শুনিয়া ক্ষেপিয়া গিয়াছি, তাই যাহা আসে কই মুখে।/ রক্ত ঝরাতে পারি না ত একা,/ তাই লিখে যাই এ রক্ত-লেখা,/ বড় কথা বড় ভাব আসে না ক’ মাথায়, বন্ধু, বড় সুখে!/ অমর কাব্য তোমরা লিখিও, বন্ধু, যাহারা আছ সুখে!” (নজরুল, পৃ. ৭২-৩)

যে কবি শত সহস্র তরুণ যুবকের মনে স্বাধীনতার আগুন জ্বেলে দিয়েছিলেন, যে কবি রবীন্দ্রযুগে পর্যন্ত দ্বিতীয় প্রধান কবি হিসেবে অলিখিত স্বীকৃতি পান, যে কবি কোলাহলময় জীবন যাপন করেছিলেন, বর্ণিল ছিল যাঁর সারা জীবন, সে কবি আসলে বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে একলা কবি, তাই কোনো বৈপরীত্য তাঁর সত্তায় টিকল না, যা টিকল তা তাঁর অভিমান : “তোমাদের পানে চাহিয়া বন্ধু, আর আমি জাগিব না।/ কোলাহল করি’ সারা দিনমান কারো ধ্যান ভাঙিব না।/ —নিশ্চল নিশ্চুপ/ আপনার মনে পুড়িব একাকী গন্ধবিধুর ধূপ।—” (নজরুল, ‘বাতায়ন-পাশে গুবাক-তরুর সারি’, পৃ. ১২৮)

 মোহীত উল আলম

গ্রন্থসূত্র :

শ্রেষ্ঠ নজরুল : নজরুল রচনাবলীর প্রকাশিত-অপ্রকাশিত সংকলন, সংকলক ও সম্পাদক : আবদুল মান্নান সৈয়দ। ঢাকা, অবসর, ১৯৯৬; পুনর্মুদ্রণ, ২০০৮। এ প্রবন্ধে নজরুলের রচনা থেকে সমস্ত উদ্ধৃতি এ বইটি থেকে। পৃষ্ঠা সংখ্যা রচনায় অর্ন্তভুক্ত। 

রবীন্দ্র রচনাবলী, ত্রয়োদশ খণ্ড। কলকাতা, বিশ্বভারতী, পুনর্মুদ্রণ, পৌষ ১৪১৫। পৃষ্ঠা সংখ্যা রচনায় অন্তর্ভুক্ত। 

Edward W. Said, Orientalism : Weste Conceptions of the Orient, (New Delhi, Penguin Books India (p) Ltd, 2001). Page number cited within the body.  

Abdul R. JanMohamed, “The Economy of Manichean Allegory,” in The Post-Colonial Studies Reader, eds. Bill Ashcroft, Gareth Griffiths and Helen Tiffin, (London and New York, Routledge, 1995, rpt. 1997). Page number cited within the body.   

Priti Kumar Mitra, The Dissent of Nazrul Islam : Poetry and History (Oxford, Oxford University Press, 2007).