গগ মেগগ কিংবা ইয়াজুজ মা’জুজ হল পৃথিবীর তিন ইব্রাহিমী ধর্মের একটি খুবই প্রচলিত বিশ্বাস।
ধর্মীয় কিতাব মতে, এই ইয়াজুজ মা’জুজ হল একটা খুবই উচ্ছৃঙ্খল প্রজাতির মানবগোষ্ঠি যারা সমগ্র পৃথিবীতে একসময় বিপর্যয় সৃষ্টি করেছিল। এবং, বাদশা জুলকারনাইন, তাদেরকে দমন করে দুইটি
পাহাড়ের মাঝে একটি লৌহ দেয়ালের মাঝে বন্দী করে ফেলেন। তিনটি ধর্মেরই অনুসারীরা বিশ্বাস করেন, পৃথিবী ধ্বংস তথা কেয়ামত ঘটার আগে সমগ্র বিশ্বাসী মানুষদের সাথে এই গগ মেগগদের একটা সভ্যতা বিধ্বংসী যুদ্ধ হবে।
কারা এই গগ-মেগগ গোষ্ঠি? এই মহাবিশৃঙ্খলার অতীত হোতা, কিংবা ভবিষ্যৎবাণীর সত্য-প্রমাণ? আরো বড় জনপ্রিয় আলোচ্য প্রশ্ন হলো, যেহেতু তারা মানবজাতিরই একটা অংশ, আজকে কারা তাদের বংশধর, কিংবা ভবিষ্যৎ বংশ প্রচারক? শুধু আজকে নয়, সেই প্রথম শতক থেকেই এঁদের জাতি পরিচয় নিয়ে যার পর নাই আশঙ্কিত হয়েছে। গবেষণা হয়েছে, এমন কি, প্রচারও হয়েছে। শতাব্দির পর শতাব্দি চলেছে এই ধারনা ভিত্তিক ‘খোঁজ দ্যা সার্চ’। একেশ্বরবাদী ধর্মের প্রতিষ্ঠা লাভের পর থেকে, জগতে যতগুলো বড় মানব-যুদ্ধ বিপর্যয় হয়েছে, বিভিন্ন ধর্ম কিংবা অধর্মবেত্তারা ভিন্ন ভিন্ন যুদ্ধবাজ জাতিকে গগ মেগগের আসল বংশধর বলে বুঝতে সক্ষম হয়েছেন।
সিথিয়ান (ইউক্রেন) থেকে সারাসিন (মুসলমান)
খ্রিস্ট প্রথম শতকের দিকে ইহুদী ধর্মাবলম্বিরা বিশ্বাস করতেন, তৎকালিন সিথিয়ান (বর্তমান উত্তর কাস্পিয়ান, ইউক্রেইন) এর অধিবাসীরাই প্রাচীন গগ মেগগ, যাদেরকে আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেট (কারো কারো মতে ইনিই জুলকারনাইন) দমন করেছিলেন।
কিন্তু, প্রাথমিক সময়ের খ্রিস্টানরা (তখনো খ্রিস্টধর্ম ইউরোপে ভালমতো যায় নি), যুদ্ধবাজ রোমানদেরকে গগ মেগগ জাতি বলে বিশ্বাস করতেন। কিন্তু চতুর্থ শতকে পুরো রোমান জাতি খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করলে সেটার সম্ভাবতা রহিত হয়ে যায়। কারণ, খ্রিস্টান বিশ্বাসে গগ মেগগ তো আর খ্রিস্টান জাতি হবে না! তখন তাঁরা মত পরিবর্তন করে আরো উত্তর দিকের জাতির দিকে দৃষ্টি আরোপ করেন। তৎকালীন উত্তরের সভ্যতাহীন ‘গোথিক’ জাতিকে খ্রিস্টান ধর্মবেত্তাগণ গগ-মেগগ বলে মনে করতে থাকেন। উল্লেখ্য, তখন, রোমান সম্রাটেরা এই বর্বর জাতির সাথে বছরের পর বছর যুদ্ধে লিপ্ত থাকতেন।
ষষ্ঠ শতকের দিকে বাইজেন্টাইন খ্রিস্টানরা, হুন (আদি চৈনিক) জাতিকে ইয়াজুজ মাজুজ ভাবতে শুরু করেন। কিন্তু, শতকের শেষের দিকে আরব মুসলমানদের সাথে রোমানদের বিরোধ শুরু হয়ে গেলে, অনেক খ্রিস্টান প্রমাণ করে বসেন, এই ‘সারাসিন’ ( আরব মুসলমানরা তখন এই নামে পরিচিত ছিল রোমান আর ইউরোপিয়ানদের কাছে) জাতিই ইয়াজুজ মাজুজ।
এ ধারনা পবিবর্তন হতে কিছু সময় নেয়। অবশেষে উত্তর পারস্যের তুর্কি খাজারি সম্প্রদায় যখন ইহুদী ধর্ম গ্রহণ করে নেয়, তখন অনেক খ্রিস্টান গবেষক, তাদেরকে সেই বিখ্যাত গগ মেগগ তথা ইয়াজুজ মাজুজ বলে সাব্যাস্ত করেন।
উল্লেখ্য তখন মুসলিম সাম্রাজ্যের সাথেও এই খাজারিদের বিরোধ শুরু হয়। নবম শতকের তাফসির ইবনে কাসিরে তাই আমরা দেখি, তাফসিরকারক, এই খাজারিদেরকে ইয়াজুজ মাজুজ সম্পর্কিত আয়াতের সাথে সংযুক্ত উল্লেখ করতে। মজার ব্যাপার, এক দুই শতাব্দি পরে, এই খাজারিদের অধিকাংশই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে নেন। এবং, খাজারিদের ইয়াজুজ মাজুজ হবার ব্যাপারটা অজনপ্রিয় হয়ে পড়ে। তখন আসে নতুন ইয়াজুজ মাজুজের বংশধর, মোঙ্গল সাম্রাজ্যের খানেরা।
মাই নেইম ইজ খান, এন্ড আই আ্যাম নট গগ মেগগ
ত্রয়োদশ খ্রিস্ট শতকে, হালাকাকু খান ও তার পূর্বাপর মোঙ্গল সম্রাটেরা মুসলিম সাম্রাজ্যের পারস্যের অংশ তছনছ করে দেয়। বাগদাদের সভ্যতা ধুলায় লুটিয়ে পড়ে। মুসলিম আলেমরা তখন, ইয়াজুজ মাজুজের ভবিষ্যৎবাণী প্রায় পূরণ হলো বলে প্রায় নিশ্চিত হয়ে পড়েন। অপরদিকে ইউরোপে ‘সারাসিন’ সাম্রাজ্য ধ্বংসের খবর পৌঁছে, এ কাল্পনিক খ্রিস্টান রাজা ‘রক্ষাকারী জন’ এর নামে। তাদের মধ্যে আশার আলো ছড়িয়ে পড়ে যে, মোঙ্গল থেকে উঠে আসা সেই রাজা মুসলিম সাম্রাজ্য তছনছ করে খ্রিস্টধর্ম রক্ষা করবেন। কিন্তু, সেই আশা ধুলিস্যাত হয়ে পড়ে, যখন, মোঙ্গলরা পোল্যান্ড আর হাঙ্গেরীতে খ্রিস্টান আর্মিকে পরাজিত করে এবং ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। মুসলমানদের মত করে, এখন খ্রিস্টানরাও মোঙ্গল খান-দেরকে গগ-মেগগ (মোঙ্গল নামের সাথে মিল আছে বৈ কি) বলা শুরু করেন।
চতুর্দশ চেঙ্গিস খানের আমলে মোঙ্গলরা মুসলমান হয়ে যান, তখন ইয়াজুজ মাজুজ বদনাম ঘুচে। কিন্তু, সহসাই নতুন কোন বর্বর জাতির উত্থান না ঘটায়, নতুন কোন ইয়াজুজ মাজুজ পাওয়া যায় না। এই চতুর্দশ শতকে এসে বিশ্ব পরিব্রাজক ইবনে বতুতা ধারনা করে গেছেন, চিনের লোকেরা ইয়াজুজ মাজুজের বংশধর, আর চীনের মহা প্রাচীর হলো জুলকারনাইনের লৌহপ্রাচীর।
দেয়াল লেহনের নতুন কথা
পৃথিবী প্রবেশ করতে লাগলো, উপনিবেশ আর শিল্পায়নের যুগে। যুদ্ধ হতে লাগল আরও বর্বর আর রক্তক্ষয়ী। আর মানুষ একে অপরকে ইয়াজুজ মাজুজ বলতে লাগল। শুরুতে, বিভিন্ন ধর্মের মানুষেরা বিভিন্নজনকে ইয়াজুজ মাজুজ বলে গ্যাছেন। নেপোলিয়ন আর রাশিয়ার যুদ্ধকে অনেকে বলে গগ মেগগের যুদ্ধ। সেই সূত্রধরে রাশিয়ায় কম্যুনিস্ট উত্থানও সেই নাম পেয়েছে। যা চলেছে একেবারে নতুন ঠান্ডা যুদ্ধ পর্যন্ত। হতাশ মুসলমানরা, আমেরিকার যুদ্ধনীতি দেখে বলে উঠেন এরাই ইয়াজুজ মাজুজ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসী বাহিনী বরণ করেছে সেই নাম। আর এই কিছু দিন আগে ইরাক আক্রমণের আগে জর্জ ডব্লিও বুশ সাফাই গেয়েছে যে, ওই অঞ্চল থেকেই উঠবে ইয়াজুজ মাজুজ।
বাচ্চাকাল আর একাল সেকাল
জনশ্রুতিতে ছোটবেলায় দাদি নানিদের কাছে শুনতাম ইয়াজুজ মাজুজের গল্প। ধারালো জিহবার ইয়াজুজ মাজুজকে বাদশা জুন্নাইন বন্দী করে রেখেছেন পাহাড়ের মধ্যে, লোহার দেয়াল দিয়ে। সেখানে তারা বাচ্চা দেয়, বংশ বৃদ্ধি করে। আর সবাই মিলে, আটকে দেয়া দেয়াল চাটে। চাটতে চাটতে রাত হয়ে পড়ে। কমে আসে দেয়ালের পুরুত্ব। তাদের মা বাবা, বাচ্চাদের বলে,” আজ থাক। কালকের দিন আরেকটু চাটলেই দেয়াল ভেঙ্গে যাবে, আর আমরা বেরিয়ে পড়ব।“ কিন্তু, তারা ঘুমাতে গেলে, সেই দেয়াল আবার পুরু হয়ে যায়। এভাবে তারা আবার চাটতে থাকে, আবার ঘুমিয়ে পড়ে, আবার দেয়াল ভরে যায়।
কিন্তু একদিন তারা বলবে, ” আজ থাক। ইনশাল্লাহ, কালকের দিন আরেকটু চাটলেই দেয়াল ভেঙ্গে যাবে, আর আমরা বেরিয়ে পড়ব।“ সেদিন আর দেয়াল ভরবে না। তারপরদিন থেকেই শুরু হবে বিপর্যয়।
সত্য হোক মিথ্যা হোক, যুগ যুগ ধরে ইয়াজুজ মাজুজ লৌহ দেয়াল চাটছে। প্রতিদিন নতুন আশায়। আর আমরা ধারনা করছি, এইতো এইতো ইয়াজুজ মাজুজ বেরিয়ে পড়লো তার ধারালো জিহবা নিয়ে। যুগ যুগ ধরে। প্রতিদিন নতুন আশংকায়।
জ্ঞানচোর
ধর্মীয় কিতাব মতে, এই ইয়াজুজ মা’জুজ হল একটা খুবই উচ্ছৃঙ্খল প্রজাতির মানবগোষ্ঠি যারা সমগ্র পৃথিবীতে একসময় বিপর্যয় সৃষ্টি করেছিল। এবং, বাদশা জুলকারনাইন, তাদেরকে দমন করে দুইটি
পাহাড়ের মাঝে একটি লৌহ দেয়ালের মাঝে বন্দী করে ফেলেন। তিনটি ধর্মেরই অনুসারীরা বিশ্বাস করেন, পৃথিবী ধ্বংস তথা কেয়ামত ঘটার আগে সমগ্র বিশ্বাসী মানুষদের সাথে এই গগ মেগগদের একটা সভ্যতা বিধ্বংসী যুদ্ধ হবে।
কারা এই গগ-মেগগ গোষ্ঠি? এই মহাবিশৃঙ্খলার অতীত হোতা, কিংবা ভবিষ্যৎবাণীর সত্য-প্রমাণ? আরো বড় জনপ্রিয় আলোচ্য প্রশ্ন হলো, যেহেতু তারা মানবজাতিরই একটা অংশ, আজকে কারা তাদের বংশধর, কিংবা ভবিষ্যৎ বংশ প্রচারক? শুধু আজকে নয়, সেই প্রথম শতক থেকেই এঁদের জাতি পরিচয় নিয়ে যার পর নাই আশঙ্কিত হয়েছে। গবেষণা হয়েছে, এমন কি, প্রচারও হয়েছে। শতাব্দির পর শতাব্দি চলেছে এই ধারনা ভিত্তিক ‘খোঁজ দ্যা সার্চ’। একেশ্বরবাদী ধর্মের প্রতিষ্ঠা লাভের পর থেকে, জগতে যতগুলো বড় মানব-যুদ্ধ বিপর্যয় হয়েছে, বিভিন্ন ধর্ম কিংবা অধর্মবেত্তারা ভিন্ন ভিন্ন যুদ্ধবাজ জাতিকে গগ মেগগের আসল বংশধর বলে বুঝতে সক্ষম হয়েছেন।
সিথিয়ান (ইউক্রেন) থেকে সারাসিন (মুসলমান)
খ্রিস্ট প্রথম শতকের দিকে ইহুদী ধর্মাবলম্বিরা বিশ্বাস করতেন, তৎকালিন সিথিয়ান (বর্তমান উত্তর কাস্পিয়ান, ইউক্রেইন) এর অধিবাসীরাই প্রাচীন গগ মেগগ, যাদেরকে আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেট (কারো কারো মতে ইনিই জুলকারনাইন) দমন করেছিলেন।
কিন্তু, প্রাথমিক সময়ের খ্রিস্টানরা (তখনো খ্রিস্টধর্ম ইউরোপে ভালমতো যায় নি), যুদ্ধবাজ রোমানদেরকে গগ মেগগ জাতি বলে বিশ্বাস করতেন। কিন্তু চতুর্থ শতকে পুরো রোমান জাতি খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করলে সেটার সম্ভাবতা রহিত হয়ে যায়। কারণ, খ্রিস্টান বিশ্বাসে গগ মেগগ তো আর খ্রিস্টান জাতি হবে না! তখন তাঁরা মত পরিবর্তন করে আরো উত্তর দিকের জাতির দিকে দৃষ্টি আরোপ করেন। তৎকালীন উত্তরের সভ্যতাহীন ‘গোথিক’ জাতিকে খ্রিস্টান ধর্মবেত্তাগণ গগ-মেগগ বলে মনে করতে থাকেন। উল্লেখ্য, তখন, রোমান সম্রাটেরা এই বর্বর জাতির সাথে বছরের পর বছর যুদ্ধে লিপ্ত থাকতেন।
ষষ্ঠ শতকের দিকে বাইজেন্টাইন খ্রিস্টানরা, হুন (আদি চৈনিক) জাতিকে ইয়াজুজ মাজুজ ভাবতে শুরু করেন। কিন্তু, শতকের শেষের দিকে আরব মুসলমানদের সাথে রোমানদের বিরোধ শুরু হয়ে গেলে, অনেক খ্রিস্টান প্রমাণ করে বসেন, এই ‘সারাসিন’ ( আরব মুসলমানরা তখন এই নামে পরিচিত ছিল রোমান আর ইউরোপিয়ানদের কাছে) জাতিই ইয়াজুজ মাজুজ।
এ ধারনা পবিবর্তন হতে কিছু সময় নেয়। অবশেষে উত্তর পারস্যের তুর্কি খাজারি সম্প্রদায় যখন ইহুদী ধর্ম গ্রহণ করে নেয়, তখন অনেক খ্রিস্টান গবেষক, তাদেরকে সেই বিখ্যাত গগ মেগগ তথা ইয়াজুজ মাজুজ বলে সাব্যাস্ত করেন।
উল্লেখ্য তখন মুসলিম সাম্রাজ্যের সাথেও এই খাজারিদের বিরোধ শুরু হয়। নবম শতকের তাফসির ইবনে কাসিরে তাই আমরা দেখি, তাফসিরকারক, এই খাজারিদেরকে ইয়াজুজ মাজুজ সম্পর্কিত আয়াতের সাথে সংযুক্ত উল্লেখ করতে। মজার ব্যাপার, এক দুই শতাব্দি পরে, এই খাজারিদের অধিকাংশই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে নেন। এবং, খাজারিদের ইয়াজুজ মাজুজ হবার ব্যাপারটা অজনপ্রিয় হয়ে পড়ে। তখন আসে নতুন ইয়াজুজ মাজুজের বংশধর, মোঙ্গল সাম্রাজ্যের খানেরা।
মাই নেইম ইজ খান, এন্ড আই আ্যাম নট গগ মেগগ
ত্রয়োদশ খ্রিস্ট শতকে, হালাকাকু খান ও তার পূর্বাপর মোঙ্গল সম্রাটেরা মুসলিম সাম্রাজ্যের পারস্যের অংশ তছনছ করে দেয়। বাগদাদের সভ্যতা ধুলায় লুটিয়ে পড়ে। মুসলিম আলেমরা তখন, ইয়াজুজ মাজুজের ভবিষ্যৎবাণী প্রায় পূরণ হলো বলে প্রায় নিশ্চিত হয়ে পড়েন। অপরদিকে ইউরোপে ‘সারাসিন’ সাম্রাজ্য ধ্বংসের খবর পৌঁছে, এ কাল্পনিক খ্রিস্টান রাজা ‘রক্ষাকারী জন’ এর নামে। তাদের মধ্যে আশার আলো ছড়িয়ে পড়ে যে, মোঙ্গল থেকে উঠে আসা সেই রাজা মুসলিম সাম্রাজ্য তছনছ করে খ্রিস্টধর্ম রক্ষা করবেন। কিন্তু, সেই আশা ধুলিস্যাত হয়ে পড়ে, যখন, মোঙ্গলরা পোল্যান্ড আর হাঙ্গেরীতে খ্রিস্টান আর্মিকে পরাজিত করে এবং ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। মুসলমানদের মত করে, এখন খ্রিস্টানরাও মোঙ্গল খান-দেরকে গগ-মেগগ (মোঙ্গল নামের সাথে মিল আছে বৈ কি) বলা শুরু করেন।
চতুর্দশ চেঙ্গিস খানের আমলে মোঙ্গলরা মুসলমান হয়ে যান, তখন ইয়াজুজ মাজুজ বদনাম ঘুচে। কিন্তু, সহসাই নতুন কোন বর্বর জাতির উত্থান না ঘটায়, নতুন কোন ইয়াজুজ মাজুজ পাওয়া যায় না। এই চতুর্দশ শতকে এসে বিশ্ব পরিব্রাজক ইবনে বতুতা ধারনা করে গেছেন, চিনের লোকেরা ইয়াজুজ মাজুজের বংশধর, আর চীনের মহা প্রাচীর হলো জুলকারনাইনের লৌহপ্রাচীর।
দেয়াল লেহনের নতুন কথা
পৃথিবী প্রবেশ করতে লাগলো, উপনিবেশ আর শিল্পায়নের যুগে। যুদ্ধ হতে লাগল আরও বর্বর আর রক্তক্ষয়ী। আর মানুষ একে অপরকে ইয়াজুজ মাজুজ বলতে লাগল। শুরুতে, বিভিন্ন ধর্মের মানুষেরা বিভিন্নজনকে ইয়াজুজ মাজুজ বলে গ্যাছেন। নেপোলিয়ন আর রাশিয়ার যুদ্ধকে অনেকে বলে গগ মেগগের যুদ্ধ। সেই সূত্রধরে রাশিয়ায় কম্যুনিস্ট উত্থানও সেই নাম পেয়েছে। যা চলেছে একেবারে নতুন ঠান্ডা যুদ্ধ পর্যন্ত। হতাশ মুসলমানরা, আমেরিকার যুদ্ধনীতি দেখে বলে উঠেন এরাই ইয়াজুজ মাজুজ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসী বাহিনী বরণ করেছে সেই নাম। আর এই কিছু দিন আগে ইরাক আক্রমণের আগে জর্জ ডব্লিও বুশ সাফাই গেয়েছে যে, ওই অঞ্চল থেকেই উঠবে ইয়াজুজ মাজুজ।
বাচ্চাকাল আর একাল সেকাল
জনশ্রুতিতে ছোটবেলায় দাদি নানিদের কাছে শুনতাম ইয়াজুজ মাজুজের গল্প। ধারালো জিহবার ইয়াজুজ মাজুজকে বাদশা জুন্নাইন বন্দী করে রেখেছেন পাহাড়ের মধ্যে, লোহার দেয়াল দিয়ে। সেখানে তারা বাচ্চা দেয়, বংশ বৃদ্ধি করে। আর সবাই মিলে, আটকে দেয়া দেয়াল চাটে। চাটতে চাটতে রাত হয়ে পড়ে। কমে আসে দেয়ালের পুরুত্ব। তাদের মা বাবা, বাচ্চাদের বলে,” আজ থাক। কালকের দিন আরেকটু চাটলেই দেয়াল ভেঙ্গে যাবে, আর আমরা বেরিয়ে পড়ব।“ কিন্তু, তারা ঘুমাতে গেলে, সেই দেয়াল আবার পুরু হয়ে যায়। এভাবে তারা আবার চাটতে থাকে, আবার ঘুমিয়ে পড়ে, আবার দেয়াল ভরে যায়।
কিন্তু একদিন তারা বলবে, ” আজ থাক। ইনশাল্লাহ, কালকের দিন আরেকটু চাটলেই দেয়াল ভেঙ্গে যাবে, আর আমরা বেরিয়ে পড়ব।“ সেদিন আর দেয়াল ভরবে না। তারপরদিন থেকেই শুরু হবে বিপর্যয়।
সত্য হোক মিথ্যা হোক, যুগ যুগ ধরে ইয়াজুজ মাজুজ লৌহ দেয়াল চাটছে। প্রতিদিন নতুন আশায়। আর আমরা ধারনা করছি, এইতো এইতো ইয়াজুজ মাজুজ বেরিয়ে পড়লো তার ধারালো জিহবা নিয়ে। যুগ যুগ ধরে। প্রতিদিন নতুন আশংকায়।
জ্ঞানচোর