বৃহস্পতিবার, ৪ আগস্ট, ২০১৬

ভবিষ্যদ্বাণী যখন ইতিহাস। পর্ব ২

* আব্রাহাম লিংকনের স্বপ্ন : এটি ভবিষ্যদ্বাণী না হলেও স্বপ্নের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ। স্বপ্নটি আমেরিকার সবচেয়ে আলোচিত প্রেসিডেন্ট (১৮৬১-১৮৬৫) আব্রাহাম লিংকনের। তাও আবার
নিজের মৃত্যু নিয়ে। আব্রাহাম লিঙ্কন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৬তম এবং রিপাবলিকান পার্টির প্রথম রাষ্ট্রপতি। দাসপ্রথার বিরোধী এ মহানায়ক জন উইলকস বুথ নামের আততায়ীর হাতে ১৮৬৫ সালের ১৫ এপ্রিল গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। নিজের অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যু তিনি স্বপ্নে দেখেছিলেন। ১৮৬৫ সালের এপ্রিল মাসের ঘটনা। তিনি স্বপ্নে দেখেছিলেন, চারদিকে নিস্তব্ধ পরিবেশের মধ্য থেকে কান্নার রোল ভেসে আসছে। কান্নার কারণ খুঁজতে তিনি বিছানা থেকে উঠে গেলেন কিন্তু দেখলেন কোথাও কেউ নেই। শব্দের উৎস খুঁজতে গিয়ে হোয়াইট হাউজের পূর্ব ব্লকের ঘরে আবিষ্কার করলেন একটি মৃতদেহ। মৃতদেহ ঘিরে শোক পালিত হচ্ছে। সৈন্যরা বিষণ্ণ মুখে দাঁড়িয়ে আছে। সবাই কালো পোশাকে আবৃত। তিনি সামনে এগিয়ে গেলেন এবং একজনকে প্রশ্ন করলেন কে মারা গেছে? লোকটি উত্তর দিল, আমাদের প্রেসিডেন্ট। তিনি আততায়ীর হাতে নিহত হয়েছেন।

এ স্বপ্ন দেখার ঠিক পাঁচদিন পর সত্যি সত্যিই হত্যাকারীর হাতে নিহত হয়েছিলেন আব্রাহাম লিংকন। স্বপ্নে দেখা হোয়াইট হাউজের সেই পূর্ব ব্লকেই কিছু সময়ের জন্যে তার মরদেহ রাখা হয়েছিল।

* লন্ডন পুড়ে ছাই হবে : নস্ত্রাদামু, ইতিহাসের ভবিষ্যদ্বক্তাদের মধ্যে অন্যতম। তার অনেক ভবিষ্যদ্বাণী সঠিক হয়ে দেখা দিয়েছে। এগুলোর একটি হল লন্ডনের অগ্নিকাণ্ড। ১৫৫৫ সালে প্রকাশিত ‘লে প্রোফেতিস’ বইয়ে নস্ত্রাদামু লন্ডন শহরের ভয়ানক অগ্নিকাণ্ডের কথা লিখে গিয়েছিলেন। তার কথায়, ‘৬৬ সালে এ আগুনে লন্ডনের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের রক্ত পুড়বে। আজব হলেও সত্যি, ১৯৬৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ রাজধানীতে ভয়ঙ্কর অগ্নিকাণ্ডে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারান।

* মানুষ জয় করবে চাঁদ : জুল ভার্ন একজন সাইন্স ফিকশন লেখক। কল্পনার জগতের অসীম জ্ঞানধারী এ লেখকের বহু কল্পনা আজ মানুষের জীবনযাপনের উপায়, বিজ্ঞানের সোপান। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় চন্দ্র অভিযানের কথা। মানুষ যে একদিন চাঁদে পা রাখবে তা জুল ভার্ন ১৮৬৫ সালে তার ‘ফ্রম দ্য আর্থ টু দ্য মুন’ উপন্যাসে লিখেছিলেন। তার উপন্যাসে দেয়া চন্দ্রাভিযানের বর্ণনাটি ১০০ বছর পর এমনভাবে বাস্তবায়িত হয় যেন চন্দ্রাভিযান জুল ভার্নের লিখিত গল্পের ভিডিও চিত্র। জুল ভার্নের কল্পনার সঙ্গে তাল মিলিয়েই নিল আর্মস্ট্রংরা চাঁদে পা ফেলেন। মহাকাশযানের আকার, মহাকাশচারীর সংখ্যা, অভিযানের মোট সময় এবং ভরশূন্যতার খুঁটিনাটি তথ্য ভার্নের লেখার সঙ্গে অনেকটা মিলে যায়। চাঁদ নিয়ে মানুষ গল্প কবিতায় মেতে থাকলেও ১০০ বছর পূর্বের মানুষ জুলভার্ন কল্পনায় পৃথিবীর এই উপগ্রহটি জয় করে ফেলেছিলেন। এ ভবিষ্যদ্বাণী মূলত কোনো দৈববাণী নয়, হয়তো বিজ্ঞানের অগ্রগতি ও বিচার বিশ্লেষণে খুঁজে পাওয়া যাবে এর রহস্য।

* ইন্টারনেট সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী : একবিংশ শতাব্দী মানেই ইন্টারনেটের শতাব্দী। অফিস, ব্যবসা-বাণিজ্য, পারিবারিক যোগাযোগ, শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষ্টি-কালচারের আদান-প্রদান সবই এখন ইন্টারনেটের আওতায়। তথ্য উপাত্তের সম্ভার এখন ইন্টারনেট। মানুষ মুঠোফোনে করে এ সুবিধা নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। ইন্টারনেট ছাড়া এ শতাব্দী একেবারেই কল্পনার অযোগ্য। মজার ও রহস্যময় ব্যাপার হচ্ছে ইন্টারনেট যখন মানুষের কল্পনাতেও ছিল না তখন এ নিয়ে কথা বলেছেন ব্রিটিশ লেখক এ এম ফর্স্টার। ১৯০৯ সালে ‘দ্য মেশিন স্টপস’ গল্পে তিনি এমন এক ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা লিখেছিলেন যারা ইন্টারনেট নামের এক যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে সংবাদ বিতরণ করে। সে সময় অনেকের কাছে তার কথার মর্মার্থ বোধগম্য ছিল না। অনেকেই বিষয়টি ঐশ্বরিক কিছু মনে করেছিলের। ফর্স্টার নস্ত্রাদামুর মতো ভবিষ্যদ্বক্তা নন। তাই এ ভবিষ্যদ্বাণী যে তার কত দূরদর্শিতা প্রকাশ করে তা এ প্রজন্মকে ভাবাবে সব সময়।

সাঈদ আল হাসান শিমুল