
যে দর্শন মোতাবেক জগত্ ও জীবনের সর্বত্র শুধু দুঃখ ও নৈরাজ্য বিরাজমান, কোথাও কোনো সুখ বা আনন্দ ও আশার স্থান নেই সে দর্শনকেই দুঃখ দর্শন বলা হয়। প্রকৃত দুঃখবাদ অনুযায়ী দুঃখই জীবনের আদি, মধ্য ও অন্ত। অর্থাত্ জীবনের সর্বত্রই শুধু দুঃখ আর দুঃখ, কোথাও কোনো আশা বা আলোর বিন্দুমাত্র নেই। সুতরাং দুঃখ দর্শন বলতে সেই দর্শনকেই বুঝায় যেখানে জগত্ ও জীবনের সর্বত্রই দুঃখের এক চরম অন্ধকারময় রূপ অঙ্কিত হয়েছে।
বৈদিক চিন্তাধারা মানুষকে জড় জীবনের দুঃখ-বেদনা উপেক্ষা করে অতীন্দ্রিয় আত্মার সাথে আপন আত্মার সংযোগ সাধনের মধ্যেই জীবনের পরমার্থ খুঁজে পাওয়ার উপদেশ দেয়। ইসলাম ইহলোকের সুখ-দুঃখকে উপেক্ষা করে পরলৌকিক সুখ-দুঃখের উপর সর্বাধিক জোর দিতে বলে। কিন্তু বাঙালি চিন্তাবিদগণ সুখ-দুঃখকে অবিচ্ছেদ্য সত্তা হিসেবে কল্পনা করেন। তারা দুঃখকে জীবনের পরম সঙ্গী বলে মনে করেন।
বাংলা তত্ত্ব-সাহিত্যে দুঃখ দর্শনের একাধিক প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যেমন রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী তার দার্শনিক গ্রন্থ জিজ্ঞাসায় মানুষের সুখ ও দুঃখের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি অনুসন্ধান করেছেন মানুষের সুখের ভাগ বেশি না দুঃখের ভাগ। দুঃখ দর্শনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ দুটি প্রশ্নের একটি হলো, দুঃখ বলে কিছু আছে কি না এবং অপরটি, দুঃখ বলে কিছু থাকলে তার কোনো বিশেষ মূল্য বা তাত্পর্য আছে কি না। রবীন্দ্রনাথ তার "দুঃখ" নামক প্রবন্ধে বলেন যে, দুঃখের তত্ত্ব আর সৃষ্টিতত্ত্ব একেবারে একসাথে বাঁধা এবং অপূর্ণ জগত্ শূন্য নয়, মিথ্যা নয়। তার এ কথা থেকে অনুধাবন করা যায় তিনি সাধারণ সুখ-দুঃখের অস্তিত্ব স্বীকার করেছেন। তার মতে, দুঃখের পরিপূর্ণতা ও সার্থকতা দুঃখ নয়, তা আনন্দ।
দুঃখ আর আনন্দ অথবা অমৃত আর মৃত্যুকে রবীন্দ্রনাথ একই পরমসত্তার ছায়ারূপে দেখেছেন। এর পরমসত্তায় অমৃত আর মৃত্যু এক হয়ে গেছে। রবীন্দ্রনাথ বলেন, দুঃখের উপর এত বড় দায়িত্ব অর্পণ করা হয়, দুঃখের প্রতি যদি এতবড় মূল্য আরোপ করা হয়, তাহলে দুঃখের অস্তিত্ব অবশ্যই স্বীকার করতে হয়। তিনি বলেন, অপূর্ণ জগত্ মিথ্যা নয়। আবার দুঃখ অপূর্ণতার নিত্য সহচর। এ থেকে যে অনিবার্য সিদ্ধান্ত বেরিয়ে আসে তা হচ্ছে, দুঃখও তাহলে নিশ্চয়ই সত্য, যেহেতু এটি অপূর্ণ জগতেরই অঙ্গ।
দুঃখ আর আনন্দ অথবা অমৃত আর মৃত্যুকে রবীন্দ্রনাথ একই পরমসত্তার ছায়ারূপে দেখেছেন। এর পরমসত্তায় অমৃত আর মৃত্যু এক হয়ে গেছে। রবীন্দ্রনাথ বলেন, দুঃখের উপর এত বড় দায়িত্ব অর্পণ করা হয়, দুঃখের প্রতি যদি এতবড় মূল্য আরোপ করা হয়, তাহলে দুঃখের অস্তিত্ব অবশ্যই স্বীকার করতে হয়। তিনি বলেন, অপূর্ণ জগত্ মিথ্যা নয়। আবার দুঃখ অপূর্ণতার নিত্য সহচর। এ থেকে যে অনিবার্য সিদ্ধান্ত বেরিয়ে আসে তা হচ্ছে, দুঃখও তাহলে নিশ্চয়ই সত্য, যেহেতু এটি অপূর্ণ জগতেরই অঙ্গ।
ফাহিম আহমেদ
শিক্ষার্থী, মাস্টার্স, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়