কী নামে ডাকা যায় তাঁকে? বিদ্রোহী? খেয়ালি? ধার্মিক? অভিযাত্রী? প্রেমিক? আর কবি? সে তো বটেই। কিন্তু এ কেমন কবি, যিনি তাঁর ৩৭ বছরের জীবনে কবিতা লেখেন মাত্র চার-পাঁচ বছর, তারপর আর ছুঁয়েও দেখেন না কাগজ-কলম, কাব্য রচনার জন্য, এমনকি
হাস্যরসিকতা করেন তাঁর সেই সংক্ষিপ্ত কবিজীবন নিয়ে, রচনাকর্ম নিয়ে? অথচ যে কবিতা সৃষ্টি করে পৃথিবীর সাহিত্যে যুগান্ত? এ কেমন প্রহেলিকা?
অল্প বয়সে অতুল কীর্তি গড়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন এমন মানুষের সংখ্যা খুব বেশি নয়। তাঁদের মধ্যে র্যাঁবো বা জাঁ নিকোলাস আর্তুর র্যাঁবো কেন বিশিষ্ট? কী এমন কাব্যপ্রাণমণ্ডিত কবিতা লিখেছিলেন তিনি, যার জন্য অনেকে তাঁকে আধুনিক ইউরোপীয় কাব্যের প্রতিষ্ঠাতা মনে করেন? নাকি তাঁর কবিতার চেয়ে তাঁর রূপকথার মতো জীবন, দ্বন্দ্বমুখর প্রেমময় জীবন, দুঃসাহসিক ভ্রামণিকের জীবন, বিদ্রোহীর জীবন, দূর দূর দেশে সওদাগরি করা জীবন এবং অকালমৃত্যু বেশি আকর্ষণ করেছে মানুষকে? সেই আকর্ষণ, সেই মুগ্ধতা বাড়িয়েছে তাঁর কবিখ্যাতি?
তাঁর জন্ম ১৮৫৪ খ্রিষ্টাব্দের ২০ অক্টোবর, উত্তর ফ্রান্সের বেলজীয় সীমান্তবর্তী শার্লেভিনা নগরে। বাবা ফ্রেদেরিক সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন; তবে কেবল যুদ্ধে যুদ্ধেই কাটেনি তাঁর জীবন। আর মা ভিতালি কুইফ ছিলেন এক কৃষককন্যা, যাঁকে অনেকের ভাষ্যমতে, কেউ কখনো হাসতে দেখেনি। তো, এই আপাত-অদ্ভুত দম্পতির পাঁচ সন্তানের মধ্যে র্যাঁবো দ্বিতীয়। ধারণা করা হয়, বাবার কাছ থেকে র্যাঁবো তাঁর প্রতিভা ও বুদ্ধিবৃত্তিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা লাভ করেছিলেন। র্যাঁবোর বাবা উত্তর আফ্রিকায় কর্মরত অবস্থায় কোরআনের একটি সটীক অনুবাদ প্রকাশ করেছিলেন, সেই সঙ্গে বের করেছিলেন আরব কৌতুকের একটি সংকলন। র্যাঁবো যখন আফ্রিকা যান, তখন তিনি এই দুটো বই তাঁকে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য চিঠি লিখেছিলেন। ভাষার প্রতি প্রবল আকর্ষণ ছিল র্যাঁবোর, আফ্রিকাতে বাচ্চাদের কোরআন শিক্ষাও দিতেন তিনি আরবি আর স্থানীয় বেশ কিছু উপভাষা শেখার পর।
ছোটবেলায় কিন্তু শান্তশিষ্ট লক্ষ্মীমন্ত সুবোধ ও মেধাবী এক বালক ছিলেন র্যাঁবো। তার ওপর ছিল মায়ের কড়া শাসন। বাবা বাড়ি আসতেন কেবল ছুটি-ছাটায়। একবার যে চলে গেলেন ছুটি কাটিয়ে, সেটাই ছিল তাঁর অগস্ত্যযাত্রা। ফেরেননি আর কোনোদিন। যে কারণে র্যাঁবোর মা ‘বিধবা র্যাঁবো’ বলে নিজের পরিচয় দিতেন। বাবার এই অন্তর্ধান বুকে বড় বেজেছিল সন্তানদের। তো, র্যাঁবোরা দুই ভাই যাতে পড়াশোনা ঠিকমতো করেন, সে জন্য বড় সচেতন থাকতেন তাঁদের মা। কোনো ভুলভাল বা গাফিলতির জন্য তাঁর শাস্তি ছিল ছেলেদের ১০০ লাইন লাতিন পদ্য মুখস্থ করানো। আরও বড় অপরাধের জন্য মধ্যাহ্ন বা নৈশভোজ থেকে তাঁদের বিরত রাখা। তবে র্যাঁবোর বিদ্রোহী সত্তার প্রমাণ মেলে তখন, যখন নয় বছর বয়সে তিনি লাতিন ভাষাতে সাত শ শব্দের একটি রচনা লেখেন তাঁর স্কুলে লাতিন শেখানোর বিরুদ্ধে।
এগারো বছর বয়স পর্যন্ত মুখ্যত বাইবেলেই সীমিত ছিল র্যাঁবোর পড়াশোনা। পড়তেন কিছু রূপকথা আর অ্যাডভেঞ্চার কাহিনিও—জেমস ফেনিমোর কুপার আর গুস্তাফ আয়মারের উপন্যাস। আর বিদ্যায়তনের পড়াশোনাতেও ছিলেন তুখোড়, গণিত আর বিজ্ঞানের বিষয়গুলো ছাড়া অন্যগুলোতে সবার থেকে এগিয়ে। ১৮৬৯ সালে তো ফরাসি বিদ্যায়তনিক প্রতিযোগিতায় আটটি প্রথম পুরস্কার লাভ করেন, তার মধ্যে ছিল ধর্মীয় শিক্ষার পুরস্কারও। থার্ড গ্রেডে তাঁর প্রাইভেট টিউটর, এক ফাদার তাঁর মধ্যে গ্রিক, লাতিন আর ফরাসি ধ্রুপদি সাহিত্যের প্রতি মমত্ববোধ সঞ্চার করেন এবং তিনিই প্রথম তাঁকে মৌলিক কবিতা রচনা করতে উদ্বুদ্ধ করেন, ফরাসি আর লাতিন, দুই ভাষাতেই।
প্যারিসের দেওয়ালে উৎকীর্ণ রঁী্যাবোর কবিতাকিছুদিন পর র্যাঁবোর জীবনে আসেন অলংকারশাস্ত্রের এক শিক্ষক, জর্জ ইমামবার; তিনি র্যাঁবোর দীক্ষাগুরু হয়ে ওঠেন। এই দুই শিক্ষকের প্রেরণায়, উৎসাহে র্যাঁবোর কাব্যপ্রতিভা স্ফুরিত হতে থাকে এবং ১৫ বছর বয়সে তিনি ইমামবারকে ‘ওফেলিয়া’ নামে যে কবিতাটি দেখান, সেটাকে কবির সেরা তিন বা চারটি কবিতার একটি বলে গণ্য করা হয়।
এরপর তাঁর জীবনের যে পর্ব শুরু হলো, তার মধ্যে রয়েছে বাড়ি থেকে পলায়ন ও প্রত্যাবর্তন—যেটা চলবে তাঁর বাকি জীবনভর, কবি পল ভেরলেনের সঙ্গে বন্ধুত্ব, প্রণয়, সহিংস বিচ্ছেদ, স্বদেশ প্রত্যাবর্তন এবং কাব্য রচনা—এমন এক কাব্য রচনা, যা তাঁকে অমর করে রাখবে আধুনিক সিম্বলিস্ট রচনার পথিকৃৎ রচনা হিসেবে—নরকে এক ঋতু।
এ কথা প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায় যে মায়ের দমবন্ধ করা শাসনের বেড়ি থেকে মুক্তিলাভের জন্যই—যার সঙ্গে হয়তো যুক্ত হতে পারে তাঁর দুই প্রিয় শিক্ষকের দেখানো দৈনন্দিন পানসে জীবনের বাইরে এক রোমাঞ্চকর উন্মুক্ত জগতের স্বপ্ন—র্যাঁবো প্রথমবারের মতো ঘরছাড়া হন, প্যারিসের উদ্দেশে। তবে ট্রেনের পুরো ভাড়া না থাকায় তাঁকে গ্রেপ্তার হতে হয় এবং তাঁর অলংকারশাস্ত্রের শিক্ষকের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে চিঠি লেখার পরেই কেবল জেল থেকে ছাড়া পান তিনি ভদ্রলোকের বদান্যতায়, যাঁকে র্যাঁবো নিজের ভাই বলে গণ্য করতেন। বাড়িতে ফিরে আসতে বাধ্য হলেন বটে, কিন্তু চারপাশের মলিনতা, জীবনযাপনের একঘেয়েমি, গতানুগতিকতা তাঁকে বিষণ্ন ও বিদ্রোহী করে তুলল। ইশকুলের আদর্শ ছাত্র বড় চুল রাখলেন, এখানে-সেখানে বসে সামনে দিয়ে যাওয়া—বুর্জোয়া শ্রেণির লোকজনকে ব্যঙ্গবিদ্রুপ করতে থাকলেন আর ধূমপান শুরু করলেন পুরোদমে। আর তাঁর পলায়নপরতা ঠাঁই নিতে শুরু করল এ সময়ে লেখা তাঁর কবিতাগুলোতে।
কিন্তু অর্গল ভাঙার তাঁর এই ইচ্ছে বা প্রবণতা, ড্যানিয়েল মেন্ডেলসনের ভাষায়, এক ‘লিটারারি ভ্যান্ডালিজম’-এর মাধ্যমে প্রকাশিত হলো। র্যাঁবো এরই মধ্যে কাব্যিক প্রবণতাকে উপহাস ও ব্যঙ্গ করতে শুরু করেছিলেন। তো, বয়োসন্ধিকালের এই বিদ্রোহ আর কাব্যিক ইঁচড়ে পাকামির মিলিত ফল হিসেবে ১৮৭১ সালের মে মাসে আবিভূর্ত হলো শৈল্পিক লক্ষ্যের এক জাঁকালো বিবৃতি। ইমামবার আর পল দেমেবি নামের এক কবিকে লেখা দুটো চিঠিতে র্যাঁবো তাঁর মহান পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করার অভিলাষ ব্যক্ত করলেন। প্রথম জনকে তিনি লিখলেন, ‘নিজেকে আমি এখন জঘন্য করে তুলছি, যতটা পারি। কেন? আমি কবি হতে চাই এবং নিজেকে একজন দ্রষ্টা হিসেবে রূপান্তরিত করার জন্য কাজ করছি আমি। এসবের কোনো কিছুই আপনি বুঝবেন না আসলে, আর ব্যাপারটা আপনার কাছে ব্যাখ্যা করার ক্ষমতাও আমার নেই প্রায়। ব্যাপারটা হলো, অজানার কাছে পৌঁছানো এবং সব কটা ইন্দ্রিয় তছনছ বা লন্ডভন্ড করে দেওয়া। প্রচণ্ড যন্ত্রণার ব্যাপার এটি কিন্তু মানুষকে অবশ্যই শক্ত হতে হবে, হতে হবে জন্মকবি এবং আমি বুঝেছি, আমি কবি, এতে আসলে আমার কোনো দোষ নেই।’
শার্ল বোদলেয়ারের রচনা র্যাঁবোকে প্রতীকধর্মী কবিতা লিখতে অনুপ্রাণিত করেছিল। একই বছরের ১৫ মে পল দিমনিকে লেখা চিঠিতেও প্রথমটির মতোই কথা লিখেছিলেন র্যাঁবো, কাব্য ও জীবন সম্পর্কে তাঁর বৈপ্লবিক তত্ত্ব প্রকাশ করেছিলেন। উল্লেখ্য, তাঁর বয়স তখন ১৬। এই একই কথা তিনি ব্যক্ত করেছিলেন ১৮৭১-এ লেখা তাঁর মাতাল তরণি নামক ১০০ লাইনের পদ্য কবিতায়। সেখানে প্রাঞ্জল রূপকল্প আর প্রতীকের মাধ্যমে দৃশ্যত একটি নৌকার ভেসে চলা এবং নিমজ্জিত হওয়ার ব্যাপারটি বর্ণিত হয়েছে। ফরাসি কবিতার একটি অত্যুজ্জ্বল বর্ণিল রত্ন এই ‘মাতাল তরণি’।
বন্ধু কবি পল ভেরলেনের অাঁকা রঁ্যাবো, ১৮৭২র্যাঁরোরই চিঠির জবাবে বিখ্যাত প্রতীকধর্মী কবি ভেরলেনের আমন্ত্রণে, ‘আসুন, আমার প্রিয় মহান আত্মা, আমরা আপনাকে ডাকছি, আপনার জন্য অপেক্ষা করছি।’ তাঁর প্যারিস গমন তরুণ কবির জীবনে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। তার আগে তিনি দুটো চিঠিতে জ্যেষ্ঠ কবির কাছে নিজের লেখা বেশ কিছু কবিতা পাঠিয়েছিলেন এবং বলাই বাহুল্য কবিতাগুলো প্রবলভাবে চমৎকৃত করেছিল ভেরলেনকে। বিবাহিত ভেরলেনের সঙ্গে র্যাঁবোর যে দ্বন্দ্বমুখর, বুনো, ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ হ্যাশিস আর অ্যাবসিন্থনির্ভর বন্ধুত্বের সূত্রপাত ঘটে। যার অভিঘাতে বিপন্ন হয়ে পড়ে প্রথম জনের সংসার, আঁতকে ওঠে প্যারিসের সাহিত্যিক মহল। বন্ধুর হাতে গুলিবিদ্ধ হতে হয় র্যাঁবোকে, জেলে যেতে হয় ভেরলেনকে—তা সাহিত্যজগতের এক চিরস্মরণীয় ঘটনা এ জন্যও যে এই বন্ধুত্বের অবসানের পর র্যাঁবোর কলমে রচিত হয় সেই অমর গদ্যকবিতা, মূলত যার কারণেই তাঁর কিংবদন্তিসম খ্যাতি—নরকে এক ঋতু। এখনো এটি আধুনিক প্রতীকধর্মী রচনার একটি প্রথম দিককার রচনা বলে পাঠক ও সাহিত্যবোদ্ধাদের অনেকের কাছে স্বীকৃত। এখানে তিনি ভেরলেনকে বর্ণনা করেছেন তাঁর ‘করুণাঘন ভাই’ এবং ‘উন্মাদ কুমার’, আর নিজেকে ‘নারকীয় স্বামী’ হিসেবে।
আর্তুর র্যাঁবোর ঈর্ষণীয় কবিখ্যাতি তৃতীয় যে গদ্যকাব্য গ্রন্থটির জন্য, তা ইল্যুমিনেশনস। এটি রচিত হয় ১৮৭৪ সালে কবি জারমেইন নভুর সঙ্গে তিনি লন্ডনে যাওয়ার পর, তাঁদের মাস তিনেকের অবস্থানকালে।
পাঁচ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে গড়া কাব্যকীর্তির ওপর ভিত্তি করে কেউ এভাবে জগদ্বিখ্যাত হয়েছেন এবং এই সময়ের পর কাব্যকলার দেবীকে স্বেচ্ছায় পরিত্যাগ করে বিচিত্র সব পেশা অবলম্বন করে দূরদূরান্তে ভ্রমণ করেছেন, এমন উদাহরণ সম্ভবত দ্বিতীয়টি নেই। তবে তাঁর সেই বহু বর্ণিল পেশাগত জীবনে তিনি প্রচুর পত্ররচনা করেছেন, যা তাঁর বিচিত্র জীবন এবং বিবিধ সম্পর্ক প্রাঞ্জলভাবে তুলে ধরে পাঠকের সামনে।
ভিক্টর হুগো তাঁকে ‘শিশু শেক্সপিয়ার’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। তাঁর অতি অল্প সময়ের কাব্যকৃতি ও হ্রস্ব জীবনের বর্ণময় অভিজ্ঞতা পিকাসো থেকে বব ডিলান, কাকে বিমুগ্ধ বা অনুপ্রাণিত করেনি? তাঁর জীবনকাহিনি নিয়ে রচিত হয়েছে উপন্যাস, চলচ্চিত্র, অপেরা, সংগীত। আর কেন তিনি সেই চার-পাঁচ বছরের কালসীমার পর তাঁর কাব্যরচনার মসি ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলেন, তা নিয়ে রয়েছে বিস্তর জল্পনা-কল্পনা, অনুমান আর রহস্য।
ফুরিয়ে গিয়েছিলেন এই অসীম সম্ভাবনাময় কবি কোনো আগ্নেয়গিরির মতো একবারে সব লাভা উদ্গিরণ করে? নাকি তাঁকে নিয়ে রচিত ব্রুস ডাফির উপন্যাস ডিমাসটার ওয়ান মাই গড (২০১১)-এ ভেরলেন যেমন বলেন, তেমনটিই ঘটেছিল আসলে? ‘বেশ, প্রায় নিশ্চিত, বড় একটি কারণ হলো, সে বড় হয়ে গিয়েছিল...মরে গিয়েছিল ওর ভেতরের শিশুটি।’ নাকি যা বলার ছিল তাঁর তা সব বলা হয়ে গিয়েছিল? তাই মূক হয়ে গিয়েছিলেন তিনি? নইলে যে নরকের এক ঋতুতে নিজের সীমাবদ্ধতার সঙ্গে একটা সমঝোতায় পৌঁছানো এক মানুষের কথা, ব্যর্থতার একটি প্রবল বোধের কথা, ভুল পথ বেছে নেওয়ার কথা বললেন, যে ইল্যুমিনেশনস-এ তিনি স্ফটিক স্বচ্ছতায় পাঠকের চোখের সামনে স্বপ্নের অদ্ভুতত্ব, তীব্রতা আর গূঢ় যৌক্তিকতা তুলে ধরলেন, গায়ে কাঁটা দেওয়ার মতো নিভুর্লভাবে ভবিষ্যতের দিকে আলো ফেলেন, সেই ক্ষমতা, সেই দৃষ্টি পরিণত হওয়ার বদলে ‘নিঃশেষিত’ হয়ে গেল কেন? সৃষ্টিশীলতার এ কোন অদ্ভুত রীতি? আমরা তা কেবল আমাদের নিজস্ব বোধ-বুদ্ধি ও প্রবণতা অনুযায়ী অনুমানই করে নিতে পারি কেবল হয়তো, সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারি না।
জি এইচ হাবীব: শিক্ষক, ইংরেজি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
হাস্যরসিকতা করেন তাঁর সেই সংক্ষিপ্ত কবিজীবন নিয়ে, রচনাকর্ম নিয়ে? অথচ যে কবিতা সৃষ্টি করে পৃথিবীর সাহিত্যে যুগান্ত? এ কেমন প্রহেলিকা?
অল্প বয়সে অতুল কীর্তি গড়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন এমন মানুষের সংখ্যা খুব বেশি নয়। তাঁদের মধ্যে র্যাঁবো বা জাঁ নিকোলাস আর্তুর র্যাঁবো কেন বিশিষ্ট? কী এমন কাব্যপ্রাণমণ্ডিত কবিতা লিখেছিলেন তিনি, যার জন্য অনেকে তাঁকে আধুনিক ইউরোপীয় কাব্যের প্রতিষ্ঠাতা মনে করেন? নাকি তাঁর কবিতার চেয়ে তাঁর রূপকথার মতো জীবন, দ্বন্দ্বমুখর প্রেমময় জীবন, দুঃসাহসিক ভ্রামণিকের জীবন, বিদ্রোহীর জীবন, দূর দূর দেশে সওদাগরি করা জীবন এবং অকালমৃত্যু বেশি আকর্ষণ করেছে মানুষকে? সেই আকর্ষণ, সেই মুগ্ধতা বাড়িয়েছে তাঁর কবিখ্যাতি?
তাঁর জন্ম ১৮৫৪ খ্রিষ্টাব্দের ২০ অক্টোবর, উত্তর ফ্রান্সের বেলজীয় সীমান্তবর্তী শার্লেভিনা নগরে। বাবা ফ্রেদেরিক সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন; তবে কেবল যুদ্ধে যুদ্ধেই কাটেনি তাঁর জীবন। আর মা ভিতালি কুইফ ছিলেন এক কৃষককন্যা, যাঁকে অনেকের ভাষ্যমতে, কেউ কখনো হাসতে দেখেনি। তো, এই আপাত-অদ্ভুত দম্পতির পাঁচ সন্তানের মধ্যে র্যাঁবো দ্বিতীয়। ধারণা করা হয়, বাবার কাছ থেকে র্যাঁবো তাঁর প্রতিভা ও বুদ্ধিবৃত্তিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা লাভ করেছিলেন। র্যাঁবোর বাবা উত্তর আফ্রিকায় কর্মরত অবস্থায় কোরআনের একটি সটীক অনুবাদ প্রকাশ করেছিলেন, সেই সঙ্গে বের করেছিলেন আরব কৌতুকের একটি সংকলন। র্যাঁবো যখন আফ্রিকা যান, তখন তিনি এই দুটো বই তাঁকে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য চিঠি লিখেছিলেন। ভাষার প্রতি প্রবল আকর্ষণ ছিল র্যাঁবোর, আফ্রিকাতে বাচ্চাদের কোরআন শিক্ষাও দিতেন তিনি আরবি আর স্থানীয় বেশ কিছু উপভাষা শেখার পর।
ছোটবেলায় কিন্তু শান্তশিষ্ট লক্ষ্মীমন্ত সুবোধ ও মেধাবী এক বালক ছিলেন র্যাঁবো। তার ওপর ছিল মায়ের কড়া শাসন। বাবা বাড়ি আসতেন কেবল ছুটি-ছাটায়। একবার যে চলে গেলেন ছুটি কাটিয়ে, সেটাই ছিল তাঁর অগস্ত্যযাত্রা। ফেরেননি আর কোনোদিন। যে কারণে র্যাঁবোর মা ‘বিধবা র্যাঁবো’ বলে নিজের পরিচয় দিতেন। বাবার এই অন্তর্ধান বুকে বড় বেজেছিল সন্তানদের। তো, র্যাঁবোরা দুই ভাই যাতে পড়াশোনা ঠিকমতো করেন, সে জন্য বড় সচেতন থাকতেন তাঁদের মা। কোনো ভুলভাল বা গাফিলতির জন্য তাঁর শাস্তি ছিল ছেলেদের ১০০ লাইন লাতিন পদ্য মুখস্থ করানো। আরও বড় অপরাধের জন্য মধ্যাহ্ন বা নৈশভোজ থেকে তাঁদের বিরত রাখা। তবে র্যাঁবোর বিদ্রোহী সত্তার প্রমাণ মেলে তখন, যখন নয় বছর বয়সে তিনি লাতিন ভাষাতে সাত শ শব্দের একটি রচনা লেখেন তাঁর স্কুলে লাতিন শেখানোর বিরুদ্ধে।
এগারো বছর বয়স পর্যন্ত মুখ্যত বাইবেলেই সীমিত ছিল র্যাঁবোর পড়াশোনা। পড়তেন কিছু রূপকথা আর অ্যাডভেঞ্চার কাহিনিও—জেমস ফেনিমোর কুপার আর গুস্তাফ আয়মারের উপন্যাস। আর বিদ্যায়তনের পড়াশোনাতেও ছিলেন তুখোড়, গণিত আর বিজ্ঞানের বিষয়গুলো ছাড়া অন্যগুলোতে সবার থেকে এগিয়ে। ১৮৬৯ সালে তো ফরাসি বিদ্যায়তনিক প্রতিযোগিতায় আটটি প্রথম পুরস্কার লাভ করেন, তার মধ্যে ছিল ধর্মীয় শিক্ষার পুরস্কারও। থার্ড গ্রেডে তাঁর প্রাইভেট টিউটর, এক ফাদার তাঁর মধ্যে গ্রিক, লাতিন আর ফরাসি ধ্রুপদি সাহিত্যের প্রতি মমত্ববোধ সঞ্চার করেন এবং তিনিই প্রথম তাঁকে মৌলিক কবিতা রচনা করতে উদ্বুদ্ধ করেন, ফরাসি আর লাতিন, দুই ভাষাতেই।
প্যারিসের দেওয়ালে উৎকীর্ণ রঁী্যাবোর কবিতাকিছুদিন পর র্যাঁবোর জীবনে আসেন অলংকারশাস্ত্রের এক শিক্ষক, জর্জ ইমামবার; তিনি র্যাঁবোর দীক্ষাগুরু হয়ে ওঠেন। এই দুই শিক্ষকের প্রেরণায়, উৎসাহে র্যাঁবোর কাব্যপ্রতিভা স্ফুরিত হতে থাকে এবং ১৫ বছর বয়সে তিনি ইমামবারকে ‘ওফেলিয়া’ নামে যে কবিতাটি দেখান, সেটাকে কবির সেরা তিন বা চারটি কবিতার একটি বলে গণ্য করা হয়।
এরপর তাঁর জীবনের যে পর্ব শুরু হলো, তার মধ্যে রয়েছে বাড়ি থেকে পলায়ন ও প্রত্যাবর্তন—যেটা চলবে তাঁর বাকি জীবনভর, কবি পল ভেরলেনের সঙ্গে বন্ধুত্ব, প্রণয়, সহিংস বিচ্ছেদ, স্বদেশ প্রত্যাবর্তন এবং কাব্য রচনা—এমন এক কাব্য রচনা, যা তাঁকে অমর করে রাখবে আধুনিক সিম্বলিস্ট রচনার পথিকৃৎ রচনা হিসেবে—নরকে এক ঋতু।
এ কথা প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায় যে মায়ের দমবন্ধ করা শাসনের বেড়ি থেকে মুক্তিলাভের জন্যই—যার সঙ্গে হয়তো যুক্ত হতে পারে তাঁর দুই প্রিয় শিক্ষকের দেখানো দৈনন্দিন পানসে জীবনের বাইরে এক রোমাঞ্চকর উন্মুক্ত জগতের স্বপ্ন—র্যাঁবো প্রথমবারের মতো ঘরছাড়া হন, প্যারিসের উদ্দেশে। তবে ট্রেনের পুরো ভাড়া না থাকায় তাঁকে গ্রেপ্তার হতে হয় এবং তাঁর অলংকারশাস্ত্রের শিক্ষকের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে চিঠি লেখার পরেই কেবল জেল থেকে ছাড়া পান তিনি ভদ্রলোকের বদান্যতায়, যাঁকে র্যাঁবো নিজের ভাই বলে গণ্য করতেন। বাড়িতে ফিরে আসতে বাধ্য হলেন বটে, কিন্তু চারপাশের মলিনতা, জীবনযাপনের একঘেয়েমি, গতানুগতিকতা তাঁকে বিষণ্ন ও বিদ্রোহী করে তুলল। ইশকুলের আদর্শ ছাত্র বড় চুল রাখলেন, এখানে-সেখানে বসে সামনে দিয়ে যাওয়া—বুর্জোয়া শ্রেণির লোকজনকে ব্যঙ্গবিদ্রুপ করতে থাকলেন আর ধূমপান শুরু করলেন পুরোদমে। আর তাঁর পলায়নপরতা ঠাঁই নিতে শুরু করল এ সময়ে লেখা তাঁর কবিতাগুলোতে।
কিন্তু অর্গল ভাঙার তাঁর এই ইচ্ছে বা প্রবণতা, ড্যানিয়েল মেন্ডেলসনের ভাষায়, এক ‘লিটারারি ভ্যান্ডালিজম’-এর মাধ্যমে প্রকাশিত হলো। র্যাঁবো এরই মধ্যে কাব্যিক প্রবণতাকে উপহাস ও ব্যঙ্গ করতে শুরু করেছিলেন। তো, বয়োসন্ধিকালের এই বিদ্রোহ আর কাব্যিক ইঁচড়ে পাকামির মিলিত ফল হিসেবে ১৮৭১ সালের মে মাসে আবিভূর্ত হলো শৈল্পিক লক্ষ্যের এক জাঁকালো বিবৃতি। ইমামবার আর পল দেমেবি নামের এক কবিকে লেখা দুটো চিঠিতে র্যাঁবো তাঁর মহান পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করার অভিলাষ ব্যক্ত করলেন। প্রথম জনকে তিনি লিখলেন, ‘নিজেকে আমি এখন জঘন্য করে তুলছি, যতটা পারি। কেন? আমি কবি হতে চাই এবং নিজেকে একজন দ্রষ্টা হিসেবে রূপান্তরিত করার জন্য কাজ করছি আমি। এসবের কোনো কিছুই আপনি বুঝবেন না আসলে, আর ব্যাপারটা আপনার কাছে ব্যাখ্যা করার ক্ষমতাও আমার নেই প্রায়। ব্যাপারটা হলো, অজানার কাছে পৌঁছানো এবং সব কটা ইন্দ্রিয় তছনছ বা লন্ডভন্ড করে দেওয়া। প্রচণ্ড যন্ত্রণার ব্যাপার এটি কিন্তু মানুষকে অবশ্যই শক্ত হতে হবে, হতে হবে জন্মকবি এবং আমি বুঝেছি, আমি কবি, এতে আসলে আমার কোনো দোষ নেই।’
শার্ল বোদলেয়ারের রচনা র্যাঁবোকে প্রতীকধর্মী কবিতা লিখতে অনুপ্রাণিত করেছিল। একই বছরের ১৫ মে পল দিমনিকে লেখা চিঠিতেও প্রথমটির মতোই কথা লিখেছিলেন র্যাঁবো, কাব্য ও জীবন সম্পর্কে তাঁর বৈপ্লবিক তত্ত্ব প্রকাশ করেছিলেন। উল্লেখ্য, তাঁর বয়স তখন ১৬। এই একই কথা তিনি ব্যক্ত করেছিলেন ১৮৭১-এ লেখা তাঁর মাতাল তরণি নামক ১০০ লাইনের পদ্য কবিতায়। সেখানে প্রাঞ্জল রূপকল্প আর প্রতীকের মাধ্যমে দৃশ্যত একটি নৌকার ভেসে চলা এবং নিমজ্জিত হওয়ার ব্যাপারটি বর্ণিত হয়েছে। ফরাসি কবিতার একটি অত্যুজ্জ্বল বর্ণিল রত্ন এই ‘মাতাল তরণি’।
বন্ধু কবি পল ভেরলেনের অাঁকা রঁ্যাবো, ১৮৭২র্যাঁরোরই চিঠির জবাবে বিখ্যাত প্রতীকধর্মী কবি ভেরলেনের আমন্ত্রণে, ‘আসুন, আমার প্রিয় মহান আত্মা, আমরা আপনাকে ডাকছি, আপনার জন্য অপেক্ষা করছি।’ তাঁর প্যারিস গমন তরুণ কবির জীবনে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। তার আগে তিনি দুটো চিঠিতে জ্যেষ্ঠ কবির কাছে নিজের লেখা বেশ কিছু কবিতা পাঠিয়েছিলেন এবং বলাই বাহুল্য কবিতাগুলো প্রবলভাবে চমৎকৃত করেছিল ভেরলেনকে। বিবাহিত ভেরলেনের সঙ্গে র্যাঁবোর যে দ্বন্দ্বমুখর, বুনো, ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ হ্যাশিস আর অ্যাবসিন্থনির্ভর বন্ধুত্বের সূত্রপাত ঘটে। যার অভিঘাতে বিপন্ন হয়ে পড়ে প্রথম জনের সংসার, আঁতকে ওঠে প্যারিসের সাহিত্যিক মহল। বন্ধুর হাতে গুলিবিদ্ধ হতে হয় র্যাঁবোকে, জেলে যেতে হয় ভেরলেনকে—তা সাহিত্যজগতের এক চিরস্মরণীয় ঘটনা এ জন্যও যে এই বন্ধুত্বের অবসানের পর র্যাঁবোর কলমে রচিত হয় সেই অমর গদ্যকবিতা, মূলত যার কারণেই তাঁর কিংবদন্তিসম খ্যাতি—নরকে এক ঋতু। এখনো এটি আধুনিক প্রতীকধর্মী রচনার একটি প্রথম দিককার রচনা বলে পাঠক ও সাহিত্যবোদ্ধাদের অনেকের কাছে স্বীকৃত। এখানে তিনি ভেরলেনকে বর্ণনা করেছেন তাঁর ‘করুণাঘন ভাই’ এবং ‘উন্মাদ কুমার’, আর নিজেকে ‘নারকীয় স্বামী’ হিসেবে।
আর্তুর র্যাঁবোর ঈর্ষণীয় কবিখ্যাতি তৃতীয় যে গদ্যকাব্য গ্রন্থটির জন্য, তা ইল্যুমিনেশনস। এটি রচিত হয় ১৮৭৪ সালে কবি জারমেইন নভুর সঙ্গে তিনি লন্ডনে যাওয়ার পর, তাঁদের মাস তিনেকের অবস্থানকালে।
পাঁচ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে গড়া কাব্যকীর্তির ওপর ভিত্তি করে কেউ এভাবে জগদ্বিখ্যাত হয়েছেন এবং এই সময়ের পর কাব্যকলার দেবীকে স্বেচ্ছায় পরিত্যাগ করে বিচিত্র সব পেশা অবলম্বন করে দূরদূরান্তে ভ্রমণ করেছেন, এমন উদাহরণ সম্ভবত দ্বিতীয়টি নেই। তবে তাঁর সেই বহু বর্ণিল পেশাগত জীবনে তিনি প্রচুর পত্ররচনা করেছেন, যা তাঁর বিচিত্র জীবন এবং বিবিধ সম্পর্ক প্রাঞ্জলভাবে তুলে ধরে পাঠকের সামনে।
ভিক্টর হুগো তাঁকে ‘শিশু শেক্সপিয়ার’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। তাঁর অতি অল্প সময়ের কাব্যকৃতি ও হ্রস্ব জীবনের বর্ণময় অভিজ্ঞতা পিকাসো থেকে বব ডিলান, কাকে বিমুগ্ধ বা অনুপ্রাণিত করেনি? তাঁর জীবনকাহিনি নিয়ে রচিত হয়েছে উপন্যাস, চলচ্চিত্র, অপেরা, সংগীত। আর কেন তিনি সেই চার-পাঁচ বছরের কালসীমার পর তাঁর কাব্যরচনার মসি ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলেন, তা নিয়ে রয়েছে বিস্তর জল্পনা-কল্পনা, অনুমান আর রহস্য।
ফুরিয়ে গিয়েছিলেন এই অসীম সম্ভাবনাময় কবি কোনো আগ্নেয়গিরির মতো একবারে সব লাভা উদ্গিরণ করে? নাকি তাঁকে নিয়ে রচিত ব্রুস ডাফির উপন্যাস ডিমাসটার ওয়ান মাই গড (২০১১)-এ ভেরলেন যেমন বলেন, তেমনটিই ঘটেছিল আসলে? ‘বেশ, প্রায় নিশ্চিত, বড় একটি কারণ হলো, সে বড় হয়ে গিয়েছিল...মরে গিয়েছিল ওর ভেতরের শিশুটি।’ নাকি যা বলার ছিল তাঁর তা সব বলা হয়ে গিয়েছিল? তাই মূক হয়ে গিয়েছিলেন তিনি? নইলে যে নরকের এক ঋতুতে নিজের সীমাবদ্ধতার সঙ্গে একটা সমঝোতায় পৌঁছানো এক মানুষের কথা, ব্যর্থতার একটি প্রবল বোধের কথা, ভুল পথ বেছে নেওয়ার কথা বললেন, যে ইল্যুমিনেশনস-এ তিনি স্ফটিক স্বচ্ছতায় পাঠকের চোখের সামনে স্বপ্নের অদ্ভুতত্ব, তীব্রতা আর গূঢ় যৌক্তিকতা তুলে ধরলেন, গায়ে কাঁটা দেওয়ার মতো নিভুর্লভাবে ভবিষ্যতের দিকে আলো ফেলেন, সেই ক্ষমতা, সেই দৃষ্টি পরিণত হওয়ার বদলে ‘নিঃশেষিত’ হয়ে গেল কেন? সৃষ্টিশীলতার এ কোন অদ্ভুত রীতি? আমরা তা কেবল আমাদের নিজস্ব বোধ-বুদ্ধি ও প্রবণতা অনুযায়ী অনুমানই করে নিতে পারি কেবল হয়তো, সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারি না।
জি এইচ হাবীব: শিক্ষক, ইংরেজি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়