একটা দেশের সাথে অন্য একটা দেশের তুলনা পুরোপুরি করা যায় না অথবা করা উচিত নয়, কেননা প্রত্যেকটি দেশের নিজস্ব ভৌগোলিক অবস্থান, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ভাষা, ধর্ম প্রভৃতি ভিন্ন ভিন্ন হয় আন্যদেশ গুলোর তুলনায়। কিন্তু তারপরও একথা সত্যি যে, সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে প্রতিটি দেশের মানুষের প্রত্যাশা
একই রকম হয়, আর সেটা হলো সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, স্বাধীনতা, স্বীকৃতি। কারণ রাষ্ট্রের জন্মই হয়েছে মানুষের এই সব প্রত্যাশা থেকে, যা রাষ্ট্রের উৎপত্তির তত্ত্বগুলো পড়লেই আমরা জানতে পারি। আর একটা দেশের সাথে অন্য একটা দেশের তুলনা কেবল সামাজিক প্রেক্ষাপটেই করা সম্ভব, কেননা সমাজ রাষ্ট্রের চেয়ে বড়। সুতরাং এই একটা পথ পেলাম যার মধ্য দিয়ে অন্য একটা দেশের সাথে বাংলাদেশের তুলনা করার সুযোগ পাব। মূলত ঘুরতে গিয়েছিলাম সিংগাপুর, কিন্তু আমার একজন সম্মানিত স্যারের কথা মনে পড়ে গেল। স্যার বলেছিলেন, কখনো দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ হলে যেন সেই দেশটার মানুষের জীবন ধারা থেকে সমস্ত কিছু প্রত্যক্ষ করি। তাই আমিও চেষ্টা করেছি যতটুকু সম্ভব হয়েছে। এখন আমি যা প্রত্যক্ষ করেছি তার বর্ণনায় যাব, আর দু-একতা সামাজিক পরিসরে বাংলাদেশের সাথে সিংগাপুরের তুলনা করার চেষ্টা করব। সেই সাথে সরকারি খাত ব্যবস্থাপনা এবং সরকার পরিচালনার এ বিষয়ে তুলনা কিছুটা আলোচনায় থাকবে দুটি দেশের মধ্যে।
একই রকম হয়, আর সেটা হলো সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, স্বাধীনতা, স্বীকৃতি। কারণ রাষ্ট্রের জন্মই হয়েছে মানুষের এই সব প্রত্যাশা থেকে, যা রাষ্ট্রের উৎপত্তির তত্ত্বগুলো পড়লেই আমরা জানতে পারি। আর একটা দেশের সাথে অন্য একটা দেশের তুলনা কেবল সামাজিক প্রেক্ষাপটেই করা সম্ভব, কেননা সমাজ রাষ্ট্রের চেয়ে বড়। সুতরাং এই একটা পথ পেলাম যার মধ্য দিয়ে অন্য একটা দেশের সাথে বাংলাদেশের তুলনা করার সুযোগ পাব। মূলত ঘুরতে গিয়েছিলাম সিংগাপুর, কিন্তু আমার একজন সম্মানিত স্যারের কথা মনে পড়ে গেল। স্যার বলেছিলেন, কখনো দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ হলে যেন সেই দেশটার মানুষের জীবন ধারা থেকে সমস্ত কিছু প্রত্যক্ষ করি। তাই আমিও চেষ্টা করেছি যতটুকু সম্ভব হয়েছে। এখন আমি যা প্রত্যক্ষ করেছি তার বর্ণনায় যাব, আর দু-একতা সামাজিক পরিসরে বাংলাদেশের সাথে সিংগাপুরের তুলনা করার চেষ্টা করব। সেই সাথে সরকারি খাত ব্যবস্থাপনা এবং সরকার পরিচালনার এ বিষয়ে তুলনা কিছুটা আলোচনায় থাকবে দুটি দেশের মধ্যে।
পাচ মিলিয়নের কিছুটা বেশি লোকের জনবহুল শহর সিংগাপুর। বিমান থেকে উত্তরণ এবং অবতরণ এ দুই সময়েই পাখির চোখে পুরো সিংগাপুর শহরটাকে দেখে নেওয়া যায়। চাইনিজ, মালয় এবং তামিল এ তিনটি গোষ্ঠিই প্রধান, এর মধ্যে চাইনিজরা সবচেয়ে বেশি প্রায় ৭৫% তারপর আছে মালয় এবং তারপর তামিল। প্রচুর বিদেশি অভিবাসি আছে এখানে, এশিয়ানরা সবচেয়ে বেশি, ইউরোপিয়ান এবং আফ্রিকানদের পর্যটক হিসেবই বেশি দেখা যায়। দক্ষিণ চীন সাগরীয় দেশগুলোর সাথে দৈনন্দিন সম্পর্ক অনেক ভালো। প্রতিদিনই অনেক মালয়-ইন্দোনেশিয়ান সিংগাপুরে আসে, সিংগাপুর থেকেও অনেকে আবার প্রতিবেশি দেশগুলোতে যায়। প্রধান ভাষা গুলোর মধ্যে আছে মান্দারিন, মালয়, তামিল এবং ইংরেজি হল প্রশাসনিক ভাষা। MRT (Mass Rapid Transport), বাস এবং মার্কেট গুলোতে ইংরেজির পাশাপাশি এ ভাষা গুলোকে গুরুত্ব সহকারে ব্যবহার করতে দেখা যায়। ইংরেজি প্রশাসনিক ভাষা হওয়া সত্ত্বেও অন্য ভাষাগুলোকে অমর্যাদা করা হয়নি। একটা ব্যাপার অনেক ভালো লেগেছে, সেখানে প্রচুর বাংলাদেশি অভিবাসী চাকরির সুবাদে পরিবার পরিজন নিয়ে থাকেন এবং তাদের বাচ্চাদের পরাশুনার জন্য বাংলা স্কুল আছে। এই বাংলা তাদের পাঠ্য তালিকার অন্তর্ভূক্ত এবং পাবলিক পরীক্ষা গুলোতে তাদের বাংলা বিষয়ের নম্বর অন্তর্ভূক্ত হয়। আমি যতদূর জানি, এই সুযোগ আমেরিকা ও ইউরোপীয় দেশগুলোতে নেই। যার কারণে এসব দেশে অভিবাসিদের শিশুরা মাতৃভাষার সাথে পরিচিত হতে পারে না।
![]() |
পার্লামেন্ট অব সিংগাপুর
|
যেহেতু সিংগাপুর পুরোটাই শহর, তাই আবাসিক ভবন থেকে শুরু করে বানিজ্যিক-সরকারি সবই সুউচ্চ বহুতল ভবন। মাত্র ৬৬০ বর্গকিলোমিটারের আপনি যেখানেই যাবেন, সেখানেই দেখবেন প্রচুর গাছ-পালা, খোলা জায়গা এবং প্রশস্ততায় আপনার চোখ ছেয়ে যাবে। এখানে ব্যক্তিগত জমির মালিকানা খুবই কম, বেশির ভাগ সরকারি এবং কর্পোরেট মালিকানা। কিন্তু এসব ব্যক্তিগত ও কর্পোরেট মালিকানা একটা নির্দিষ্ট সময় পর ছেড়ে দিতে হয়, এই ধরুন এক শতক অথবা তার বেশি কিছু সময়। এইখানে ব্যক্তি স্বাধীনতাকে খাটো খরা হলেও একটা ব্যাখ্যা দাড় করানো যেতে পারে। আর তা হল, এখানে ব্যক্তিগত জমির মালিকানা না থাকার কারণে জমির অপচয় ঠেকানো গিয়েছে দারূন ভাবে। যার কারণে পুরো দেশটাকে সুপরিকল্পিত ভাবে গুছানো হয়েছে নাগরিক সকল সুবিধা ও প্রয়োজনীয়তা মাথায় রেখেই। যদি আমাদের দেশের মতো সিংগাপুরে জমির অবাধ মালিকানা থাকত, তবে ছোট এ দেশটিতে পা ফেলার জায়গা থাকত না হয়ত, এমন দৃষ্টিনন্দন শহর তো দূরের কথা। সিংগাপুর সমতল ভূমিও নয়, আবার পাহাড়িও নয়। সামান্য উচু-নিচুতেই পরিকল্পিত দেশটি তার সব সৌন্দর্য উজার করে দিয়েছে। চলাফেরা বা যোগাযোগের সুবিধার জন্য একটু-আধটু উচু-নিচু জায়গা কেটে সমতল করা হয়নি, বরং ছোট একটি পাহাড়ের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে ফ্লাইওভার থেকে সরাসরি টানেল তৈরি করা হয়েছে। যেটা MRT ২০ সেকেন্ডের কম সময়েই অতিক্রম করতে পারে। আমাদের দেশের কবিরা যেভাবে বাংলাদেশের প্রকৃতির বর্ণনা করেছেন, তাতে ছোটবেলায় ভাবতাম বাংলাদেশটাই সবুজ আর অন্যদেশ বা বিদেশে গাছপালা অন্য রঙের। সত্যি কথা বলতে কোনো শহরেও যে এত গাছপালা ( আসলে বন জঙল বলাই শ্রেয় হবে) থাকতে পারে, জানা ছিল না। শহরের বিশাল বিশাল বহুতল ভবনের পাদদেশে বন-জঙল আছে, সেগুলোর গাছপালা আবার লতাপাতায় ঢাকা, পুরো শহরটাই সবুজ। মহাসড়কের পাশে যে গাছ-পালা আছে তাতে মনে হয় বনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। সিংগাপুর ঘুরে এসে ঢাকা শহরটাকে মরুভূমিই মনে হয়েছে আমার কাছে।
![]() |
লতা-পাতায় ঢাকা বন-জঙ্গল অবশ্যই শহরের মধ্যে
|
যেহেতু ব্যক্তিগত জমির মালিকানা খুবই অল্প বা সবই সরকারি জমি, তাহলে প্রশ্ন হলো সেখানে মানুষের আবাসনের ব্যবস্থা কি ধরনের? সিংগাপুরের আবাসিক ভবনগুলো সবই সুউচ্চ বহুতল ভবন এবং তা HDB (Housing Development Board) ও কনডোমোনিয়াম এই দুই ধরনের। HDB গুলো সবই সরকারের আয়ত্বাধীন এবং কনডোমোনিয়াম হলো সরকার থেকে লিজ নেওয়া কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর। ব্যক্তিগত ভাবে জমি কেনা না গেলেও HDB ও কনডোমোনিয়াম গুলো থেকে ফ্ল্যাট কেনা যায় বা ভাড়া নেওয়া যায়। এমনকি অভিবাসিরা, যারা নাগরিকত্ব পান নি তারাও ফ্ল্যাট কিনতে পারে। প্রতিটি HDB ও কনডোমোনিয়ামের ভবন গুলো দেখতে একই রকম হয়। এগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোর মতো, এখানে বাচ্চাদের খেলার জায়গা, সুইমিং পুল, জিম, কমিউনিটি রুম, সাইকেল ও গাড়ি পার্কিং এর আলাদা ব্যবস্থা থাকে। গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যপারটায় আরো অবাক হয়েছি, কারণ প্রতিটি HDB, কনডোমোনিয়াম, মার্কেট, বানিজ্যিক এবং সরকারি এলাকা গুলোতে গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য আলাদা বহুতল ভবন থাকে, এগুলোকে Multi-store Car Parking বলে। মাঝে মাঝে আমার কাছে গাড়ির বাজার মনে হতো।
![]() |
আবাসিক HDB ও কনডোমোনিয়াম
|
এত ব্যক্তিগত গাড়ি বাসও কম নয়, কিন্তু রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম বলে কিছু নেই এবং কোনদিন রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশও দেখেনি। ট্রাফিক জ্যাম না থাকার বড় কারণ হতে পারে MRT কিন্তু তার চেয়েও বড় কারণ রিকশা-ভ্যান টাইপের কিছু নেই। আর যত্র-তত্র কেউ রাস্তা পার হয় না। আমার মাঝে মধ্যে অস্থির লাগতো রাস্তা ফাকা তারপরও পার হতে পারছি না। পরে অবশ্য শৃংখলাই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম। যেহেতু রিকশা-ভ্যান জাতীয় কিছু নেই, তাই কোথাও যেতে চাইলে বাস-ট্যাক্সি বা MRT থেকে নেমে সোজা হাটতে হয়। ভেবে দেখলাম আমাদের দেশে রিকশা-ভ্যান আসলে আমাদের আলস্যতার প্রতিক। আমাদের দেশে ঘরের কাছে বাজারে যেতেও মানুষ রিকশা করে যায়। ক্যাম্পাসের আসে পাশের হলগুলো থেকেও বন্ধুদের রিকশা করে আসতে দেখি প্রতিনিয়ত। আমরা একটুতেই আরাম খুজতে চাই, এবং আমরা যে জাতিগত ভাবে অলস এটা তা প্রমাণ করে। একদিন হাটতে হাটতে একটা বিলবোর্ডের দিকে চোখ পড়ল, তাতে লেখা ছিল- “Do you want
healthy life, then walk to the MRT” আমাদের দেশে রিকশা-ভ্যান হয়ত অনেক মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করছে, কিন্তু এটা হয়ত অনেকেই জানিনা রিকশা চালানো পেশাটি একটি অমানবিক পেশা। একজন মানুষ কি কষ্ট করে দু-তিন জন (মাঝে মাঝে চারজনও থাকে) কে টেনে নিয়ে যায়।, তা আমরা কখনো ভাবি না। আমাদের দেশে শুধু রিকশা চালকেরা অমানবিকতার শিকার হন না, নিম্ন আয়ের সকল মানুষ ভীষণভাবে উপেক্ষিত হয় মানবিকতার দিক থেকে। যে দেশে কৃষকের মর্যাদা সবার উপর থাকার কথা, সেখানে আমরা কৃষকের সন্তান বলে পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করি অর্থনৈতিক ভাবে কৃষি প্রধান দেশ স্বত্তেও। এত উর্বর জমি থাকার পরও কৃষকরা কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে সরকারের যথাযথ নীতিমালা, স্বদ্বিচ্ছা এবং কৃষি শিল্পায়ন না থাকার কারণে। সেটা
শহরমুখো মানুষের আগমন দেখলেই বুঝা যায়। কিন্তু সেখানে পরিচ্ছন্নকর্মী থেকে শুরু করে বাস-চালক, টেক্সিচালক, চাকুরীজীবী সকলকে সম্মানের একই কাতারে ফেলা যায় নির্দিধায়। সেখানে ধনী-গরিবের পার্থক্য চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় না। দুঃখের ব্যাপার হলো, চরম অর্থনৈতিক বৈষম্য শুধু আমাদের জাতীয় সীমার মধ্যে আবদ্ধ নয়, সেটা সেখানেও চোখে পড়েছে প্রবাসী বাংলাদেশি চাকুরিজীবী আর শ্রমিকদের দেখে।
হ্যা, পরিচ্ছন্নকর্মীদের কথা বলি, সেখানে বেশিরভাগ পরিচ্ছন্নকর্মী ষাটোর্ধ বয়স্ক মানুষ। প্রথমে দেখে খারাপ লাগতো যে, এতো বয়স্ক মানুষ খাবারের দোকান, MRT স্টেশন, সুপারশপ গুলোতে কাজ করছে বা মোছামুছি করছে। পরে চিন্তা করে দেখলাম এরা মানুষ হিসেবে অনেক আত্মনির্ভরশীল। বার্ধক্যে সুস্থ থাকার জন্য একটু আধটু কায়িক পরিশ্রমের দরকার হয়, যার কারণে তারা বসে থাকেন না। আর সেখানে সকল বয়সী মানুষ প্রতিদিন নয়-দশ কিলোমিটার জগিং করাকে দৈনন্দিন খাবারের মতো গুরুত্বপূর্ণ ভাবে। এটা দেখে একটা ব্যাপার মাথায় আসলো তা হলো, আমাদের দেশে মা-বাবারা (বিশেষ করে মধ্যবিত্ত শ্রেণির কথা বলছি, কারণ দরিদ্রদের সব বয়সেই পেটের দায়ে কাজ করতে হয় আর ধনীদের কথা বাদ দিলাম) ছেলে-মেয়ে বিয়ে দেবার পরই ভাবেন, “আমাদের দায়িত্ব শেষ, এখন ছেলেমেয়েরা আমাদের দেখবে।’’ অত্যন্ত সম্মানের সাথে বলছি, তারা যতটা না শারীরিক ভাবে নির্ভরশীল হন, তার থেকেও বেশি নির্ভরশীল হন মানসিকভাবে। যার কারণে পারিবারিক অশান্তির অন্ত থাকে না।
![]() |
ছবিতে বৃদ্ধার বয়স ৮০ উপরে, বয়সের ভারে কুজু তবুও নিজের কাজ নিজে করেন |
এইবার নিরাপত্তার কথা বলি। নিরাপত্তা শতভাগ মনে হয় কোনো দেশেই নাই, তবুও বলছি সিংগাপুরে নিরাপত্তা শতভাগই উপভোগ করেছি। আর এটা যতটা না মানুষ হিসেবে উপভোগ করেছি, তার থেকেও বেশি উপভোগ করেছি মেয়ে হিসেবে। মেয়ে হিসেবে আমি যদি আমার দেশের নিরাপত্তার কথা বলি, তাহলে প্রতি মূহুর্তে আমি কতভাবে কতটা অনিরাপদ তা বলে শেষ করা যাবে না। আমি সেখানে রাত ১১ টার সময়ও একা বাসায় ফিরেছি, কেউ আমার দিকে আড়চোখে তো দূরে থাক, ফিরেও তাকায়নি। সেখানে একটা মেয়ে হাফপেন্ট পরেছে কি হিজাব পরেছে তা নিয়ে কোনো পুরুষের মাথাব্যাথা নেই, কাউকে কোনোদিন কোনো মেয়ের দিকে আড়চোখে তাকাতেও দেখিনি। আর আমাদের দেশে বোরকাপরা মেয়েরা পর্যন্ত রিকশাওয়ালাদের কুনজর থেকেও রক্ষা পায় না, বাকীদের কথা নাই বললাম। মেয়েদের নিরাপত্তার জন্য সেখানকার মানুষের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি সত্যিই অসাধারণ। আমাদের দেশের মতো সেখানে বাসে কিংবা ট্রেনে পাশের সিটে কোনো মেয়ে বসলে পুরুষরা পা ছড়ায়ে আরাম করে বসে না, বরং স্বাভাবিক ভাবেই বসে। নারীদের শুধু নিরাপত্তাই নয়, প্রত্যেকটি কাজে নারীদের প্রায় পুরুষের সমান। বাসচালক থেকে শুরু করে সব কাজেই নারীদের সমঅংশগ্রহন দেখা যায়। আমাদের দেশে কর্মক্ষম মানুষ যত আছে, তার থেকেও বেশি আছে কর্মক্ষমবিমুখ মানুষ। সিংগাপুরে কাউকে সকাল ৭ টা পর্যন্ত ঘুমাতে দেখা যায় না, কারণ ভোররাতেই সবাই জেগে ৭ টার মধ্যেই যার যার কর্মক্ষেত্রে চলে যায়। বাচ্চাদের স্কুলও সূর্যোদয়ের আগেই শুরু হয়। দিনের আলোর যথাযথ ব্যবহার করে তারা। আর আমাদের দেশে যারা বেসরকারি চাকরী করে, তারা একটু চাপের মধ্যে থাকলেও সরকারি চাকুরীজীবীরা সকালবেলা বেশ আরাম করে ঘুমিয়েই কর্মক্ষেত্রে যেতে পারেন, তাতে তাদের কোনো অসুবিধা হয় না। এই তফাৎটা দেখে বুঝা যায়, একটা জাতির উন্নতি কিসে হয়?
লেখকঃ শিক্ষার্থী, ৪র্থ বর্ষ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়