শুক্রবার, ২৬ মে, ২০১৭

‘খ্যাপা দুর্বাসা’ :নজরুলের শিল্প-প্রকাশের আরেক রূপ

নজরুল বাংলাদেশের একটা নবজাগ্রত জনশ্রেণির মানসপ্রতিভূ ছিলেন, বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধের নবজাগ্রত মুসলিম মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব নজরুলকে সম্প্রদায়গত সংকীর্ণ চিন্তার মধ্যে নিক্ষিপ্ত করল না, বরং সকল সম্প্রদায়ের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও পুরাণকে অভিন্ন বোধের কেন্দ্রে স্থাপন করলেন

বাংলা কবিতার পটভূমিতে কাজী নজরুল ইসলামের আবির্ভাবকে তুলনা করা হয়েছে ধূমকেতুর সঙ্গে। তাঁর খ্যাতি শীর্ষ স্পর্শ করেছে
বিদ্রোহী কবি হিসেবে। আর বিপ্লবী-প্রেমিক কবি হিসেবে তাঁকে মূল্যায়ন করতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেছেন আমাদের সমালোচকরা। নজরুলের কবিস্বভাব চিহ্নিত করার এই ধারা বিশ শতকের প্রথমার্ধ থেকেই শুরু হয় এবং এখনো চলছে। কিন্তু কোন অস্তিত্বগত পরিস্থিতিতে নজরুলের শিল্পীসত্তার যুগন্তকারী বিস্তার, সেই প্রসঙ্গটি বহুলাংশে অধরাই রয়ে গেছে। যদিও নজরুলের জীবনীকাররা নজরুলের জীবন অনুধাবনের অনেক সূত্র যথার্থভাবেই পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন। সেই সূত্র ধরে নজরুল ইসলামের জীবন ও সৃষ্টি বিচারের কোনো নতুন প্রান্তে পৌঁছে যেতে পারি আমরা। ব্রিটিশ উপনিবেশের পশ্চাদপদ সমাজের এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন নজরুল। শৈশব থেকেই দুর্ভাগ্য আর অস্থিরতা ছিল তাঁর নিত্যসঙ্গী। মানসবিকাশের যে স্তরে প্রয়োজন শুশ্রূষা, স্থিরতা ও পরিকল্পনা, নজরুলজীবনের সেই স্তরেই ঘটতে থাকে অনাকাঙ্ক্ষিত সব ঘটনা। মাত্র নয় বছর বয়সে পিতার মৃত্যু, দশ বছর বয়সে নিম্নমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মক্তবে শিক্ষকতা করা, বাসুদেব কবিয়ালের লেটোদলে যোগদান, আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে পড়ালেখায় ছেদ—তাঁর কৈশোরের জীবনকেই দুর্বিষহ করে তোলে। মাত্র এগার বছর বয়সে হাজি পালোয়ানের মাজার শরীফের খাদেম ও পীরপুকুর মসজিদের ইমামতির কাজ দিয়ে তাঁর পেশাগত জীবনের শুরু। পনের বছর বয়সের মধ্যে বাংলার এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত পর্যন্ত জীবিকা ও শিক্ষার সন্ধানে অস্বাভাবিক ও অকল্পনীয় জীবনাভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে তাঁকে। অষ্টম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েন রানিগঞ্জের শিয়ারশোল রাজস্কুলে। এই স্কুলে প্রি-টেস্ট পরীক্ষা দিয়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সৈন্যবাহিনী ৪৯ নম্বর বাঙালি পল্টনে যোগ দেন কাজী নজরুল ইসলাম। এ-সময় করাচি সেনানিবাসে থাকা অবস্থায় তাঁর লেখালেখির সূত্রপাত। মাত্র উনিশ বছর বয়সে যে গল্পটি লেখেন, তার নাম ‘বাউন্ডেলের আত্মকাহিনী’, যা ‘সওগাত’(জ্যৈষ্ঠ, ১৩২৬) পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এ সময় তিনি রচনা করেন উপন্যাস ‘বাঁধনহারা’ এবং ‘রিক্তের বেদন’ গ্রন্থের গল্পগুলি। একুশ বছর বয়সে (জানুয়ারি, ১৯২০) এক সপ্তাহের ছুটি নিয়ে কলকাতা গমন এবং ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব কমরেড মুজফ্ফর আহমদের সঙ্গে সাক্ষাত্। বাঙালি পল্টন ভেঙে দিলে (মার্চ, ১৯২০) কলকাতা প্রত্যাবর্তন এবং মুজফ্ফর আহমদের সঙ্গে একত্রে বসবাস। প্রথম জীবনের যা কিছু পঠন-পাঠন তা এই বিরামহীন অস্থিরতার মধ্যেই। বাংলা সাহিত্যের যুগান্তর সাধনের যে ব্রত নিয়ে নজরুলের আত্মপ্রকাশ, তার পটভূমি হিসেবে এই দ্রুতরেখ জীবনকথা অত্যন্ত তাত্পর্যপূর্ণ।

জীবনের বস্তু-অভিজ্ঞতা থেকেই মানুষ আত্মসন্ধান ও আত্ম-আবিষ্কারের দীক্ষা গ্রহণ করে। নজরুলের কবিতা, গান, গল্প ও নাটকে ব্যক্তি ও সমষ্টির যে ভাবোন্মত্ত উদ্দাম স্বভাবধর্ম আমরা লক্ষ করি, তার মূলে রয়েছে উক্ত দীক্ষা ও বীক্ষা। জীবন ও শিল্পের যে দ্বৈরথ তিনি নির্মাণ করেছিলেন জীবনশুরুর সাধনায়, সেখানে অভিজ্ঞতার জগতের সীমাবদ্ধতাগুলোই পথ দেখিয়েছে তাঁকে। আত্ম-আবিষ্কারের ক্ষেত্রে এক অকপট দৃঢ়তা আমরা লক্ষ করি নজরুলের কবিতায়। বিখ্যাত ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় কবির আত্মশনাক্তিকরণ আমাদেরকে দাঁড় করিয়ে দেয় কবির মুখোমুখি এবং নিজের মুখোমুখি। কবি বলেন : ‘আমি খ্যাপা দুর্বাসা-বিশ্বামিত্র-শিষ্য,/আমি দাবানল-দাহ, দাহন করিব বিশ্ব।’ খ্যাপা বাউলের উত্তরাধিকারের সঙ্গে ব্যক্তিজীবন, সমাজজীবন ও বিশ্বজগতের বিচিত্র অসঙ্গতির অভিজ্ঞতায় নজরুলের শিল্পীমনের গঠন ও বিস্তার। এ-কারণেই তিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর সমাজসত্য ও শিল্পসত্যের মর্মমূল স্পর্শ করতে সমর্থ হয়েছিলেন। মহাসমরোত্তর অভাবনীয় সামাজিক-রাজনৈতিক বিবর্তনের ফলে মানুষের মূল্যবোধ ও শিল্পরুচির ক্ষেত্রে যে আলোড়ন সূচিত হয়, পূর্বতন কিংবা সমকালীন সাহিত্যের মধ্যে পাঠকমন তৃপ্তির উপকরণ খুব কমই পেয়েছে। রবীন্দ্রনাথের সূক্ষ্ম ও শীর্ষস্পর্শী নান্দনিক শিল্পসম্ভার সমকালের বিচিত্র অসঙ্গতির তাড়নায় অস্থির পাঠক মানসে মোহনীয় দূরধ্বনিতে পরিণত হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথের সুগভীর সামাজিক-রাজনৈতিক বক্তব্য শিক্ষিত নাগরিক মধ্যবিত্তের চিত্তলোকেই আলোড়ন তুলতে সমর্থ হয়—বৃহত্তর জনজীবনে তার আবেদন ছিল ক্ষীণ। এর কারণ রবীন্দ্র-সাহিত্য অনুধাবনের মতো বৈদগ্ধ্য ও শিল্পরস গ্রহণের উপযোগী পাঠক তখনো ব্যাপকভাবে সৃষ্টি হয়নি। এ সময়ের পাঠক সম্প্রদায় এমন কিছু প্রত্যাশা করেছে, যা নতুন ব্যঞ্জনায় সচকিত করে তুলতে পারে বিকারগ্রস্ত কালমানসকে—জাগিয়ে তুলতে পারে তাদের আত্মনিমগ্ন ঘুমন্ত পুরীতে জীবন-যৌবনের উত্তেজনা। উপনিবেশশৃঙ্খলিত সাম্রাজ্যবাদীশোষণ, শ্রেণিশোষণ, সামন্তশোষণ ও ধর্মশোষণপীড়িত সমাজমানস তখন উত্তরণীয় শিল্প উপকরণের জন্য অপেক্ষা করছিল উদগ্রীব চিত্তে। কালমানসের এই উত্তেজনা ও উদগ্রীব অপেক্ষার পটভূমিতে বাংলা সাহিত্যে নজরুলের আবির্ভাব। ব্যক্তিজীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে তিনি যেমন কালের অসঙ্গতি, অস্থিরতা ও আকাঙ্ক্ষাকে অনুধাবন করতে পেরেছিলেন, তেমনি মানবিক মূল্যবোধের চরম বিপর্যয় লক্ষ করে আত্মশক্তির আবাহনকে যথার্থ মনে করলেন।



২.

আধুনিক শিল্পের প্রধান লক্ষণ ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা তথা ব্যক্তিসত্তার সর্বময় স্বীকৃতি যেখানে ব্যক্তির আত্মজাগরণের মধ্যে সমগ্র সমাজ জীবনের জাগৃতি এবং অগ্রগতির ইঙ্গিত প্রতিবিম্বিত। শেলির বন্ধনমুক্ত প্রমিথিউস যেমন রোমান্টিক কবি-কল্পনায় মানবমুক্তির সত্যকে নির্দেশ করেছিল, ঠিক তেমনিভাবেই নজরুলের বিদ্রোহী ‘আমি’ সমস্ত জাগতিক অসঙ্গতি ও চেতনাগত পশ্চাদপদতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রকাশ করেছে। কিন্তু শেলির কবি-কল্পনায় যা ছিল ভাবময় ও শূন্যলোকচারী, নজরুলের সামাজিক রাজনৈতিক চেতনার প্রতিফলনে তা জীবনেরই প্রতিরূপ হয়ে উঠেছে। উল্লেখ্য যে, নজরুল বাংলাদেশের একটা নবজাগ্রত জনশ্রেণির মানসপ্রতিভূ ছিলেন, বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধের নবজাগ্রত মুসলিম মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব নজরুলকে সম্প্রদায়গত সংকীর্ণ চিন্তার মধ্যে নিক্ষিপ্ত করল না, বরং সকল সম্প্রদায়ের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও পুরাণকে অভিন্ন বোধের কেন্দ্রে স্থাপন করলেন। যা ওই কালের কোনো কবি-সাহিত্যিকের মধ্যে দেখা যায় না। নজরুলের ব্যক্তিহূদয় ও সমষ্টিভাবনা, তাঁর আত্ম-আবিষ্কার, জাতিসত্তা অনুসন্ধান, ঐতিহ্যনির্বাচন ও বিশ্বাত্মাসন্ধানের পথ পরিক্রমায় যে নিগূঢ়-জটিল দ্বন্দ্বময় বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয়, তার মূলেও রয়েছে কবির সমাজভাবনা আত্মবীক্ষা ও বিশ্ববীক্ষার স্বাতন্ত্র্য। দেশের মৃত্তিকামূল তথা জনচিত্তের গভীর থেকেই কাব্যোপকরণ সংগ্রহ করেছেন তিনি। সম্প্রদায়গত দৃষ্টিভঙ্গির প্রশ্ন সেখানে গৌণ। কলোনিশাসিত সমাজের বেদনাকরুণ সুদীর্ঘ ইতিহাস এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধজনিত কারণে বাঙালির বিচূর্ণিত মূল্যবোধ, মধ্যবিত্তের হূতস্বপ্ন হাহাকার ও সর্বব্যাপ্ত নৈরাশ্যের পটভূমিতে নতুন কাব্য উপাদান ও শক্তি-উত্স সন্ধান করতে হয়েছে নজরুলকে, অমীমাংসিত, অবরুদ্ধ, জড়াগ্রস্ত ও সংকটাপন্ন বর্তমান থেকে পলায়নবৃত্ত রচনা করেনি তিনি—সমকালীন কবি-সাহিত্যিকদের মতো। মানব অস্তিত্ব ও শক্তির প্রতি আস্থাশীল কবি অকৃত্রিম আশা ও সম্ভাবনার বাণী উচ্চারণ করলেন। তাঁর এই আশাবাদ যেকোনো কালের সমাজসত্তার জন্যই প্রেরণাদায়ক। বাঙালি জাতির সামাজিক রাজনৈতিক উত্তরণের ধাপে ধাপে নজরুলের মানবীয় সম্ভাবনায় অপরিসীম আস্থা ও ভবিষ্যত্ সম্পর্কে  আশাবাদ প্রেরণার আলোকবর্তিকা স্বরূপ বিদ্যমান।

সমাজ, সংস্কৃতি, তত্ত্ববিদ্যা, বিজ্ঞান—সবকিছুই বস্তুজগতের স্বভাব ও বিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং মানবসভ্যতায় বস্তুগত অভিজ্ঞতায় বিশ্বযুদ্ধের মতো বড়ো বিষয় আর কিছু হতে পারে না। একটি উপবেশিত সমাজ যখন সেই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে এবং বোমা ও মারণাস্ত্রের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত, রক্তাক্ত হয় লক্ষ কোটি মানুষ—তার সর্বগ্রাসী প্রতিক্রিয়া ধারণ করার সক্ষমতা একজন কবির সংবেদনকে বৈপ্লবিক রূপান্তরের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, রুশ বিপ্লব, ভারতবর্ষ তথা বাংলার অগ্নিগর্ভ স্বাধীনতা আন্দোলন এবং ব্যক্তিজীবনের বহুমুখী বস্তু-অভিজ্ঞতার রসায়ন নজরুলের কবিতাকে সেই বৈপ্লবিক চেতনায় সমৃদ্ধ করেছে। অজস্র মৃত্যুর সন্নিকট থেকে বেঁচে যাওয়া মানুষ দ্বিবিধ পন্থায় নিজ জীবনের গতিপথ নির্ধারণ করতে পারে :

মৃত্যুমুখ চেতনায় অবগাহন;

অপরাজেয় জীবনীশক্তির মধ্য দিয়ে আত্ম-উন্মোচন।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর বাংলা কবিতায় নজরুল ইসলাম এই দ্বিতীয় পথের নির্মাতা। সঙ্গত কারণেই উল্লিখিত অভিজ্ঞতা সূত্রে তাঁর তারুণ্যদীপ্ত চেতনা বাংলা কবিতায় অভাবিত পূর্ব মাত্রা সংযোজন করল। ব্যক্তির সর্বগ্রাসী অহংবোধের সঙ্গে চেতনার সামাজিকীকরণ ও রাজনীতিকরণ ঘটল। রাজনীতি শিল্পের উপকরণে পরিণত হলো। তারুণ্যের আবেগ ও সময়ের গতি-উত্তাপের কাছে বহুলাংশে গৌণ হয়ে পড়ল বুদ্ধিবৃত্তির তাত্পর্য। একটি কারাগৃহ কিংবা একটি যুদ্ধক্ষেত্র মানুষের মনের গড়নের সঙ্গে সঙ্গে তার কবিতার কাঠামোরও পরিবর্তন ঘটায়। মধুসূদনের মেঘনাদবধ কাব্যে আমরা যুদ্ধের পৌরাণিক প্যারাডাইম দেখেছি। কিন্তু নজরুলের কবিতায় যুদ্ধের প্যারাডাইম স্বতন্ত্র। বাস্তব, দৃশ্যমান এবং গতিশীল। অনেকটা একরৈখিক হলেও সেখানে যুদ্ধের পরিভাষাও ব্যবহূত হলো। বাংলা কবিতায় এক যুগান্তকারী সংযোজন :

ঐ ক্ষেপেছে পাগলী মায়ের দামাল ছেলে কামাল ভাই,

অসুর-পুরে শোর উঠেছে জোরসে সামাল সামাল তাই।

                    কামাল! তু নে কামাল কিয়া ভাই!

হো হো কামাল! তু নে কামাল কিয়া ভাই!

লেফ্ট্! রাইট্! লেফ্ট্!!

লেফ্ট্! রাইট্! লেফ্ট্!!

সম্মোহনী, নিসর্গ সৌন্দর্যমুগ্ধ বাঙালির কাব্য-অভিজ্ঞতায় এ এক অভাবিত সংযোজন। পৌরাণিক অসুর বধকারী যুদ্ধও স্বকালের সংরক্ত, মুক্তিকামী চেতনায় ভিন্নতর মাত্রা পেয়ে যায় নজরুলের কাছে :

‘একি         রণ-বাজা বাজে ঘন ঘন—

ঝন            রণরণ রণ ঝনঝন।

হৈ             হৈ রব

ঐ             ভৈরব

হাঁকে         লাখে লাখে

ঝাঁকে         ঝাঁকে ঝাঁকে

লাল          গৈরিক-গায় সৈনিক ধায় তালে তালে

ঐ             পালে পালে,

ধরা           কাঁপে দাপে।’

‘অগ্নি-বীণা’ কাব্যের ‘কামাল পাশা’ কবিতায় সমসাময়িক কালের যুদ্ধক্ষেত্রের কাঠামো রূপায়িত হয়েছে। আর ‘আগমনী’ কবিতায় অসুরনাশিনী দেবী দুর্গার কালীরূপের পরিকাঠামো সৃষ্টি করা হয়েছে। কিন্তু কবিতার শেষাংশ সমকালের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রস্থ সত্য ধারণ করেছে।

আজ কাঁপুক মানব-কলকল্লোলে কিশলয় সমনিখিল ব্যোম!

                    স্বা-গতম

                    স্বা-গতম!!

                    মা-তরম!

                    মা-তরম

ঐ ঐ ঐ   বিশ্বকণ্ঠে

বন্দনা-বাণী লুণ্ঠে— “বন্দে মাতরম।।”



সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক ও প্রতীকী দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলা কবিতার রূপান্তরে নজরুলের অবদান অনন্য সাধারণ। বিশ শতকের তিরিশের দশকের বাংলা কবিতায় ব্যক্তিসত্তার যে বহুমুখী প্রকাশভঙ্গি গড়ে উঠলো, তার পেছনে নজরুলের সর্বমুখী দ্রোহ কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে।

রফিকউল্লাহ খান