শুক্রবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৭

বাঙালির গৌরব বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু | সৈয়দ শিশির

তিনিই প্রথম প্রমাণ করেন—জীব ও প্রাণিজগতের মতো উদ্ভিদেরও প্রাণ আছে। এটি প্রমাণের জন্য তিনি ‘ক্রেসকোগ্রাফ’ নামের একটি যন্ত্র আবিষ্কার করেন, যা উদ্ভিদের দেহের সামান্য সাড়াকে লক্ষগুণ বাড়িয়ে দেখাতে পারে।

প্রিয় কচি-কাঁচা বন্ধুরা, তোমরা নিশ্চয়ই জানো—গাছেরও প্রাণ আছে। আর এ সত্য যিনি আবিষ্কার করেন তিনি একজন বাঙালি
বিজ্ঞানী। বাংলাদেশের এই বরেণ্য মানুষটির নাম স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু। তিনিই প্রথম প্রমাণ করেন—জীব ও প্রাণিজগতের মতো উদ্ভিদেরও প্রাণ আছে। এটি প্রমাণের জন্য তিনি ‘ক্রেসকোগ্রাফ’ নামের একটি যন্ত্র আবিষ্কার করেন, যা উদ্ভিদের দেহের সামান্য সাড়াকে লক্ষগুণ বাড়িয়ে দেখাতে পারে।

স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর পৈতৃক বাড়ি বিক্রমপুরের রাঢ়িখাল গ্রামে হলেও ১৮৫৮ সালের ৩০ নভেম্বর তিনি ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা ভগবান চন্দ্র বসু ছিলেন একজন ডেপুটি কালেক্টর। তখন তিনি ময়মনসিংহে কর্মরত ছিলেন। সেখানেই জগদীশ চন্দ্র বসুর জন্ম। তাঁর মা ছিলেন অত্যন্ত সহানুভূতিসম্পন্ন ও স্নেহশীলা নারী। 

জগদীশ চন্দ্র বসু নানা বিষয়ে গবেষণা করলেও গাছের বেড়ে ওঠা মাপার যন্ত্র এবং গাছের উত্তেজনা মাপার রিজোনাস্ট রেকর্ডার অন্যতম। অতিক্ষুদ্র বেতার তরঙ্গ আবিষ্কারও তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদান। এর মাধ্যমে আজকের বেতার, টিভি, রাডারসহ তথ্যের আদান-প্রদান এমনকি মহাশূন্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী অধ্যায় শুরু হয়।

বাড়িতেই তাঁর পড়াশোনার হাতেখড়ি। তারপর কৃতিত্বের ধারাবাহিকতায় ১৮৭৮ সালে এফএ এবং ১৮৮০ সালে বিজ্ঞান শাখায় বিএ পাস করে বিলেতে যান ডাক্তারি পড়তে। বিলেতে এক বছর ডাক্তারি পড়ার পর ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ট্রাইপাস’ করে লন্ডন থেকে বিএসসি পাস করেন।

১৮৮৫ সালে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক পদে যোগ দেন এবং সেখানেই নিজের মৌলিক গবেষণা শুরু করেন। তাঁর প্রথম সাফল্য বিদ্যুত্ চৌম্বকীয় তরঙ্গের সাহায্যে সংকেত বা সংবাদ প্রেরণের সম্ভাবনা আবিষ্কার, যা আজ থেকে দেড়শত বছর আগের কথা!

বিখ্যাত বিজ্ঞানী আইনস্টাইন বলেছিলেন, ‘জগদীশ চন্দ্র বসুর প্রত্যেকটি আবিষ্কার বিজ্ঞানজগতে এক-একটি বিজয়স্তম্ভ।’ ১৯১৫ সালে ব্রিটিশ ভারত সরকার তাঁকে ‘নাইট’ উপাধি দেয়। লন্ডনের রয়েল সোসাইটির জার্নালে তাঁর গবেষণাকর্ম প্রকাশিত হয় এবং লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডিএসসি ডিগ্রি প্রদান করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও তাঁকে ডিএসসি ডিগ্রি প্রদান করে।

১৯১৬ সালে অধ্যাপনা থেকে অবসর গ্রহণ করে জগদীশ চন্দ্র বসু ‘বিজ্ঞান মন্দির’ প্রতিষ্ঠা করেন। ক্রমে বসু বিজ্ঞান মন্দির হয়ে ওঠে একটা আন্তর্জাতিক মানের গবেষণাকেন্দ্র।

জগদীশ চন্দ্র বসু একজন সফল বিজ্ঞানী হলেও বেশকিছু বইও লিখেছেন। ছোটদের বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য লিখেছেন ‘অব্যক্ত’ নামে একটা বই। তিনি বাঙালির গৌরব ও অহংকার। ১৯৩৭ সালের ২৩ নভেম্বর এই মহান মানুষটি মৃত্যুবরণ করেন।




Find Nobin Kontho on Facebook