শুক্রবার, ১০ আগস্ট, ২০১৮

দুর্বিনীতউদ্ধত ও ক্ষুব্ধ ভিএস নাইপল | আন্দালিব রাশদী

পিতৃপুরুষের জন্মভূমি ভারত ভিএস নাইপলের  কাছে অন্ধকার অঞ্চল, নিজের জন্মভূমি ত্রিনিদাদ তার কাছে নিষ্ফলা হীন মানুষের বাসভূমি, তিনি মনে করেন আফ্রিকানদের নিতম্বে কষে লাথি মারা উচিত, ইসলাম সম্পর্কেও অগ্রহণযোগ্য মন্তব্য করেছেন, সমকালীন সাহিত্যিকদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছেন, জেইন অস্টিন, জেমস জয়েস, চার্লস ডিকেন্সকে অসার ও অনর্থক বলে উড়িয়ে দিয়েছেনে। স্ত্রী প্যাট্রিশিয়ার সাথে অমানবিক আচরণ করেছেন; তারপরও বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সাহিত্য পুরস্কারগুলো পেয়েছেন, নোবেল
জিতেছেন, পাঠক পেয়েছেন, শতাব্দির শ্রেষ্ঠ গদ্যশিল্পীদের একজন হিসেবে সমাদৃত হয়েছেন; এমনকি ঢাকায় যখন এসেছেন মাতিয়েছেন এখানকার সাহিত্যমোদিদের। ১২ আগস্ট পরিণত বয়সেই মৃত্যুবরণ করেছেন। কয়েকজন লেখকের রচনা, নাইপলের সাক্ষাত্কার, তাঁর নিজের লেখা ইত্যাদি থেকে কিছু চিত্র তুলে এনে প্রয়াত এই লেখককে শ্রদ্ধা জানানো হচ্ছে।

নাইপল মনে করেন তিনি বিচ্ছিন্ন কেউ নন, তিনি তাঁর লেখাগুলোর সমষ্টি।

তাঁর কি কোন পরিচিতির সঙ্কট রয়েছে?

‘ইংল্যান্ডে আমি ইংরেজ নই, ভারতে আমি ভারতীয় নই, ১০০০ বর্গমাইলের একটি স্থানে আমি শিকলে বাঁধা, তাঁর চর্ম ত্রিনিদাদ; আমি কেমন করে সেই নিয়তিকে এড়িয়ে যাব।’

নাইপল বসত গেড়েছেন উইল্টশায়ার ও লন্ডনে। শিল্প ও সাহিত্যের পিঠস্থান প্যারিস সম্পর্কে তিনি বলেছেন; যদি এক গাদা বুদ্ধিবৃত্তিক ধাপ্পাবাজের সাথে সাক্ষাত্ করতে চান তাহলে প্যারিসে যান।

ভিএস নাইপল সম্পর্কে খুশবন্ত সিং

সমকালীন লেখকদের মধ্যে আমার বিবেচনায় সবচেয়ে ভালো লেখক ভিএস নাইপল। তাঁর লেখা উপন্যাসের মধ্যে আমার পড়া প্রথমটি হচ্ছে অ্যা হাউস ফর মিস্টার বিশ্বাস। আমি যদিও কখনো ক্যারিবীয় অঞ্চলে যাইনি, আমি বলতে পারি সেখানে ভারত থেকে প্রত্যাবাসিত সমপ্রদায়ের এটি একটি বিশ্বস্ত দলিল। সব চরিত্রই জীবন্ত উঠে এসেছে। তাদের কথোপকথন খুব মজার। ইংরেজিভাষী সাহিত্যবিশ্বে একজন উদীয়মান নক্ষত্র হিসেবে সমাদৃত হওয়ার পর তিনি তার পিতৃপুরুষের ভিটেমাটি দেখতে এসেছেন। সাথে ছিলেন তার স্ত্রী—খুবই অসুখী দর্শন একজন ইংরেজ মহিলা। তারা যখন দিল্লি এসে পৌঁছলেন দু’জনকেই মনে হলো তারা এখানে এসে যা দেখেছেন তাতে তাদের মোহভঙ্গ হয়েছে। নাইপল আশা করেছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত কৃতী সন্তান হিসেবে খুব সমাদৃত হবেন, সম্ভবত স্ত্রীকেও দেখাবেন তিনি এখানে কত প্রশংসিত। সে সময় হাতেগোনা ক’জন সমঝদার নাইপল পড়েছেন।

আমি তাদের গাইড হলাম। আমার বন্ধুদের বাড়ি নিয়ে গেলাম। তাদের কেউ কেউ তার লেখা পড়েছেন। তার আত্মমর্যাদা পুনরুদ্ধার করতে তাদের দুজনকে আমাদের স্থানীয় বইয়ের দোকানে নিয়ে গেলাম। তাকে দেখাতে চাই তার বইয়ের চাহিদা কত। আমি এ দম্পতিকে সুরজকুুণ্ডু নিয়ে যাই। তখন ফেব্রুয়ারির শেষভাগ। প্রাচীন দিল্লি শহরের ধ্বংসাবশেষের প্রান্তদেশে উপত্যকায় অরণ্যশিখা ফুল হয়ে ঝলসে উঠছে। তুগলকাবাদ দূর্গের অতিকায় দেয়ালের নিচে আমরা স্যান্ডউইচ ও গরম কফির নাশতা সেরে নিলাম। আশপাশের গ্রামের শিশুরা আমাদের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে রইল। ছেঁড়া কাপড়, নাক দিয়ে সর্দি ঝরছে, নোংরা চোখের পিঁচুটির আঠায় মাছি আটকে আছে। নাইপল তাঁর এরিয়া অব ডার্কনেস-এ সুরজকুণ্ডর মনোহর দৃশ্য মাত্র চারটি শব্দে বর্ণনা করেছেন, কিন্তু ময়লার আস্তরণে ঢাকা গ্রামের শিশুদের নিয়ে বিস্তারিতভাবে লিখেছেন। তিনি কাশ্মীরের জাফরান জমিন নিয়ে একই কাজ করেছেন, শরতে প্রস্ফুটিত ক্রোকাসের কথা একটু মাত্র উল্লেখ করেছেন, কিন্তু তার চেয়ে ঢের বেশি বর্ণনা দিয়েছেন কাশ্মীরি নারীরা কেমন করে তাদের পিরহান উঠিয়ে মলত্যাগ করতে বসে। মনে হয় নাইপলের বাতিক নোংরা আবর্জনা ঘাঁটাঘাঁটিতেই।

তিনি খিটমিটে স্বভাবের মানুষ। শারীরিক স্পর্শে তিনি কুঁচকে যান। কেউ অভিবাদন জানাতে এসে আলিঙ্গন করতে চাইলে সরে যান। কেউ ছবি তুলতে চাইলেও তিনি অ্যালার্জিক। নাইপলের পরবর্তী সফরে তিনি তার প্রাপ্য মর্যাদার পুরোটাই পেয়েছেন। বাইরে কোথায় নিমন্ত্রণ পেতে তিনি আগ্রহী ছিলেন: তিনি যে বই লিখছেন, তার মসলা জোগাড়ে সুবিধা হয়। মোদি পরিবারের একজনের নিমন্ত্রণে তাকে একটি পার্টিতে নিয়ে যাই। প্রথম যারা পৌঁছে আমরা দুজন তাদের মধ্যে রয়েছি। একঝাঁক আকর্ষণীয় তরুণী দেয়ালঘেঁষে লাইনে দাঁড়ানো। আমরা তাদের প্রায় গা ঘেঁষে এগোচ্ছি শুধু এটা আবিষ্কার  করার জন্য যে, তারা ইংরেজি বলতে পারে না, একঘেয়ে ব্যবসায়ীদের মনোরঞ্জনের জন্য বারবানিতা দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু সব সময় তা হয় না। আমি তাঁকে তার সঙ্গীসহ অ্যানিস জুঙ্গের (হায়দরাবাদে জন্মগ্রহণকারী ভারতীয় লেখক ও সাংবাদিক) কাছে নিয়ে এলাম। সেখানে হাজির ছিলেন রাম নিবাস মৃধা। মৃধা নাইপলের সব বই পড়েছেন। সন্ধ্যাটা বেশ নির্বিকারে কেটে গেল।

অন্তত দুবার নিউইয়র্ক টাইমসের সাহিত্য সম্পাদক আমাকে ফোন করে নাইপলের ওপর লেখার জন্য তৈরি হতে বলেছেন। কারণ তিনি আশা করছেন সে বছরের নোবেল সাহিত্য পুরস্কার ভিএস নাইপলই পেতে যাচ্ছেন। আমি আমার নোটগুলো ঝাড়পোছ করে নিয়েছি। সে সময় মনে হয়েছে তারা কখনো ইংরেজি ভাষায় লিখছে এমন অশ্বেতাঙ্গকে নোবেল পুরস্কার দেবে না। ব্রিটিশ সরকার তাকে নাইটহুড দিয়ে এ ধারণায় একটা সংশোধনী এনেছে। কিন্তু নাইটহুড পাওয়া আর নোবেল পুরস্কার পাওয়া তো এক কথা নয়। নাইপল কখনো তার নামের আগে ‘স্যার’ বসান না। অবাক ব্যাপার, তিনি যখন বুঝতে পারলেন নোবেল পুরস্কার পাচ্ছেন না তার লেখার মানও পড়তে থাকল।

নাইপলের মাধ্যমেই আমি তার মা এবং ছোট ভাই শিবার সাথে পরিচিত হই। আমি বুঝতে পারি তাদের কারো জন্যই ভিএস-এর দেয়ার মতো তেমন সময় নেই। তার মায়ের সাথে আমরা অনেকবার খেতে বসেছি। এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে শিবা তার প্রিয় পুত্র। আমি তাকে দিল্লির কয়েকটি বইয়ের দোকানে নিয়ে যাই। ডিসপ্লেতে ভিএস নাইপলের বইয়ের সারি। কদাচিত্ শিবার বইয়ের দেখা মেলে।

তিনি দোকানদারকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনারা আমার শিবার বই আরো রাখছেন না কেন?’ তার অল্প কিছু বন্ধু, আমি সন্দিহান ভারত সফর তিনি আদৌ উপভোগ করছেন কিনা।

শিবার সাথে যদিও আমর অল্প কবার দেখা হয়েছে [আমাদের ছেলে রাহুলের সাথে তার দেখাসাক্ষাত্ হয়েছে বহুবার]। ভারতীয় পরিবেশে তার ভাই কিংবা মায়ের চেয়ে তাকেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য মনে হয়েছে। শিবা অনেক বেশি বহির্মুখী এবং সহজে বন্ধু করে নিতে জানে। আমার মনে হয়েছে লন্ডন কিংবা ত্রিনিদাদে বাড়ি করার চেয়ে ভারতে করাটাই তিনি অগ্রাধিকার দেবেন। 

নাইপল তাঁর নোবেল ভাষণে নিজের প্রেক্ষাপট খানিকটা তুলে ধরেছেন :

‘আমার প্রেক্ষাপট একই সঙ্গে অত্যন্ত সরল ও অত্যন্ত বিভ্রান্তিপূর্ণ। আমার জন্ম ত্রিনিদাদে। ভেনেজুয়েলার বিশাল অরিলোনো নদীর মোহনায় এই দ্বীপটির অবস্থান। কাজেই  ত্রিনিদাদ পুরাপুরি দক্ষিণ আমেরিকায় যেমন নয় তেমনি পুরোপুরি ক্যারিবিয়ও নয়। জায়গাটা নব্য বিশ্বের আবাদী উপনিবেশ হিসেবে গড়ে উঠেছে, সেখানে ১৯৩২-এ আমার যখন জন্ম ত্রিনিদাদের মোট জনসংখ্যা চার লক্ষ, এক মধ্যে দেড় লক্ষ ভারতীয় হিন্দু ও মুসলমান এবং প্রায় সকলে গাঙ্গেয় অববাহিকা থেকে উঠে আসা কৃষক শ্রেণির মানুষ।

ভিএস নাইপল এভাবেই তাঁর নিজের মূল-বিচ্ছিন্ন হবার ও মূল ধরে রাখার দ্বন্দ্বটি তুলে এনেছেন তার নোবেল ভাষণে—

‘যখন আমি শুরু করি কেমন করে এগোবো আমার সে রকম কোন ধারণাই ছিল না। আমি কেবল একটি বই লিখতে চেয়েছিলাম। আমার বিশ্ববিদ্যায় জীবন শেষ করে আমি ইংলান্ডেই রয়ে গেলাম, আমি সেখানেই লিখতে চেষ্টা করি, তখন আমার নিজেরই মনে হয় আমার অভিজ্ঞাতা বেশ কম, এই লেখার জন্য তা নিতান্তই সামান্য। আমার যে প্রেক্ষাপট তার কাছাকাছি কোন বই-ই খুঁজে পেলাম না। কোন তরুণ ফরাসি কিংবা ইংরেজ লিখতে চাইলে তার সামনে হরেক রকমের মডেল। কিন্তু আমার কেউ নেই। ভারতীয় সম্প্রদায় নিয়ে আমার বাবার গল্পগুলো দূর অতীতের। আর আমার পৃথিবীটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। এটা অনেক বেশি নগরামৃত ও মিশ্র। আমাদের বধিত সংসারের নৈরাজ্যময়জীবনের সাধারণ বাস্তব বিবরণ—ঘুমের ঘর, কিংবা গুমোবার জায়গা, খাবার সময় এতোসংখ্যান মানুষ আমার পক্ষে সামলানো অসম্ভব বলে মনে হয়। ব্যাখ্যা করার মত অনেক কিছু আমার গার্হস্থ্যজীবনের এবং বাইরের পৃথিবীর। একই সাথে আমাদের নিজেদের অনেক কিছু বলার আছে— আমাদের পূর্বপুরুষ এবং ইতিহাস এসব আমার জানা নেই।

এই টানাপোড়োনের মধ্যেই তিনি লিখতে শুরু করলেন। দিনে একটি করে গল্প! তিনি লেখক হয়ে উঠলেন।

তার ইসলাম-কটাক্ষ বক্তব্যগুলোর মধ্যে রয়েছে : ‘ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিতদের উপর এর দুর্যোগময় প্রভাব পড়ে। ধর্মান্তরিত হওয়া মানে তোমাকে তোমার অতীত ধ্বংস করতে হবে, তোমার ইতিহাস ধ্বংস করতে হবে। তোমাকে শপথ করে বলতে হবে, ‘আমার পূর্ব পুরুষের সংস্কৃতির কোন অস্তিত্ব নেই— এবং তাতে কিছু এসে যায় না।’

ভিএস নাইপলের একটি সাক্ষাত্কার থেকে

২০১২ সালে  আইজাক শটিনার নাইপলের ৮০ বছর পূর্তিতে নোবেল সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ী এই লেখকের সাক্ষাত্কার নেন। নাইপলের এই সাক্ষাত্কারটি ২০ ডিসেম্বর ২০১২ ‘দ্য নিউ রিপাবলিক’ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়।

তিনি আরব বসন্তকে গুরুত্বহীন বলে উড়িয়ে দিলেন, জেন অস্টিনকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করলেন, উপন্যাস শেষ হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করলেন। তারও আগে নারী-লেখকদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করলেন, দুই অনুচ্ছেদ পড়ার পরই বুঝতে পারেন নারীর লেখা। ভারতীয় লেখকদের সম্পর্কে বলেছেন, তাদের দেশের যে বারোটা বেজে গেছে এটা তাদের জানা নেই। আইজাক শটিনার যে আশাবাদ নিয়ে সাক্ষাত্কার গ্রহণ করতে শুরু করেন, এক পর্যায়ে স্বীকার করেন নাইপলের সাথে কথা বলে তার আশা হ্রাস পেয়েছে।

শটিনার : আরব বসন্ত নিয়ে আপনি কী ভাবছেন? আপনি কি একে অনিবার্যভাবে একটি প্রতিক্রিয়াশীল ও অনুদার আন্দোলন মনে করছেন নাকি আপনি আরব বসন্ত নিয়ে আশাবাদী?

নাইপল : মোটেও আশাবাদী নই। আমি একে কিছুই মনে করি না। দেখলেনই তো লিবিয়াতে এটা কেমন করে মিলিয়ে গেল। শেষ পর্যন্ত সবকিছু গুলিয়ে ফেলল। অন্যত্রও একই ঘটনা ঘটবে।

শটিনার : আপনি বলছিলেন আরব বসন্তের কোন আশা নেই।

নাইপল : আমি সে কথা বলেনি। আপনি জানতে চেয়েছিলেন আমি এতে বিরাট কিছু মনে করি কি-না । আমি মনে করি এটা কিছুই নয়। এরকম আসবে আর যাবে, আমরা যেখান থেকে শুরু করেছিলাম সেখানে ফিরে আসব।

শটিনার : আপনি নিজেকে ধর্মীয় অর্থে বিশ্বাসী মনে করেন না এটা কি সত্যি?

নাইপল: আমি ধার্মিক নই।

নাইপল : প্রশ্নটা কি তার উপর নির্ভর করছে।

শটিনার: একটি প্রবন্ধে আপনি আপনার বাবার সম্পর্কে লিখেছেন হিন্দুধর্ম ও শ্রেণিপ্রথা সংস্কারের একটি আন্দোলনে তিনি জড়িত ছিলেন। কোন বৈপ্লবিক তাড়না নয় কিন্তু পরিবর্তনের জন্য তিনি ধাক্কা দিতে চেয়েছেন। আপনার নিজের ভেতর কি এমন কোন তাড়না রয়েছে?

নাইপল : আমার বাবা সে সময় যা সত্যিই অনুভব করেছেন তা কিন্তু অত্যন্ত বড় বিষয়।্ সবকিছু সম্পর্কেই তার খুব সাধারণ ধারণা। তিনি বিপ্লবী ছিলেন না, সংস্কারকও না। শুরুতে কিছুটা সংস্কার তারপর আর নয়, লেখক হিসেবে তো নয়ই।

শটিনার : আপনি এখন কি পড়তে পছন্দ করেন জানতে ইচ্ছে করে।

নাইপল : আমি অনেক কিছু পড়ি। পৃথিবী সম্পর্কে আমার জ্ঞানের অসম্পূর্ণতাকে পূর্ণ করতে আমি পড়ি। আমি এখন এই লেখককে পড়ছি (টমাস) ডি কুইন্সির বইয়ের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করেন)। আর যা পড়ছি, তা আমার জন্য ঠিক স্বাভাবিক নয় (টমাস মানের উপন্যাস বুডেনব্রুকস। এটি আমাকে থমকে থমকে পড়তে হয়েছে)

শটিনার : লেখক হিসেবে আপনার জন্য বাহ্যিক পুরস্কার কি?

নাইপল : আমার নিজের লেখালেখির কথাই এখানে বলছি— যখন বড় ও কঠিন কোন কাজে হাত দিই যেমন ‘অ্যামাঙ্গ দ্য বিলিভার্স’ বেশ বড় একটি কাজ যখন শুরু করি আমি জানি  কাজটা কোনদিকে যাচ্ছে, আমি কোথাও যাচ্ছি। এটা আমাকে আনন্দ দেয়— আনন্দ আমার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। লেখক যে কাজে ব্যাপৃত তার স থে সম্পর্কিত সে লেখা যে গন্তব্যের দিকে যাচ্ছে তাই আনন্দের।

শটিনার : অনেক বছর আগে আপনি (জন) স্টাইনবেক নিয়ে লিখেছেন এবং সেখানে বলেছেন লেখকরা হচ্ছেন তাদের রচনা ও মিথ।

নাইপল : ‘শেষ পর্যন্ত লেখার চেয়ে লেখকই বড়, লেখক নিজেই তার মিথ।’ ১৯৬৯ সালে এমন সুসংগঠিত একটি বাক্য দিয়ে লেখাটি শুরু করি।

শটিনার: আপনি কি নিজের বইয়ের দিকে ফিরে তাকান?

নাইপল : সম্প্রতি পিকাডর পেপারব্যাক সংস্করণের জন্য বেশ কিছু ভূমিকা লিখতে গিয়ে আমার কাজগুলো সম্পর্কে আমাকে ভাবতে হয়েছে। যখন পেছন ফিরে তাকাই দেখি এগুলো আমার অন্তরে, আমার অন্তর জুড়ে। কারণ আমি যখন পড়ি আমি অপেক্ষা করি লেখক কখন হুমড়ি খেয়ে পড়বেন, বোকার মত কিছু বলে দেবেন।  আমার মনে হয় সেটা কখনো ঘটে না। আমি এখনো ভাবি যখন নিজের লেখা একটি বাক্য পড়ি, যদি মনে হয় এর টিকে থাকার মত গুণাগুণ রয়েছে এটাই অনেক বিস্ময়কর ব্যাপার।

নাইপলের বইপত্র

ফিকশন

দ্য মিস্টিক ম্যাসিউর (১৯৫৭) দ্য সাফ্রেজ অব এলভিরা (১৯৫৮) মিগুয়েল স্ট্রিট (১৯৫৯) এ হাউস ফর মিস্টার বিশ্বাস (১৯৬১) স্টোন অ্যান্ড দ্য নাইট কোম্পানিয়ন (১৯৬৩) দ্য মিমিক ম্যান (১৯৬৭) এ ফ্ল্যাগ অন দ্য আইল্যান্ড (১৯৬৭) ইন এ ফ্রি স্টেট (১৯৭১) গেরিলা (১৯৭৫) এ বেন্ড এন দ্য রিভার (১৯৭৯) দ্য অ্যানিগমা অব অ্যারাইভাল (১৯৮৭) এ ওয়ে ইন দ্য ওয়ার্ল্ড (১৯৯৪) হাফ এ লাইফ (২০০১) দ্য নাইটওয়াচম্যানস অকারেন্স বুক (২০০২) ম্যাজিক সিডস (২০১৪)

নন ফিকশন

দ্য মিডল প্যাসেজ (১৯৬২) অ্যান এরিয়া অব ডার্সলেস (১৯৬৪) দ্য লস অব এল ডোরাডো (১৯৬৯) দ্য ওভার ক্রাউডেভ বারাকুল অ্যান্ড আদার আর্টিকেলস (১৯৭২) ইন্ডিয়া : এ ওল্ডেভ সিভিলাইযেশন (১৯৭৭) এ কঙ্গো ডায়েরি (১৯৮০) দ্য রির্টান অব ইভা পেরন অ্যান্ড কিলিংস ইন ত্রিনিদাদ (১৯৮০) অ্যামাঙ্গ দ্য বিলিভার্স : এ ইসলামিক জার্নি (১৯৮১) ফাইন্ডিং দ্য সেন্টার : টু ন্যারেটিভস (১৯৯০) বিয়ন্ড বিলিফ (১৯৮৯) ইন্ডিয়া : এ মিলিয়ন মিউটিনিজ নাও (১৯৯০)  বিটউইন অফাদার অ্যন্ড সান : ফ্যামিলি লেটার্স (১৯৯৯) দ্য মাস্ক অব আফ্রিকা (২০১০)





Find Nobin Kontho on Facebook