বাংলাদেশে এখন দুটি ধারা। একদল অতি প্রগতিশীল, আরেক দল অতি প্রতিক্রিয়াশীল। গ্লোবাল ভিলেজের খপ্পরে পড়ে প্রগতিশীলরা সবকিছুই ধারণ করছেন। মুম্বাইয়ের আদলে হোলি উৎসবও শুরু হয়ে গেছে এদেশে। যদ্দুর জানি এটা বাঙালি সংস্কৃতির বড় অংশ না। এমনকি পশ্চিম বঙ্গের বাঙালিরাও হোলি বা দোল উৎসব এতো ঢাক-ঢোল পিটিয়ে করেন না। আবার যে অতি অরপ্রতিক্রীয়াশীলরা যথারীতি সবকিছুতে ‘ছে ছেক্কার’ করার জন্য মুখিয়ে থাকেন, হোলি বা রং খেলায় তাদের পিলে চমকাবে এটাই স্বাভাবিক।
আমার মতো অনেকেই আবার সুবিধাবাদী, যখন যেটা ভালো লাগে সেটাতেই থাকি। তবে ২৩ মার্চ মনে হয় অন্যরকম এক হোলি উৎসবের জন্য পুরো বাংলাদেশই তৈরী ছিলো। বাংলাদেশ জিতলেই বিজয় মিছিল, রং খেলা, সারারাত হইচই, উৎসব, পার্টি; সেই দিন আমরা অনেক আগেই পেছনে ফেলে আসলেও এদিন রঙিন উৎসবের জন্য প্রস্তুত ছিলো বাংলাদেশ। ক্রিকেটে বাংলাদেশ বিশ্বকাপ জিতলেও হয়তো ৯৭’র মতো উৎসব আর হবে না, কিন্তু ২৩ মার্চ নিয়ে অন্যরকম একটা প্রস্তুতি ছিলো।
সব ভণ্ডুল হয়ে গেলো শেষ মুহূর্তের দুর্ঘটনায়। ম্যাচে কি হয়েছে, কি হতে পারতো, কেন হলো না সব কিছুই সবাই দেখেছেন, লিখেছেন। নতুন করে পুরনো কথা বলতে চাই না। তবে বাংলাদেশে স্মরণ কালের সেরা হোলি খেলাটা যে ভণ্ডুল হয়ে গেলো সেটা নিশ্চিত।
টি-২০ বিশ্বকাপে জয় একটা বড় কারণ ছিলো ওই উৎসব প্রস্তুতির। তবে সবচেয়ে বড় কারণ: প্রতিপক্ষ ছিলো ভারত। সাম্প্রতিক সময়ে তাসকিন-সানির নিষেধাজ্ঞা, এশিয়া কাপের ফাইনালে পরাজয়, দুই দেশের সমর্থকদের সাইবার যুদ্ধ, তারও আগে ২০১৫’র ওয়ানডে বিশ্বকাপে আম্পায়ারদের পক্ষপাতিত্বে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বাংলাদেশের ছিটকে পড়া (যদিও আমার বিশ্বাস আম্পায়াররা বিতর্কিত না করলেও ম্যাচটি সহজেই জিততো ভারত), এর জেরে শ্রীনিবাসন ও লোটাস কামালের বাদানুবাদ, ফাইনালে লোটাস কামালকে ট্রফি দিতে না দেয়া, সবকিছু মিলিয়েই ভারতকে আমরা আমাদের প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে ধরে নিয়েছি। এর সবকিছুই যে অমুলক তা বলা যাবে না। তাসকিনের ব্যাপারে আইসিসির যে আচরণ সেটিতে ভারতের সরাসরি হাত যদি নাও থাকে তারপরও এটা নিশ্চিত ক্রিকেট মোড়লদের খুশি করতেই এমনটা করা হয়েছে।
অপ্রিয় হলেও সত্য ভারত বিরোধিতার পেছনে আমাদের ধর্মীয় অনুভুতিও কাজ করে অনেকটাই। আবার এদেশের অনেকের মনের কোণেই পাকিস্তানের প্রেমটা রয়ে গেছে। যার প্রকাশ ঘটতো ক্রিকেট ম্যাচে। যতোদিন ক্রিকেটে বাংলাদেশের উত্থান ঘটেনি ততোদিন তাদের মনোবেদনার কোনো কারণ ঘটেনি। সে সময়টাতে ভারতকে বলে কয়েই হারাতো পাকিস্তান (শুধু মাত্র আইসিসি ইভেন্ট ছাড়া)। সমস্যা হয়ে গেছে বাংলাদেশের উত্থানে। টাইগারদের উত্থান আর পাকিস্তানের বাজে পারফরম্যান্সে অন্ততঃ প্রকাশ্যে বাংলাদেশের দিকে সমর্থনের পাল্লাটা ঝোকাতে হয়েছে।
আবার টাইগারদের উত্থানে অনেকের সুবিধাও হয়েছে। প্রকাশ্যে ভারত বিদ্বেষের উপলক্ষ খুঁজে পাওয়া গেছে। অনেকেই বলেন, খেলার মধ্যে রাজনীতিকে কেনো টানা হয়? এরাই আবার বাংলাদেশ-ভা্রত বা ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের সময় রাজনীতি, অর্থনীতি, ধর্ম সমাজ সব কিছু এক সাথে নিয়ে আসেন। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ-ভারত ক্রিকেট ম্যাচে প্রতিদ্বন্দ্বিতার যে আমেজ, যে বৈরী আবহ তৈরী হয়েছে- তার পেছনে বাংলাদেশের পারফরম্যান্সের নাটকীয় উন্নতি, বাংলাদেশের প্রতি আইসিসির বিমাতাসুলভ আচরণ, ভারতের নাক উঁচু ভাব, ভারতের মিডিয়ার দাদাগিরি কিংবা অহেতুক অন্য দেশগুলোকে ছোট করে দেখার অভ্যাসই প্রধানত দায়ী। এ বিষয়গুলো ভারত বিদ্বেষী মনোভাবকে চরমে নিয়ে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকার খেলাধুলা বিশেষ করে ক্রিকেটের জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে রেখেছেন। সাফল্যের ভেলায় ভাসিয়ে তার প্রতিদানও সমান তালে দিচ্ছেন ক্রিকেটাররা। কিন্তু একটু ভিন্নভাবে চিন্তা করলে, এ ক্রিকেট এবং ক্রিকেটাররাই কিন্তু সরকারের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছেন।
এখন ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ কোনো ম্যাচ হারলেই হাসিনা- মোদী ফোন কলের গুজব ওঠে। অদ্ভুত শোনালেও অনেকে গল্প-গুজব করেন, এশিয়া কাপ ফাইনালের আগে মোদী ফোন করেছেন, ফাইনালে যে করেই হোক ভারতকে জেতাতে হবে। দ্বিপাক্ষিক সিরিজেও বাংলাদেশ টানা দুই ম্যাচ জেতার পর শেষ ম্যাচে হেরে যাওয়ায় অনেকে বলেছেন, ভারতের সম্মান রক্ষায় মোদী হাসিনাকে ফোন দিয়ে বলেছেন ম্যাচটি হেরে যেতে। ভাববেন না এরকম বিকারগ্রস্ত মানুষ এক-দু’জন। চারপাশে তাকিয়ে দেখুন, চোখটা মেলে ধরুন, কানটা খাড়া করুন; এরকম অদ্ভুতুড়ে চিন্তার অনেক অনেক মানুষ পাবেন।
একদিকে বর্তমান সরকার ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে সর্বস্ব উজাড় করে দিচ্ছেন। অন্যদিকে ক্রিকেটাররা পারফরম্যান্স দিয়ে আপাতঃ চোখে মধুর সম্পর্কে বিষ ঢেলে দিচ্ছেন। অনেকেই বলছেন, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের চেয়ে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচই হবে ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ। বিষয়টা যদি শুধু ক্রিকেট কেন্দ্রিক হয় তাহলে ভালো; কিন্তু বিদ্বেষমূলক হলে, আর সেটা ক্রিকেট ছেড়ে মানুষের মনে ঢুকে গেলেই সমস্যা।
মনির হোসেন খান
আমার মতো অনেকেই আবার সুবিধাবাদী, যখন যেটা ভালো লাগে সেটাতেই থাকি। তবে ২৩ মার্চ মনে হয় অন্যরকম এক হোলি উৎসবের জন্য পুরো বাংলাদেশই তৈরী ছিলো। বাংলাদেশ জিতলেই বিজয় মিছিল, রং খেলা, সারারাত হইচই, উৎসব, পার্টি; সেই দিন আমরা অনেক আগেই পেছনে ফেলে আসলেও এদিন রঙিন উৎসবের জন্য প্রস্তুত ছিলো বাংলাদেশ। ক্রিকেটে বাংলাদেশ বিশ্বকাপ জিতলেও হয়তো ৯৭’র মতো উৎসব আর হবে না, কিন্তু ২৩ মার্চ নিয়ে অন্যরকম একটা প্রস্তুতি ছিলো।
সব ভণ্ডুল হয়ে গেলো শেষ মুহূর্তের দুর্ঘটনায়। ম্যাচে কি হয়েছে, কি হতে পারতো, কেন হলো না সব কিছুই সবাই দেখেছেন, লিখেছেন। নতুন করে পুরনো কথা বলতে চাই না। তবে বাংলাদেশে স্মরণ কালের সেরা হোলি খেলাটা যে ভণ্ডুল হয়ে গেলো সেটা নিশ্চিত।
টি-২০ বিশ্বকাপে জয় একটা বড় কারণ ছিলো ওই উৎসব প্রস্তুতির। তবে সবচেয়ে বড় কারণ: প্রতিপক্ষ ছিলো ভারত। সাম্প্রতিক সময়ে তাসকিন-সানির নিষেধাজ্ঞা, এশিয়া কাপের ফাইনালে পরাজয়, দুই দেশের সমর্থকদের সাইবার যুদ্ধ, তারও আগে ২০১৫’র ওয়ানডে বিশ্বকাপে আম্পায়ারদের পক্ষপাতিত্বে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বাংলাদেশের ছিটকে পড়া (যদিও আমার বিশ্বাস আম্পায়াররা বিতর্কিত না করলেও ম্যাচটি সহজেই জিততো ভারত), এর জেরে শ্রীনিবাসন ও লোটাস কামালের বাদানুবাদ, ফাইনালে লোটাস কামালকে ট্রফি দিতে না দেয়া, সবকিছু মিলিয়েই ভারতকে আমরা আমাদের প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে ধরে নিয়েছি। এর সবকিছুই যে অমুলক তা বলা যাবে না। তাসকিনের ব্যাপারে আইসিসির যে আচরণ সেটিতে ভারতের সরাসরি হাত যদি নাও থাকে তারপরও এটা নিশ্চিত ক্রিকেট মোড়লদের খুশি করতেই এমনটা করা হয়েছে।
অপ্রিয় হলেও সত্য ভারত বিরোধিতার পেছনে আমাদের ধর্মীয় অনুভুতিও কাজ করে অনেকটাই। আবার এদেশের অনেকের মনের কোণেই পাকিস্তানের প্রেমটা রয়ে গেছে। যার প্রকাশ ঘটতো ক্রিকেট ম্যাচে। যতোদিন ক্রিকেটে বাংলাদেশের উত্থান ঘটেনি ততোদিন তাদের মনোবেদনার কোনো কারণ ঘটেনি। সে সময়টাতে ভারতকে বলে কয়েই হারাতো পাকিস্তান (শুধু মাত্র আইসিসি ইভেন্ট ছাড়া)। সমস্যা হয়ে গেছে বাংলাদেশের উত্থানে। টাইগারদের উত্থান আর পাকিস্তানের বাজে পারফরম্যান্সে অন্ততঃ প্রকাশ্যে বাংলাদেশের দিকে সমর্থনের পাল্লাটা ঝোকাতে হয়েছে।
আবার টাইগারদের উত্থানে অনেকের সুবিধাও হয়েছে। প্রকাশ্যে ভারত বিদ্বেষের উপলক্ষ খুঁজে পাওয়া গেছে। অনেকেই বলেন, খেলার মধ্যে রাজনীতিকে কেনো টানা হয়? এরাই আবার বাংলাদেশ-ভা্রত বা ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের সময় রাজনীতি, অর্থনীতি, ধর্ম সমাজ সব কিছু এক সাথে নিয়ে আসেন। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ-ভারত ক্রিকেট ম্যাচে প্রতিদ্বন্দ্বিতার যে আমেজ, যে বৈরী আবহ তৈরী হয়েছে- তার পেছনে বাংলাদেশের পারফরম্যান্সের নাটকীয় উন্নতি, বাংলাদেশের প্রতি আইসিসির বিমাতাসুলভ আচরণ, ভারতের নাক উঁচু ভাব, ভারতের মিডিয়ার দাদাগিরি কিংবা অহেতুক অন্য দেশগুলোকে ছোট করে দেখার অভ্যাসই প্রধানত দায়ী। এ বিষয়গুলো ভারত বিদ্বেষী মনোভাবকে চরমে নিয়ে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকার খেলাধুলা বিশেষ করে ক্রিকেটের জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে রেখেছেন। সাফল্যের ভেলায় ভাসিয়ে তার প্রতিদানও সমান তালে দিচ্ছেন ক্রিকেটাররা। কিন্তু একটু ভিন্নভাবে চিন্তা করলে, এ ক্রিকেট এবং ক্রিকেটাররাই কিন্তু সরকারের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছেন।
এখন ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ কোনো ম্যাচ হারলেই হাসিনা- মোদী ফোন কলের গুজব ওঠে। অদ্ভুত শোনালেও অনেকে গল্প-গুজব করেন, এশিয়া কাপ ফাইনালের আগে মোদী ফোন করেছেন, ফাইনালে যে করেই হোক ভারতকে জেতাতে হবে। দ্বিপাক্ষিক সিরিজেও বাংলাদেশ টানা দুই ম্যাচ জেতার পর শেষ ম্যাচে হেরে যাওয়ায় অনেকে বলেছেন, ভারতের সম্মান রক্ষায় মোদী হাসিনাকে ফোন দিয়ে বলেছেন ম্যাচটি হেরে যেতে। ভাববেন না এরকম বিকারগ্রস্ত মানুষ এক-দু’জন। চারপাশে তাকিয়ে দেখুন, চোখটা মেলে ধরুন, কানটা খাড়া করুন; এরকম অদ্ভুতুড়ে চিন্তার অনেক অনেক মানুষ পাবেন।
একদিকে বর্তমান সরকার ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে সর্বস্ব উজাড় করে দিচ্ছেন। অন্যদিকে ক্রিকেটাররা পারফরম্যান্স দিয়ে আপাতঃ চোখে মধুর সম্পর্কে বিষ ঢেলে দিচ্ছেন। অনেকেই বলছেন, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের চেয়ে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচই হবে ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ। বিষয়টা যদি শুধু ক্রিকেট কেন্দ্রিক হয় তাহলে ভালো; কিন্তু বিদ্বেষমূলক হলে, আর সেটা ক্রিকেট ছেড়ে মানুষের মনে ঢুকে গেলেই সমস্যা।
মনির হোসেন খান