ডিজিটাল বিভাজন বলতে এমন একটি আর্থ-সামাজিক অসমতাকে বোঝায় যেখানে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার,
প্রভাব কিংবা
তা ধারণ করা থেকে কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি,
পরিবার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অথবা কোন একটি অঞ্চলের মানুষ বঞ্চিত হয়। ডিজিটাল বিভাজনের দ্বারা বৈশ্বিক পর্যায়ে উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশের মধ্যকার প্রযুক্তিগত বিভাজনকে আন্তর্জাতিক মানদন্ডের ভিত্তিতে বিবেচনা করা হয়। ঐতিহ্যগতভাবে
"ডিজিটাল বিভাজন" কথাটির দ্বারা প্রযুক্তিগত বিভিন্ন সুবিধা থাকা এবং না থাকার প্রশ্নটিকে বোঝানো হয়।
বর্তমান বিশ্বের ৯৫ শতাংশ মানুষ মোবাইল ফোনের সুবিধা ভোগ করলেও ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে তাদের মাঝে একটি অসম বিভাজন তৈরি হয়েছে। আধুনিক বিশ্বে এ বিভাজনটিই "কে বেশি দক্ষ ও কে কম দক্ষ" তা নির্ধারণ করে থাকে। ক্রমবর্ধমান ইন্টারনেট চাহিদার সাথে বর্তমান বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলো তাল মেলাতে পারছে না। আর এর মাধ্যমেই ডিজিটাল বিভাজন আরো বেশী প্রকট আকার ধারণ করেছে। উন্নতমানের কম্পিউটার, দ্রুত গতির ইন্টারনেট, প্রযুক্তিগত সহযোগীতা ও টেলিফোন সেবা বিশ্বের সকল দেশ ও অঞ্চলে সমানভাবে বিভাজিত নয়। আর এ থেকে সৃষ্ট ডিজিটাল বিভাজন বর্তমান সময়ে দক্ষ জনশক্তির বিকাশকে ব্যাপকভাবে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
বর্তমান বিশ্বের ৯৫ শতাংশ মানুষ মোবাইল ফোনের সুবিধা ভোগ করলেও ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে তাদের মাঝে একটি অসম বিভাজন তৈরি হয়েছে। আধুনিক বিশ্বে এ বিভাজনটিই "কে বেশি দক্ষ ও কে কম দক্ষ" তা নির্ধারণ করে থাকে। ক্রমবর্ধমান ইন্টারনেট চাহিদার সাথে বর্তমান বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলো তাল মেলাতে পারছে না। আর এর মাধ্যমেই ডিজিটাল বিভাজন আরো বেশী প্রকট আকার ধারণ করেছে। উন্নতমানের কম্পিউটার, দ্রুত গতির ইন্টারনেট, প্রযুক্তিগত সহযোগীতা ও টেলিফোন সেবা বিশ্বের সকল দেশ ও অঞ্চলে সমানভাবে বিভাজিত নয়। আর এ থেকে সৃষ্ট ডিজিটাল বিভাজন বর্তমান সময়ে দক্ষ জনশক্তির বিকাশকে ব্যাপকভাবে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মার্টিন হিলবার্টের মতে, ২০১৪ সালে বিশ্বের ৫০
শতাংশ ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ পরিচালনা করার ক্ষমতা চলে আসে বিশ্বের মাত্র তিনটি দেশের হাতে (চীন,
জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র)
এবং এ কেন্দ্রিকতা নতুন ছিল না যেহেতু ঐতিহাসিকভাবেই বিশ্বের মাত্র ১০ টি দেশ বৈশ্বিক তথ্য-প্রযুক্তিগত সক্ষমতার ৭০-৭৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করতো। তিনি আরো বলেন, ২০১১ সালে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ পরিচালনায় যুক্তরাষ্ট্রের স্থলে চীনের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় কেননা এসময় চীন বৈশ্বিক ব্যান্ডউইথ পরিচালনায় যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিগুণ সক্ষমতা অর্জন করে (বৈশ্বিক সমষ্টিতে চীন ২৯
শতাংশ ও যুক্তরাষ্ট্র ১৩
শতাংশ)। বিশ্বে ইন্টারনেটের প্রসারে সৃষ্ট অসমতার কারণে কিছু দেশ প্রযুক্তি, শিক্ষা, শ্রম, গণতন্ত্র ও ট্যুরিজমের বিকাশে পিছিয়ে পড়েছে।
জাতিসংঘের অন্তর্ভুক্ত জেনেভাভিত্তিক টেলিযোগাযোগ উন্নয়ন সংস্থা
International Telecommunication Union (ITU) এর হিসেব অনুযায়ী, ২০১৫ সালে সমগ্র বিশ্বের মাত্র ৪০ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করতো যাদের ৬৪ শতাংশ উন্নত দেশের নাগরিক। অর্থাত্
উন্নত বিশ্বের একজন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর বিপরীতে উন্নয়নশীল বিশ্বের দুজন ইন্টারনেট ব্যবহার করতো। কিন্তু বিশ্বের ৪ বিলিয়ন মানুষ এখনও ইন্টারনেট সুবিধা থেকে বঞ্চিত যাদের দুই-তৃতীয়াংশ উন্নয়নশীল দেশের নাগরিক। উল্লেখ্য, পৃথিবীর অনুন্নত দেশগুলোর মাত্র ৯.৫
শতাংশ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকে। বৈশ্বিক ডিজিটাল বিভাজনের কারণে প্রযুক্তির দ্বারা পণ্য ও সেবার প্রাপ্তি প্রভাবিত হয়ে থাকে। ব্যবহারকারীদের উন্নত শিক্ষা লাভে সহায়তা করে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট তাদের ভালো উপার্জন নিশ্চিত করে। অন্যদিকে, যেসকল দেশে এ ধরণের সুবিধা সীমাবদ্ধ তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পথ বাধাগ্রস্ত হয়।
ITU তাদের আরেকটি জরিপে জানায়, ২০১৫ সালে উন্নত দেশগুলোর ৮০
শতাংশ বাড়ীতে ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপিত হলেও উন্নয়নশীল দেশে তা মাত্র ৩৪ শতাংশ।
এ বিভাজনটি আরো স্পষ্টভাবে অনুধাবন করা যায়া অঞ্চলভিত্তিক ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্বারা। ২০১৫ সালে আফ্রিকার ২১
শতাংশ, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার ৬৬
শতাংশ, আরব দেশগুলোর ৩৭
শতাংশ, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৩৭ শতাংশ ও ইউরোপের ৭৮
শতাংশ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। অর্থাত্, যে অঞ্চলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা যত বেশী সে অঞ্চল ততো উন্নত। বৈশ্বিক এ ডিজিটাল বিভাজনকে অনেক সময় "উত্তর-দক্ষিণ" বিভাজনও বলা হয় যেখানে বিশ্বের উত্তরের দেশগুলো দক্ষিণের দেশগুলোর চেয়ে বেশী উন্নত। বৈশ্বিক ডিজিটাল বিভাজনের এ অসমতা নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে ব্যক্তির
স্বদিচ্ছা, প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ও রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা। মার্কিন সমাজবিজ্ঞানী প্রফেসর মরো গিলেন এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর স্যান্ড্রা সুয়ারেজের মতে,
"কর্তৃত্ববাদী অথবা সর্বগ্রাসী শাসনের চেয়ে গণতান্ত্রিক শাসনের আওতায় ইন্টারনেটের প্রসার দ্রুত বৃদ্ধি পায়।"
একবিংশ শতাব্দীর আরম্ভের মধ্য দিয়ে প্রযুক্তিগত প্রগতি কোটি কোটি মানুষের মাঝে সংযোগ স্থাপনে সক্ষম হয়েছে। ডিজিটাল বিভাজনের অসমতাকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হলে বৈশ্বিক উন্নয়ণের আলোচ্যসূচি অনুসরণ করা সহজতর হবে এবং ভবিষ্যতের টেকসই উন্নয়ন অর্জন করা সম্ভব যা সমগ্র বিশ্বকে দ্রুততার সাথে একটি ডিজিটাল সমাজের দিকে পরিচালিত করতে ভূমিকা পালন করবে।
ফাহিম আহমেদ
শিক্ষার্থী, মাস্টার্স,
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
