অধ্যাপক সেলিনা বাহার জামানের স্মৃতির উদ্দেশে আমি লেখাটি উৎসর্গ করলাম।
আমাদের মৌখিক ঐতিহ্য প্রবাদ প্রবচনে নারী প্রসঙ্গে দুটো কথা আছে। একটি শ্রদ্ধার, নারী মায়ের জাত। আর একটি অনুকম্পার, নারী পরের ভাগ্যে খায়। যেখানে নারী নিজের ভাগ্যে খায় আর পুরুষ নারীর ভাগ্যে বা তার অর্জনে খায় সেখানে কেবল পুরুষতন্ত্রের মহিমায় কোনো পুরুষ কি ঊর্ধ্বতন মর্যাদা দাবি করতে পারবে?
বিলীয়মান সামান্য কিছু মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ছাড়া পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র পুরুষতন্ত্র বিরাজ করে এসেছে। দেশভেদে তারতম্য থাকলেও পুরুষদের ধারণা দেওয়া হয় যে, তারা নারীদের ঊর্ধ্বতন এবং নারী তাদের অধঃস্তন ব্যক্তি।
পাশা খেলায় পণ, যুদ্ধে লব্ধ গানিমা বা পণ্য, সন্ধিবিগ্রহের উপাচার বা বিজয়ীর বরমাল্য হিসেবে নারীর মূল্য ছিল আকর্ষণীয় ও লোভনীয় বস্তু। পুরুষ শাস্ত্রকারকদের চিরন্তন অধঃস্তনতার বিধানে নারী আমৃত্যু পিতা, স্বামী ও পুত্রের অধীন-অভিভাবকত্বে থাকবে। এমন অবস্থা শুধু হিন্দু সমাজে নয়, পৃথিবীর প্রায় সকল পিতৃতান্ত্রিক সমাজে প্রচলিত ছিল। এক সময় জার্মানদের মধ্যে কুকেন, কিন্টের ও কির্চে–রন্ধন, শিশু রক্ষণাবেক্ষণ ও ধর্মপালনে নারীর কর্মকাণ্ড নির্দিষ্টভাবে সীমিত ছিল। এখনো মানবসমাজের বৃহদংশে কন্যার চেয়ে পুত্র-শিশুর মর্যাদা বেশি। ভারতে ভয়াবহভাবে কন্যা ভ্রুণ বিনষ্ট করা হচ্ছে। ভারতে অবশ্য বিবাহ ও উত্তরাধিকার আইন পাশ করে হিন্দু আইনে উল্লেখযোগ্য সংস্কার হয়েছে। বাংলাদেশে এ ব্যাপারে হিন্দুদের মধ্যে তেমন কোনো উৎসাহ নেই, বরং আশঙ্কা রয়েছে, উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ বৈষম্য তিরোহিত হলে এবং হিন্দু নারী যদি অহিন্দুকে বিয়ে করে তবে অবিভক্ত হিন্দু পরিবারের ধারণা ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে। বাংলাদেশের হিন্দু দায়ভাগ আইনে মহিলাদের উত্তরাধিকার-অধিকার বাংলাদেশের বাহিরে হিন্দুদের মিতাক্ষরার চেয়ে তুলনামূলকভাবে ভালো ছিল।
দক্ষিণ এশিয়ায় মুসলমান পারিবারিক আইনের সংস্কার হয়েছিল পাকিস্তানে এবং সামরিক শাসনের আওতায়। নির্বাচিত সরকারের সময় এমন সংস্কার সুকঠিন ছিল।
ইসলাম ধর্মে নারীর অবস্থান তুলনামূলক ভালোই। নারীদের তেমনি ন্যায়সঙ্গত অধিকার আছে যেমন আছে তাদের ওপর পুরুষদের। পুরুষ যা অর্জন করবে তা তার প্রাপ্য, নারী যা অর্জন করবে তা তার প্রাপ্য। বিশ্বাসী হয়ে সৎকাজ করলে নারী ও পুরুষ উভয়ই জান্নাত লাভ করবে। পুরুষ নারীর কর্তা, তাদের এককে অপরের ওপর বিশিষ্টতা দান করা হয়েছে, আর তা এজন্য যে পুরুষ তাদের জন্য ধনসম্পদ ব্যয় করে।
মাওলানা মুহিউদ্দীন খান কর্তৃক অনূদিত তফসীরে মাআরেফুল-কোরআন-এর ৯৯৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে, ‘সহীহ্ বোখারীতে হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) মতে বর্ণিত আছে, পারস্যবাসীরা তাদের সম্রাটের মৃত্যুর পর তাঁর কন্যাকে রাজসিংহাসনে অধিষ্ঠিত করেছিল। রসুলুল্লাহ (সা.) এই সংবাদ জানার পর মন্তব্য করেছিলেন, ﺓ/ﺍﺭﻣﺍ ﻡﮪﺭﻣﺍ ﺍﻮﻟﻮ ﻢﻭﻘ ﺢﻠﻔﻳ ﻥﻟ অর্থাৎ যে জাতি তাদের শাসনক্ষমতা একজন নারীর হাতে সমর্পণ করেছে, তারা কখনও সাফল্য লাভ করতে পারবে না। এ কারণেই আলেমগণ এ বিষয়ে একমত যে, কোনো নারীকে শাসনকর্তৃত্ব, খেলাফত অথবা রাজত্ব সমর্পণ করা যায় না, বরং নামাযের ইমামতির ন্যায় বৃহৎ ইমামতি অর্থাৎ শাসনকর্তৃত্বও একমাত্র পুরুষের জন্য উপযুক্ত।’
৪ সেপ্টেম্বর ২০০১ টাঙ্গাইলের সিঙ্গুরিয়ার এক নির্বাচনী পথসভায় কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘শূকর খাওয়া যেমন হারাম, নারী নেতৃত্বও তেমনি হারাম।’ নারী নেতৃত্ব সম্পর্কে ৮ সেপ্টেম্বর ২০০১ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ বলেন, ‘রওশনকে প্রধানমন্ত্রী করা হলেও আমি নারী নেতৃত্ব মানব না।’ ওই দিন চরমোনাইয়ের পীর বলেন, তাঁর আন্দোলন নারী নেতৃত্বের বিরুদ্ধে।
২৯ মার্চ ২০০২ রাজধানীর মুক্তাঙ্গনে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের মাওলানা ফজলুল করীম বলেন, ”১০ বছর ছয় মাস দেশে নারীর শাসন। হাদিসে উল্লেখ আছে, যে জাতির নেতৃত্ব দেয় নারী তাদের কল্যাণ হতে পারে না।” ২ নভেম্বর ২০০২ পিরোজপুরের এক ছাত্রসম্মেলনে চরমোনাইয়ের পীর সাহেব বলেন, ”নারী নেতৃত্বের বিরোধী জামায়াতের সেক্রেটারি পূজামণ্ডপে গিয়ে মেয়েদের হাতে গলায় মালা পরেন। আওয়ামী লীগ ইসলামের প্রকাশ্য শত্রু আর বিএনপি গোপন শত্রু। আওয়ামী লীগ মাদ্রাসায় হামলা চালিয়েছে এবং বিএনপি চালিয়েছে মসজিদে। এরশাদ ইসলাম ও আমার নেতৃত্ব মেনে নিয়েছেন। আমি কোনোদিন এরশাদের নেতৃত্ব মেনে নেইনি।”
বর্তমানে দেশে বিবিধ কর্মকাণ্ডে নারী উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। কয়েক বছর আগে এক ঢাকা-চট্টগ্রাম বিমান ফ্লাইট নারী বৈমানিক ও ক্রুদের দ্বারা পরিচালিত হয়েছে। ১ জানুয়ারি ২০০৩ চট্টগ্রামের ভাটিয়ারিতে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির ১৮৩তম বিশেষ কোর্সের এবং ৪৭তম লং কোর্সের জেন্টলম্যান ক্যাডেটদের কমিশনের সময় বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ১২০ জন পুরুষ ক্যাডেটের পাশাপাশি ২০ জন মহিলা ক্যাডেট সাফল্যের সঙ্গে কমিশন পান। ১৬ জানুয়ারি ২০০৩ ডা. সেলিনা হায়াত আইভি নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার প্রথম নারী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
নারী অধিকার প্রশ্নে মুসলিম জগতের কিছু নারী ব্যক্তিত্বের বক্তব্য উল্লেখ করা যাক। রশিদ ঘানুসির মতে, শ্রমিক শ্রেণীর স্বার্থসংরক্ষণ এবং নারী সম্প্রদায়ের অবনতি রোধে ইসলামি আন্দোলনের রয়েছে দুটো বড় ব্যর্থতা। নারী ও পুরুষের যে সমতা ইসলামে স্বীকৃত, তা বাস্তবে অবজ্ঞা করা হয়েছে। সমাজে পুরুষের সঙ্গে নারীর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ব্যাপারে অংশগ্রহণ করা বিধেয়। ইসলামের নিজের স্বারূপ্য ব্যতীত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ব্যক্তির স্বাধীনতা।
আমিনা ওয়াদুদ একজন আফ্রিকান-আমেরিকান মুসলমান। তিনি মালয়েশিয়ার ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েক বছর অধ্যাপনা করেন এবং কোরান পাঠ ও তার বোধগম্যতার একটি নিজস্ব পদ্ধতিমালা সৃষ্টি করেছেন। তিনি বলেন, “আর যখন তোমার প্রতিপালক ফেরেশতাদের বললেন, ‘আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি সৃষ্টি করতে যাচ্ছি’ (২:৩০) তার অর্থ হচ্ছে এই গ্রহে খিলাফা প্রতিটি মানুষের কর্তব্য। কোরানের দৃষ্টিতে এই কর্তব্য পালন করা, মানুষের অস্তিত্বের কারণ। সুতরাং নারীরাও যে পূর্ণাঙ্গরূপে মানুষ, এটা অস্বীকার করা সমগ্র মানবতার প্রতি মৌলিক কর্তব্য পালনের ঐশ্বরিক নির্দেশ পালনে নারীর পূর্ণ সামর্থ্য অস্বীকার করার শামিল।”
১৮ মার্চ, ২০০৫ আমিনা ওয়াদুদ নিউইয়র্কের ক্যাথিড্রাল অব সেন্ট জন দ্য ডিভাইনের সিনড হাউসে প্রায় ১০০ জন মুসল্লির সঙ্গে জুমার নামাজে ইমামতি করেন। মুসল্লিদের মধ্যে অর্ধেক ছিলেন নারী আর অর্ধেক পুরুষ। নামাজ শুরু করার আগে তিনি বলেন, “এই নামাজের মধ্য দিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। এই একটা কাজ ইসলামের মধ্যকার সম্ভাবনার প্রতীক। আমি চাই ইসলামের পক্ষে যতটা ভালো হওয়া সম্ভব ততটা হোক। আর নিজের ক্ষেত্রে আমি চাই যে, আমি যতটা ভালো মুসলমান হওয়ার সামর্থ্য রাখি ততটা হই। আমার কাছে যা কিছু তথ্য আছে তার ভিত্তিতে ‘মুখ বন্ধ করে বসে থাকতে হবে’, আমি এই তরিকায় ইসলাম পালন করতে রাজি নই। আমার মনের ভেতর কী আছে সে ব্যাপারে আমার সৎ থাকতে হবে, তা না হলে আমি তো একজন খিলাফা হতে পারবো না।” তাঁর মতে, “সপ্তম শতকের আরব সমাজের হিজাবের ‘সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিকভাবে নির্ধারিত শালীনতা প্রদর্শন’কে বিশ্বজনীন করে তোলা হয়েছে। এটি বাস্তবে কোরানের শিক্ষাকে পরিসীমিত করে এই অর্থে যে, সকল সংস্কৃতির শালীনতার ধারণা এক রকম নয়।” ওয়াদুদের কথা হচ্ছে, “কোরান আমাদের ‘শালীনতার’ নীতির ব্যাপারে শিক্ষাদান করে… বোরখা পরা বা পর্দার অন্তরালে থাকার ব্যাপারে নয়, যা ছিল বিশেষ পরিপ্রেক্ষিতে [আরব সমাজে] নির্দিষ্ট।”
ইন্দোনেশিয়ার এক অগ্রণী মানবাধিকার কর্মী লিলি জাকারিয়া মুনির বলেন, “আমাদের দেশের বহু পণ্ডিত গতানুগতিক ধারাতেই চলতে থাকেন। যেমন, তাঁরা বলবেন আমাদের অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান হচ্ছে জাকাত আদায় কিংবা সুদ নিষিদ্ধ করা, যদিও সেটা বৈশ্বিক অর্থনীতির সমস্যার সমাধানের জন্য কোনোভাবেই পর্যাপ্ত না।”
”রেডিক্যাল ইসলামি দলগুলোর এজেন্ডায় তাদের জন্য ইসলামের প্রতীক হচ্ছে হিজাব, পুরুষের দাড়ি না। এ কারণে তারা দাবি করে যে, মহিলারা হিজাব পরবে; কিন্তু পুরুষদের জিনস এবং টি-শার্ট পরার ব্যাপারে তারা চুপচাপ, এটাকে তারা ইসলামের জন্য ঝুঁকিপুর্ণ জিনিস হিসেবে দেখে না। আমি নিজে হিজাব পরি, কিন্তু যেভাবে কিছু মুসলমান দল এটাকে একটি অর্থহীন প্রতীকে দাঁড় করিয়েছে, তাতে আমি বিরক্ত বোধ করি।”
মালয়েশিয়ার কেবাসবান বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক খালিজা মোহাম্মদ সাল্লেহ বলেন, ঐতিহ্যগতভাবে মুসলমান নারীদের স্ত্রী ও মা হিসেবেই দেখা যায়। জাতিগঠনে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে প্রথম দরকার শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও সুযোগ। অন্যদিকে নারী-পুরুষ সম্পর্কে পরিবর্তন আনতে হবে। নারীকে পুরুষের অধস্তন না ভেবে শরিক হিসেবে গণ্য করলে নারী-পুরুষ উভয়ই উপকৃত হবে। এ পরিবর্তনে পুরুষকে পরিবারের গার্হস্থ্য দায়িত্ব পালনের ভাগিদার হতে হবে।
ইহুদি বংশোদ্ভূত ধর্মান্তরিত মারইয়াম জামিলাহ মুসলিম দেশগুলোর সংস্কারগুলোকে শরিয়ার অঙ্গহানি বলে বর্ণনা করেছেন। পশ্চিমা মূল্যবোধের প্রতি একটা মানসিক দাসত্বের ফলে কেউ-কেউ অযথা ইসলাম ধর্মের সংস্কারে অবতীর্ণ হয়েছেন। পর্দাপ্রথার অবসান ঘটিয়ে. সহশিক্ষা, নারীর ভোটাধিকার, ঘরের বাইরে পেশা গ্রহণ এবং দেশের প্রকাশ্য কর্মকাণ্ডে পুরুষের সঙ্গে অংশগ্রহণের তিনি তীব্র বিরোধিতা করেন। তাঁর মতে নারীর ভূমিকা ভোটাধিকার নয়, গৃহে অবস্থান ও পরিবার সংরক্ষণ। Max Lerner-এর সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করে জামিলাহ বলেন, ”আমরা ব্যাবিলনীয় সমাজে বাস করছি। তাঁর মতে নারীমুক্তির প্রত্যক্ষ ফল হচ্ছে সমাজে অপরাধের প্রাদুর্ভাব, অবৈধতা এবং অবৈধ যৌনাচারে অবাধ অংশগ্রহণ এবং পরিবারের সম্পূর্ণ ভাঙন।” রক্ষণশীল মহলে বহু গ্রন্থের প্রণেতা জামিলাহর যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে।
তুরাবির মতে, পাশ্চাত্যকরণের প্রবক্তাদের হাতে ইসলামের সংস্কার ছেড়ে দেওয়া যায় না। নারী ও পুরুষ উভয়ের মুক্তির জন্য ইতিহাস ও প্রথা থেকে মুক্তির জন্য আমাদের সচেষ্ট হতে হবে।
নারী স্বাধীনতা সম্পর্কে রোকেয়া বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে (১৮৮০-১৯৩২) বলেন, ”স্বাধীনতার অর্থ পুরুষের ন্যায় উন্নত অবস্থা বুঝিতে হইবে।… পুরুষের সমকক্ষতা লাভের জন্য আমাদিগকে যাহা করিতে হয়, তাহাই করিব। যদি এখন স্বাধীনভাবে জীবিকা অর্জন করিলে স্বাধীনতা লাভ হয়, তবে তাহাই করিব। আবশ্যক হইলে আমরা লেডি-কেরানি হইতে আরম্ভ করিয়া লেডি-ম্যাজিস্ট্রেট, লেডি-ব্যারিস্টার, লেডি-জজ সবই হইব, পঞ্চাশ বৎসর পর লেডি Viceroy হইয়া এ দেশের সমস্ত নারীকে ‘রানী’ করিয়া ফেলিব। উপার্জন করিব না কেন? আমাদের কি হাত নাই, না পা নাই, না বুদ্ধি নাই? কী নাই? যে পরিশ্রম আমরা স্বামীর গৃহকার্যে ব্যয় করি, সেই পরিশ্রম দ্বারা কি স্বাধীন ব্যবসায় করিতে পারিব না?… আমরা যদি রাজকীয় কার্যক্ষেত্রে প্রবেশ করিতে না পরি, তবে কৃষিক্ষেত্রে প্রবেশ করিব। ভারতে বর দুর্লভ হইয়াছে বলিয়া কন্যাদায়ে কাঁদিয়া মরি কেন, কন্যাগুলিকে সুশিক্ষিতা করিয়া কার্যক্ষেত্রে ছাড়িয়া দাও, নিজেরা অন্নবস্ত্র ও উপার্জন করুক।”
পাকিস্তানে নিখিল মহিলা সমিতির (APWA) তৎপরতা সমাজসেবায় কেন্দ্রীভূত ছিল। ১৯৭০ সালে তৎকালীন আন্দোলনমুখর অবস্থায় ৪ এপ্রিল ১৯৭০ পূর্ব পাকিস্তান মহিলা পরিষদ গঠিত হয়। বেগম সুফিয়া কামাল ও মালেকা বেগম যথাক্রমে সভাপতি ও সম্পাদক ছিলেন। ওই প্রতিষ্ঠান স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ হিসেবে অভিহিত হয়।
সাম্যবাদী আন্দোলনের সঙ্গে দেশের রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে না পারলেও একাধিক নারী কারাবাসের দুঃখযন্ত্রণা ভোগ করে নারীর অগ্রসরতার পরিচয় দেন। সমাজে কিছুটা সুস্থ প্রভাব পড়ে। এদের মধ্যে রয়েছেন সিলেটের লীলা রায়, সুহাসিনী দাস, হেনা দাস, অনিতা, সুষমা, অপর্ণা পাল চৌধুরী, বরিশালের মনোরমা বসু, পুতুল দাশগুপ্তা, সুজাতা দাশগুপ্তা, ভোলার ছবি বসু, ময়মনসিংহের অংশমণি হাজরা, ভদ্রমণি হাজং, পাবনার লিপি চক্রবর্তী, নওগাঁর রেখা চৌধুরী, ঢাকার রানু মুখার্জি, খুলনার ভানু দেবী, গাইবান্ধার দৌলতন্নেছা খাতুন প্রমুখ। প্রগতিবাদী দুই নারী সুফিয়া কামাল ও জাহানারা ইমাম নারী জাগরণের দুই প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তি।
নর ও নারীর সম্পর্ক প্রসঙ্গে মার্কস বলেন, ”এই সম্পর্কের প্রকৃতি নির্ধারণ করে পুরুষ মানুষ কোন মুহূর্তে নিজেকে মানবজাতির সামগ্রিক সত্তা হিসেবে বিবেচনা করে। নর ও নারীর সম্পর্ক একজন মানুষের সঙ্গে আরেকজন মানুষের সবচেয়ে স্বাভাবিক সম্পর্ক। তাই এর দ্বারা দেখানো হয় কোন মুহূর্তে পুরুষের স্বাভাবিক আচরণ মানবিক হয়েছে বা কোন মুহূর্তে মানবসত্তা তার স্বাভাবিক সত্তা লাভ করেছে, কোন পর্যন্ত তার মানবিক স্বভাব তার স্বভাবে পরিণত হয়েছে।”
১৮৮৪ সালে ফ্রেডারিক এঙ্গেল্স্ তাঁর দ্য ওরিজিন অব দ্য ফ্যামিলি, প্রাইভেট প্রপার্টি অ্যান্ড দ্য স্টেট গ্রন্থে বলেন, শিকার ও খাদ্য সংগ্রহের ভিত্তিতে যেসব সমাজ প্রতিষ্ঠিত, যেখানে জনজাতির সবাই শ্রম দান করে এবং সব সম্পত্তি সম্প্রদায়ের মালিকানাভুক্ত, সেখানে নারী কোনো দ্বিতীয় স্থান ভোগ করত না। তিনি উল্লেখ করেন, ”নারীর অধঃস্তনতার অভ্যুদয় ঘটে ব্যক্তিগত সম্পত্তির ওপর ভিত্তি করে যখন নির্দিষ্ট শ্রেণীসমাজ গড়ে ওঠে। এঙ্গেল্স্ এই মত পোষণ করেন যে, পুরুষ প্রাধান্য কম-বেশি বিশ্বের বিভিন্ন সভ্যতায় পরিলক্ষিত হয়, তা দুই লিঙ্গের মধ্যে কোনো দেহগত বৈশিষ্ট্যের জন্য নয়, বরং কালক্রমে তা ঐতিহাসিকভাবে নির্ধারিত হয়ে গেছে। শ্রেণীবিভক্ত সমাজে পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব পুরুষের ওপর বর্তালে নারীর অধঃস্তনতা বিকাশ লাভ করে।”
যখন এঙ্গেল্স্ ওই সব মতামত প্রকাশ করেন, তখন নৃতত্ত্বের শৈশাবস্থা। গত কয়েক দশকে যেসব নৃতাত্ত্বিক গবেষণা হয়েছে তাতে দেখা যায়, কয়েক লাখ বছর ধরে যে শিকারি ও খাদ্য-সংগ্রাহকদের সমাজ টিকে থাকে সেসব সমাজ ছিল মূলতই লিঙ্গবৈষম্যবিহীন। দৃষ্টান্তস্বরূপ, আমরা নিউগিনির দক্ষিণ-পূর্বস্থ এক জনবিরল দ্বীপ ভানাতিয়ালের কথা উল্লেখ করতে পারি। Dr. Maria Lepowsky তার Fruit of Motherland গ্রন্থে বলেন যে, জনবিরল ভানাতিয়াল দ্বীপে নারীর ওপর পুরুষের প্রাধান্য বা পুরুষের বাধ্যবাধকতা আরোপের কোনো অবকাশ নেই। পুরুষ ও নারী উভয়ই তাদের স্ব স্ব ক্ষেত্রের কর্মকাণ্ডে সম্মানের সঙ্গে সকলের স্বার্থে কাজ করে। নারীরা মূল্যবান দ্রব্যের উৎপাদন ও বিতরণ নিয়ন্ত্রণ করে এবং সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়। উৎসবে, পরামর্শসভায় নারী ও পুরুষ উভয়েই সমানভাবে অংশগ্রহণ করে। বরং নারী জাদুবিদ্যা ও ‘পূর্বপুরুষদের প্রথা’র ব্যাখ্যার ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে। পুরুষদের শিশুসেবার ভার নিতে দেখা যায়। তাদের ভাষায় কোনো লিঙ্গবৈষম্য নেই। নারী ও পুরুষ নির্দেশ করতে সর্বনাম পদে কোনো পার্থক্য করা হয় না। ওই দৃষ্টান্ত থেকে এটা পরিষ্কার, পুরুষের কাছে নারীর অধঃস্তনতা সার্বজনীন মানবিক ব্যাপার নয় এবং তা অবশ্যম্ভাবীও নয়।
নারী অধিকার প্রশ্নে বর্তমান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে এক মনীষীর কিছু কথা। ডেভিড বারস্ মিয়ানের সঙ্গে আলাপচারিতায় নোম চোমস্কি (Noam Chomsky) ) বলেন, ”আপনি যদি আমার ঠাকুরমাকে জিজ্ঞাসা করতেন তিনি নিপীড়িত কিনা, আপনি কী বলছেন তিনি সে কথা বুঝতে পারতেন না। আপনি যদি আমার মাকে জিজ্ঞাসা করতেন, তিনি জানতেন যে তিনি নিপীড়িত এবং তিনি ক্ষুব্ধ, কিন্তু প্রকাশ্যে এ নিয়ে প্রশ্ন করতেন না। তিনি আমার বাবা ও আমাকে রান্নাঘরে যেতে দিতেন না, কারণ সেটা আমাদের কাজ ছিল না। আমাদের কাছ থেকে আশা করা হতো লেখাপড়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তিনি অন্য সব কাজ করবেন। এখন আপনি আমার কন্যাদের জিজ্ঞাসা করুন যে, তারা নিপীড়িত কিনা, তারা কোনো আলাপ করবে না। তারা সোজা বাড়ি থেকে আপনাকে লাথি মেরে তাড়িয়ে দেবে। সম্প্রতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন চেতনার এবং সামাজিক আচরণে একটা নাটকীয় পরিবর্তন ঘটে গেছে।
আজ আপনি এমআইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে চলাফেরা করুন। চল্লিশ বছর আগে আপনি কেবল দেখতেন সুসজ্জিত শ্বেতকায় মানুষ যারা তাঁদের বয়োজ্যেষ্ঠদের সমীহ করতো ইত্যাদি। আজ সেই হলে আপনি গেলে দেখবেন তাঁদের মধ্যে অর্ধেক নারী, এক-তৃতীয়াংশ সংখ্যালঘু, লোকে অনানুষ্ঠিক পোশাক পরিহিত। এগুলো তাৎপর্যহীন পরিবর্তন নয়। আর এমন পরিবর্তন ঘটেছে সমাজের সর্বত্র।
আমাদের ঠাকুরমা বা মায়ের মতো মেয়েদের যদি এখন বাস করতে না হয়, মর্যাদা-পরম্পরা ভেঙে গেছে। যেমন আমি সম্প্রতি জানলাম, ম্যাসাচুসেট্স শহরে যেখানে আমি বাস করি― একটা পেশাদার মধ্যবিত্তদের শহর― আইনজীবী, ডাক্তার ইত্যাদি সব,― পুলিশ বিভাগের একটা বিশেষ শাখা রয়েছে যা শুধু ৯১১ টেলিফোনে গার্হস্থ্য সন্ত্রাসের সংবাদাদি গ্রহণ করে থাকে। এমন কোনো জিনিস কি ত্রিশ বছর বা এমন কি বিশ বছর আগে ছিল? এ ছিল অকল্পনীয়। এটা কারও কোনো বিষয়ই ছিল না যদি কেউ তার স্ত্রীকে মারপিট করেছে। একি মর্যাদা-পরম্পরায় পরিবর্তন? অবশ্যই। আর, এটি একটি সামান্য এক অংশ সামাজিক পরিবর্তনের বিশাল পটভূমিতে।
কীভাবে এই পরিবর্তন এলো? নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন, কীভাবে পরিবর্তন এলো আমার ঠাকুরমার কাছ থেকে মায়ে এবং মায়ের কাছ থেকে আমার কন্যাদের মাঝে? কোনো মহানুভব শাসকের পুণ্য নয় যিনি নারীদের অধিকার প্রদানের আইন প্রণয়ন করেন। এর বেশির ভাগ প্রজ্জ্বলিত হয় তরুণদের সক্রিয় আন্দোলন এবং নারীদের বাম আন্দোলন থেকে।
এক পর্যায়ে লোকে বুঝতে পারে ক্ষমতা ও আধিপত্যের কাঠামো কী এবং এ সম্পর্কে কিছু করতে চায়। সেই জন্য ইতিহাসে পরিবর্তন এসেছে। কেমনভাবে ঘটেছে, আমি বলতে পারবো না। তবে আমাদের সকলেরই তা করার ক্ষমতা রয়েছে।
আমার দরিদ্র পরিবারের ঠাকুরমার সাত সন্তান― তখনকার দিনে শিশুরা বাঁচতো না। যারা বেঁচেছিল তাদের প্রথম ছয়জন মেয়ে, সপ্তমটি একটা ছেলে। মেয়েরা নয়, ছেলে বলে কলেজে যায়। আমার মা চৌকষ হলেও তাকে কলেজে নয়, কেবল নর্মাল স্কুলে যেতে দেওয়া হয়। আর তার চারদিকে ছিল সব পিএইচডি ভদ্রলোক, আমার বাবার বন্ধুরা― আর তিনি এ নিয়ে বড় বিরক্তি বোধ করতেন। একটা কথা তিনি জানতেন তিনি তাঁদের চেয়ে অনেক বেশি বুদ্ধিমতী। বস্তুত, আমি যখন বাচ্চা, যখন বাসায় কোনো আপ্যায়ন হতো, পুরুষরা সব লিভিং রুমে যেত। মেয়েরা খাবার ঘরে জড়ো হয়ে নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলতেন। বাচ্চা হিসেবে আমি মেয়েদের কাছে যেতাম, কারণ তাঁরা আকর্ষণীয় বিষয়ে কথা বলতেন। তাঁরা ছিলেন প্রাণবান। আকর্ষণীয়, বুদ্ধিমান, রাজনৈতিক। পুরুষরা সবাই পিএইচডি, বড় অধ্যাপক বা পুরোহিত, বেশির ভাগ সময় বাজে কথা বলতেন। আমার মা এসব জানতেন এবং বড় অপছন্দ করতেন। কিন্তু এ নিয়ে যে কিছু করা যায় তা নিয়ে তিনি ভাবেননি।
গম্ভীর আন্দোলন অনেক সময় সত্যিকারের নিপীড়িতদের মধ্য থেকে আসে। আবার অন্য সময় আসে বিশেষ অধিকারভোগীদের মধ্য থেকে।”
জাতিসংঘের এক সমীক্ষা অনুযায়ী নারী পৃথিবীর দুই-তৃতীয়াংশ কর্ম সমাধা করে থাকে এবং ৪৫ ভাগ খাদ্য উৎপাদন করলেও তারা আয়ের শতকরা দশ ভাগ এবং সম্পত্তির শতকরা এক ভাগ মালিকানা ভোগ করে।
বাংলাদেশ সংবিধানের তৃতীয় ভাগে ২৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, রাষ্ট্রের সব নাগরিক আইনের চোখে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী। ২৮নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্র ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষ ভেদ বা জন্মস্থানের কারণে জনসাধারণের কোনো বিনোদন বা বিশ্রামের স্থানে প্রবেশ বা কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির বিষয়ে কোনো নাগরিককে কোনোরূপ অক্ষমতা, বাধ্যবাধকতা বা শর্তের সম্মুখীন হতে হবে না এবং যে কোনো অনগ্রসর এলাকার নারী বা শিশু অথবা নাগরিকদের উন্নতির জন্য রাষ্ট্র বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে। ২৯নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রের কর্মে নিয়োগ লাভের ব্যাপারে সব নাগরিকের সমান সুযোগ থাকবে এবং কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষ ভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিক রাষ্ট্রের কর্মে নিয়োগ বা কর্ম লাভের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না অথবা তাঁর প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করা যাবে না। যে আইনের বিধান বা পরিণতি চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে তা অন্যায্য এবং অযৌক্তিক হলে সংবিধানের লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হবে। বৈষম্যের কারণ অবশ্যই আশু ও প্রত্যক্ষ হতে হবে। ডালিয়া পারভীন বনাম বাংলাদেশ বিমান ৪৮ ডিএলআর ১৩২ ও রাবেয়া বসরী আইরিন বনাম বাংলাদেশ ৫২ ডিএলআর ৩০৮ দুই মামলায় ফ্লাইট স্টুয়ার্ডদের অবসরের ক্ষেত্রে মহিলাদের জন্য ৩৫ এবং পুরুষদের জন্য ৪৪ বছর পরিষ্কার বৈষম্যমূলক। শামীমা সুলতানা সীমা বনাম বাংলাদেশ ৫৭ ডিএলআর ২০১ মামলায় হাইকোর্ট সিদ্ধান্ত দেন, সাধারণ আসনে নির্বাচিত কমিশনার ও মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসনে নির্বাচিত কমিশনারের ভেতর মহানগর পৌর করপোরেশন আইনে কোনো বৈষম্য করা চলবে না।
৪ এপ্রিল ২০০২ বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের দশম সম্মেলনে আমি বলি, নারীর “মুক্ত বিহঙ্গের বক্তব্য হতে পারে, আমি একাই একশ। আমি অর্ধেকে বিশ্বাস করিনি। আমি পুরুষের উপগ্রহ নই। আমি তার গলগ্রহও হতে চাই না। আকাশ আমার, পৃথিবী আমার, জীবন-জরায়ু আমার। এইসব আমার সম্পত্তি। এর মধ্যে কেউ ভাগ চাইলে তাকে গলবস্ত্র হয়ে বিনীতভাবে যা সে পাওয়ার যোগ্য তা চাইতে হবে। পরে আমি ভেবে দেখব, তার কোনো হক আছে কি-না। আলাই-বালাই পুরুষের না-হক পীড়াপীড়ি থেকে দূরে থাকার জন্য আমি শুধু স্বয়ম্ভর নই, আমি আÍনির্ভরশীলও বটে। আমি কারাটি ও যুযুৎসু দুটোই জুতসই শিখে নিয়েছি।”
সাম্যবাদ সূচনালগ্ন থেকে নারীমুক্তির কথা বলে আসছে এবং সে সঙ্গে এও বলেছে যে, পুঁজিবাদী সমাজ নির্মূল না হলে নারী-অধঃস্তনতা দূর করা যাবে না। নারীবাদ ও সাম্যবাদের মধ্যে কিছু সাদৃশ্য থাকলেও দুই মতবাদের বিশ্বধারণা দুই রকম। এ ক্ষেত্রে মানবসমাজ লিঙ্গভেদে স্বতন্ত্র ও পৃথক, অন্য ক্ষেত্রে পার্থক্য বৈষম্য সামাজিক শ্রেণীবন্ধতার কারণে। নারীবাদ তার আন্দোলন স্বতন্ত্র রাখতে চায়। তার আশঙ্কা সাম্যবাদ পুরুষতন্ত্রের আরেক রূপ।
প্রথম মহাযুদ্ধের পূর্বে নারীবাদের প্রথম তরঙ্গ উচ্চশিক্ষা, সম্পত্তি ও ভোটাধিকার অর্জনের লক্ষ্যে চালিত হয়েছিল। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর নারীবাদের দ্বিতীয় তরঙ্গ ধাবিত হয় সমাজের মূল স্রোতে পূর্ণ অংশগ্রহণের দাবিতে।
১৯৬০ দশকের শেষ দিকে নারী আন্দোলন পুনরুজ্জীবিত হওয়ার আগে নারী-পুরুষের মধ্যকার বৈষম্য বিষয়টি উদারপন্থী বা সাম্যবাদীদের তেমন দৃষ্টি আকর্ষণ করেনি। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আফ্রিকার নারী লিঙ্গে শৈলাঘাত, এশিয়ার কন্যাশিশুর হত্যা এবং মুসলিম বিশ্বের বোরকা বা হিজাব প্রশ্নের অবতারণা করা হয়। পুরুষতন্ত্রের মধ্যে যে অন্তর্নিহিত শ্রেণীপ্রাধান্য বিরাজ করে সে-সম্পর্কে কোনো গভীর আলোচনা হয় নি। সাম্যবাদ মনে করে শ্রেণী-বিরোধ ইতিহাসের মূল চালিকাশক্তি এবং নারী-পুরুষের পার্থক্য অসন্ধেয় বা পরাহত নয়। তবে অস্বীকার করার উপায় নেই প্রত্যেক সমাজে নারী নির্যাতনের প্রধান দায়ক পুরুষই।
রেডিক্যাল নারীবাদের কথা, নারী-পুরুষ বৈষম্য দেহগত এবং সামাজিক ইতিহাস-প্রসূত নয়। নারী মুক্তির জন্য প্রয়োজন প্রযুক্তিগত পরিবর্তন, অধিকতর গর্ভনিরোধ এবং চূড়ান্ত সমাধান গর্ভের বাইরে গর্ভধারণ। মৌলবাদী এই নারীবাদের সঙ্গে মতৈক্য পোষণ না করেও ১৯৭০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রেড স্টকিংস ম্যানিফেস্টো লালমোজার ইশতেহার এক সদৃশ উপসংহারে পৌঁছয় যে, নারী একটি শ্রেণী এবং নিপীড়িত শ্রেণী আর সেই নিপীড়নের দায়ক হচ্ছে পুরুষ। পুরুষ-প্রাধান্য সর্বপেক্ষা প্রাচীন নিপীড়ন ব্যবস্থা এবং অন্যান্য শোষণ বা নিপীড়ন তা বর্ণবৈষম্য, পুঁজিবাদ, সাম্রাজ্যবাদ, যা-ই রূপ ধারণ করুক না কেন তা সেই পুরুষ আধিপত্যবাদের রকমফের।
আরেক মৌলবাদী নারীবাদের বক্তব্য, নারী-পুরুষজনিত পার্থক্য আমাদের জন্মের জিনসের কারণে। যে নারীর ‘শত্র“র’ সঙ্গে সহবাস করে সে সন্দেহজনক ব্যক্তি। নরবিমুক্ত পন্থায় নারীর যৌন সন্তুষ্টির পথ আবিষ্কার করতে পারাই নারী বিপ্লবের মূল কথা। যতক্ষণ পর্যন্ত সকল নারী নারী-সমকামী না-হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত সত্যিকারের রাজনৈতিক বিপ্লব অর্জিত হবে না।
সাম্যবাদ ও নারীবাদ তত্ত্বের সমন্বয় সাধন সম্ভব হয় নি। ঐক্য বা সংহতির বাস্তবজগতে শ্রেণীবৈষম্যের মধ্যে নারীদের ঐক্য বা সংহতির অবকাশ নেই। যেমন অবকাশ নেই লিঙ্গনিরপেক্ষ সর্বাহারাদের ঐক্য বা সংহতি অর্জনের। তবে দুনিয়ার মজদুর এক হো বলা গেলেও, দুনিয়ার নারী এক হোক শ্লোগানের অবকাশ আছে কি?
১৯৭০ দশকের সাংস্কৃতিক নারীবাদ পুরুষের লোভ-লালসা, আগ্রাসন ও আত্মম্ভরিতার বিপক্ষে নারীর যত্ন, সেবা, উষ্ণ আবেগ ও অংশগ্রহণের মূল্যবোধের ওপর জোর দেয়। নারীর কীর্তি পুরুষের ইতিহাসে শুধু উপেক্ষিত নয়, অপহৃতও। নারীর মেধা ও প্রতিভা বিকাশের সুযোগ, অবকাশ বা স্বীকৃতি পাওয়া যায় না। ইতিহাসে নারীর অনুল্লেখ নারীর দুঃখযন্ত্রণা এবং শোষণ-নিপীড়নকে খেলো করে দেখেছে।
সাম্যবাদীদের মতে নারী-পুরুষ বৈষম্যের অবসানকল্পে পূর্ণ সাফল্য অর্জন করা রাষ্ট্রের পুঁজিবাদী কাঠামোতে সম্ভব নয়। উৎপাদনের মাধ্যম হিসেবে যতদিন ব্যক্তিগত সম্পত্তি এবং বিশেষ অধিকার ও অসাম্য বিরাজ করবে ততদিন অন্যান্য সামাজিক নিপীড়নের মতো নারীর নিপীড়ন বন্ধ করা যাবে না। আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় লিঙ্গভিত্তিক নয়, রাজনীতিভিত্তিক প্রয়াসই নারীর মঙ্গলার্থে ফলপ্রসূ হতে পারে। জন্মশাসন, গর্ভপাত, স্বাস্থ্যসেবা, শিশুসেবা, চাকরিবাকরির ক্ষেত্রে নারীর যেসব অভিষ্ট সাধন হয়েছে তা সবই রাজনৈতিক কারণে এবং আইন প্রণয়নে। আইনের পক্ষে সমান আশ্রয় পাওয়াই নারীবাদের সম্ভাব্য সাফল্য অর্জনের প্রধানতম উপায়। ১২ ডিসেম্বর ১৮৬৮ সালে লুডভিগ কুগেলকে লেখা এক পত্রে কার্ল মার্কস বলেন, ”যে কেউ ইতিহাসে কিছু জানলে সে জানবে যে, নারী জাগরণ ছাড়া কোনো বড় সামাজিক বিপ্লব সম্ভব নয়।”
জাতিধর্মবর্ণনারীপুরুষ ভেদের মধ্যে নারী-পুরুষ প্রশ্নটি অতি সাম্প্রতিক কালের। এখনো অনেক বিষয় বিতর্কিত। মানবসমাজের সর্বত্র নারী ভোটাধিকার পায়নি। কোনো কোনো দেশে একা চলার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ রয়েছে। মোটর গাড়ি চালানো একেবারে নিষিদ্ধ। গর্ভপাতের ক্ষেত্রে নারীর কোনো অধিকার স্বীকার করা হয় না। সমকামীদের মধ্যে বিবাহ বা সমকামীদের দত্তক গ্রহণের প্রশ্নটি অত্যন্ত বিতর্কিত। ইসলাম ধর্মে দত্তক গ্রহণ সিদ্ধ নয়। হিন্দুধর্মে কন্যাশিশু দত্তক গ্রহণ করা যায় না।
জাতিধর্মবর্ণনারীপুরুষনির্বিশেষে সকলে আইনের সমক্ষে সমান আশ্রয় পাওয়ার অধিকারী–এই নীতি আজ বহু দেশে সাদামাটাভাবে স্বীকৃত, কিন্তু জাতিধর্মবর্ণনারীপুরুষবিশেষে যে ভেদ রয়েছে তা এখনো অনেক দেশে আইনি স্বীকৃতি না পেলেও সমাজে বেশ চল রয়েছে। সাম্যের অভিমুখে মানবসমাজ অনেক এগিয়েছে। সাধারণভাবে সাম্য সকলের কাম্য হলেও, তার অবধি ইয়ত্তা সীমা ও শ্রেণীবিভাগ নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই।
মানবসমাজে বিরাজমান অবস্থায় অসাম্য এমন এক বাস্তবতা যার পরিবর্তনে কল্যাণকামী মানুষ সাম্যের কথা বলছে। সাম্য প্রতিষ্ঠায় যে আমূল পরিবর্তনের আশংকা রয়েছে সেইভাবে স্বার্থপর মানুষ দুশ্চিন্তাও করে। বঙ্কিমচন্দ্র সাম্যের ওপর যে বই লিখেছিলেন তা পরে তিনি প্রত্যাহার করে নেন। নজরুলের মতো দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলা সহজ নয়, ‘গাহি সাম্যের গান/মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান।’
৮ মার্চ ২০০৮-এ যে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ঘোষিত হয় সেখানে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকার, নারীদের জন্য সংসদের এক-তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষণ এবং প্রত্যক্ষ ভোটের জন্য সুপারিশ করা হয়। এই নীতির বিরুদ্ধে ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদ প্রাঙ্গণে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। ২৭ মার্চ ২০০৮ ওই মসজিদের ভারপ্রাপ্ত খতিব মুফতি মুহাম্মদকে সভাপতি করে সরকার ২০ সদস্যের সমন্বয়ে একটি পর্যালোচনা কমিটি গঠন করে। ওই কমিটি নারী নীতির পাঁচটি অনুচ্ছেদ বিলোপ, বারোটি সংশোধন ও দুটি অনুচ্ছেদের সংশোধন সুপারিশ করেন। সমঅধিকারের পরিবর্তে ন্যায্য অধিকার প্রতিস্থাপিত হতে হবে। ওই কমিটিতে কোনো নারী সদস্য ছিলেন না বিধায় নারীপক্ষ ওই সুপারিশ গ্রহণযোগ্য নয় বলে মত প্রকাশ করে। ১৮ এপ্রিল ২০০৮ দেশের প্রত্যেকটি মসজিদে ১৮৮ জন ইমাম সাহেব ওইসব সুপারিশের পক্ষে মন্তব্য করেন। সরকারের কথা, কোরান সুন্নার পরিপন্থী কোনো আইন হবে না। ২২ এপ্রিল ২০০৮ ‘জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি’ শীর্ষক এক আলোচনায় প্রথমবারের মতো আলেমদের একাংশ বলেন, ‘কোরানবিরোধী কোনো ধারা নারী নীতিতে নেই।’ মওলানা জিয়াউল হাসান বলেন, সম্পত্তিতে নারীর উত্তরাধিকার অর্ধেকের কথা বলা হলেও তার অধিক দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো বিধিনিষেধ নেই। প্রশ্ন হচ্ছে, বর্তমান জগতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির বদৌলতে যখন নারী পুরুষের মতো সমান দক্ষতায় তার কর্তব্যকর্ম সমাধান করতে পারছে তখন কোন মুখে পুরুষ তার এক কাঠি অতিরিক্ত কর্তৃত্বের কথা দাবি করবে?
আমাদের দেশের হিন্দুধর্মে দুই প্রধান দেবী দুর্গা ও কালী ছাড়াও একাধিক মাতৃকাদেবীর প্রাদুর্ভাব ঘটে। মধ্যযুগে শ্রীলঙ্কার এক তীর্থযাত্রী এতো মাতৃকাদেবীর পূজা লক্ষ্য করে মন্তব্য করেন, সব পান্ডাদের কড়ি-উপার্জন করার। আমাদের দেশের রাজনীতিতে নারী-প্রভাব অসামান্য। দুই প্রধান নেত্রী দুই প্রধান রাজনৈতিক দলকে এতিম অবস্থায় পেয়ে অঞ্চলে আশ্রয় দিয়েছিলেন। দেশের সাধারণ লোক বরাবরই দু’জনকে একসঙ্গে দেখতে চায়।
আমাদের দেশের ইতিহাসে এবার পুরুষের চেয়ে নারী ভোটারের সংখ্যা বেশি হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ছবিওয়ালা ভোটার তালিকার বিরুদ্ধে ভুয়া ভোটার তালিকাভুক্তির কোনো অভিযোগ নেই। নারীরা ভোটার হতে নিবন্ধন কেন্দ্রে আসবে না সেই ধারণা ভুল প্রমাণ হয়েছে। বাদ পড়া ভোটারদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা বেশি।
পাশ্চাত্য ইউরোপীয় উপনিবেশিক শাসনের পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ প্রভাবে সমাজে নারীর অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। খ্রিষ্টান মিশনারির ধর্মপ্রচার সহজ করার জন্য দেশীয় আইনে পরিবর্তন আনা হয়, ধর্মত্যাগের জন্য দণ্ডদান বা ভোগান্তি প্রায় তিরোহিত হয়। ধর্মবিধানে যে-নারী যে-পুরুষকে বিয়ে করতে পারতো না তা আজ আদালতি বিবাহে সিদ্ধ। ধর্মীয় নেতাদের ফতোয়া দিয়ে শাস্তিবিধান আইনবিরুদ্ধ বলে সর্বোচ্চ আদালত ঘোষণা দিলেও প্রত্যন্ত ও গ্রামীণ আবহাওয়ায় দোররা মারার সংবাদ আমরা এখনো পাই।
জš§নিরোধ পদ্ধতির জন্য নারীর স্বাধীনতা বৃদ্ধি পেয়েছে, স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির কারণে নারী-পুরুষের কর্মক্ষেত্রে বিভাজন অনেক দূর হয়েছে। সারা পৃথিবীতে অবশ্য জাতিসংঘের বৈষম্য বিলুপ্ত সম্পর্কিত কনভেনশান এখনও সম্পূর্ণভাবে গৃহীত হয় নি। ধর্মান্ধতা, ধর্মীয় সন্ত্রাস এবং আইন-শৃঙ্খলার অবনতিতে পুরুষের চেয়ে নারী বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রতিকারহীন হয়ে পড়ে।
আমাদের দেশে বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, পররাষ্ট্র মন্ত্রী, কৃষি মন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী এবং সরকারি সংসদীয় দলের নেত্রী ও উপনেত্রী এক মাহেন্দ্রকামিনীযোগে যে সাফল্য অর্জন করেছেন তাতে লোকে আশা করতেই পারে যে দেশে মা-বোনদের অবস্থার উন্নতি হবে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় কেবলমাত্র আইনশৃঙ্খলার অবনতির কারণে অ্যাসিড-নিক্ষেপ ও নারী নির্যাতনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ইভটিজিংয়ের মতো অসদাচরণ হত্যা ও আÍহত্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সূক্ষ্ম বাঁধন-কষণে ব্রিটিশ শাসকরা অপরাধসংহিতা এবং ফৌজদারি কার্যবিধির দ্বারা এক সময় দক্ষিণ এশিয়ায় তাদের সব উপনিবেশে শান্তি রক্ষা করেছিল। এখন সেই অপরাধসংহিতা সংশোধন করে আমরা কূল পাচ্ছি না কীভাবে আমরা নারী নির্যাতন বন্ধ করতে পারি। নারী নির্যাতন রোধ আইনের সুযোগে দেশে একদিনে বহু মিথ্যা মামলা হচ্ছে। অন্যদিকে সত্য মামলা সঠিক তদন্তের অভাবে এবং আইনের মারপ্যাঁচে ডিসমিস হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় শুধু নারীর নয়, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলেই এক নির্যাতনমূলক নৈরাজ্যের দুর্ভাবনায় দিশেহারা। সুষ্ঠু আইনের শাসন ছাড়া আমাদের গত্যন্তর নেই।
৩০ এপ্রিল ২০০৮ কর্মজীবী নারী আহূত এক জাতীয় সম্মেলনে আমি যে-কথা বলেছিলাম তার পুনরুল্লেখ করে এখানে আমার বক্তব্য আমি শেষ করছি। “নারী-পুরুষ সম্পর্কে শেষ কথা এখনই কি বলা যাবে? আমাদের চেতনার কাঠামো ও ভাবাদর্শে আমরা কি নতুন কিছু নির্মাণ করতে পারব? নাকি পশ্চিম থেকে নতুন ভাবধারার অপেক্ষায় থাকব? আজ বিশ্বায়নের যুগে আমরা যেমন দিশাহারা তেমনি নতুন দিশার প্রত্যাশী। পশ্চিম সভ্যতার মুখোমুখি প্রাচ্য কেমন করে তা মোকাবেলা করবে সেটা আমাদের কাছে সম্পূর্ণ পরিষ্কার নয়। আমাদের সাফল্য নির্ভর করবে বহু জিনিসের ওপরে। নারীদের নিজেদের মুক্তির সঙ্গে দেশের অন্যান্য বঞ্চিত-অবহেলিত সকল গোষ্ঠীর মুক্তির কথা ভাবতে হবে। নারীর পুরুষ সঙ্গী তো তার মিত্র হতে পারে। এবং নারী-পুরুষ উভয়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ওপর সকল বঞ্চিত-অবহেলিতদের মুক্তি নির্ভর করছে।”
সেলিনা বাহার জামান স্মারক পঞ্চম বক্তৃতা হিসেবে ২০১০ সালের ৩ ডিসেম্বরে এই লেখাটি সুফিয়া কামাল মিলনায়তন, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে পাঠ করা হয়েছে।
মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান: সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা।