বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৭

রাজনীতির সুদিন দুর্দিন | শান্তনু মজুমদার

সমাজ ও রাষ্ট্রকে রাজনীতিবিবর্জিত করার একঘেয়ে একটি চেষ্টা বাংলাদেশে লক্ষ্য করা যায়। এই চেষ্টা বিদ্যমান উৎপাদন ব্যবস্থা আর রাষ্ট্রযন্ত্রের স্বরূপ বিচার-বিবেচনায় নেয় না। বরং গুটিকয় রাজনৈতিক দলের রাজনীতিকদের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডকে সামনে তুলে এনে একগাদা সুপারিশ হাজির করা হলেই মোক্ষম কাজটি সেরে ফেলা হয়েছে বলে মনে করে। রাষ্ট্রদেহে বিরাজমান অব্যবস্থাগুলোর নিদানে এমন অবস্থান গ্রহণের মধ্যে সততা, আকুলতা, নিষ্ঠা থাকলেও থাকতে পারে। কিন্তু এ ধরনের অবস্থানের
মধ্য দিয়ে রাজনীতির অর্জনকে বাহবা দেওয়া, কোনো প্রতিবন্ধকতা থেকে থাকলে সেগুলোকে গভীর থেকে চিনতে শেখা বা সম্ভাবনাগুলোকে চিহ্নিত করাটা সম্ভব হয়ে ওঠে না। অবশ্য রাজনীতি ও রাজনীতিকদের কর্মকাণ্ড দেখে 'গায়ে জ্বালা ধরে যায়' জাতীয় মধ্যবিত্ত ফ্যাশনেবল একটি অবস্থান গ্রহণের মানসিকতা অর্জনে সমর্থ হলে এসব ব্যাপারে মাথা ঘামানোর কোনো প্রয়োজন পড়ে না।

অর্জন, প্রতিবন্ধকতা ও সম্ভাবনাগুলো নিয়ে কথা বলার সময় বে-ইয়াদ হলে চলবে না, বাংলাদেশের মূলধারার রাজনীতি 'মুক্তবাজারি' ও পুঁজিবাদকামী। কোটি কোটি ভোট পাওয়া বাঙালি জাতীয়তাবাদী আর বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদীদের মধ্যে এই একটি ক্ষেত্রে কোনো মতভেদ নেই। আর এহেন একটি ব্যবস্থার মধ্যে জনমঙ্গল সাধন সম্ভব বলে বিশ্বাসীরা স্বভাবতই একটি বুর্জোয়া গণতন্ত্র তথা পশ্চিমা উদারনৈতিক ধাঁচের রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েমের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। আবারও মনে করা যাক, আমরা মূলধারার রাজনীতির কথা বলছি। পুঁজিবাদ ভালো না খারাপ, উদারনৈতিক গণতন্ত্র প্রকৃত অর্থে সব মানুষের কল্যাণ সাধনে সক্ষম কি-না, যদি সক্ষম না হয় তাহলে কোনো বিকল্প আছে কি-না সেসব ব্যাপারে বুদ্ধিবৃত্তিক পরিমণ্ডলে পূর্ণদৈর্ঘ্য তর্ক-বিতর্ক হতে পারে। কিন্তু একমাথা একভোট ব্যবস্থায় লোকে কাদের ভোট দেয় এবং যাদের ভোট দেওয়া হয় তারা কী করে, দিনের শেষে তাই হচ্ছে বিবেচ্য বিষয়। কেননা সাংবিধানিক রাজনীতিতে ক্ষমতা হাতে আসে ভোটের মাধ্যমে। বাংলাদেশের মূলধারার রাজনীতি কিছু দেয়নি বলে অনেকে হতাশা প্রকাশ করেন। সত্যি কি তাই? ছিয়ানব্বইয়ের ফেব্রুয়ারি আর এক-এগারো অধ্যায় বাদ দিলে নব্বইয়ের পর থেকে নিয়মিত ভোট, ভোটে জনসাধারণের ব্যাপক অংশগ্রহণ খারাপ কী? সরকার-সংশিল্গষ্ট এই অর্জনগুলোর বাইরে একটু ভিন্ন দিক থেকে দেখলে ১৯৯০ সালে দ্বিতীয় সামরিক জান্তার পতনের চূড়ান্তলগ্নে মূলত প্রধান দুই দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিধান চালু করা ও পরবর্তীকালে এ ব্যবস্থাকে স্থায়ী রূপ দেওয়ার মাধ্যমে নিজেদের স্বরূপ উন্মোচন করে দেওয়াটাই হচ্ছে মূলধারার কাছ থেকে জনগণের বড় প্রাপ্তি। অনির্বাচিত একটি কর্তৃপক্ষের হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়ার অদৃষ্টপূর্ব এক বিধান চালুর মধ্য দিয়ে মূলধারার রাজনীতির শক্তিমান পক্ষগুলো পরস্পরের প্রতি চূড়ান্ত অবিশ্বাস ও উদারনীতিক গণতন্ত্রে ক্ষমতার হাতবদলের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি পরিচালনায় নিজেদের অক্ষমতা নিজেরাই প্রণালিবদ্ধভাবে উন্মোচিত করে দেয়। পারস্পরিক অবিশ্বাস ও নিজেদের অক্ষমতা স্বীকার করে নেওয়ার একটা সুফল হচ্ছে মূলধারার বর্তমান দলগুলোর ব্যাপারে সাধারণের মোহমুক্তি।

ভোটের ফল দিয়ে নয় বরং ভোটের জন্য সাধারণ ভোটারদের দল বাছাইয়ের জায়গা থেকে মোহমুক্তির বিষয়টিকে দেখলে বুঝতে সুবিধা হয়। লক্ষ্য করলে দেখা যাচ্ছে, কোনো একটি দলের জন্য নিবিড় আনুগত্য বা মানসিক অনুভূতি ধারণকারীদের বাইরের সাধারণ ভোটাররা এখন আর কোনো স্বপ্ন বা প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্য থেকে মূলধারার কোনো দলকে ক্ষমতায় পাঠাচ্ছে না বরং পূর্ববর্তী ক্ষমতাসীনদের যাবতীয় অন্যায়-অত্যাচারের সাজা হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বী দলটিকে ভোট দিচ্ছে। দেশি-বিদেশি চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র, সূক্ষ্ম কারচুপি, মোটা কারচুপির মতো কথাবার্তাগুলো মাথায় রাখলেও ওপরে উল্লেখ্য প্রবণতাটি বুঝতে অসুবিধা হয় না। অনাগত দিনগুলোতে বর্তমানের মূলধারা নিজেকে নতুন করে সাজাবে কি-না বা সাজাতে বাধ্য হবে কি-না তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে চলতি মূলধারাকে চূড়ান্তভাবে প্রত্যাখ্যান করে জনগণ নতুন একটি মূলধারার জন্ম দেবে কি-না তা নির্ভর করছে রাজনীতির রঙ্গমঞ্চ ছাড়াও সমাজদেহের মধ্যে অন্য কোনো মতাদর্শ নিজেদের কতটা অনুপ্রবিষ্ট করতে পারে সে সক্ষমতার ওপর। রাষ্ট্রকর্ম ও রাজনীতিতে সেনা-ছোপ লাগার ব্যাপারে মূলধারার বড় দুই দলের প্রকাশ্য আপত্তির ব্যাপারটিও বাংলাদেশের রাজনীতিক সংস্কৃতির জন্য ইতিবাচক হিসেবে বিবেচনা করা যায়। এ অবস্থানটি ইতিবাচক এই কারণেই যে, সেনাছাউনিতে জন্ম নেওয়া দলকেও এখন সেনা হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে অত্যন্ত দৃঢ় কথাবার্তা বলতে শোনো যাচ্ছে।

রাজনীতি ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা প্রসঙ্গে শুরুতে বলে নেওয়া যাক যে বুর্জোয়া গণতন্ত্র প্রত্যাশী বাংলাদেশের মূলধারার রাজনীতির জন্য তেমন বড় কোনো প্রতিবন্ধকতা বা চ্যালেঞ্জ এ মুহূর্তে জারি নেই। ভোট হচ্ছে, লোকে ব্যাপকভাবে ভোট দিচ্ছে। এক-এগারোর মতো ঘটনা ঘটলেও তা স্থায়ী হতে পারেনি। আন্তর্জাতিক মুরবি্বরা দৃশ্যত শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের পক্ষে। বিরোধীরা সংসদে যেতে চান না নানা অজুহাতে; কিন্তু তাতে কি; তারা নির্বাচনে যাবেন। বর্তমান বিরোধী দল তো ইতিমধ্যে মধ্যবর্তী নির্বাচনের আহ্বান জানিয়ে ফেলেছে। গালাগালি, মারামারি বা রক্তপাতের মতো সমস্যাগুলো পশ্চিমে উদ্ভূত উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির চর্চার ক্ষেত্রে আমাদের মূলধারার নিম্নমান প্রমাণ করে বটে; কিন্তু এর ফলে চলমান ব্যবস্থাটি ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাচ্ছে তা ঠিক বলা যাবে না।

অনেকের আক্ষেপ আজকের দিনে ধনী মানুষের দাপটে সত্যিকারের রাজনীতিকরা রাজনীতির মাঠে টিকে থাকতে পারছেন না। কথা ঠিক, কিন্তু এই প্রবণতা বন্ধের কোনো উপায় আছে কি? দলের পেছনে বণিকরা যে এন্তার টাকা খরচ করে তা কে না জানে? এতে প্রাথমিকভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য নির্বিঘ্ন করা ও সুযোগ-সুবিধাদি বাগিয়ে নেওয়ার মতো ব্যাপারাদি থাকলেও এক পর্যায়ে এসে বণিকের শাসক হওয়ার ইচ্ছা হতেই পারে। শুধু শাসন করতে পারার স্বাদ নেওয়ার জন্য নয়, বরং বাণিজ্য সুরক্ষা ও প্রসারের বিষয়টিও এখানে জড়িত। তাহলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোনো প্রতিবন্ধকতা কি নেই? অবশ্যই আছে; তবে তা মূলধারার জন্য নয়। এই প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে মুক্তবাজার, বিশ্বায়নসহ নানা নামে নানা অজুহাতে শোষণ-লুণ্ঠনকারী দেশি-বিদেশি শক্তিগুলোর প্রগতিশীল বিরোধিতা যারা করে তাদের জন্য।

গণতন্ত্রের নামে বাংলাদেশে যা কিছু চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে তা নিয়ে সংক্ষেপে এটুকু বলা যায় যে, চলতি ব্যবস্থাটি যদিও নির্বাচন পদ্ধতির বিচারে সংসদীয় কিন্তু প্রকৃত প্রস্তাবে এতটুকু গণতান্ত্রিক নয়। বুর্জোয়া গণতন্ত্রের সাধারণ সংস্কৃতি ও সহবত থেকে বহু দূরে এর অবস্থান যদিও মূলধারার দলগুলোর মধ্যে মানের বিচারে বড় ধরনের হেরফের আছে। তবে গণতন্ত্রের নামে বিরাজমান নিদারুণ নেতিবাচক প্রবণতাগুলোর মধ্যেও গুটিকয় ইতিবাচক প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতি ক্ষেত্রে। ইতিবাচক প্রবণতাগুলোর ক্ষেত্রে প্রথম উল্লেখ করা যেতে পারে জাতীয় সম্পদ রক্ষার আন্দোলনে সাধারণ মানুষের ব্যাপক মাত্রার সমর্থন ও সম্পৃক্তি। জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী পরিবেশ-প্রতিবেশবিরোধী কয়লা উত্তোলন, বহুজাতিকের হাতে গ্যাস সম্পদ তুলে দেওয়া কিংবা সমুদ্রবন্দর ইজারা দেওয়ার চেষ্টার বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলনগুলো এখন আর সমাজের অগ্রসর অংশের 'চেতনার উদয়ের' জন্য পথ চেয়ে বসে থাকার পর্যায়ে নেই; এই আন্দোলনগুলোর সঙ্গে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ প্রতিনিয়তই বাড়ছে। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, এ আন্দোলনগুলোর ব্যাপারে মূলধারার দলগুলোর সমর্থক বা কর্মীদের অনেকের মুখ থেকেও ইতিবাচক কথাবার্তা শুনতে পাওয়া এখন আর দুর্লভ ঘটনা নয়। জাতীয় সম্পদ রক্ষার আন্দোলনে একদিকে গণমানুষের অংশগ্রহণ বাড়তে থাকা, অন্যদিকে মূলধারার লোকদের মধ্যেও জাতীয় স্বার্থের প্রসঙ্গে দলীয় আনুগত্য বা অবস্থানকে একপাশে রেখে দেওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধির বাস্তবতাতে সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন বৈশিষ্ট্য যোগ হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে।

কোনো দলের দিকে চেয়ে না থেকে, বুদ্ধিজীবীদের বিবৃতির ওপর নির্ভর না করে ন্যায্য অধিকার আদায়ের দাবিতে দল-মত নির্বিশেষে স্থানীয় পর্যায়ে আন্দোলন গড়ে তোলা এবং এ ধরনের আন্দোলনের পক্ষে দল-মত নির্বিশেষে মোটাদাগের সমর্থনের প্রবণতাটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তনের আরেকটি সম্ভাবনাময় ইঙ্গিত বহন করে। বছর কয়েক আগের কানসাট, শনিরআখড়া কিংবা গত মাসে আড়িয়ল বিলে বিমানবন্দর স্থাপনের ঘোষণা বিরোধী আন্দোলন থেকে এই প্রবণতাটি ধারাবাহিক হয়ে উঠছে বলে মনে করা যায়। সর্বশেষ আন্দোলনটি থেকে নতুন করে এ কথাই প্রমাণিত হয় যে, বিরোধী দলের চক্রান্ত, বিশেষ মহলের উস্কানির যুক্তি দেখিয়েও স্থানীয় পর্যায়ে দুরন্ত গতিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনের গুরুত্ব অগ্রাহ্য করা সম্ভব হয়নি। আড়িয়ল বিলের ক্ষেত্রে একথাও জানানো হয়েছিল যে বিলের জমি অবৈধ দখলে রাখা লোকরাই নিজেদের স্বার্থে আন্দোলন গড়ে তুলেছে। একান্ত দলীয় লোকজন ছাড়া সরকারের এসব কথাবার্তা মানুষজন খুব একটা কানে তোলেনি।প্রযুক্তির অগ্রগতির সুবাদে ক্রমেই অধিক সংখ্যক মানুষের সামনে বিদ্যমান ব্যবস্থা, রাষ্ট্র ও সরকার সম্পর্কে সুলভে আনসেন্সরড আলাপ-আলোচনা-সমালোচনার সুযোগ উন্মুক্ত হতে থাকার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন একটি মাত্রা যোগ হওয়ার সম্ভাবনা উন্মুক্ত হচ্ছে বলে মনে হয়। সংবাদপত্র, রেডিও বা টেলিভিশনের তুলনায় ই-মেইল বা ফেইসবুক, টুইটারের মতো সোশ্যাল নেটওয়ার্কগুলোর বড় সুবিধা হচ্ছে এগুলোর বিরুদ্ধে খড়গহস্ত হওয়ার সুযোগ প্রযুক্তিগত এবং বৈশ্বিক বাস্তবতার কারণেই অনেক কম। আরেক দিক থেকে দেখলে_ সংবাদপত্র, রেডিও বা টেলিভিশনের সঙ্গে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাণিজ্যের প্রসঙ্গটি জড়িত থাকায় বা অনেক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রযন্ত্র নিজেই মালিকানায় থাকায় এসব জায়গায় সব সময় স্বাধীন মত প্রকাশের সুযোগ অবারিত হওয়ার প্রশ্নটিও অবান্তর।

পক্ষান্তরে ই-মেইল, ফেইসবুক বা টুইটারের মতো মাধ্যমগুলো ব্যক্তিগত ইচ্ছামাফিক ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে সমমনাদের নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে দারুণ কার্যকর হিসেবে ইতিমধ্যে প্রমাণিত। ধরে নেওয়া যায় , বিদ্যুতায়নের আওতায় আসা মানুষের সংখ্যা সামনের দিনগুলোতে বাড়তে থাকবে। একই সঙ্গে মুনাফা বাড়ানোর তাগিদ থেকে ইন্টারনেট প্রযুক্তি ও কম্পিটারের দাম অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ক্রমাগত সস্তা হবে এবং ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়তে থাকবে; মোবাইল ফোনের ক্ষেত্রে যা ইতিমধ্যে ঘটে গেছে। এ ধরনের বাস্তবতা একবার তৈরি হয়ে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে রাষ্ট্রযন্ত্রের চোখ রাঙানিকে অগ্রাহ্য করে স্বাধীন ভাবনাগুলোকে একক বা যূথবদ্ধভাবে প্রচার বা প্রসারের সুযোগ বর্তমানের তুলনায় বহুগুণ বেড়ে যাওয়া। যথাযথ রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও সাংগঠনিক প্রস্তুতি নেওয়া গেলে নতুন সুযোগগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে বিদ্যমান ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করা বা পাল্টে দেওয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখা সম্ভব। অবশ্য প্রতিক্রিয়াশীলদের প্রযুক্তি ব্যবহারের সক্ষমতার ব্যাপারে সতর্ক না থাকলে এবং প্রযুক্তি হস্তগত থাকার সুবাদে মাঠে না নেমে ঘরে বসেই বিদ্যমান ব্যবস্থার বিরোধিতা করে ফল পাওয়া সম্ভব মনে করার নির্বুদ্ধিতা পাকাপোক্ত হয়ে গেলে আখেরে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।

ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের কয়েক নিযুত গার্মেন্ট শ্রমিকের আন্দোলন-সংগ্রামের বাস্তবতাও সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশের রাজনীতির ওপরে মোটাদাগের রেখাপাতের একটি সম্ভাবনা তৈরি করছে। চূড়ান্ত শ্রম শোষণের প্রতিবাদ আর জীবন ধারণের নূ্যনতম প্রয়োজন মেটানোর তাগিদে গার্মেন্ট শ্রমিকরা কখনও অসংগঠিত কখনওবা স্বল্পস্থায়ী কিন্তু কিছুটা হলেও সংগঠিত প্রতিরোধের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন অনেক দিন ধরেই। লক্ষণীয় বিষয়_ পুলিশি নিপীড়ন, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা আর মালিক-বান্ধব মিডিয়াতে ন্যায্য মজুরি, ন্যায্য সম্মান আদায়ের এ লড়াইকে বিদেশি চক্রান্ত, সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র, জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতাসহ নানা তকমা দেওয়া হলেও দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া শ্রমিকদের এ প্রতিরোধ পর্বটির সমাপ্তি টানা যাচ্ছে না।জাতীয় সম্পদ রক্ষার আন্দোলন, স্থানিক পর্যায়ে গড়ে ওঠা ইস্যুভিত্তিক আন্দোলন, গার্মেন্ট শ্রমিকদের আন্দোলন-সংগ্রাম আর তথ্যপ্রযুক্তির ক্রমেই সুলভ হয়ে ওঠার মতো বাস্তবতাগুলো সামনের দিনে বাংলাদেশের বুর্জোয়া রাজনীতিকে নানা ফর্মে প্রভাবিত করার একটি সম্ভাবনা তৈরি করে ফেলেছে। তবে প্রভাবের স্বরূপ শেষ পর্যন্ত কেমন হবে তা বহুলাংশে নির্ভর করবে আন্দোলন-সংগ্রামগুলোতে নেতৃত্বদানকারী মানুষের সামাজিক অবস্থান, গণমানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারার সামর্থ্যের মাত্রা ও রাজনৈতিক চেতনার মানের ওপর।

শান্তনু মজুমদার : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক






Find Nobin Kontho on Facebook