শুক্রবার, ৩১ মার্চ, ২০১৭

বিজ্ঞানে কনিষ্ঠতম নোবেলজয়ী: উইলিয়াম লরেন্স ব্র্যাগ

মাত্র ১৬ বছর বয়সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন এক তরুণ, আর মাত্র তিন বছরের মাথায় পদার্থবিদ্যা, রসায়ন ও গণিতের মতো মৌলিক বিজ্ঞানের তিনটি শাখায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেছেন। এ রকম কিছু শুনলে আমরা অবাক হব না? কিন্তু যাঁর কথা বলতে বসেছি, তাঁর ক্ষেত্রে এতটুকুতে অবাক হলে চলবে না। কারণ,

বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ, ২০১৭

রাষ্ট্রধর্ম | তসলিমা নাসরিন

একটি সেক্যুলার রাষ্ট্রের কি ধর্ম থাকে? এর উত্তর, আমরা সকলেই জানি যে, না। কী কারণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন বাংলাদেশ একটি সেক্যুলার রাষ্ট্র, আমি জানি না। ধর্মভিত্তিক আইন থাকলেও সে রাষ্ট্রকে সেক্যুলার বলার কোনও যুক্তি নেই। বাংলাদেশের বিবাহ, তালাক, উত্তরাধিকার-- ইত্যাদি পারিবারিক আইন এখনও ধর্মভিত্তিক। প্রধানমন্ত্রী, আশা করি, বাংলাদেশের মতো একটি ইসলামী রাষ্ট্রকে সেক্যুলার আখ্যা দিয়ে আর লোক হাসাবেন না।

মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ, ২০১৭

দুঃখ দর্শন | ফাহিম আহমেদ

দর্শনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো দুঃখ দর্শন। দুঃখের প্রকৃত স্বরূপ, মানুষের জীবনে সত্যিকার দুঃখ আছে কি-না, কিংবা সংসারে সুখের চেয়ে দুঃখের পরিমাণ বেশি কি-না, জীবনে দুঃখের কোনো প্রয়োজন বা সার্থকতা আছে কি-না ইত্যাদি প্রশ্ন নিয়ে দর্শনে সবিশেষ আলোচনা রয়েছে। তবে বাংলাদেশ দর্শনের ক্ষেত্রে যেমন দুঃখের কথা বলা রয়েছে তেমনি রয়েছে দুঃখ থেকে মুক্তির কথাও। 

সোমবার, ২৭ মার্চ, ২০১৭

কুমিরার যুদ্ধ | শিশির ভট্টাচার্য্য

প্রায় জন্মলগ্ন থেকেই পাকিস্তান রাষ্ট্রটি যে দুটি দুরারোগ্য রোগে ভুগে চলেছিল তার একটি ছিল প্রাসাদ-যড়যন্ত্র আর অন্যটি ছিল সামরিক শাসন। দীর্ঘ সামরিক শাসনে ক্লান্ত, অবসন্ন (উভয়) পাকিস্তানের জনগণ অবশেষে ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছিল। এই নির্বাচনে পাকিস্তানের মোট ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৬০টি আসন পেয়ে একমাত্র আওয়ামী লীগই পুরো পাকিস্তানের সরকার গঠন করতে সক্ষম ছিল।

রবিবার, ২৬ মার্চ, ২০১৭

‘গণহত্যা দিবস’ কেন?

ইংরেজি ‘জেনোসাইড’ শব্দটি ‘গণহত্যা’ হিসেবে বাংলায় স্বীকৃত, যার অর্থ বিশেষ কোনো জনগোষ্ঠী বা ধর্ম, বর্ণ ও বিশ্বাসের মানুষের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত পন্থায় পরিচালিত ব্যাপক হত্যাকাণ্ড, আক্রমণ ও পীড়ন এবং যা সেই জনগোষ্ঠীকে আংশিক অথবা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করার লক্ষ্যে পরিচালিত হয়। জাতিসংঘের ১৯৪৯ সালের ‘জেনোসাইড কনভেনশন’ও এই সংজ্ঞার স্বীকৃত আছে। সে কারণে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মাটিতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের স্থানীয় দোসরদের হাতে যে নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ ঘটে, তা সব অর্থেই গণহত্যা বা জেনোসাইড।

শনিবার, ২৫ মার্চ, ২০১৭

প্রেসিডেন্ট নিক্সনের জন্য স্টেট ডিপার্টমেন্টের গোপন স্মারক

[১৯৭১ সালে ‘পূর্ব পাকিস্তান পরিস্থিতি’ যে শেষ পর্যন্ত যুদ্ধে গড়াবে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট তা যথাসময়ে আঁচ করতে পেরেছে। তাই ২৬ মে, ১৯৭১ একটি গোপন স্মারকে তদানীন্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনকে তা জানিয়েছে তারা। মতামতের পাঠকদের আগ্রহের কথা ভেবে স্মারকটি বাংলায় ভাষান্তর করেছেন– আন্দালিব রাশদী]

শুক্রবার, ২৪ মার্চ, ২০১৭

কেন পাকিস্তানিরা ধর্ষণ করেছিল | আরিফ রহমান

“পৃথিবীর সমস্ত যুদ্ধেই ধর্ষণ হয়, আমাদের যুদ্ধেও হয়েছে এটা স্বাভাবিক, না হওয়াটাই অস্বাভাবিক।”

মুক্তিযুদ্ধে ধর্ষণ সম্পর্কে অনেক বাঙালি এমন ধারণা করে থাকেন। কথা সত্য, যুদ্ধ মাত্রই ধর্ষণ, সম্ভবত পৃথিবীতে বড় পরিসরে ঘটে যাওয়া এমন একটি যুদ্ধও পাওয়া যাবে না যেখানে কোনো ধর্ষণ হয়নি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধেও প্রচুর ধর্ষণ হয়েছে। অনেক নিরপেক্ষ

বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ, ২০১৭

গণহত্যা স্মরণ দিবস পালন কেন জরুরী | মুনতাসীর মামুন - শেষ পর্ব

অপারেশন সার্চলাইটের মাধ্যমে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আওয়ামী লীগকে নিউট্রালাইজ ও সেনাবাহিনীর বাঙালী সৈন্যদের নিরস্ত্র করতে চেয়েছে যাতে শান্তিশৃঙ্খলা ফিরে আসে। পাকিস্তানের তৎকালীন রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্বকে দায়ী করা হয়েছে যুদ্ধে পরাজয়ের জন্য। ষষ্ঠ অধ্যায় : মুক্তিবাহিনী-ইটস ট্রু ফেস বা মুক্তিবাহিনীর প্রকৃত রূপ। মুক্তিযোদ্ধাদের হেয় করাই অধ্যায়ের উদ্দেশ্য। বলা হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধারা ভারতের সৃষ্টি, মূলত এরা সন্ত্রাসী যারা দায়ী

বুধবার, ২২ মার্চ, ২০১৭

মুরতাদ হত্যার পক্ষে-বিপক্ষে

মুরতাদ দুরকমের– ফিতরি ও মিলি। ফিতরি − ফিতরা মানে স্বভাবজ। স্বাভাবিকভাবে মুসলিম হয়ে জন্মে ইসলাম ছেড়ে দিলে হয় ‘মুরতাদ ফিতরি’। ‘মুরতাদ মিলি’ হল সে, যে অন্য ধর্ম থেকে ইসলাম গ্রহণ করে তারপর ইসলাম ছেড়ে দেয়। এ নিবন্ধে আমরা দেখব এ ব্যাপারে ১. শরিয়া আইন কী বলে; ২. কোরান কী বলে; ৩. রাসুল (সা.) কী করেছেন; ৪. মওলানা মওদুদি (ও অন্যদের) মুরতাদ হত্যা সমর্থন কতটা বৈধ; ৫. অন্য বিশেষজ্ঞেরা কী বলেন এবং ৬. বাস্তবে কী ঘটেছে ও ঘটছে।

মঙ্গলবার, ২১ মার্চ, ২০১৭

গণহত্যা স্মরণ দিবস পালন কেন জরুরী | মুনতাসীর মামুন - পর্ব ৪

জুনায়েদের বইটি নিয়ে যেহেতু পার্লামেন্টেও কথা উঠেছে সে বইটি নিয়ে খানিকটা আলোচনা করব। যে কোন দেশে যে কোন নাগরিক বাংলাদেশের বিষয়ে লিখতে পারেন। এ ক্ষেত্রে কারও কিছু বলার নেই। তার প্রতিবাদ জানানো যায়। কিন্তু সরকারীভাবে যদি অপপ্রচার চালানো হয় তাহলে সরকারীভাবেই তার কঠোর প্রতিবাদ জানানো উচিত।

সোমবার, ২০ মার্চ, ২০১৭

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০তম সমাবর্তন বক্তৃতা ২০১৭ | অমিত চাকমা

অমিত চাকমার জন্ম রাঙামাটিতে, ১৯৫৯ সালে। উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের পড়াশোনা শেষ করে আলজেরীয় সরকারের বৃত্তি নিয়ে তিনি পাড়ি জমান ভিনদেশে। সেখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম স্থান অধিকার করে স্নাতক ডিগ্রি নেন। পরে কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়া থেকে রসায়ন প্রকৌশল বিষয়ে এমএসসি এবং পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অন্টারিওর উপাচার্য ও প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০তম সমাবর্তনের বক্তা ছিলেন তিনি।

রবিবার, ১৯ মার্চ, ২০১৭

গণহত্যা স্মরণ দিবস পালন কেন জরুরী | মুনতাসীর মামুন - পর্ব ৩

৩০ লাখ শহীদের ব্যাপারটি কিভাবে এলো তারপর তা ব্যাখ্যা করেছেন ডেভিড। ১৯৭২ সালে ১৮ জানুয়ারি ডেভিড ফ্রস্টকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘3 million people have been killed including children, women, peasants, intellectuals, workers, students...’ ফ্রস্ট তাকে জিজ্ঞেস করলেন, সংখ্যাটি যে ৩ মিলিয়ন তিনি তা কিভাবে বুঝলেন। বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘আমি ফেরার আগেই আমার লোকজন তথ্য সংগ্রহ করেছে, বিভিন্ন জায়গা থেকে খবরাখবর আসছে, এখনও সঠিক সংখ্যায় উপনীত হইনি তবে তা কিন্তু ৩ মিলিয়নের নিচে হবে না।’ এর আগে ১০ জানুয়ারিও তিনি একই সংখ্যার কথা বলেছিলেন।

শনিবার, ১৮ মার্চ, ২০১৭

আহ, বিশ্ববিদ্যালয়! | সৌমিত জয়দ্বীপ

ঘটনাটা সামান্য। এ বিষয়ে অনেক বিজ্ঞ ব্যক্তিই নিজেদের মতামত না-ও দিতে পারেন উচ্চমার্গ অবস্থানের কারণে। কিন্তু ঘটনাটা আমার কাছে সামান্য নয়, অনেক বড়। এত বড় যে, ‘সামান্য’ বাস ভাঙচুরের মতো বিষয় আমলে আনলে আমরা হালের বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি একটু হলেও বুঝতে পারব।

শুক্রবার, ১৭ মার্চ, ২০১৭

বঙ্গবন্ধু সর্বজনীন সর্বকালীন

আজ ১৭ মার্চ, সেই মহামানবের জন্মদিন, যাঁর জন্ম হয়েছিল বলেই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে। যিনি বাঙালীর পরিচয়ের প্রতীক। বাঙালীর চেতনায় যিনি স্বমহিমায় সমুজ্জ্বল। যাঁকে নিয়ে বাঙালীর অহঙ্কার কোনদিন ফুরাবে না।

বৃহস্পতিবার, ১৬ মার্চ, ২০১৭

শিক্ষাভাবনা | ইশতিয়াক আহমেদ শালীন

আমাদের জাতীয়তাবাদের মূল ভিত্তি ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠেছে। আমাদের জাতীয় উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির  বিকাশ এই চেতনাকে অবলম্বন করেই বিস্তার লাভ করার কথা ছিল। কিন্তু স্বাধীনতা অর্জনের মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালে নির্মমভাবে স্বপরিবারে হত্যা করা হল আমাদের জাতির জনক ও জাতীয়তাবাদের আইকন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। দীর্ঘ দিনের জন্য দেশ পরিচালিত হয় স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিদের হাতে যারা সুকৌশলে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতিদন্দী হিসেবে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতাকে প্রতিষ্ঠিত করে মৌলবাদের বীজ বপন করে দিয়ে যায় এই দেশে। 

বুধবার, ১৫ মার্চ, ২০১৭

সৌদি বাদশার বালি সফর: কট্টরপন্থী আকলমন্দের জন্যে চমৎকার এক ইশারা | শিশির ভট্টাচার্য

ইহলৌকিক ও পারলৌকিক ফায়দার জন্যে সৃষ্টিকর্তার উপাসনা করার দুই রকম কায়দা আছে: সাকার ও নিরাকার। সৃষ্টিকর্তার কল্পিত মূর্তি ব্যবহার করে যে প্রার্থনা তার নাম সাকার উপাসনা। হিন্দু ধর্মে নিরাকার ঈশ্বরের কল্পিত প্রতিকৃতিগুলোর মূর্ত রূপের নাম ‘মূর্তি’ বা ‘প্রতিমা’। বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টান ধর্মেও যথাক্রমে বুদ্ধ ও যিশুর মূর্তি তৈরির রেওয়াজ আছে। এককালে গ্রিক ও রোমানরাও পূজার উদ্দেশ্যে থেমিস, আফ্রোদিতি ইত্যাদি দেবীর মূর্তি নির্মাণ করত। ইসলামপূর্ব যুগে আরব দেশেও লাত, উজ্জা, মানাত ইত্যাদি দেবীর মূর্তি ছিল। 

মঙ্গলবার, ১৪ মার্চ, ২০১৭

গণহত্যা স্মরণ দিবস পালন কেন জরুরী | মুনতাসীর মামুন - পর্ব ২

মুক্তিযুদ্ধের সময় আমেরিকা, চীন, সৌদি আরবসহ মুসলমান গরিষ্ঠ দেশসমূহ সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী ছিল। আবার ‘নিরপেক্ষতা’ বজায় রাখার চেষ্টা করেছে ইউরোপীয় দেশসমূহ। লুঙ্গি পরা, জীর্ণশীর্ণ বাঙালীরা জিতবে এ কথা কেউ কল্পনাও করেনি। কিন্তু জিতে গেল। এই বিজয়ের পর সমীকরণও বদলে গেল। গণহত্যার সঙ্গে এরা জড়িত- এ প্রচার শুরু হলে তারা আরও বিপদে পড়বে। কেননা, ‘হলোকাস্ট’ বা ইহুদী নিধন তারা মনে রাখে কিন্তু বাঙালী হলে তা মনে রাখে না- এটি একেবারে মনের গহিনে সুপ্ত বর্ণবাদ এখন ট্রাম্প বা ইউরোপের ডানপন্থীরা যা খুঁচিয়ে তুলছেন।

সোমবার, ১৩ মার্চ, ২০১৭

গণহত্যা স্মরণ দিবস পালন কেন জরুরী | মুনতাসীর মামুন - পর্ব ১

গণহত্যা স্মরণ দিবস পালন কেন জরুরী হয়ে উঠছে, ৭ মার্চ সেটি আবার বোঝা গেল পাকিস্তানের প্রক্সি পার্টি [পিপিপি : একদিকে তাদেরই উত্তরসূরি] বা বাঙালী বংশোদ্ভূত পাকিস্তানীদের দল বিএনপি নেতাদের বক্তব্যে। তারা বলছেন, যার মর্মার্থ এই যে ৭ মার্চ কী এমন হয়েছিল। একটি বক্তৃতা হয়েছিল যে বক্তৃতায় এমন কোন দিক নির্দেশনা ছিল না। তাদের পিতা বলে তারা যাকে স্বীকার করেন, সেই জেনারেল জিয়াউর রহমান পর্যন্ত ৭ মার্চের বক্তৃতায় দিক নির্দেশনা পেয়েছিলেন আর তার পুত্ররা কোন নির্দেশনা পায় না। কেমন পুত্র এরা? 

রবিবার, ১২ মার্চ, ২০১৭

পাকিস্তানের ব্যাপারে আমাদের দায়দায়িত্ব আছে | শান্তনু মজুমদার

গত ১৭ মে, ২০১১ আনিসুল হকের ‘হাজার শোকর, আমরা পাকিস্তানি নই’ এবং ২১ মে সোহরাব হাসানের ‘বাংলাদেশ-বিদ্বেষী কাদির খান ও পাকিস্তানের পরবর্তী অভ্যুত্থান’ শীর্ষক লেখা দুটিতে পাকিস্তানের পাক থেকে আমরা মুক্ত হতে পারায় যথার্থভাবেই শোকর প্রকাশ করা হয়েছে। ১৯৭১-এ পাকিস্তানিরা, শামসুর রাহমানের ভাষায়, ‘আমাদের বুকের ভেতর ভয়ানক কৃষ্ণপক্ষ দিয়েছিলো সেঁটে; মগজের কোষে কোষে পুঁতেছিল আমাদেরই আপন জনের লাশ। ওরা গণহত্যা করেছে শহরে গ্রামে টিলায় নদীতে ক্ষেত ও খামারে’। রাহমান নেকড়ের চেয়ে অধিক সেই পশুদের অভিশাপ দিয়েছেন। আর হক ও হাসান ওদের থেকে দূরে থাকতে পারায় শোকর প্রকাশ করেছেন। কিন্তু কথা হচ্ছে, হিংস্র, ব্যর্থ, নিমজ্জমান পাকিস্তান থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে পারাটাই সব নয়।

শনিবার, ১১ মার্চ, ২০১৭

শুক্রবার, ১০ মার্চ, ২০১৭

ভূগোল ও ভগবান | এ. কে. নাজমুল করিম

১৯৪৬ সালে এ. কে নাজমূল করিম "ভূগোল ও ভগবান" নামে কয়েক পৃষ্ঠার একটি প্রবন্ধ লিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাড়া ফেলে দেন। তিনি তখন ছিলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক। নিচে প্রবন্ধটি তুলে দিলাম। দারুন বিশ্লেষনধর্মী লেখা। লেখাটা আশা করি নতুন করে আমাদের চিন্তার খোরাক জোগাবে,,,,,,
.
আমার এক মাস্টার মশাই একবার মহামুস্কিলে পড়েন। তার ভাঙ্গা মোটরখানা সারাতে দিয়েছিলেন ঢাকার এক মোটর মেকানিকের কাছে। ভাঙ্গা মোটরখানাকে ফিরিয়ে নিয়ে এসে ড্রাইভার বলল, “বাবু, বিশ্বকর্মার পূজার জন্য আজ কারখানা বন্ধ।” মোটরখানার জরুরী দরকার, তাই অধ্যাপক বললেন, “কেন, তারা যে মুসলমান মোটর মেকানিক। তারা দোকান বন্ধ রাখবে কেন?” ড্রাইভার উত্তর দিল, “তা হলে কি হয়, বাবু, তারা বিশ্বকর্মার পূজা না করতে পারে, কিন্তু তাই বলে কাজ-কারবার বন্ধ না রাখলে যে তাদের অমঙ্গল হবে।” কি আর করা যায়, বিশ্বকর্মার অনুকম্পায় সেদিন আর মোটরে চড়া হল না। তবে সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপকের একটা কথা পরিষ্কার হয়ে গেল - মানুষের আর্থিক ও ভৌগোলিক পরিবেশই মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসকে রূপ দেয়। তাই মুসলমান মোটর মিকানিকেরও বিশ্বাস যে বিশ্বকর্মাকে দোকানপাট বন্ধ রেখে সমমান না দেখালে তার ব্যবসায়ে ক্ষতি হতে পারে।
অনেকে ধর্মীয় চেতনাকে চিরনতন বা শাশ্বত কিছু বলে ধারণা করেছেন। তারা ধর্মকে সকল পারিপার্শ্বিকতা ও ভৌগোলিক প্রভাবের ঊর্ধ্বে বলে মনে করেন। কিন্তু আমরা জানি যে মানুষের ধর্মীয় চেতনা নিতান্ত ব্যবহারিক বুদ্ধি থেকেই এসেছে। প্রাচীন যুগে কৃষিকার্যের সুবিধার জন্য জরা, ব্যাধি ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে মুক্তির জন্য ভগবানের দরকার হয়ে পড়ে। এ ব্যবহারিক বুদ্ধির সাথে পারলৌকিক বা ঐশ্বরিক প্রেরণার কোন সম্পর্ক নাই। বৃষ্টি দেবতা, জরা ব্যাধির দেবতা প্রভৃতি বিভিন্ন দেবতাকে পূজা উপচার দিয়ে তোষামোদ করার পালা চলল। এ তোষামোদ করা থেকেই প্রাচীন সমাজে ধর্মের উৎপত্তি হল। এ ধর্ম বিভিন্ন ভৌগোলিক পরিবেশ ও উৎপাদন ব্যবস্থায় বিভিন্ন রূপ পেয়েছে। তাই সমাজ-বিজ্ঞানের ছাত্র ধর্মের কোন চিরনতন স্বরূপের কল্পনায় অপারগ। মোটর মেকানিক যেমন বিশ্বকর্মার পূজা করে সেরূপ মেক্সিকোর আদিম উপজাতিরা হরিণ দেবতাকেই সবচেয়ে সেরা দেবতা মনে করে, কারণ হরিণ শিকারের উপরই তাদের জীবিকা নির্ভর করে। টিপরাদের ভেতর বাঁশপূজা দেখতে পাই, কারণ তাদের জীবনযাত্রার জন্য বাঁশ অন্যতম উপাদান ও তা প্রচুর পরিমাণে পার্বত্য ত্রিপুরার জঙ্গলে পাওয়া যায়। আবার ভৌগোলিক পরিবেশ পরিবর্তনের ফলে উপাস্য দেবতারও পরিবর্তন হয়। আর্যরা যখন যাযাবর ছিল তখন তাদের একমাত্র উপজীবিকা ছিল মাঠে পশুচারণ। তাদের দিগনতবিস্তৃত চারণভূমির উপর আকাশই ছিল প্রকৃতির সবচেয়ে বড় প্রতিনিধি। তাই তাদের কাছে আকাশদেবতা দিয়ায়ুস (Dyaus) ছিল সবচেয়ে বড় দেবতা। বৃষ্টিদেবতা ইন্দ্র ছিল আকাশ দেবতার পুত্র ও নিতানত ছোট দরের দেবতা। কিন্তু আর্যরা যখন ভারতে এসে যাযাবর জীবন ছেড়ে কৃষিজীবন আরম্ভ করল তখন কৃষিকার্যের জন্য ইন্দ্রদেবতার বিশেষ প্রয়োজন হয়ে পড়ল। তাই ইন্দ্র হয়ে পড়ল বহু যুদ্ধজয়ী জবরদস্ত স্বর্গরাজ অর্থাৎ সবচেয়ে বড় দেবতা অপর দিকে আকাশদেবতা তার সব প্রাধান্য হারিয়ে ফেলল। বেচারা বুড়ো বাপ দিয়ায়ুসের কথা আর্যরা ক্রমে ভুলেই গেল।
আমরা যাদের অনুন্নত ও অসভ্য বলে থাকি তারা আমাদের চেয়ে অনেক বেশী বাস্তবজ্ঞানী। তাদের কাছে ভগবানের আর্থিক প্রয়োজনীয়তাটাই বেশী ধরা পড়ে। তাই হটেনটটরা তাদের উপাস্য নূতন চাঁদ দেখলে বলে “নমস্কার, এবার তোমার দৌলতে আমাদের বেশী করে মধু পাওয়া চাই। আমাদের গরু যেন বেশী খেয়ে দেয়ে বেশী দুধ দিতে পারে।”
স্বর্গ নরক বা ভগবানের ধারণার ভেতর কোন পারমার্থিক কিছু নাই। অতি আদিম যুগের মানুষদের ভেতর ভগবান বা স্বর্গনরকের কোন ধারণা দেখি না। “আদিম টাসমানীয় সমাজে খৃষ্টান ধর্ম প্রচার করতে গিয়ে পাদ্রীরা মহামুস্কিলে পড়েন, টাসমানীয় ভাষায় বাইবেল অনুবাদ করতে গিয়ে দেখা গেল যে ঐ ভাষায় ঈশ্বর, পরমার্থ শক্তি, স্বর্গ ইত্যাদি ভাববোধক একটিও শব্দ নাই। অবশেষে পাদ্রীরা টাসমানীয় ’ব্যক্তি’ বোধক শব্দ ’না’ (না)-এর সঙ্গে ইংরেজী শব্দ জুড়ে দিয়ে খৃষ্ট ধর্মতত্ত্বের ’‘God
(ঈশ্বর)-না’ ‘Heaven (স্বর্গ)-না’ প্রভৃতি শব্দ রচনা করতে বাধ্য হলেন।”
তাই বিভিন্ন দেশের লোকের স্বর্গনরকের ধারণার উপর যে যথেষ্ট ভৌগোলিক প্রভাব থাকবে তাতে আর বিচিত্র কি! মরুভূমির লোকদের ধারণা স্বর্গ বেশ ঠাণ্ডা জায়গা ও নরক বেশ গরম জায়গা। কিন্তু শীতের দেশ নরওয়ের লোকদের ধারণা ঠিক তার উল্টোটি। সেখানে স্বর্গ খুবই গরম জায়গা ও নরক খুবই ঠাণ্ডা জায়গা।1
স্বর্গ ও নরকের অবস্থান নিয়েও মরুভূমি ও শীতের দেশের লোকদের ধারণা বিভিন্ন। মরুভূমির দেশের লোকদের ধারণা স্বর্গ উপরের দিকে ও নরক নীচের দিকে কিন্তু নরওয়ের লোকের ধারণা ঠিক উল্টে - স্বর্গ নীচের দিকে ও নরক উপরের দিকে। এর কারণ এই যে শীতের দেশে উপর থেকে তুষারপাত হয় তাই নরক সেখানে উপরের দিকে। কিন্তু মরুভূমিতে পায়ের নীচে উত্তপ্ত বালি তাই তাদের ধারণা নরক নীচের দিকে।
স্বর্গ কি সব উপভোগ্য ও প্রলোভনীয় বস্তুর দ্বারা সজ্জিত হবে তা নিয়েও বিভিন্ন দেশের লোকের ধারণা বিভিন্ন। খৃষ্টান, হিব্রু ধর্মগুলি মরুভূমির ধর্ম, তাই তারা স্বর্গকে ছায়ায় ঢাকা, ফলমূল ও ঠাণ্ডা জলের প্রাচুর্যে পরিপূর্ণ মরূদ্যান বলে কল্পনা করেছে। কিন্তু এ ধরণের নিতানত নিরামিষ স্বর্গে এস্কিমোদের কোন ভক্তি নাই। খৃষ্টান পাদ্রীদের সঙ্গে বাদানুবাদে এস্কিমোরা বলছে “তোমাদের স্বর্গে কোন সীল মাছ নাই। যে স্বর্গে সীল মাছ নাই সে স্বর্গ আমাদের মানাবে না।”
আবার দেশ ভেদে শয়তান বা দুষ্টদেবতার ধারণাও বিভিন্ন। নরওয়ের লোকে কুয়াসা ও তুষারকেই শয়তান বা দুষ্টদেবতা বলে কল্পনা করে, কারণ কুয়াসা ও তুষারই তাদের দৈনন্দিন কাজে একমাত্র প্রতিবন্ধক। মিশরীয়দের ধারণা যে টাইফুন নামক অসহ্য উত্তপ্ত বায়ু ঝটিকাই হল দুষ্টদেবতা বা শয়তান। ভারতীয় হিন্দুদের ধারণা যে বৃত্রই হল শয়তান। কারণ বৃত্রই বৃষ্টিপাতে বাধা জন্মায় তাই প্রাচীন ভারতীয়দের কৃষিকাজে অসুবিধা হত। তাই বৃত্রসংহারের প্রয়োজন হল। ব্রেজিলে পায়াগুয়ারা তুফানকেই দুষ্টদেবতা বলে ধারণা করে। কিন্তু এ দুষ্টদেবতার ক্রোধে তারা এতটুকুও বিচলিত না হয়ে মশাল জালিয়ে দুষ্টদেবতাকে মারধর করতে যায়।
আন্দামানীরাও তাদের দেবতার অনাচার অবিচারকে নীরবে হজম করে না। আন্দামান সমুদ্রের মাঝে। তাই সেখানে সবসময়ই বৃষ্টি লেগে আছে ও এ বৃষ্টিপাতের কারণ হল প্রবল উত্তর পূর্ব মৌশুমী বায়ু। এ প্রবল উত্তর পূর্ব মৌশুমী বায়ুর বিলিকু দেবতাকেই যে তারা প্রবল পরাক্রানত মনে করবে তাতে আশ্চর্য কিছু নাই। কিন্তু এ হেন প্রবল পরাক্রানত বিলিকু দেবতা যখন অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত করাতে থাকে তখন আন্দামানীরা তার পরাক্রমে এতটুকুও না ঘাবড়িয়ে তার বিরুদ্ধে বাসুকী দেবীকে ক্ষেপিয়ে দিয়ে তার গায়ে সাপের কামড় বসিয়ে দিবে বলে ভয় দেখায়।
আন্দামানীরা বৃষ্টিপাত না পছন্দ করলে কি হয়! কৃষিপ্রধান দেশে বৃষ্টি দরকার, তাই বৃষ্টিদেবতাকে সন্তুষ্ট করার প্রথাও নানা দেশে বিভিন্ন। আমাদের দেশের মুসলমানেরা বৃষ্টিপাত না হলে নামাজ পড়ে আল্লার দরবারে ফরিয়াদ জানায়। কিন্তু বুসম্যানেরা অত সব প্রার্থনায় বিশ্বাস করে না। তারা মনে করে মাঠের উপর অতিকায় জলহস্তী বা হিপোপটেমাস চালিয়ে দিলেই বৃষ্টি দেবতাকে আহ্বান করা হল - অর্থাৎ এর পর ঝুর ঝুর করে বৃষ্টি পড়তে থাকবে। নিগ্রোরা জলে কলসী ছুড়ে দিয়ে ও প্রাচীন আর্যরা সোমরস দিয়ে বৃষ্টিদেবতাকে তোষামোদ করার চেষ্টা করত।
দেবতাদের যে সব পূজার উপচার দিয়ে তোষামোদ করা হয় তাও দেশভেদে যথেষ্ট তফাৎ। শীতের দেশ সাইবেরীয়ার লোকেরা তাদের দেবতা যেন শীতে কষ্ট না পায় সেজন্য দেবতার উদ্দেশ্যে পশমী জামা বা fur উৎসর্গ করে। কিন্তু নিগ্রোদের দেবতাদের গরম থাকবার কোন দরকার নাই, তাই তারা তাদের দেবতাদের উপহার দেয় ভোড্কা। রেড ইণ্ডিয়ানেরা দেয় তামাক। নরখাদক পলিনেশিয়ানদের দেবতারা মাংস উপহার পেলে আনন্দে আত্মহারা।
বিভিন্ন দেশের পাহাড় পর্বত নদী নালাও দেবতার উচ্চাসন পেয়েছে। নীল নদের জলের উত্থান পতন প্রাচীন মিশরীয়দের কাছে কেমন রহস্যময় ঠেকত তাই তারা নীল নদের পূজা আরম্ভ করে। কৃষিজীবী আর্যদের কাছে গঙ্গাদেবী পরম পবিত্র। সাঁওতালেরা তাদের মায়াং-বরু পাহাড়কে দেবতা বলে ধারণা করে। পেনাইন পর্বত হল কেলটিকদের দেবতা। ভারতের হিমালয় কেবল হিমের আলয় নয়, দেবালয়ও বটে। মহামতি যুধিষ্ঠির তো সে পথেই মহাপ্রস্থান করে একেবারে স্বর্গে আরোহণ করেন।
অনেকে অনুকম্পা দেখিয়ে বলবেন, “আহা যাদের কথা বলা হল, তারা যে সব অনুন্নত ও অর্ধসভ্য জাতি। তারা কি করে একেশ্বরবাদের ধারণা করবে? তাই তারা প্রকৃতির পূজাই করে।” তাদের মতে একেশ্বরবাদের ধারণা ভগবানের ‘প্রেরিত পুরুষে’র মারফতে দৈববাণীর ফলেই হয়েছে ও তার উপর কোন ভৌগোলিক প্রভাব নাই। কিন্তু তারা ভুলে যান যে একেশ্বরবাদের মূলেও ভুগোল রয়েছে। উহা পারমার্থিক বা চিরনতন কিছু নয়। ভারবর্ষ প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যে পরিপূর্ণ; প্রকৃতির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যকে প্রাচীন হিন্দুরা বিভিন্ন দেবতার রূপ দিয়েছে। ভারতীয় হিন্দুরা তাই বহু দেবতায় বিশ্বাসী। কিন্তু মরুভূমিতে বৃষ্টি না হওয়ার ফলে প্রকৃতির কোন বৈশিষ্ট্য প্রধান হয়ে নাই - কেবল বালি ধূ ধূ করছে ও সূর্য প্রচণ্ড তাপ ছড়াচ্ছে। মরুভূমিতে সূর্যই হল প্রকৃতির প্রধান ও প্রচণ্ডতম প্রতিনিধি। এ সূর্যদেবতার পূজা থেকেই যে তারা এক প্রবল পরাক্রানত ভগবানে বিশ্বাসী হয়েছে, তাতে আর বিচিত্র কি? খৃষ্টান বা হিব্রু ধর্মের প্রচলনের আগে এশিরিয়া ও বেবিলোনীয়াতে এ ধরণের একেশ্বরবাদ চালু ছিল।3 এশিরিয়ানদের নগরদেবতা অসুর, বেবিলোনীয়ানদের দেবতা মারডুক সবই সূর্যদেবতার বিভিন্ন রূপ। যখনই অসুর বা মারডুক সূর্যদেবতার রূপানতর লাভ করেছে, তখনই তারা জোরদার ও সর্বশক্তিমান এক ভগবানের পর্যায়ে উঠে এসেছে। মিশরের ফেরাও আখিনাটন এক সূর্যদেবতার এত ভক্ত হয়ে পড়েন যে তিনি মিশরের অন্যান্য দেবতার উপাসনা বন্ধ করে এক ভগবান অর্থাৎ সূর্যদেবতা Re (রি)-র উপাসনা চালু করেন। কিন্তু মিশরীয়েরা তার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই তার একেশ্বরবাদ ছেড়ে দেয়। হিব্রুদের এক ভগবানের বিশ্বাসও কোন অলৌকিক কিছু নয়। তারা প্রথমে বহু দেবতাতেই বিশ্বাসী ছিল। তাদের গোষ্ঠীদেবতা জেহোভা ঐ সব বহু দেবতারই একজন। কিন্তু যখন এ গোষ্ঠীদেবতা জেহোভা রূপ বদলিয়ে সূর্যদেবতার রূপ গ্রহণ করল, 4 তখনই বলব যে তারা এক ভগবানে বিশ্বাসী হয়ে পড়ে। বেবিলোনীয়ায় কারাবাসেব সময় (Babylonish captivity) জেহোভার প্রতি বিশ্বাস তাদের আরও বদ্ধমুল হয়। পরবর্তী একেশ্বরবাদী খৃষ্টধর্ম হিব্রুধর্মেরই উন্নত সংস্করণ মাত্র। তাই খৃষ্টান পাদ্রীরা অনুন্নত আদিম অধিবাসীদের ভেতর ধর্মপ্রচার করতে গিয়ে নিজেদের একেশ্বরবাদ সম্পর্কে যে গালভরা কথা বলে ও অনুন্নত সমাজের প্রকৃতিপূজার নিন্দা করে এর মূলে কিছুই নাই। এসন-এর উচ্চধারণাও প্রকৃতিপূজারই রূপানতর মাত্র ও ভৌগোলিক কারণে মরুভূমিতেই তা প্রথম সম্ভব হয়েছে।
ইজরাইলদের “প্রেরিত পুরুষেরা” প্রচার করে যে তারা তাদের জেহোভা থেকে খোদার খাছ বান্দা
(‘Chosen people’) হিসাবে স্বর্গীয় কেতাবগুলি পেয়েছে। কিন্তু আমরা জানি যে ঐ সব কেতাবগুলিতে যে সব সৃষ্টিরহস্য, পরলোকতত্ত্ব বা নীতিধর্মের কথা বলা হয়েছে, তা হামমুরাবীর সনদ, Epic of Flood, Epic of Creation বা Book of the Dead-এর ভিতর পাওয়া যায়। বাইবেলের নুহনবীর জলপ্লাবনের অনুরূপ কাহিনী বহু যুগ আগেই বেবিলোনীয়াতে ঊহমধ সফ ঋলসসন-এ দেখতে পাই। বস্তুত বাইবেল বা অন্য সব সেমেটিক ধর্মপুস্তকে যে সব নীতিবাদ বা সৃষ্টিরহস্যের কেচ্ছাকাহিনী লেখা আছে সে সব অনেক যুগ আগেই বেবিলোনিয়া, এশিরিয়া ও প্রাচীন মিশরে চালু ছিল।
পণ্ডিতেরা বলেন সৃষ্টির প্রথমেই আদিম মানুষ পারমার্থিক ও ঐশ্বরিক প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এক ভগবানের সন্ধান পেয়েছে। কিন্তু আমরা দেখেছি আদিম সমাজে পরিবেশ ও আর্থিক প্রয়োজনবুদ্ধিই ধর্মের মূলে। আজকাল যে উন্নত ধরণের ধর্মজ্ঞান দেখতে পাই তা অনেক পরের কথা। বস্তু বা পরিবেশ যেমন ধর্মকে রূপ দেয়, সেরূপ মানুষের দার্শনিক চিনতাও ধর্মকে রূপ দিয়েছে। হিন্দুদের এক পরমব্রহ্মের কল্পনা এরূপ দার্শনিক চিনতাধারারই ফল। তাই বলে মান্ধাতার আমল থেকে আদিম মানুষ সৃষ্টিরহস্য জানবার জন্য ব্যাকুলিত হয়ে এক ও অদ্বিতীয় ভগবানের তত্ত্বকথায় মেতে গেছে এ বলার কোন অর্থ হয় না।
[পুনর্মুদ্রণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বার্ষিকী, ১৯৪৬]




বৃহস্পতিবার, ৯ মার্চ, ২০১৭

মেয়েদের কথা | তসলিমা নাসরিন

মেয়ে বলে, শুধু মেয়ে বলেই তুমি যখন গুরুত্বপূর্ণ কোনও কথা বলবে, কেউ তোমার চোখের দিকে বা মুখের দিকে তাকিয়ে মন দিয়ে শুনবে না তোমার কথা। বিশেষ করে পুরুষেরা। আমি আজ থেকে নয়, এই আচরণটি লক্ষ্য করছি আমার বয়স যখন পাঁচ কিংবা ছয়। পাঁচ বা ছয় যখন-- আমার কোনও কথাকে গুরুত্ব দেওয়া হতো না। কারণ আমি শিশু। আমার শিশুতোষ কথা মন দিয়ে শোনার উপযুক্ত বলে কেউ মনে করেনি। আমি যদি বুদ্ধির কথা বলতাম,

বুধবার, ৮ মার্চ, ২০১৭

নারী-স্বাধীনতা | মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান

অধ্যাপক সেলিনা বাহার জামানের স্মৃতির উদ্দেশে আমি লেখাটি উৎসর্গ করলাম।

আমাদের মৌখিক ঐতিহ্য প্রবাদ প্রবচনে নারী প্রসঙ্গে দুটো কথা আছে। একটি শ্রদ্ধার, নারী মায়ের জাত। আর একটি অনুকম্পার, নারী পরের ভাগ্যে খায়। যেখানে নারী নিজের ভাগ্যে খায় আর পুরুষ নারীর ভাগ্যে বা তার অর্জনে খায় সেখানে কেবল পুরুষতন্ত্রের মহিমায় কোনো পুরুষ কি ঊর্ধ্বতন মর্যাদা দাবি করতে পারবে?

মঙ্গলবার, ৭ মার্চ, ২০১৭

৭ই মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা করলে কী হতো? | বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী

২৪ জানুয়ারি ’৭২ অস্ত্র জমা নেওয়ার পর টাঙ্গাইল পার্ক ময়দানে বঙ্গপিতার ভাষণের শেষ অংশ। আমরা কারও সঙ্গে শত্রুতা চাই না। আপনারা আগ্রাসন বন্ধ করুন। আজ রাশিয়া আমাদের স্বীকৃতি দিয়েছে। আপনারাও দিন। স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ বাস্তব সত্য। একে অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। আমাদের পররাষ্ট্রনীতি হবে সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়। আমরা জোটনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করি। আমরা শান্তি ও স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। 

সোমবার, ৬ মার্চ, ২০১৭

মেয়েদের আত্মহত্যা | তসলিমা নাসরিন

মানসিক রোগীদের মধ্যে আত্মহত্যা করার প্রবণতা বেশি কিন্তু রোগটি না থাকলেও কিন্তু মানুষ নানা কারণে আত্মহত্যা করে। জাপানে এককালে হারাকিরি আত্মহত্যার চল ছিল। পরাজিত সৈন্যরা শত্রুর কাছে আত্মসমর্পন না করে বরং হারাকিরি করতো। শুধু সৈন্যরা নয়, সাধারণ মানুষও করতো হারাকিরি। অনেকে করতো প্রতিবাদে। হারাকিরিটা বীভৎস বটে। নিজের হাতে ধারালো ছুরি নিজের পেটে ঢুকিয়ে দেওয়া। 

রবিবার, ৫ মার্চ, ২০১৭

কাঁটাবন থেকে ক্যাম্পাস | শান্তনু মজুমদার

বণিকদের দখলে থাকায় ফুটপাতে জায়গা না পেয়ে, পেছনে ধেয়ে আসতে থাকা যন্ত্রদানবের চাকায় পিষ্ট হওয়ার আশঙ্কাকে সঙ্গী করে কাঁটাবন থেকে নীলক্ষেতের রাস্তাটি ধরে হাঁটতে হাঁটতে বন্দী পাখিদের দিকে চোখ যায়, চোখ পড়ে বন্দী মাছের দিকে; বন্দী প্রাণীকুলের দিকে। কাঁটাবনের বিশ্ববিদ্যালয় মার্কেটে বাণিজ্যিক উদ্দেশে বন্দী করে রাখা হয় পাখিদের, পশুদের, নানা প্রাণীর। এখানকার টিয়া পাখিরা ওড়ে না, পায়রারা ওড়ে না। উড়তে পারার কথাও না। ওড়ে না নাম না-জানা অন্য পাখিরা; পিঞ্জরে বন্দী হয়ে এরা বড়লোক আর বড়লোক হতে উদ্গ্রীব মধ্যবিত্তের ড্রয়িংরুমের শোভার বর্ধন ও মনোরঞ্জনের আতঙ্কিত প্রহর গোনে।

শনিবার, ৪ মার্চ, ২০১৭

ফিলিস্তিন ইস্যুতে এডওয়ার্ড সাইদ ও সালমান রুশদির কথোপকথন

গত শতকের একেবারে শেষের দিকে সেই ১৯৯৯ সালের কথা। ফিলিস্তিনে তখনো হামাসের উত্থান ঘটে নাই। তখনো ফিলিস্তিনের জনগণ একটি সেকুলার আধুনিক রাষ্ট্র কায়েমের জন্যেই সংগ্রাম করছিলো। ইয়াসির আরাফাত তখনো ফিলিস্তিনের অবিসংবাদিত নেতা ছিলেন, কিন্তু তার জনপ্রিয়তা কমছিল। ক্যান্সারে আক্রান্ত এডওয়ার্ড সাইদ তখনো জীবিত ছিলেন। আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় ফিলিস্তিনের জনগণেরই নয়, তৃতীয় বিশ্বের সকল নির্যাতিত নিপিড়িত মানুষের কন্ঠস্বর হয়ে তখনো তিনি কথা বলে যাচ্ছেন। সালমান রুশদি সেই সময়ে সাইদের একটি সাক্ষাৎকার নেন।

শুক্রবার, ৩ মার্চ, ২০১৭

বৃহস্পতিবার, ২ মার্চ, ২০১৭

উদারতার চেয়ে মহান কিছু নেই | তসলিমা নাসরিন

সেদিন বলেছিলাম, হিন্দুরা হিন্দুদের পক্ষে কথা বলছে, মুসলমানরা মুসলমানদের পক্ষে কথা বলছে। কত ভালোই না হতো যদি হিন্দুরা মুসলমানদের পক্ষে কথা বলতো, আর মুসলমান হিন্দুদের পক্ষে কথা বলতো।

নুরিত পেলেড-এলহানান একজন ইহুদি।   জেরুজালেমের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষা-শিক্ষার শিক্ষক। আমার মতোই তিনি ইউরোপীয় সংসদ থেকে মুক্তচিন্তার জন্য সাখারভ পুরস্কার পেয়েছেন। নুরিত পেলেডের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা হয়েছে। তিনি তাঁর সংগ্রামের কথা যখন বলেছেন, আমি বিস্ময়ে বিমূঢ় বসেছিলাম। নুরিতের মেয়ে স্মাদার ১৩ বছর বয়সে ১৯৯৭ সালে ফিলিস্তিনি আত্মঘাতী বোমায় জেরুজালেমের রাস্তায় নিহত হয়। নুরিত ইজরাইলি হয়েও, ইহুদি হয়েও, ফিলিস্তিনিদের মানবাধিকারের জন্য লড়ছেন। তিনি এক জিওনিস্ট পরিবারের মেয়ে। তাঁর ঠাকুরদা ইজরাইলের স্বাধীনতা ঘোষণায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর বাবা মাটিনিয়াহু পেলেড ছিলেন ইজরাইলের মেজর জেনারেল। নুরিতের মতো নুরিতের ভাই মিকো পেলেডও ফিলিস্তিনিদের মানবাধিকারের জন্য লড়ছেন।

বুধবার, ১ মার্চ, ২০১৭

স্টকহোম সিন্ড্রোম | ফাহিম আহমেদ

স্টকহোম সিন্ড্রোম বলতে এমন কতগুলো মানবিক আচরণকে বোঝায় যা একজন ব্যক্তির মাঝে বন্দী অথবা জিম্মি অবস্থায় লক্ষ্য করা যায়। এটি একটি মানসিক অবস্থা যার মধ্য দিয়ে একজন বন্দী ও তাকে বন্দীকারীর মাঝে একটি সহানুভূতিশীল সম্পর্ক গড়ে ওঠে। স্টকহোম সিন্ড্রোমের ক্ষেত্রে দুজন মানুষের মাঝে একটি শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে ওঠে যেখানে একজন